ঈশপের গল্প! বাংলা মোরাল স্টোরি! পার্ট-৩

ঈশপের গল্প! বাংলা মোরাল স্টোরি! পার্ট-৩

ছোটবেলায় প্রথম যে বইটি পড়ে দুনিয়ায় টিঁকে থাকার রীতি-নীতি সম্পর্কে জানতে পারি সেটি ছিল ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর করা ঈশপ-এর গল্পের অনুবাদ – ‘কথামালা’। আমার বাবার আমাকে প্রথম উপহার যা আমার মনে পড়ে। বইটি হারিয়ে গেছে। গল্পগুলি রয়ে গেছে মনের ভিতর।

যত বড় হয়েছি, গল্পগুলি তত বেশী করে অনুভব করেছি। আবার কখনো কখনো সেগুলি থেকে অন্য রকমের মজা পেয়েছি। সম্প্রতি ইচ্ছে হচ্ছিল গল্পগুলি ফিরে পড়ার। ভাবলাম, আপনাদের-ও সঙ্গী করে নি-ই। ইংরেজী পাঠের অনুসারী বঙ্গানুবাদ করেছি, তবে আক্ষরিক নয়। সাথে ফাউ হিসেবে থাকছে আমার দু-এক কথা।

আপনি আরো পড়তে পারেন……. ঈশপের নীতিমূলক গল্প।মোরাল স্টোরি।পার্ট-১ ……… ঈশপের গল্প-পার্ট-২ …. ঈশপের গল্প| বাংলা মোরাল গল্প!পার্ট-৪ ……. বাংলা মোরাল স্টোরি! ঈশপের গল্প! পার্ট-৫

ঈশপের গল্প! বাংলা মোরাল স্টোরি! পার্ট-৩

ঈশপের গল্প!শিয়াল আর সিংহ-র গল্প

বনে ঘুরতে ঘুরতে এক শিয়াল হঠাৎ এক সিংহের মুখোমুখি এসে পড়ল। এর আগে সে কখনো সিংহ দেখেনি। ফলে সে ত ভয়েই মরে প্রায়! তার কিছুদিন বাদে আবার সেই সিংহের সাথে দেখা সেই শিয়ালের।

এইবার-ও শিয়াল ভয়ে ভয়ে ছিল, তবে প্রথমবারের মত অতটা নয়। তিন নম্বর বার যখন দেখা হল, শিয়ালের আর ভয় ত করলইনা, সে বরং সিংহের কাছে এগিয়ে গিয়ে গল্প জুড়ে দিল।

প্রাচীন বচনঃ পরিচিতি বাড়লে পুরান সংস্কার কমে।

আমি বলিঃ চালাক শক্তিমান একেবারে শুরু থেকেই হামলা করার ইচ্ছে না দেখিয়ে আস্তে, আস্তে তার শিকার-এর সতর্কতা নষ্ট করে দেয়।

ঈশপের গল্প!শহরের ইঁদুর আর গাঁয়ের ইঁদুর

এক গাঁয়ের ইঁদুর তার জিগরী দোস্ত শহরের ইঁদুরকে বাড়িতে ডেকেছিল নিজের এলাকা ঘুরিয়ে দেখাবে বলে। যখন তারা ফাঁকা ক্ষেতে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, আর ঝোপের ধারে ধারে ফসলের ডাঁটি চিবোচ্ছিল বা মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে শেকড়গুলো খাচ্ছিল, শহরের ইঁদুর তার বন্ধুকে বলল “পিঁপড়ের মত খুঁটে খেয়ে খেয়ে তোর জীবন কাটে আর, আমার ওখানে জিনিসের ছড়াছড়ি।

যত রকমের খাবার ভাবতে পারিস, সব আছে আমার কাছে। একবার যদি আসতে পারতিস, দেখাতাম তোকে, আয়, আয়, চলে আয়, সেরার সেরা খাবার ভাগাভাগি করে খাব আমরা।” গাঁয়ের ইঁদুর সহজেই রাজী হয়ে গেল, বন্ধুর সাথে শহরে বন্ধুর বাড়িতে চলে এল।

শহরের ইঁদুর বন্ধুর সামনে এনে হাজির করল রুটি, বার্লি, বীন, শুকনো ডুমুর, মধু, কিসমিস, আর সবশেষে একটা ঝুড়ি থেকে, সেরার সেরা সুস্বাদু খাবার – এক টুকরো চীজ। এত রকমারী সব খাবার দেখে, গাঁয়ের ইঁদুর তো তাজ্জব! সমানে শহরের ইঁদুর-কে বাহবা জানাতে লাগল আর নিজের দুর্ভাগ্যকে দোষ দিতে থাকল।

সবে তারা খাওয়া শুরু করতে যাচ্ছে, ঘরের দরজা খুলে একটা লোক ভিতরে ঢুকে এল, আর দুই ইঁদুর এক দৌড়ে এক সরু গর্তে একজন আরেকজনের ঘাড়ের উপর চেপে কোনমতে নিজেদের লুকিয়ে রাখল। একটু বাদে ঠিক যখন আবার তারা খাওয়া শুরু করবে, কেউ একজন ঘরে এসে পড়ল কাবার্ড থেকে কিছু বার করে নেবে বলে।

ইঁদুর দুটো আরো ভয় পেয়ে পড়ি-মরি করে লুকিয়ে পড়ল। খানিকক্ষণ বাদে, গাঁয়ের ইঁদুর, তখনো তার বুক ধড়ফড় করছে, বন্ধুকে বলল, “যদিও আমার জন্য সেরার সেরা খাবারের মেলা বসিয়ে দিয়েছ তুমি, আমি সব খাবার তোমার একলার খাওয়ার জন্যই রেখে যাচ্ছি। আনন্দ করার জন্য আমার পক্ষে এই জায়গা বড়ই বিপজ্জনক। ”

প্রাচীন বচনঃ বিপদ-আপদ-এ ঘেরা বিপুল ঐশ্বর্যের চেয়ে নিরাপদে একটু খুদ-কুঁড়ো খাওয়াও অনেক স্বস্তির। (সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল।)

আমি বলিঃ মাথা উঁচু রেখে চলা যাদের অভ্যাস, লুকিয়ে-চুরিয়ে বাঁচা, যত কিছুই জুটুক, তাদের তাতে পোষায় না।

ঈশপের গল্প!বাঁদর আর শুশুক-এর গল্প

এক নাবিক দূর সমুদ্র যাত্রায় যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে বাঁদরের খেলা দেখে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য একটা বাঁদরকে সাথে নিয়ে নিয়েছিল। গ্রীসের সমুদ্রতীরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভীষণ ঝড়ে পরে তাদের জাহাজ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

সেই নাবিক, তার বাঁদর আর জাহাজের সমস্ত লোকেরা যার যার প্রাণ বাঁচানোর জন্য ডাঙ্গার দিকে সাঁতরে চলল। একটি শুশুক, যে সব সময় মানুষকে সাহায্য করতে ভালবাসে, এদের বাঁচাতে এগিয়ে এল। বাঁদরটাকে মানুষ ভেবে সেই শুশুক ঐ বাঁদর-এর নীচে চলে এসে তাকে পিঠে করে ডাঙ্গার দিকে সাঁতরে চলল। যখন তারা এথেন্স এর তীরের কাছাকাছি এসে গেছে, শুশুক তার পিঠের সওয়ারীর কাছে জানতে চাইল যে সে এথেন্স-এর লোক কি না।

বাঁদর বলল যে, সে এথেন্স-এর লোক, শুধু তাই না, সে এথেন্স-এর সবচেয়ে মহান এক পরিবারে জন্মেছে।
শুশুক এবার তার কাছে জানতে চাইল সে পাইরিয়াস সম্পর্কে কিছু জানে কি না। পাইরিয়াস হচ্ছে এথেন্স-এর বিখ্যাত বন্দরের নাম। বাঁদর ভাবল পাইরিয়াস কোন লোকের নাম।

নিজের একটু আগে বলা মিথ্যা কথাকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সে উত্তর দিল যে পাইরিয়াস-কে সে ভালমত চেনে, এমন কি, সেই লোক তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আর তাকে দেখে সে, কোন সন্দেহ নেই, খুব-ই খুশী হবে। বাঁদরের এই জালিয়াতি-তে সেই শুশুক সাংঘাতিক রেগে গিয়ে তাকে জলের নীচে চুবিয়ে মেরে ফেলল।

প্রাচীন বচনঃ একবার একটা মিথ্যা কথা বলা শুরু করলে সেটাকে ঢাকতে আর একটা, এইভাবে ক্রমাগত মিথ্যা বলে যেতে হয় আর তার ফলে, আজ হোক আর কাল হোক, একসময় বিপদ ঘনিয়ে আসে।

আমি বলিঃ অন্যের দয়ায় থেকে মিথ্যে বলেও বেশীদিন বাঁচা যায় না!

ঈশপের গল্প!লড়াকু মোরগ আর বাতাই পাখীর গল্প

এক লোকের দুটো লড়ুয়ে-মোরগ ছিল। একদিন বাজারে একটা পোষা বাতাই পাখী বিক্রী হচ্ছিল। পাখীটা দেখে লোকটির এত ভাল লেগে গেল, সে ওটা কিনে বাড়ি নিয়ে এল। তার ইচ্ছে, মোরগ দুটোর সাথে থেকে এই পাখীটাও তৈরী হয়ে যায়।

যেই মাত্র সে বাতাই-টাকে মোরগের খামারে ছেড়েছে, মোরগ দুটো ঝাঁপিয়ে এসে পড়ল ওটার উপর। দুটোতে মিলে পাখীটাকে ভয়ানক দৌড় করালো। মনের দুঃখে মুষড়ে পড়ে পাখীটা ভাবতে লাগল যে, সে নুতন এসেছে বলেই তার এমন দুর্দশা ঘটল।

খানিকক্ষন না কাটতেই বাতাইটা দেখে মোরগ দুটো নিজেরাই তুমুল লড়াই লাগিয়ে দিয়েছে। যতক্ষণ না একজন আরেকজনকে ভীষণ রকম পিটল, লড়াই চালিয়েই গেল তারা। সেই দেখে পাখীটা নিজের মনেই বলল, “এই লড়ুয়ে-মোরগ দুটো যখন নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া না করে থাকতে পারে না, তখন আমার সাথে কেন তারা লেগে পড়ল সেই নিয়ে ভেবে ভেবে হয়রান হওয়ার কোন অর্থ হয় না।”

প্রাচীন বচনঃ যারা নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া করে, নুতন লোকেদের পক্ষে তাদের এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।

আমি বলিঃ যারা নিজেরা নিজেদের দেখতে পারে না, তারা অন্য লোকেদের-ও দেখতে পারবে না।

গল্পটিতে ইংরেজী অনুবাদে পাখীটিকে বলা হয়েছে Partridge. তারেক অণুর পাখীর নাম সংক্রান্ত লেখার ফলে জেনেছি যে এই পাখীর বাংলা নাম বাতাই।

ঈশপের গল্প! বাংলা মোরাল স্টোরি! পার্ট-৩

ঈশপের গল্প!এক বাচ্চা ছেলে আর বিছুটি পাতার গল্প।

একটি বাচ্চা ছেলের হাতে নরম কিন্তু বিষাক্ত শুঁয়ো-ওয়ালা বিছুটি পাতা লেগে যায়। বাচ্চাটি তার মা’র কাছে ছুটে গিয়ে বলে, “এত ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে, আমি কিন্তু ওটা আলতো করে ছুঁয়েছিলাম।” “সেটাই তো ব্যাপার,” মা তাকে বোঝায় তখন, “তার ফলেই তো রোঁয়াগুলো তোমার হাতে ঘষে ঘষে গেল আর সেগুলো থেকে হুল ফুটে গিয়ে এখন জ্বলে যাচ্ছে।

আবার যদি কখনো বিছুটি পাতা ধরো, সাহস করে, ঠিক মত, শক্ত করে, না ঘষে ধরবে, ঐ রোঁয়াগুলো-ই তখন চুপটি করে নরম সিল্কের মত শুয়ে থাকবে, কোন ঝামেলা করবে না।”

(টীকাঃ ইংরেজীতে গাছটির নাম বলা হয়েছে Nettle, আন্তর্জালে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বাংলা অনুবাদ-এ বিছুটি পাতার থেকে কাছাকাছি কিছু পাই নি। বিছুটি পাতা এইভাবে শক্ত করে ধরলে জ্বালা-চুলকানির কবলে পড়ার থেকে রেহাই পাওয়া যায় কি না আমার জানা নেই। )

প্রাচীন বচনঃ যা-ই করো, আলগা, আলগা নয়, পুরো শক্তি লাগিয়ে করো।

আমি বলিঃ আগে ভাল করে জেনে নাও কী করতে যাচ্ছ, কি ভাবে করতে হবে, তার পর করো, জ্বালা পোহানোর সম্ভাবনা কম থাকবে।

ঈশপের গল্প!বন্দী ভেঁপু-বাজিয়ে

এক ভেঁপু-বাজিয়ে বুক-চিতিয়ে, জোরদার ভেঁপু বাজাতে বাজাতে সেনাদল নিয়ে যাওয়ার সময় শত্রুদের হাতে বন্দী হয়ে গেল। ভেঁপু-বাজিয়ে কেঁদে কেটে প্রাণভিক্ষা চাইলঃ “আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। আমাকে ছেড়ে না দেওয়ার কোন কারণ নেই, আমি কাউকে আঘাত করিনি।

আপনার সৈন্যদের কাউকে খুন করিনি আমি। আমার কাছে কোন অস্ত্র নেই। থাকবার মধ্যে আছে শুধু এই পিতলের ভেঁপুটা।” “ঠিক এই কারণেই তো তোকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া দরকার,” বলল তারা, “তুই নিজে যুদ্ধ না করলে কি হবে, তোর ঐ প্রবল ভেঁপুর বাজনাই তোদের সৈন্যদের যুদ্ধের উৎসাহ দিয়ে গেছে।”

প্রাচীন বচনঃ যে অশান্তি পাকায় আর যে অশান্তি পাকানোয় মদত দ্যায় দুজনেই সমান দোষী।

আমি বলিঃ কোন সংবাদ পত্রিকা, দূরদর্শন বা বেতার চ্যানেল, ব্লগ, গোষ্ঠী, দল বা ব্যক্তি, যে কেউ দাঙ্গায় প্ররোচনা দিলে দাঙ্গা-জনিত খুন বা ধ্বংসের দায়িত্ব দাঙ্গাকারীদের পাশাপাশি তাদের উপরেও বর্তায়।

সতর্কীকরণ : মতামত মাত্রই খুন বা ধ্বংসের প্ররোচনা নয়। উপরে বলা দায়িত্ব সংক্রান্ত কথা কেবল মাত্র প্ররোচনা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

ঈশপের গল্প!বিয়ে করে প্রাণ গেল

এক ইঁদুর খুব ভাল কাজ করে বনের রাজা সিংহ-র মন জয় করে ফেলল। তবে, সিংহ হচ্ছেন রাজামশায়। মহৎ কাজে বনের অন্য কোন জন্তু তাকে ছাড়িয়ে যাবে এটা তিনি হতে দিতে পারেন না। তাই তিনি অত্যন্ত উদার হয়ে ইঁদুরকে বললেন তার যা মন চায় তাকে জানাতে, তিনি তা মঞ্জুর করে দেবেন।

এই বিরাট আশ্বাস পেয়ে ইঁদুরের উচ্চাশা একেবারে আগুনের শিখার মত লকলক করে উঠল। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, কতটা রাজামশাইয়ের পক্ষে দেওয়া সম্ভব, কতটা নয়, কোন বিচার-বিবেচনা রইলনা তার। সে দাবী করে বসল, মহারাজের মেয়ে তরুণী সিংহী রাজকুমারীর সাথে তার বিয়ে দিতে হবে।

সিংহরাজ তার কথা রাখলেন, রাজকুমারীকে ইঁদুরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু রাজকুমারী, সিংহের চলন তার, নিজের তালে হেঁটে যায়, এদিক-ওদিক ভাল করে তাকিয়ে না দেখে ইঁদুরের উপর তার ভারী পা দিল চাপিয়ে। আর কি, ইঁদুর চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে মরে গেল।

প্রাচীন বচনঃ বেমানান জোড় বাঁধা থেকে সাবধান। অতি উচ্চাশা নিয়ে জোট গড়া মানে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা।

আমি বলিঃ খুব বড়দের থেকে দূরে দূরে থাকতে না পারলে যে কোন সময় তাদের নীচে চাপা পড়ে মরতে হতে পারে।

ঈশপের গল্প! বাংলা মোরাল স্টোরি! পার্ট-৩

ঈশপের গল্প!এক গাধা আর এক লড়াইয়ের ঘোড়া

এক লড়াইয়ের ঘোড়া খুব যত্ন-আত্তিতে ছিল। এক গাধা তাই দেখে তাকে খুব করে বাহবা জানাল কারণ তার নিজের খুব অল্প-ই খাবার জুটত, আর সেটাও জুটত অনেক পরিশ্রম করে। কিন্তু একদিন সেখানে যুদ্ধ শুরু হতে সেই ঘোড়ার পিঠে অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত সৈনিক সওয়ারী চাপিয়ে তাকে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেওয়া হল। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়ে ঘোড়াটা এক সময় মারা পড়ল। সব দেখে শুনে গাধা তার মত পাল্টে ফেলে বলল, “ঐ লড়াইয়ের ঘোড়ার থেকে আমি কত ভাগ্যবান! আমি নিশ্চিন্তে বাড়ি আছি, আর ঐ লড়াইয়ের ঘোড়া যুদ্ধের ভয়াবহ সব যন্ত্রণা ভোগ করে মারা পড়েছে।”

প্রাচীন বচনঃ অন্যের ভাল অবস্থা দেখামাত্র তাকে হিংসা করার কোন অর্থ হয় না।

আমি বলিঃ বেশী, বেশী যত্ন-আত্তির সুখ বেশীদিনের জন্য নয়, বিপদ এল বলে। আর, যার আদর আহ্লাদ জোটে না, তার অতিরিক্ত কোন মাসুল গোণার-ও ভয় থাকে না।

ঈশপের গল্প!এক ফালতু পাতিকাক-এর গল্প

লোকে বলে, দেবরাজ ইন্দ্র যখন ঠিক করে ফেললেন যে পাখীদের জন্য রাজ্য গড়ে দেবেন, তিনি ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে এক নির্দিষ্ট দিনে সব পাখীরা তাঁর সামনে এসে জড় হলে তিনি তাদের মধ্যে থেকে সবচাইতে যাকে সুন্দর দেখতে তাকেই পাখীদের রাজা বেছে নেবেন।

এ কথা শুনে এক পাতিকাক, সে তো ভালমতই জানে কি কুচ্ছিৎ দেখতে তাকে, মাঠে-ঘাটে-বনে-বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে নানা পাখীদের গা থেকে খসা রকমারী সব পালক যোগাড় করে আনল। এরপর ঐ পালকগুলো নিজের সারা গায়ে গুঁজে নিয়ে খুব বাহার দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে আর সব পাখীদের সাথে দেবরাজের সামনে হাজির হয়ে গেল।

পাতিকাক-এর চেহারায় মুগ্ধ হয়ে দেবরাজ যেই প্রস্তাব রেখেছেন যে তাকে রাজা হিসেবে বেছে নেওয়া হোক, পাতিকাকের জোচ্চুড়িতে সমস্ত পাখীরা ভীষণ রেগে গিয়ে বিস্তর চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিল। আর সেই সাথে, প্রত্যেক পাখী পাতিকাক-এর গা থেকে নিজের নিজের পালক খুবলে খুবলে বার করে নিল। পাতিকাক তখন আবার এক মামুলি পাতিকাক হয়ে গেল।

প্রাচীন বচনঃ ধার করা সাজ-সজ্জায় কাজ হাসিল করতে পারার আশা না করাই ভাল।

আমি বলিঃ সমাজের দায়িত্বশীলরা যখন ঠাট-বাটকে মান্যতার মাপকাঠি করে ফোঁপরা বাহারী মানুষকে মাথায় বসান, তার মোকাবিলা করতে করতে ভুক্তভোগীদের আর অশান্তির শেষ থাকে না, মাথায় চড়া লোকটার-ও দুদিনেই আসল রূপ বেড়িয়ে পরে, কাজের কাজ পুরোই পন্ড।

ঈশপের গল্প!গোয়ালিনী আর তার মাথার দুধের বালতি

এক গোয়ালিনী মাথায় দুধের কলসী নিয়ে দুধ বেচতে চলেছে। চলতে চলতে মনটা তার খুশী খুশী হয়ে উঠেছে। “এই দুধ বেচে যা টাকা পাবো তাতে অন্তত তিনশ’ ডিম কিনে ফেলা যাবে। সেই ডিম দিয়ে মুরগীর চাষ শুরু করলে কিছু নষ্ট হলেও কম করে আড়াইশো মুরগীর ছানা পাওয়া যাবে।

মুরগীর দাম যখন সবচেয়ে চড়ে উঠবে, এই মুরগীগুলো তখন বেচার জন্য তৈরী হয়ে গেছে। বছর শেষে যা টাকা হাতে জমবে তা দিয়ে একটা নুতন পোষাক কিনে ফেলব। সেটা পরে যখন আমি ক্রিসমাস-এর উৎসবে হাজির হবো, সব ছেলেগুলো আমায় পেতে চাইবে। কিন্তু আমি রাজী হচ্ছি না, পরিস্কার মাথা নেড়ে সব্বাইকে না করে দেব।” ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা ভাবনার তালে তালে নড়ে গেল।

ফলে মাথা থেকে দুধের কলসী মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে শত টুকরো হল, আর সেই সাথে অমন চমৎকার পরিকল্পনাগুলোও এক মুহুর্তে সব শেষ।

প্রাচীন বচনঃ ডিম ফোটার আগেই মুরগীর ছানার হিসেব করতে নেই।

আমি বলিঃ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সময় এখন কি করছি সেটা ভুললে চলে না।

Ishoper Golpo Bangla moral story

Info source: wikipedia

ট্যাগঃ ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প! ঈশপের গল্প!

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।