জাবর কাটা কি?গরু-ছাগল জাবরকাটে কেন?

জাবরকাটা কি?গরু-ছাগল জাবরকাটে কেন?

কেউ মুখভর্তি পান নিয়ে চিবুতে থাকলে আশপাশের লোকজন ফিস ফিস করে বলে উঠে দেখ ব্যাটা ছাগলের মত জাবর কাটছে। কথাটি পানখোরের কানে গেলে ক্যাবলার মত পানের রসের একটা ঢোক গিলে হাসিমুখে একটা পোজ দেয়,যেন সে কিছুই শোনেনি।

কি আর করার তার পান খাওয়া তার নেশা। যে যাই বলুক পান খেতেই হবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো আপনি কি জানেন জাবর কাটা কি? গরু-ছাগল জাবর কাটে কেন? আসুন জেনেনেই জাবর কাটা সম্পর্কে বিস্তারিত।

আপনি আরো পরতে পারেন…. উট কি সাপ খায়? গরুর অজানা তথ্য যা আপনাকে চমকে দেবে!

জাবর কাটা কি?

জাবর কাটা কি?

কোন খাদ্যবস্তুকে পাকস্থালীতে গিলে ফেলার পর পুনরায় সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে মুখগহ্বরে ফিরিয়ে এনে দাঁত দিয়ে চিবানোকে জাবর কাটা বলে।
অধিকাংশ তৃণভোজী প্রাণিকে দেখবেন এরা বিশ্রামের সময় খুব আরাম করে পান চিবানোর মত মুখ নাড়াতে থাকে মনেহয় বড় কোন দাওয়াত খেয়ে আয়েশ করার জন্য পান চিবাচ্ছে। এদের এই কাজকেই আপনি জাবর কাটা বলতে পারেন।

রুমিনেন্ট বা রোমন্থক প্রাণী কি?

রোমন্থক প্রাণী, রুমিনেন্ট প্রাণী

যেসব প্রাণী জাবরকাটে তাদের রোমন্থক প্রাণী বা রুমিনেন্ট প্রাণী বলে। এই রােমন্থক প্রাণীর উদাহরণ হলাে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি।

গরু-ছাগল জাবর কাটে কেন?

বিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রাণী প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। এমনি একটি বিবর্তনিক বৈশিষ্ট্য হলো জাবর কাটা।
অধিকাংশ স্থরচর মাংসাশী প্রণী খাদ্যের জন্য তৃণভোজী প্রাণিদের উপর নির্ভরশীল। যেমন – বাঘ,সিংহ,নেকড়ে, হায়েনা পেটের জ্বালা মেটানোর জন্য তৃনভোজী প্রাণিদের শিকার করে খায়।

তৃণভোজী প্রাণিগুলো শিকারির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তেমন কোন উপায় বের করতে পারেনি। এরা সবসময় সতর্ক থাকে যাতে শিকারির আক্রমণ থেকে দৌড়ে পালাতে পারে।

এখন কথা হলো যদি সবসময় পালানোর মুডে থাকে তাহলে খাবার খাবে কখন? এদের আবার খাবার তৃণজাতীয় তাই চিবিয়ে খেতে গেলে অনেক সময় ব্যয় হবে, এই সুযোগে শিকারি খুব সহজে আক্রমণ করে এদের খেয়ে ফেলবে।

গরু-ছাগল জাবরকাটে কেন?

এই সমস্যার থেকে বাঁচার জন্য এদের পাকস্থলী ৪ টি খণ্ড বা প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। প্রথম প্রকোষ্ঠ টি অস্থায়ী খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। খাদ্য গ্রহণের সময় খাদ্য না চিবিয়ে দ্রুত অস্থায়ী প্রকোষ্ঠে চালান করে দেয়। এরপর নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসে কম চিবানো খাবার গুলোকে পুনরায় মুখে এনে ভালোকরে চিবাতে থাকে।

এরপর পাকস্থলীর ২য় প্রকোষ্ঠে চালান করে দেয়। এভাবে এরা শিকারির হাত থেকে রক্ষা পায়। বন্য পরিবেশ থেকে তৃণভোজী প্রাণিদের ধরে এনে গৃহপালিত প্রাণিতে পরিণত করলেও এরা এদের পিতৃপুরুষের বিবর্তনিক বৈশিষ্ট্য বংশগতভাবে পেয়েছে যা আর পরিবর্ত হয়নি, তাই গরু-ছাগল সহ অন্যান্য ৪ প্রকোষ্ঠে বিশিষ্ট তৃণভোজী প্রাণিরা আজো জাবর কাটে।

গরু-ছাগল কিভাবে জাবর কাটে

তৃণভোজী প্রণীদের পাকস্থলী ৪ প্রকোষ্ঠে বিবক্ত হওয়ার জন্য এরা বাধ্য হয়ে জাবরকাটে।পাকস্থলীর ৪টি প্রকোষ্ঠ রুমেন(১ম প্রকোষ্ঠ), রেটিকুলাম(২য় প্রকোষ্ঠ),ওমাসাম বা বহুভাঁজ থলি(৩য় প্রকোষ্ঠ), অ্যাবোমাসাম বা সত্যিকারের পাকস্খলী(৪র্থ প্রকোষ্ঠ)। প্রকোষ্ঠ গুলোর আবার বাহারি নামও আছে যেমন- রেটিকুলাম, হানিকম্ব নামে পরিচিত।

জাবরকাটা কি? গরু-ছাগল কিভাবে জাবরকাটে?
গরুর পাকস্থলীর ৪ প্রকোষ্ঠ

এদের প্রধান খাদ্য তৃণ হলেও এরা কিন্তু তৃণ বা ঘাস ভালোমত হজম করতে পারে না। তৃণ হজম করার জন্য পর্যাপ্ত এনজাইম এদের পরিপাক তন্ত্রে নেই। একারণে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় এদের হজমের কাজ অধিকাংশ সম্পন্ন হয়।

জাবরকাটার পদ্ধতি

ঘাস গিলে খাওয়ার পর এটি খাদ্যনালি দিয়ে পাকস্থলীর ১ম প্রকোষ্ঠ বা রুমেনে যায়। রুমেনে প্রায় ২৫ গ্যালন খাবার ধরে। এখানে সেলুলেজ এনজাইম এবং উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে। সেলুলেজ এনজাইম ঘাস বা খড়ের সেলুলোজকে ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে।

এতে উদ্বায়ী চর্বির দানা সৃষ্টি হয় এবং রুমেনের পশমি সোয়েটারের মত দেয়ালে শোষিত হয়। এনজাইমের কাজের সাথে ব্যাকটেরিয়া নিজের কাজ শুরু করে। ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার শুরু করে উপকারী ব্যাকটেরিয়া।

ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার ফলে প্রচুর মিথেন গ্যাস ও কার্বনডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। গ্যাসগুলো রুমেনের পেছন দিকে অবস্থিত একটি গম্বুজের মত অংশে জমা হয়।

সময়ের সাথে সাথে গ্যাসের পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রচুর গ্যাস জমা হলে তীব্র চাপ সৃষ্টি হয় এই চাপে গিলে খাওয়া খাবার উদগিরণের মাধ্যমে রেটিকুলাম হয়ে খাদ্যনালীর মাধ্যমে পুনরায় মুখে ফিরে আসে।

জাবরকাটার পদ্ধতি
জাবরকাটার পদ্ধতি

এরপর প্রাণিরা খাবারগুলুকে ২য় বার চিবাতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার নাম জাবর কাটা। জাবরকাটা শেষ হলে গিলে খাওয়া খাবার আর রুমেনে না গিয়ে ওমাসামে প্রবেশ করে।

এখান থেকে অ্যাবওমাসাম হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র অতিক্রম করে মল হিসেবে বের হয়ে যায়। পথিমধ্যে অতিক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে পরিপাক চলমান থাকে।

জাবরকাটার উপকারিতা কি?

তৃণভোজী প্রাণিরা দিনের ৪০% সময়ই জাবর কাটে। এর ফলে মুখের লালাগ্রন্থি থেকে লালা নিঃসৃত হয়। মুখের লালায় সোডিয়াম বাইকার্বোনেট থাকে পাকস্থলীর এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে! ফলে এই প্রাণিদের এসিডোসিস,ব্লোটস বা পেট ফাঁপা এই জাতীয় সমস্য হয় না।
গ্রহনকৃত খাদ্যের সর্বাধিক পুষ্টির শোষণ করার একটি উত্তম ব্যবস্থা হলো জাবর কাটা। এতে পুষ্টি গ্রহণের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।

রুমিনেশন কি?

জাবর কাটার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো রুমিনেশন।

Jabor kata ki? cow jabor kate keno?

Jabor katar rohosso, Juburkata,jubor kata, Goru jabor kate keno? romonthok prani, why cow ruminating? in bangla.

Jabor kata ki?Goru jabor kate keno?

What is rumination in bangla. goru jabor kate keno? sagol jabor kate keno? jabor katar upokarita ki?

Please click on Just one Add to Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।