এমফাইসিমা কী? এমফাইসিমার কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

এমফাইসিমা কী? এমফাইসিমার কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

মানুষ বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই অক্সিজেন দেহে প্রবেশ করে প্রশ্বাসের মাধ্যমে। প্রশ্বাসে আগত বাতাস হতে অক্সিজেন কে রক্তের সাথে মিশ্রিত করে ফুসফুস। ফুসফুসে প্রায় ৭০ কোটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ু থলি থাকে এগুলোকে অ্যালভিওলাস বলে (বহুবচন-অ্যালভিওলি)। ফুসফুসের অনেক অসুখের মধ্যে একটি হলো অ্যামফাইসিমা বা অ্যামফিজিমা। এটি একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ।

ফুসফুসের অ্যালভিওলাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ফুসফুসে মাত্রাতিরিক্ত বাতাস জমা হয়, ফুসফুস খুব দ্রুত ফুলে ওঠে এবং এর অভ্যন্তরের অংশগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। যার ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।এই অবস্থাকে এমফাইসিমা বলে।

Wikipedia
এমফাইসিমা কী? এমফাইসিমার কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারী ডিজিজের কারণে যে দুইটি সমস্যা বেশি দেখা যায় তার মধ্যে একটি হলো এমফাইসিমা আরেকটি হলো ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস।এমফাইসিমা সম্পূর্ণভাবে কখনো ভাল হয় না, তবে চিকিৎসার
মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

আপনি আরও পড়তে পারেন ….. ব্রংকাইটিস কী?ব্রংকাইটিসের কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা! ….. সিওপিডি কী? সিওপিডি কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ! …. ইনহেলার ব্যবহার এর নিয়ম!নেবুলাইজার ব্যবহার!

এমফাইসিমার কারণ

এমফাইসিমা হওয়ার প্রধান কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে বিষাক্ত উপাদান বা পদার্থের সংস্পর্শে থাকা। যেমন-

ধূমপান

যারা প্রচুর ধুমপান করেন তাদের এমফাইসিমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সিগারেটের নিকোটিন ফুসফুসের অ্যালভিওলাসকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। শ্বাসনালির প্রদাহ সৃষ্টি করে। শ্বাসনালিতে প্রদাহ বেড়ে গেলে প্রচুর কফ তৈরি হয় এবং বায়ু প্রবাহের পথ বন্ধ করে দেয়।ফুসফুসে অনবরত বায়ু প্রবাহ বন্ধ হলে অক্সিজেনের অভাবে অ্যালভিওলাস নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে একসময় সমস্যাটি এমফাইসিমা তৈরি করে।

গাঁজা বা মারিজুয়ানা সেবন

দীর্ঘদিন যাবৎ গাঁজা সেবন করলে গাঁজার ক্যানাবিনল উপাদান ফুসফুসের অ্যালভিওলাস নষ্ট করে ফেলে এরফলে এমফাইসিমা হয়।

বায়ু দূষণ

বাতাসের বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান ফুসফুসে নিয়মিতভাবে প্রবেশ করলে এমফাইসিমা হয়।

কল-কারখানার ধোঁয়া

কলকারখানার ধোঁয়াতে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান ফুসফুসে নিয়মিতভাবে প্রবেশ করলে এমফাইসিমা হয়।

আলফা-১ অ্যান্টিট্রিপসিন প্রোটিনের অভাব

আলফা-১ অ্যান্টিট্রিপসিন নামক প্রোটিন যা ফুসফুসের ইলাস্টিক গঠনকে রক্ষা করে,এর অভাব দেখা দিলে এই রোগ হয়ে থাকে, তখন একে আলফা-১ অ্যান্টিট্রিপসিন ডেফিসিয়েন্সি এমফাইসিমা বলে।

ফুসফুসের রোগ

কেউ যদি হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগী হয়ে থাকে, তবে তার এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। ক্রনিক ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত রোগীদেরও ফুসফুসে এমফাইসিমা হতে পারে। কোনো কোনো শ্বাসকষ্টজনিত ব্যাধির কারণেও এমফাইসিমা হতে পারে।

এমফাইসিমার লক্ষণ

এমফাইসিমা লক্ষণ
এমফাইসিমা লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

এমফাইসিমার লক্ষণবর্ননা
বুকের তীক্ষ্ণ ব্যথাহঠাৎ করে মাঝেমাঝেই বুকের দুই পাশে বুকের পাঁজরের হাড়ের নিচে অসহনীয় ব্যথা হয়।
শ্বাসকষ্টহালকা কোন কাজ করলেই হাপিয়ে উঠে এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সহজে এই শ্বাসকষ্ট নিবারণ করা কঠিন হয়।
বুকের চাপা ব্যথাবুকে অনেক ব্যথা হয় এই ব্যথা বাইরে থেকে চাপ দিলে অনুভব করা যায় না কিন্তু বুকের ভেতর থেকে ব্যথা অনুভব করা যায়।
কাশিএটি কমন উপসর্গ। অনেক সময় কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে আসে। কাশির সময় প্রচুর শব্দ হয়।
বমি বমি ভাবঅক্সিজেনের অভাবে মাথা ঘুরে এবং বমিবমি ভাব হয়।মাথা ব্যথা ও ঘাড় ব্যথা হয়।

এছাড়াও আরো ব্যক্তি বিশেষে আরো কিছু উপসর্গ দেখা যায়।যেমন-

  1. বুক ভারি ভারি মনে হয় এবং ব্যথা হয়।
  2. শ্বাস নেয়ার সময় গলার রগ ফুলে উঠে।
  3. তীব্র আক্রমণে পা ও পেটে পানি জমে।
  4. লিভারের আকার বড় হয়।
  5. বুকের আকৃতির পরিবর্তন আসে।
  6. অক্সিজেনের অভাবে শরীরের ত্বক নীল হয়।
  7. সারা শরীরে ব্যথা।
  8. পিঠের ব্যথা।
  9. ট্যারা চোখ।
  10. চোখের পাতায় চুলকানি।
  11. মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক বৃদ্ধি।
  12. আবেগগত সমস্যা।
  13. কনুইয়ের মাংসপেশীতে টান ধরা।

এমফাইসেমার ফলে সৃষ্ট জটিলতা

এমফাইসিমা আক্রান্ত ফুসফুস
  • আক্রমণের তীব্রতায় একসময় আপনি প্রসাব পায়খানায় যাওয়ার মত কাজও করতে পারবেন না।টয়লেট থেকে ফেরার পর তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • ফুসফুস একেবারে কাজ করা বন্ধ করতে পারে ফলে মৃত্য ঘটে।
  • ফুসফুসে পচন ধরতে পারে।
  • ফুসফুসে বড় বড় ছিদ্র তৈরি হতে পারে।
  • হার্ট এটাকে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
  • স্বাভাবিক কাজ করতেও অক্ষম হতে পারেন।
  • তীব্র আক্রমণে রোগী চিরদিনের মত সজ্জাশায়ী হতে পারে।

এমফাইসিমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি যাদের

যে সকল বিষয়ের কারণে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় সেগুলো হলোঃ

  • দৈনিক ২০ টি সিগারেট পানকারী তার বয়স ৪০ হওয়ার মধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হবেন।
  • বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকলে।
  • ধোঁয়া বা ধূলাবালির সংস্পর্শে থাকলে। বিভিন্ন ধরনের দূষণ বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে থাকলে।
  • প্রতিদিন মশার কয়েল ব্যবহারকারী।
  • কিটনাশক প্রস্তুতকারী শ্রমিক।
  • পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
  • শ্বেতাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতিদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ৪২ গুণ কম।

এমফাইসিমার চিকিৎসা

হাঁপানি,সিওপিডি ও ব্রঙ্কাইটিস রোগের মতই এমফাইসিমার চিকিৎসা করা হয়।ফুসফুসে ইনফেকশন থাকলে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে জীবাণুর বিনাশ করা হয়।এই রোগ সম্পূর্ণ ভালো করার চিকিৎসা আজও আবিষ্কার হয় নি।তবে শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে রোগীর জীবনযাপন সহজ করা যায়।৪০ বছরের বেশি বয়সি রোগীদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন দেয়া হয় যাতে এসব জীবাণু খুব সহজে ফুসফুস কে আক্রমণ করতে না পারে।

এমফাইসেমার ঔষধ

শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করা হয়। নিচের ছকে এমফাইসিমার ঔষধগুলো দেখুন।

ঔষধের ধরণঔষধের নাম
ব্রঙ্কোডায়ালেটর ইনহেলারসালবিউটামল,ইপ্রাসল,ট্রায়োটপিয়াম,বুডিকর্ট
নেবুলাইজারতীব্র অ্যাটাকের সময় সরাসরি ঔষধ ফুসফুসে প্রবেশ করাতে নেবুলাইজার মেশিন ব্যবহার করা হয়।
স্টেরয়েড ইনহেলারখুব সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে শর্ট কোর্স স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়।

এমফাইসেমার অপারেশন বা সার্জারি

সার্জারির নামধরণ
ভাল্ব স্থাপনফুসফুসের ভেতর অনেকগুলো অ্যালভিওলাস একসাথে ধ্বংস হলে সেখানে বলের মত বায়ুপূর্ণ ফাঁকা স্থান সৃষ্টি হয় একে বুলা বলে। বুলা সৃষ্টি হলে ব্রঙ্কোস্কপির মাধ্যমে সেখানে ভাল্ব বসানো হয়।
ফুসফুস কেটে ছোট করাফুসফুস বড় হয়ে গেলে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হয় তখন অপারেশনের মাধ্যমে ফুসফুস কেটে ছোট করা হয়।এর নাম লাং ভলিউম রিডাকশন সার্জারি বা এলভিআরএস।
বুলেকটোমিফুসফুসের বুলা কেটে বাদ দেয়া হয়।

এমফাইসেমা হলে করণীয়

  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন।
  • ফুসফুসের ব্যায়াম করবেন।বক্সব্রিদিং করবেন।
  • ধূমপান একদম করবেন না।
  • বাহিরে চলাফেরার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন।
  • সবসময় সাথে ইনহেলার রাখবেন।
  • মানসিক দুশ্চিন্তা করবেন না।

এমফাইসিমা কিভাবে পরীক্ষা করবেন

এমফাইসিমা পরীক্ষা

এমফিসেমা রোগ শনাক্ত করার জন্য নিম্নোক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়

পরীক্ষার নামপরীক্ষার পদ্ধতি
কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফিসিটি স্ক্যান ও এক্স-রে চিত্রগুলি একত্র করে ফুসফুসের ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
রক্ত পরীক্ষাফুসফুস কতটা ভাল অক্সিজেন স্থানান্তর করে এবং রক্ত প্রবাহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করে তা নির্ধারণ করতে রক্তে অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইড এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
স্পাইরোমেট্রিফুসফুস কতটা বায়ু ধরে রাখতে পারে এবং ফুসফুসে কতটা বাতাস প্রবাহিত হয় তা পরিমাপ করা হয়।ফুসফুসের ফাংশন পরীক্ষা করা হয়।

এমফাইসিমা প্রতিরোধের উপায়

  • নিজে বিড়ি বা সিগারেট খাবেন না।পরোক্ষ ধূমপান এরিয়ে চলুন।
  • রাসায়নিক ধোঁয়া বা ধুলোর সঙ্গে কাজ করার সময় মাস্ক পরেন।
  • রাস্তায় চলাচলের সময় মাস্ক পরবেন।
  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করবেন।
  • স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসবাস করবেন না।
  • ফুসফুসের ইনফেকশন হলে দ্রুত চিকিৎসা করাবেন।

Tag: Emphysema in Bangla, এমফিসেমা,অ্যামফিজিমা,অ্যামফিসেমা,ফুসফুসের পচন রোগ,

লেখক
জর্জ ডি নোয়েল
এমডি, পালমোনারি ডিজিজ
নর্থ ডাকোটা,যুক্তরাষ্ট্র

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।