ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কী?ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর লক্ষণ#

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কী?ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর লক্ষণ#

করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর থেকে ভাইরাসটি রূপ কদল তরে বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছে যেমন- আলফা,বিটা,ডেলটা ইত্যাদি। এবার এটি ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট নাম ধরে নতুন করে আক্রমন শুরু করেছে।আসুন আজ জেনেনেই এই ভইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কী?ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর লক্ষণ#

আপনি আরো পড়তে পারেন…. করোনার ঔষধ কী? কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ#

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কী?

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট হল করোনা ভাইরাসের একটি নতুন রূপ। এটি খুবই দ্রুত সংক্রমিত হয়। এর জিন ও স্পাইক প্রোটিন দ্রুত রূপ পরিবর্তনে সক্ষম।

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কোথায় আবিষ্কার হয়?

২৪ নভেম্বর ২০২১-এ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত করা হয়।South African Medical Association এর পরিচালক Dr. Angelique Coetzee এর নেত্রীত্বে এটি আবিষ্কার করা হয়।নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে South Africa’s National Institute of Communicable Diseases (NICD) প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-কে এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে রিপোর্ট করে।

ওমিক্রন নামকরণঃ

২৬ নভেম্বর ২০২১-এ, WHO এটিকে B.1.1.529 নামে নামকরণ করে। ২৮ তারিখে WHO এটিকে গ্রীক বর্ণমালার পঞ্চদশ বর্ণ ওমিক্রনের নামানুসারে নতুনভাবে নামকরণ করে।

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর লক্ষণ

এই ভাইরাস আক্রমণ করলে নিচের উপসর্গ দেখা যায়। যদিও এখন পর্যন্ত ভালভাবে সকল লক্ষণ পরযবেক্ষণ করা সম্ভব হয় নি।

অমিক্রন ভেরিয়েন্ট এর উপসর্গ

১। চরম দুর্বলতা

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর লক্ষণ চরম দুর্বলতা

এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী তীব্র দুর্বল অনুভব করে। সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে মন চায়। স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ করতেও মন চায় না। যেকোন বয়সের মানুষ আক্রান্ত হলে এ ধরণের তীব্র দুর্বলতায় ভোগে। সময়ের সাথে সাথে দুর্বলতা এমন পর্যায়ে পৌছায় যে রোগী বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না।

২।”scratchy throat”

অমিক্রন ভেরিয়েন্ট এর উপসর্গ "scratchy throat"

এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে রোগীর “scratchy throat” দেখা যায় মানে গলার ভেতর অস্বস্তিকর চুলকানি অনুভব হয়। রোগীর সবসময় মনে হয় গলার ভেতর হাত দিয়ে একটু আরাম করে চুলকাতে পারলে বেশ শান্তি পাওয়া যেত। এটাই এই ভ্যারিয়েন্টের প্রধান লক্ষণ।

  • ৩। গায়ে ব্যাথা ও মাথা যন্ত্রণা থাকে রোগীর।
  • ৪। রোগীর বেশ জ্বর হয়।
  • ৫। পেশী ব্যথা এবং শুকনো কাশি হয়।
  • ৬। তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা।
  • ৭। পালস্ রেট বেড়ে যায়।

Info source: UNICEF

সাধারণ করোনাভাইরাস এর সাথে ওমিক্রন এর পার্থক্য

সাধারণ করোনাভাইরাস ওমিক্রন
কোভিড-১৯ এর আক্রমণে কিন্তু রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন মারাত্মকভাবে কমে যেত।রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল কমে যায় না খুব একটা।
রোগী তীব্র শ্বাসকষ্টে মারা যেত। এই ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণে এরকম ঘটনা এখনো দেখা যায়নি।
করোনা ভাইরাসের আক্রমণে রোগীর স্বাদ,গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা কমে যেত এই ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণে রোগীর স্বাদ,গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা মোটামুটি ঠিক থাকে।
মৃত্যু ঝুঁকি বেশিএই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণ না করেও পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে।

কতটা ভয়ংকর এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট?

ভাইরাস গঠিত হয় ২টি প্রধান উপাদান নিয়ে। একটি হলো নিউক্লিক এসিড অপরটি প্রোটিন আবরণ। করোনাভাইরাস এর প্রোটিন আবরণে কাঁটার মত স্পাইক প্রোটিন থাকে। এটির সাহায্যে ভাইরাস মানবদেহের কোষে প্রবেশ করে।

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর গঠন
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর গঠন

এই প্রোটিন কে মারার জন্য বা দেহ কোষে প্রবেশ বাঁধা দেয়ার জন্য টিকা দেয়া হয়। অর্থাৎ বলা যায় স্পাইক প্রোটিনের উপর ভিত্তি করেই টিকা তৈরি করা হয়। এক ধরণের স্পাইক প্রোটিনের জন্য যে টিকা তৈরি করা হবে তা অন্য ধরণের স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে কাজ করবে না। কোরোনার যে স্পাইক প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে টিকা তৈরি করা হয়েছিল তা এখন আর নেই এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে।

স্পাইক প্রোটিনের বদল ঘটেছে ৩০ বারের বেশি। একারণে করোনার প্রচলিত টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কোন কাজ করবে না।এদিকে ওমিক্রন এখন পর্যন্ত ৫০ বার রূপ বদল করেছে।

করোনার টিকা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে কতটা কার্যকর?

যেসব ব্যক্তি করোনাভাইরাস এর ফুল ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন তারা এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মানে টিকা এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়।

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে করণীয়:

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এরমধ্যে রয়েছে-

  • ১. সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং WHO স্বীকৃত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আগত যাত্রীদের নৌ,বিমান,স্থল বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্ক্রিনিং করতে হবে।
  • ২. সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সমাগম নিরুৎসাহিত করা।
  • ৩. ঘরের হতে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
  • ৪. হোটেলে ধারণক্ষমতার হাফ পার্সেন্ট লোক বসে খাবার গ্রহণ করবে।
  • ৫.পর্যটন কেন্দ্র, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, বিয়েসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে ধারণক্ষমতার হাফ পার্সেন্ট লোক সমাগম অনুমোদন করতে হবে।
  • ৬. মসজিদসহ সব ধরনের উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
  • ৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
  • ৮. আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে।
  • ৯. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
  • ১০. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও সেবা গ্রহীতাদের নাক, মুখ ঢেকে মাস্ক পরতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
  • ১১. টিকা কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করতে হবে।
  • ১২. করোনা পজেটিভ এবং করোনা লক্ষণযুক্ত কারুর সংস্পর্শে যারা আসবেন তাদের কোয়ারান্টিনে নিতে হবে।
  • ১৩. করোনা লক্ষণ দেখা দিলে আইসোলেশনে রাখতে হবে ও নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে।
  • ১৪. অফিসে প্রবেশ ও অবস্থানের সময় সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
  • ১৫. কারোনা নিয়ন্ত্রণ ও কমাতে কমিউনিটি পর্যায় পর্যন্ত জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালাতে হবে। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে।

Info source: স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।