টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড নতুন লালা গ্রন্থি

টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড নতুন লালা গ্রন্থি

২০২০ সালের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী একটি আবিষ্কার টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড আবিষ্কার। প্রথমে জানাযাক স্যালিভারি গ্ল্যান্ড কি?

টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড
টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড

আপনি আরো পড়তে পারেন…. বাঁশ ফুল।বাঁশ ফল বাঁশ ফলের ঔষধি গুণ …. আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি মৃত্যু হয়?

স্যালিভারি গ্লান্ড বা লালাগ্রন্থি

আমরা খাবার মুখে দেয়ার পর চিবাই এর পর খুব সহজে গিলে ফেলি। কিন্তু অনেক্ষণ কিছু না খেয়ে থাকার পর খাদ্য গিলতে চেষ্টা করলে খাদ্যনালীতে খাবার আটকে যায়।

কেন এমন হয়?  এর কারণ হলো মুখের ভেতর এক ধরণের পিচ্ছল তরল পদার্থ থাকে যা লালা নামে পরিচিত। এই লালার সাথে খাদ্য মিশে খাদ্য পিচ্ছিল হয় এবং সহজে খাদ্য নালী পার হয়ে পেটে যায়। মুখের লালা কমে গেলে বা শুকিয়ে গেলে খাদ্য আর পিচ্ছিল থাকে না ফলে খাদ্য গলায় আটকে যায়।

দিনে মানুষ অনেকবার থুতু ফেলে এই থুতুই হলো লালা যাকে সোজা বাংলায় বলে ছেপ। লালা মুখের ভেতরের কিছু বিশেষ স্থান থেকে ক্ষরিত হয়,  এই স্থান গুলোকে বলে লালাগ্রন্থি।

লালা গ্রন্থি
লালা গ্রন্থি

মানবদেহে তিনটি প্রধান লালাগ্রন্থির কথা বলা হয়েছে। এগুলো হ’ল: প্যারোটিড, সাবম্যান্ডিব্যুলার ও সাব-লিঙ্গুয়াল। কিন্তু এখন নতুন একজোড়া লালাগন্থির সন্ধান পাওয়া গেছে যার নাম দেয়া হয়েছে ‘টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড’।

আবিষ্কারের পটভূমি

নেদারল্যান্ডস ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের (NCI) বিশিষ্ট চিকিৎসক Wouter Vogel একজন রেডিয়েশন অঙ্কলজিস্ট। মস্তিষ্ক, ঘাড় অথবা ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা দীর্ঘদিন ধরে রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়ার ফলে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে তাদের লালা গ্রন্থি বা স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফলস্বরূপ, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, হজমের সমস্যা অথবা মুখগহ্বরের অভ্যন্তরে সংক্রমণ ইত্যাদি নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। এমনই কিছু রোগীর, রেডিয়েশন থেরাপির পর তাদের স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দেখতেই Vogel মুখের নাসোফেরেঞ্জিয়াল অংশের স্ক্যানিং শুরু করেন। আর তখনই এই অদ্ভুত পর্যবেক্ষণের অংশীদার হয়ে ওঠেন NIC এর চিকিৎসকেরা।

Vogel একটি নতুন পদ্ধতিতে স্ক্যানিং শুরু করেছিলেন যাকে positron emission tomography (PET) এবং computed tomography (CT) নামক দুটি স্ক্যানিং পদ্ধতির সংমিশ্রণ বলা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে একটি রেডিও এক্টিভ ট্রেসার ব্যবহার করা হয় যা প্রোস্টেট স্পেসিফিক মেমব্রেন অ্যান্টিজেন (PSMA) নামে একটি প্রোটিনের সাথে বাইন্ড করে।

সাধারণ ভাবে শুধুমাত্র প্রোস্টেট ক্যান্সার রোগীদের শরীরে এবং সুস্থ মানুষের স্যালাইভারি গ্ল্যান্ডে এই প্রোটিন উপস্থিত থাকে। যেহেতু Vogel এর চিকিৎসাধীন থাকা রোগীরা কেউই প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন না তাই তাঁদের দেহে স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড ছাড়া আর কোথাও PSMA উপস্থিত থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

আমাদের দেহে প্রধানত তিনটি মেজর স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড থাকে এবং প্রায় ১০০০ ছোটো ছোটো অথবা মাইনর স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড উপস্থিত। Vogel রোগীর গলায় স্ক্যানিং করার সময় হটাত লক্ষ্য করেন যে মেজর দুটি স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড ছাড়াও, গলার ওপরের অংশে অর্থাৎ নাসোফেরেঞ্জিয়াল অঞ্চলে অধিক পরিমাণে PSMA উপস্থিত।

টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্লান্ড স্ক্যানিং Image
টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্লান্ড স্ক্যানিং Image

অথচ তথ্য বলছে এই অংশে কোনো মেজর স্যালাইভারি গ্ল্যান্ডের অস্তিত্বই নেই। Vogel তাঁর এই পর্যবেক্ষণে এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে তিনি NCI এর oral এবং maxillofacial সার্জেন Matthijs Valstar এর পরামর্শ নেন। বিভিন্ন যুক্তি – প্রতিযুক্তির পর ১১জন বৈজ্ঞানিকের একটি দল গঠিত হয় এবং প্রায় ১০০ জন মানুষের নাসোফেরেঞ্জিয়াল অঞ্চলের স্ক্যানিং শুরু হয়। বলাই বাহুল্য, প্রতিক্ষেত্রেই এই নতুন টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড র উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

টিউবারিয়াল লালা গ্রন্থির সংখ্যা

নতুন আবিষ্কৃত এই গ্ল্যান্ড টি সংখ্যায় একজোড়া এবং গড় দৈর্ঘ্য ৪ সেন্টিমিটার। 

টিউবারিয়াল লালা গ্রন্থির নামকরণ

নাসোফেরেঞ্জিয়াল অঞ্চলের যে অংশে এই গ্ল্যান্ড টি অবস্থিত তার নাম torus tubarious এবং এই নাম অনুযায়ী গ্ল্যান্ডটির নামকরণ করা হয় tubarial gland। 

টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড এর অবস্থান

Vogel এর মতে এই গ্ল্যান্ডটির অবস্থান নাসা গলবিলের মেঝেতে। গ্লান্ডটি এমন এক অবস্থানে উপস্থিত যে তা ন্যাসাল এন্ডোস্কোপি ছাড়া সাধারণ সার্জারির মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এছাড়া এর আগে PET/CT এর মত পদ্ধতি অবলম্বন করে PMSA এর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথাও কেউ ভাবে নি আর ঠিক এই কারণেই অনাবিষ্কৃত ছিল এই স্যালাইভারি গ্ল্যান্ডটি।

টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্লান্ড এর অবস্থান
টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্লান্ড এর অবস্থান

টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্লান্ড এর গুরুত্ব

এই গ্রন্থির আবিষ্কার ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মাথা এবং ঘাড়ে রেডিয়েশন দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে লালাগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সতর্ক না হলে খাওয়া/চিবানো বা কথা বলার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।

মন্তব্য

কিন্তু বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে এটি মোটেই কোনো মেজর স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড নয় বরং বলা যেতে পারে নতুন আবিষ্কৃত কিছু মাইনর স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড।

Of course, you could say that it’s just a cluster of minor salivary glands that are all over the place in the mucous membranes of the head and neck.

এছাড়া ক্যান্সার রোগীদের রেডিয়েশন থেরাপির প্রকোপে এই গ্ল্যান্ডটি ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নিয়েও গবেষণার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তা সত্বেও, এই নতুন আবিষ্কার যে মানুষের আনাটমির একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিল এ কথা বললে বোধহয় অত্যুক্তি হয় না।

Tubarial salivary gland description in Bangla

Tubarial salivary gland description in Bangla,

লেখক

শ্রিময়ী চক্রবর্তী ,Centre for Biomedical Research থেকে PhD করেছেন।

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।

All Photo credit Goes to

Science direct