নবজাতকের নাভীর প্রদাহ!শিশুর নাভীতে ঘাঁ ও নাভী পাকা!

নবজাতকের নাভীর প্রদাহ!শিশুর নাভীতে ঘাঁ ও নাভী পাকা!

নাভীর প্রদাহের আসল পরিসংখ্যান জানা নেই । উন্নত দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে এটি কম ঘটে। সম্ভবত, যেসব বাচ্চাকে হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাড়িতে যাদের ঠিকমত পরিচর্যা করা হয় না তাদের নাভীর প্রদাহ বেশি হয়।

একটি বড় হাসপাতালের ৬ বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, হেক্সাক্লোরোফেন দ্বারা যাদেরকে নিয়মিত গোসল করানো হয়েছে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক ওজনের বাচ্চাদের ০.৫%-এর এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চাদের ২.০৮%-এর নাভীর প্রদাহ হয়।

গড়ে ৩.২ দিন বয়সের বাচ্চাদের এই নাভীর প্রদাহ সবচেয়ে বেশি হয়। উন্নয়নশীল দেশে নাভীর প্রদাহ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এক হাসপাতাল জরিপে দেখা গেছে, নাভীর প্রদাহের ৪৭% ক্ষেত্রে রক্তদূষণ (sepsis) দেখা দেয় এবং এই নাভীর প্রদাহের কারণেই ২১% ক্ষেত্রে অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হয়।

নবজাতকের নাভীর প্রদাহ!শিশুর নাভীতে ঘাঁ ও নাভী পাকা!

আপনি আরও পড়তে পারেন …… শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি! কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার!শিশুর ফুসফুসের রোগ ও তার প্রতিকার!

শিশুর নাভীতে ঘাঁ হয় কেন?

বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে শিশুর নাভিতে ঘাঁ হয়।

শিশুর নাভী পাকে কেন?

অনেক ধরণের অণুজীব নাভীতে সংখ্যাবৃদ্ধি করলে নাভী পেকে যায় এবং পুঁজ হয়।

নবজাতকের নাভীতে প্রদাহের কারণ

উন্নত দেশে যেসব জীবাণু দ্বারা নাভীর প্রদাহ হয়ে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Staphylo coccus aureus, Escherichia coli group Streptococcus । উন্নয়নশীল দেশে বাড়িতে অথবা হাসপাতালে কোন কোন জীবাণু দ্বারা এই প্রদাহ হয় সে-সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।

এক জরিপে দেখা গেছে যে, যারা হাসপাতালে জন্মে তাদের ৭২%-এর নাভীর প্রদাহ হয়ে থাকে গ্রাম- নিগেটিভ জীবাণু দ্বারা (যেমন Klebsiella, E. coli)। আর যারা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করে তাদের গ্রাম-পজেটিভ জীবাণু (যেমন Saphylococcus aureus) দ্বারা বেশি হয়।

বাচ্চা জন্মের প্রথম ৩ দিন নাভী সাধারণত Clostridium tetani নামক জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে। ফলে, বাচ্চাদের টিটেনাস বা ধনুষ্টঙ্কার হতে পারে।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বা অস্বাস্থ্যকরভাবে নাভী কাটলে অথবা অপরিষ্কার জিনিস নাভীতে ব্যবহার করলে নাভীর প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে।

শিশুর নাভীর প্রদাহের প্রকারভেদ

নাভীর প্রদাহ দুই ধরনের হতে পারে: স্থানীয় বা ভিতর-বিস্তারী। শেষেরটি রক্তনালী বন্ধ হতে বাধা দেয়, ফলে জীবাণু রক্তপ্রবাহে চলে যায়। কোনো কোনো সময় এই প্রদাহের ফলে জীবাণু পেটের ভিতরের ঝিল্লিকে সংক্রামিত করতে পারে। তখন ঝিল্লির প্রদাহ শুরু হয়। একে পেরিটোনাইটিস বলে। সেজন্য নাভীর প্রদাহ খুবই মারাত্মক। এসব ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা করা দরকার।

নবজাতকের নাভীর প্রদাহের লক্ষণ

  • নাভীর চারদিক লাল হয়ে-যাওয়া
  • নাভী ফুলে-যাওয়া
  • নাভীতে ব্যথা-হওয়া নাভীর প্রদাহের প্রধান লক্ষণ।
  • এক্ষেত্রে নাভী দিয়ে প্রায় সব সময় রক্ত পড়ে।
  • নাভীমূল থেকে পুঁজও পড়তে পারে। সজোরে অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করলে বা ঠাণ্ডা চিমটা ব্যবহার করলেও নাভী লাল হতে পারে।
  • জ্বর, দূর্বলতা, এবং খাবারে অনিহা ও অভ্যন্তরীণ জটিলতা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১/৩ ভাগ ক্ষেত্রে প্রদাহের স্পষ্ট কোনো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায় না।

নবজাতকের নাভীর প্রদাহ চিকিৎসা

নাভীর প্রদাহ সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, কখন চিকিৎসা শুরু করা উচিত। যখন নাভীর চারদিক লাল হওয়া শুরু করে তখন,নাকি যখন থেকে পুঁজ পড়া শুরু করে অথবা ফুলে যায় তখন ।

নাভীর গোড়ার লাল-হওয়া অংশের আয়তনের ওপর নির্ভর ক’রে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা শুরু করতে হয়। যদি এটি ২ সে.মি.-এর বেশি হয় তাহলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। আর যদি ২ সে.মি.-এর কম হয় তাহলে লক্ষ রাখতে হবে এর আয়তন বাড়ছে কি না।

যদি বাচ্চার জ্বর, দুর্বলতা এবং খাবারে অনীহা দেখা যায় তবে এটিকে ব্যাকটেরিয়ার ভীষণ প্রদাহ মনে ক’রে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে এবং অ্যান্টিবায়োটিক শিরাপথে দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে মাংসপেশীতেও দেওয়া যেতে পারে ।

নবজাতকের নাভীর প্রদাহের ঔষধ

অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করতে হবে কী ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ তার ওপর নির্ভর করে। যদি তা না জানা হয় তাহলে অ্যাম্পিসিলিন ও জেন্টামাইসিন দিয়ে যুগপৎ চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

বাচ্চাদের ধনুষ্টংকার-এর ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে পেনিসিলিন শিরাপথে দিতে হবে এবং বিষক্রিয়া দমনের জন্য অ্যান্টিটক্সিন-এর সাহায্যে ব্যবস্থা হবে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৬% শিশুর ধনুষ্টংকারের সাথে নাভীর প্রদাহ ও রক্তের সংক্রমণও (sepsis) রয়েছে। সুতরাং শিশুদের ধনুষ্টংকারের ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার কথাও চিন্তা করতে হবে এবং শিশুর হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধনুষ্টংকারের চিকিৎসা ছাড়াও যথাযোগ্য অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

নবজাতকের নাভীর প্রদাহ প্রতিরোধ

নবজাতকের নাভির প্রদাহ প্রতিরোধের উপায়

শিশুর জন্মের পরে ধারালো ব্লেড বা কাঁচি দিয়ে নাভী কাটতে হবে। সেটিকে অবশ্যই আগে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অপরিষ্কার জিনিস নাভীতে লাগানো যাবে না, যেমন মাটি, গোবর, ময়লা কাপড়, ইত্যাদি। প্রথম কয়েকদিন—সাধারণত ৫-৭ দিন—নাভী ভালোভাবে ক্লোরহেক্সিডিন দিয়ে পরিষ্কার করলে নাভীতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

Tag: শিশুর নাভীতে ঘাঁ হলে কি করবেন?,শিশুর নাভী পাকলে কি করবেন?,শিশুর নাভীতে ঘাঁ হলে চিকিৎসা,শিশুর নাভীতে ঘাঁ প্রতিরোধের উপায় কী?,শিশুর নাভী পাকার চিকিৎসা,শিশুর নাভী পাকা প্রতিরোধের উপায় কী?,নবজাতকের নাভীর প্রদাহ নবজাতকের নাভীর প্রদাহ

লেখক
মোঃ আবজালুল বাশার
আইসিডিডিআর,বি