শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগ কী? ব্রংকিওলাইটিসের কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগ কী? ব্রংকিওলাইটিসের কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

নিউমোনিয়ার মতো ব্রংকিয়োলাইটিস শিশুদের একটি সাধারণ রোগ। এ রোগে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ঘটে, যার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে।সময় বিশেষে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সাধারণত দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।শীতকাল ও বসন্তকালের শুরুতে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।ছেলেদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে এ-রোগ বেশি দেখা যায়।

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগ কী? ব্রংকিওলাইটিসের কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

আপনি আরও পড়তে পারেন …… শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি! কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার! … শিশুর ফুসফুসের রোগ ও তার প্রতিকার!শিশু পানিতে ডুবে গেলে কি করবেন!

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগের কারণ

সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগ হয়ে থাকে। রেসপিরেটরী সিনসিটিয়াল ভাইরাস (RSV) এ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ । তাছাড়া, এ্যাডেনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রাইনো ভাইরাস ও এন্টারো ভাইরাস এ রোগের কারণ হতে পারে। যে-মায়েরা ধুমপান করে তাদের বাচ্চাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা গেছে।

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগের লক্ষণ

ব্রংকিওলাইটিস সনাক্তকরণ

এ-রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের সাধারণত নিচের লক্ষণ প্রকাশ পায়-

  • সর্দি-কাশি হয়।
  • সহজে কাশি ভাল হয়না।
  • বারবার হাঁচি হয়,নাক দিয়ে পানি পরে।
  • হাল্কা বা বেশি জ্বর হয়,ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
  • তাছাড়া, কমবেশি শ্বাসকষ্ট হবে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শব্দ হতে পারে।
  • এই সময় শিশুদের খেতে অসুবিধা হতে পারে।

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগ হলে করণীয়

এ-রোগ হলে শিশুকে কিছু পরিচর্যা করা যায়,যেমন-

  • তরলজাতীয় খাবার বেশি দিতে হয় এবং জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দিতে হবে।
  • শিশুর শ্বাসকষ্ট যদি বেড়ে যায় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • তাছাড়া, শিশুর যদি বমি হয় এবং তরলজাতীয় খাবার খেতে না পারে, তাহলেও শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
  • শিশুর ত্বক, বিশেষ করে ঠোট ও নাক, যদি নীলচে হয়, তাহলে অবশ্যই শিশুকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
  • আর শিশুর যদি হার্টের জন্মগত কোনো সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রেও ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

শিশুর এই রোগ যদি মৃদু পর্যায়ে থাকে তবে ডাক্তার মাকে কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন, তা হলো:

  • শিশুকে আরামপ্রদ পরিবেশে ঢিলে-ঢালা পোশাকে রাখতে হবে;
  • তরল খাবার পরিমাণমত দিতে হবে, যাতে পানিশূন্যতা না হয়;
  • বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়াতে হবে; কিছুক্ষণ পরপর শ্বাস-প্রশ্বাস ও শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • আর মাকে এই ধারণা দিতে হবে যে, সময়মত সঠিক চিকিৎসা হলে এ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে না।
  • তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি বেড়ে যায় তাহলে শিশুকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগের চিকিৎসা

এ রোগের জন্য শিশুরা যেধরনের চিকিৎসা হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পেয়ে থাকে তা হলো:

  • শিশুকে অক্সিজেন দেওয়া হয়।
  • ঠাণ্ডা ঘরে রাখা হয়, যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়।
  • মাথা ও বুক বালিশের উপর একটু উঁচু করে রাখা হয়, যাতে ঘাড় ও গলার অবস্থান শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য সহায়ক হয়।

শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগের ঔষধ

কোনো কোনো সময় শিরায় স্যালাইনজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। সাধারণত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয় না। কিন্তু সঙ্গে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।এ রোগের সাথে জন্মগত হৃদরোগ থাকলে এন্টিভাইরাল অর্থাৎ ভাইরাস ধ্বংসকারী ওষুধ দেওয়া হয়।সাধারণত ব্রংকোডাইলেটরজাতীয় ওষুধ, যেমন সালবিউটামল দেওয়া হয়। করটিকোস্টারয়েড দিয়ে এ রোগের চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

ব্রংকিওলাইটিস ও ব্রংকাইটিস এর পার্থক্য

ব্রংকিওলাইটিসব্রংকাইটিস
ব্রংকিওল আক্রান্ত হয়।ব্রংকাস আক্রান্ত হয়।
শিশুদের বেশি হয়।বড়দের বেশি হয়।

লেখক
সায়লা চৌধুরী