হাঁপানি বা অ্যাজমা কী?ব্রংকিয়াল অ্যাজমার কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

Table Of Contents
  1. হাঁপানি বা অ্যাজমা কী?ব্রংকিয়াল অ্যাজমার কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

হাঁপানি বা অ্যাজমা কী?ব্রংকিয়াল অ্যাজমার কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

মানবদেহের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে ফুসফুস অন্যতম। আমাদের দেহে এক জোড়া ফুসফুস বা লাংস আছে। ফুসফুসের প্রধান কাজ হচ্ছে আমাদের দেহে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন প্রবেশ করানো ও অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বের করে দেওয়া।

এই প্রক্রিয়াকে শ্বসন বা রেসপিরেশন বলা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পাদনের জন্য ফুসফুসের ভেতরে ও বাইরে অসংখ্য ছোট বড় শ্বাসনালী বা ব্রঙ্কাস রয়েছে। ব্রংকিয়াল অ্যাজমা বা হাঁপানি মূলত শ্বাসনালীর একটি বিশেষ রোগ।

একজন সুস্থ মানুষের ফুসফুস তার শ্বাসনালীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন নিতে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করতে সক্ষম, কিন্তু অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের শ্বাসনালী ক্ষেত্র বিশেষে সরু হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ফুসফুস তা করতে পারে না। এর ফলে রোগীরা শ্বাসকষ্টে ভোগে। এটিই চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্রংকিয়াল অ্যাজমা নামে পরিচিত।

হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালি

আপনি আরও পড়তে পারেন ….. ইনহেলার ব্যবহার এর নিয়ম!নেবুলাইজার ব্যবহার! ….. ব্রংকাইটিস কী?ব্রংকাইটিসের কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা! ….. সিওপিডি কী? সিওপিডি কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের ব্যাপকতা

এক সময় মনে করা হতো যে, অ্যাজমা বা হাঁপানি ইউরোপ, আমেরিকা অথবা আমাদের সমাজের অভিজাত শ্রেণীর রোগ। কিন্তু তা ঠিক নয়, সব শ্রেণীর মানুষেরই এ-রোগ হতে পারে। আমাদের দেশেও সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এ রোগটি দেখা যায়।

অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা লক্ষণবিহীন অবস্থায় থাকে বলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চায় না। আমাদের দেশের জনগোষ্ঠির প্রায় ১০% মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মাত্রায় এই রোগ বিদ্যমান।

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের কারণ

হাঁপানি বা অ্যাজমার জন্য দু’টি বিশেষ কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে:

  • ১. বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা
  • ২. পরিবেশগত কারণ

১. বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা

হাঁপানিকে প্রধানত বংশানুক্রমিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ রোগের বংশগতি একটি জটিল বিষয়। বাবা-মা, নানা-নানী, দাদা-দাদী, ফুপু, খালা এরকম রক্তের সম্পর্কের নিকট আত্মীয়দের মধ্যে এই রোগের ধারাবাহিকতা পরিলক্ষিত হয়। তবে বংশগত ধারাবাহিকতা ছাড়াও এই রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে।

আমাদের দেশের অনেক রোগী বংশগত ধারাবাহিকতার সঠিক ইতিহাস বলতে পারে না, আবার অনেক রোগী (বিশেষত মহিলারা) ইচ্ছাকৃতভাবে তা গোপন করে থাকে। ফলে অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।

২. পরিবেশগত কারণ

পরিবেশ ও জলবায়ু এ রোগের আর একটি অন্যতম কারণ। নোংরা পরিবেশে এ রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। মোটরগাড়ি, চুলা ও কল-কারখানার ধোঁয়া এবং ধুলা রোগীর শ্বাসকষ্টকে বাড়িয়ে দেয়।

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ

সাধারণত হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীরা নিম্নোক্ত লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে:

হাঁপানি বা অ্যাজমার উপসর্গ
  • ১. শ্বাসকষ্ট
  • ২. দীর্ঘদিন যাবত কাশি
  • ৩. শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে বুকে অস্বাভাবিক শব্দ করা।
  • ৪. বুকে চাপ অনুভব করা অ্যাজমা রোগের লক্ষণগুলো বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়। দীর্ঘদিনের কাশি ও শ্বাসকষ্ট এ-রোগের দু’টি প্রধান লক্ষণ। কিছু রোগীর শ্বাসের সাথে বাঁশির মত শব্দ হয় অথবা শ্বাসকষ্টের সময়
  • তারা বুকে চাপ অনুভব করে। এ রোগের প্রবণতা পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  • এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা সকালে অপেক্ষাকৃত সুস্থ থাকে এবং বিকেল হলেই অসুস্থতার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং রাতে আরো প্রকট হয়।

যেসব বস্তু হাঁপানির যন্ত্রনা বৃদ্ধি করে

যেসব বস্তুর সংস্পর্শে হাঁপানির যন্ত্রনা বৃদ্ধি পায় সেগুলোকে হাঁপানি বা অ্যাজমা ট্রিগার বলে।এটা মনে রাখতে হবে যে,সব হাঁপানি রোগী একই ট্রিগার দ্বারা প্রভাবিত হয় না। প্রতিটি রোগীর নিজস্ব ধরনের ট্রিগার থাকে যা রোগী নিজে চিহ্নিত করতে পারে বা নাও পারে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা ট্রিগার তালিকা

হাঁপানি বা অ্যজমা ট্রিগার

বিশেষ কোনো খাবার,সুগন্ধি, ফুলের রেণু, ঠাণ্ডা বাতাস,ঠাণ্ডা পানীয়, ময়লা পরিবেশ, গৃহপালিত প্রাণীর লোম, মেঝের কার্পেটের ময়লা, ধুলাবালি, ধোঁয়া,কয়েলের ধোঁয়া,অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য ব্যথানাশক ঔষধ, প্রভৃতির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে।

কোনো কারণে আবেগজনিত চাপ ও মানসিক অস্থিরতা হাঁপানির যন্ত্রণা বৃদ্ধি করে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগনির্ণয়

অ্যাজমা রোগ নির্ণয়ে বিশেষ কোনো ব্যায়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচ্য:

  • ১. রোগীর বয়স
  • ২. রোগীর লিঙ্গ
  • ৩. পরিবারের অ্যাজমা-র ইতিহাস
  • ৪. রোগী ধূমপায়ী কি না সাধারনত

১৫-২৫ বছর বয়সের রোগীরা এ-রোগের লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়, যাদের একটি বিশাল অংশ নারী। হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের সাথে বিশেষ একটি রোগের কিছু সামঞ্জস্য রয়েছে।

এ রোগটি ক্রনিক অবস্ট্রারিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) নামে পরিচিত। এ-রোগে আক্রান্ত রোগীরাও কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে শব্দ করা এসব লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে। সিওপিডি-তে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত ধূমপায়ী হয়ে থাকে, যাদের অধিকাংশই পুরুষ, মধ্যবয়স্ক বা বৃদ্ধ ।

অ্যাজমা রোগের চিকিৎসা

আমাদের দেশে হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের চিকিৎসা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিভিন্ন সময় তারা অ্যাজমার চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারের শিকার হয়।

‘হাঁপানি থেকে চিরমুক্তি’ ‘২৪ ঘণ্টায় ফলাফল, ইত্যাদি চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের খপ্পরে পড়ে অনেকেই প্রতারিত হয়। যারা এ-ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পাতে তারা কিছু ওষুধ বিক্রি করে থাকে, যাতে স্টেরয়েডজাতীয় উপাদান থাকে বলে সাময়িকভাবে হাঁপানি থেকে রোগীরা মুক্তিলাভ করলেও পরবর্তীতে অনেক জটিলতার শিকার হয়।

এজন্য রোগীদের যে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে তা হলো, হাঁপানি বা অ্যাজমা পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও নিয়মানুবর্তিতা দ্বারা এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দ্বিতীয়ত, তাদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা হাঁপানি বা অ্যাজমা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ইনহেলার দিয়ে থাকেন।

হাঁপানি বা অ্যজমা রোগের ঔষধ

হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং সঠিক ওষুধ দ্বারা এটি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।হাঁপানি বা অ্যজমা রোগের ২ ধরনের ওষুধ আছে।

নিবারক ওষুধ বা ব্রঙ্কোডাইলেটর

  • নিবারক ওষুধ শ্বাসনালীতে মুক্ত হয় তাই এটি ব্রঙ্কোডাইলেটর নামে পরিচিত।
  • নিবারক ওষুধ মারাত্মক হাঁপানির আক্রমণে তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয় দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ দেয় না।
  • কাশি, বাঁশির শব্দ, বক্ষে আঁটোসাঁটো ভাব ও শ্বাসকষ্ট থেকে তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেয়।
  • শ্বাসনালির পেশির দৃঢ়তাকে শীথিল করে ফলে রোগী দ্রুত আরাম পায়।

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের উল্লেখযোগ্য ব্রঙ্কোডাইলেটর

সালবুটামল, টারবুটালিন
বর্তমানে মারাত্মক অ্যাজমা (হাঁপানি) আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ইনহেলড সালবুটামল হল শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি৷

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের নিয়ন্ত্রক ওষুধ

  • নিয়ন্ত্রক ওষুধ আক্রমণ প্রতিহত করে।
  • দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়।শ্বাসনালীতে প্রদাহ (ফোলা) ও শ্লেষ্মা উৎপাদন কম করে।এই ঔষধগুলো শ্বাসনালীকে কম যন্ত্রণাদায়ক করে এবং অ্যাজমা ট্রিগারের প্রতি কম প্রতিক্রিয়াশীল করে। এভাবে হাঁপানির আক্রমণ প্রতিহত করে রোগীর জীবনমান বৃদ্ধি করে।

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ

ইনহেল স্টেরয়েড – ফ্রুটিকাসোন, বুরেসোনাইড,সালমেটেরল, ফর্মেটেরল।হাঁপানির দীর্ঘকালীন নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হল ইনহেলড স্টেরয়েড ও দীর্ঘকাল কার্যকরী ইনহেলড ব্রঙ্কোডিলাইটরের মিশ্রন।

হাঁপানি বা অ্যাজমার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ইনহেলার বা নেবুলাইজার দিয়ে ব্যবহার করা ব্রঙ্কোডাইলেটর ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হার্টবিট বেড়ে যায় ও হালকা ঝিমুনি সহ ঘুম ঘুম খাব থাকে। শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখা দিতে পারে।এসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুরুতর নয় এবং কিছুক্ষণের জন্য থাকে।

হাঁপানি বা অ্যাজমার জন্য ইনহেলার ডিভাইস

হাঁপানি বা অ্যাজমার ঔষধ

হাঁপানি বা অ্যাজমার ট্যাবলেট ভালো না ইনহেলার ভালো

আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে যে, ইনহেলার ব্যবহার করলে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে অথবা ইনহেলার একবার ব্যবহার শুরু করলে সারা জীবন তা ব্যবহার করতে হয়—এসব কথা ভিত্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক। ইনহেলার দিয়ে চিকিৎসা করা অ্যাজমা রোগীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং নিয়মিত ইনহেলার দ্বারা চিকিৎসায় ক্রমান্বয়ে ইনহেলারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা যায়।

হাঁপানি বা অ্যাজমা ইনহেলার ব্যবহারের সুবিধা

১. ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন বুক ধড়ফড় করা, মুখমণ্ডল/ শরীর ফুলে যাওয়া, কিডনির সমস্যা হওয়া, রক্তে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া, ইত্যাদি। অথচ ইনহেলার শুধু ফুসফুসের শ্বাসনালীতে কাজ করে বিধায় সেটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ।

২. ট্যাবলেটজাতীয় ওষুধের চেয়ে ইনহেলার-এর কার্যকারিতা অনেক বেশি দ্রুত। কারণ ইনহেলার সরাসরি প্রয়োজনীয় অঙ্গ, অর্থাৎ শ্বাসনালীতে কাজ করে বিধায় এটি অতি দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমায়।

৩. দীর্ঘদিন ইনহেলার ব্যবহারের দ্বারা রোগীর শ্বাসনালীর পরিবর্তন (সংকুচিত হয়ে যাওয়া, শ্লেষ্মা জমে যাওয়া, শ্বাসনালীর অভ্যন্তরের মাংসপেশী শক্ত ও মোটা হয়ে যাওয়া) রোধ করা সম্ভব।
তবে ইনহেলার-এর মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা পেতে হলে রোগীকে অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলারের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।

বিশেষত স্পেসার নামক বিশেষ ব্যবস্থার দ্বারা ইনহেলারের ব্যবহার শিখতে হবে এবং তা নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করে যেতে হবে। রোগের মাত্রা বেশি হলে ইনহেলার ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, অ্যাজমা বা হাঁপানিতে ব্যবহৃত সব ওষুধ / ইনহেলার গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য নিরাপদ।

হাঁপানি বা অ্যাজমা প্রতিরোধ

অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধ বলতে রোগের লক্ষণসমূহ প্রতিরোধ করাকে বোঝায়। সাধারণভাবে, একজন অ্যাজমা রোগী বছরের অধিকাংশ সময় স্বাভাবিক জীবনযাপন করে থাকে।

ফুসফুসের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ, ঋতু পরিবর্তন, অ্যাসপিরিন বা এ-জাতীয় ওষুধের ব্যবহার, অতিরিক্ত ধোঁয়া অথবা ধুলাবালি,অতিরিক্ত পরিশ্রম, ইত্যাদি অ্যাজমা রোগীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করে। তাই ইনহেলার বা ওষুধের সাথে সাথে কিছু বিষয়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত,যেমন:

  • ১. যেসব খাবার বা জিনিসের প্রতি রোগী সংবেদনশীল, অর্থাৎ যা রোগীর হাঁপানিকে বাড়িয়ে তোলে সেসব পরিহার করা।
  • ২. অনেক সময় যেসব খাবার খেলে অ্যালার্জি হয় সেসব খাবার পরিহার করতে গিয়ে পুষ্টিকর অনেক খাবার, যেমন ইলিশ মাছ, মাংস, চিংড়ি, ডাল, শাক সব্জি প্রভৃতি খাওয়া থেকে রোগীরা বিরত থাকে। মনে রাখতে হবে যে, একজন রোগীর সব খাবারে অ্যলার্জি না-ও থাকতে পারে। কোন কোন খাবার থেকে তার অ্যালার্জি হয় তা বোঝার চেষ্টা করা এবং সেইসব খাবারগুলো পরিহার করাই ভালো।
  • ৩. প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান থেকে দূরে থাকা এবং যতদূর সম্ভব দূষণমুক্ত পরিবেশে থাকা।
  • ৪. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • ৫. নিয়মিতভাবে শরীরচর্চা করা, কারণ তা অ্যাজমা রোগীর জন্য সহায়ক।
  • ৬. সবসময় সাথে ইনহেলার রাখা। মনে রাখতে হবে এটি বিপদে বন্ধু হিসেবে কাজ করে।
  • ৭. অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সাথে সাথে নিকটস্থ ক্লিনিক বা হাসপাতালে যাওয়া বা কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নেওয়া।

হাঁপানি বা অ্যজমা সম্পর্কে ভুল ধারণা

হাঁপানি বা অ্যজমা সম্পর্কে ভুল ধারণা

উপসংহার

ব্রংকিয়াল অ্যাজমা বা হাঁপানি একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ হলেও তার লক্ষণসমূহ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য দরকার রোগের ধরন, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান। সমাজের প্রচলিত ভুল ধারণার অবসান ঘটিয়ে সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধের মাধ্যমে প্রত্যেক অ্যাজমা রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন হোক আমাদের কাম্য।

কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

ইনহেলারে কি অভ্যাস হয়ে যায়?

ইনহেলারে অভ্যাস তৈরি হয় না। অন্যান্য মুদ্রাগত রোগের মতো এগুলিই যতদিন সমস্যা থাকে ততদিন ব্যবহার করা উচিত। হয়তো তা গোটা জীবন জুড়েও হতে পারে।

হাঁপানি আক্রান্ত শিশু কি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে?

হাঁপানি আক্রান্ত কোনো শিশু স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে এবং খেলাধুলাতেও সক্রিয় হতে পারে, যদি হাঁপানি খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।

হাঁপানি আক্রান্ত শিশুদের কি দুখ ও দই খাওয়া উচিত নয়?

দুধ, দই খাওয়ার পর অ্যালার্জি না হলে বা হাঁপানির যন্ত্রণা বৃদ্ধি না পেলে এসব খাবার বন্ধ করার কোনো কারণ নেই।

লেখক
ডাঃ মোঃ সফিকুল ইসলাম, আইসিডিডিআর,বি
ডাঃ মোঃ মাহবুব ইসলাম, কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স