হেপাটাইটিস-বি কী? হেপাটাইটিস-বি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

সুচিপত্র-Table Of Contents
  1. হেপাটাইটিস-বি কী? হেপাটাইটিস-বি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস-বি কী? হেপাটাইটিস-বি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিসের অর্থ হল যকৃতের প্রদাহ। আপনার যকৃত বহুভাবে আপনাকে স্বাস্থ্যবান রাখে। এটি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদানগুলিকে অপসারিত করে এবং খাবারের পুষ্টিকর উপাদানগুলিকে শক্তিতে পরিণত করে।

বিভিন্ন প্রকারের হেপাটাইটিস আছে। হেপাটাইটিস বি এর কারণ হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যা যকৃতকে আক্রমণ এবং সংক্রামিত করে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ছবি

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এর কারনে লিভার সেল বা কোষে যে প্রদাহ হয় তাকে হেপাটাইটিস বি বলে। এই ভাইরাস খুব দ্রুত লিভারে ইনফেকশন বা সংক্রমন ছড়িয়ে জীবনের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরূপ লিভার রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ

বেশীর ভাব ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এই ভাইরাস সংক্রমনের মাধ্যমে খুবই ধীরে লিভার কে অকেজো করে দেয়। লিভার এ প্রদাহ (Hepatitis), লিভার সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া ফাইব্রোসিস (Fibrosis), ব্যাপক আকারে লিভার অকেজো করে দেওয়া সিরোসিস (Cirrhosis) এমনকি লিভার ক্যান্সার (হেপাটো সেলুলার কারসিনোমা Hepatocellular carcinoma) এবং সবশেষে লিভার ফেইলার হতে পারে।

আপনি আর পড়তে পারেন……… ভাইরাল হেপাটাইটিস কী? হেপাটাইটিস প্রকারভেদ ও প্রতিরোধের উপায়! …… হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস বি লিভার ক্যান্সারের প্রধানতম কারন এবং বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান ১০ টি কারন এর একটি।হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয় কারন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষনীয় উপসর্গ দেখা যায় না।

কিছু ব্যক্তি এই ভাইরাস আক্রমনের কয়েক মাসের মধ্যেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বডি’স ইম্মিউন সিস্টেম (Body’s immune system) এর মাধ্যমে এই ভাইরাস সাথে যুদ্ধ করে তাকে শরীর থেকে বিতাড়িত করে এবং সুস্থ থাকে। যখন কেউ, প্রথম এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন একে বলা হয় স্বল্পমেয়াদী বা একিউট (acute) ইনফেকশন কিন্তু যদি এই ভাইরাস কারো রক্তে ছয় (০৬) মাসের অধিক অবস্থান করে তখন একে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক (chronic) ইনফেকশন ।

হেপাটাইটিস-বি কী? হেপাটাইটিস-বি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পরই রক্তে এর মাত্রা নাটকীয় ভাবে বাড়তে থাকে যতক্ষন না শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বডি’স ইম্মিউন সিস্টেম (Body’s immune system), এন্টিবডি তৈরি করে। রক্তে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস অবস্থান কালেই কেবল হেপাটাইটিস বি প্রতিশেধোক এন্টিবডি তৈরি হয়।

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (বডি’স ইম্মিউন সিস্টেম) হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এর সাথে লড়াই করে এবং জয়ী হয়। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স এবং অনান্য কারনে যারা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কে প্রতিহত করতে পারেনা, তারা এ ভাইরাস শরীরে সারা জীবন বহন করে।একেই বলে দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক ইনফেকশন।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এ আক্রান্ত হবার পর তা দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন এ রুপান্তরিত হবার আশংকা বয়সের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি বছর ২০০ কোটি মানুষ এই হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, ৩.৫ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন এ আক্রান্ত এবং প্রায় ৫ থেকে ৭ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করে।নিউ ইয়র্ক সিটি (NYC) তে 241,000 মানুষ হেপ বি সহ জীবনযাপন করছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে-2.2 মিলিয়ন মানুষ হেপ বি এর সাথে জীবিত আছেন।

বাংলাদেশে কত মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস-এ আক্রান্ত ?

বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৪-৭ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বাহক (সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি), তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী ইনকেশন এ নানাবিধ জটিল লিভার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ দেশের প্রায় ৩.৫% গর্ভবতী মায়েরা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত এবং এই ভাইরাস তাদের নবজাতকের শরীরে সংক্রামিত হবার আশংকা অনেক বেশী।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ঝুঁকি

  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী -হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এ আক্রান্ত ৯০% নবজাতকের দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন হতে পারে।
  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এ আক্রান্ত ৫০% শিশু (১-৫ বছর) দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন হতে পারে।
  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এ আক্রান্ত ৫-১০% সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্কের দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন হতে পারে।
  • মনে রাখতে হবে যে, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, এইডস ভাইরাসের চেয়ে ১০০ ভাগ বেশী সংক্রামক। পৃথিবীরতে যত মানুষ প্রতি বছর এইডস (AIDS) ভাইরাসে মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশী মানুষ প্রতিদিন হেপাটাইটিস বি এর কারনে মৃত্যুবরন করে।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ সমূহ

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কোন লক্ষণ থাকে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত চিকিৎসকেরা রক্ত পরীক্ষা করে। হেপাটাইটিস বি এর উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।

হেপাটাইটিস বি এর সাধারন লক্ষণ :

হেপাটাইটিস বি লক্ষণ বা উপসর্গ

জ্বর

সপ্তাহে বেশিরভাগ দিনে জ্বর হয়। অনেকের হালকা জ্বর সবসময় থাকে।জ্বরের কারণে শরীর সবসময় আরাম চায়। মাঝেমধ্যে তীব্র কাপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।

শারীরিক অবসাদ

কোন কাজ করলে দ্রুত শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্লান্তি সহজে দুর হতে চায় না। কাজ শুরু করতে মন চায় না। শুধু শুয়ে বসে থাকতে মন চায়। মাথা ঝিমঝিম করে। দুনিয়ার আলস্য দেহে ভর করে।

দুর্বলতা

শরীর প্রচণ্ড রকমের দুর্বল থাকে। সাধারণ শারীরিক পরিশ্রমেই শরীর ভীষণ ক্লান্ত হয়। একটানা পরিশ্রম করার সামর্থ্য হারিয়ে যায়।

মাংশপেশী ও হাড়ের জয়েন্ট এ ব্যথা

হাত-পায়ের পেশিতে ব্যথা হয়। পিঠের পেশি ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথায় টনটন করে। একটু পরিশ্রম করলেই পরের দিন শরীর খুব ব্যথা করে। হাটু,কব্জি,কনুই,কোমর,কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা হয়।

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময় বমি বমি ভাব হয়।পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকলেও খেতে মন চায়না। অনেকের খাবার দেখলেই গা গুলিয়ে যায়। অনেকের বমি হয় খাবার পরে।

মল-মূত্রের রঙ পরিবর্তন

ঘন বর্ণের মূত্র, স্বাভাবিক মলের রঙ হলুদ বা কালচে কিন্তু হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হলে অনেক সময় ছাই রঙের মল হয়। স্বাভাবিক মূত্রের রঙ খড় রঙের কিন্তু হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হলে অনেক সময় গাঢ় রঙের মূত্র সৃষ্টি হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর বিরল লক্ষণ

  • ব্যাপক বমি হবার ফলে পানি শূন্যতা।
  • জন্ডিস (শরীর, চোখ ও গাঢ় মূত্রে হলদেটে ভাব)।
  • বর্ধিত পেট বা পেট ফুলে থাকা সবমসময়। (এ্যসাইটিস- Ascites)।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কি ভাবে সংক্রমিত হয়?

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কি ভাবে সংক্রমিত হয়?

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস খুবই সংক্রামক একটি ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরল বডি ফ্লুইড (Body fluid), ভ্যাজাইন্যাল তরল পদার্থ রক্তের সংস্পর্শের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে হেপাটাইটিস বি সংক্রমিত করে। যেমন :

  • জন্মের সময় আক্রান্ত মা থেকে নবজাতকে
  • সরাসরি রক্ত থেকে রক্তে (নিরীক্ষাবিহীন রক্ত এবং রক্তের উপাদান পরিসঞ্চালন দ্বারা)
  • সূচ এর মাধ্যমে (একই সূচ ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তির নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহনের সময়, নাঁক-কান ফুরানো বা টেটু করানো)
  • বিভিন্ন রকম চিকিৎসা (মেডিকেল ও ডেন্টাল) গ্রহন কালে দূষিত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের
  • ব্যক্তিগত জিনিস একাধিক ব্যক্তির ব্যবহারের ফলে (যেমন: দাঁতের ব্রাশ,রেজার, ক্ষুর,ব্লেড)
  • অরক্ষিত যৌন ক্রিয়া

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সামাজিক মেলামেশায় এই রোগ ছড়াতে পারে কি ?

সামাজিক মেলামেশায় (হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি ) এই রোগ ছড়ায় না। এমনকি হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য দ্রব্যাদি যেমন: গ্লাস, প্লেট, কাপ, চামচ, জামা-কাপড় ইত্যাদির মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায় না। শুধুমাত্র যে সমস্ত দ্রব্য রোগীর রক্তের সংস্পর্শে আসে (ক্ষুর, ব্লেড, রেজার, দাঁতের ব্রাশ, সূচ) সেগুলোর মাধ্যমেই এই রোগ ছড়াতে পারে।

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে আছেন কারা ?

  • হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মায়ের নবজাতক।
  • ইনজেকশন দিয়ে যারা নেশা গ্রহন করেন।
  • হেপাটাইটিস বি আক্রান্তের পরিবারের ঘনিষ্ঠ জনেরা এবং তার সঙ্গি বা সঙ্গিনী।
  • স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা, যারা রক্তের সংস্পর্শে প্রায়শই আসেন, যেমন: শল্য চিকিৎসক, ডায়ালাইসিস ইউনিট ও রক্ত সঞ্চালন বিভাগের কর্মীরা, দাঁতের ডাক্তার, সেবিকা ও ধাত্রীগণ।

হেপাটাইটিস বি সংক্ৰমন প্রতিরোধের উপায়

হেপাটাইটিস বি সংক্ৰমন প্রতিরোধের উপায়
  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাস খুবই শক্তিশালী ভাইরাস, এই ভাইরাস শরীরের বাহিরে থাকা অবস্থাতেও সংক্রমিত হতে পারে, এমন কি ০২ (দুই) সপ্তাহ পর্যন্ত শুকিয়ে যাওয়া রক্ত থেকেওে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরল পদার্থ (বডি ফ্লুইড – Body fluid), ভ্যাজাইন্যাল তরল পদার্থ এর সংস্পর্শ পরিহার এর মাধ্যমে এই ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • এছাড়াও রক্ত বা রক্তের উপাদান পরিসঞ্চালনার সময় অবশ্যই পরীক্ষিত স্ক্রিনিং (Screening ) রক্ত ব্যবহার করা এবং সেলুনে, হাটে-বাজারে চুল কাটা বা সেভ করার সময় অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড, ক্ষুর ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকে এই ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের নবজাতকে এই ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধের জন্য নবজাতকের জন্মের ২৪ ঘন্টার হেপাটাইটিস বি প্রতিশোধক টিকা (বার্থডোজ) ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া অবশ্যই কর্তব্য।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরি ব্যবস্থা হলো প্রতিশেধক টিকা নেওয়া।

হেপাটাইটিস বি প্রতিশেধোক টিকা ?

হেপাটাইটিস বি প্রতিশেধোক টিকা ?

নির্দিষ্ট নিয়মে টিকা গ্রহনের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ করা সম্ভব। মনে রাখবেন টিকা গ্রহনের আগে অবশ্যই হেপাটাইটিস বি স্ক্রিনিং করে নেওয়া উচিৎ। অন্যথায় হেপাটাইটিস আক্রান্ত অবস্থার মধ্যে টিকা দিলে কোন লাভ তো হবেই না বরং সম্পূর্ণ প্রতিরোধক ব্যবস্থার কারনে রোগ জটিল অবস্থায় নির্মিত হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি টিকা গ্রহনের নিয়ম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী এই টিকা দিতে হবে- ০,১,৬ অথবা ০,১,২ ও ১২ মাসে। যদি কাঙ্খিত টাইটার অর্জিত না হয়, তবে ৩য় ডোজ এর পর অতিরিক্ত আরও একটি ডোজ (বুস্টার ডোজ) নিতে হবে।

হেপাটাইটিস বি টিকার কার্যকারিতা

সাধারন মানুষের ক্ষেত্রে ৮৫ থেকে ১০০ ভাগ এন্টিবডি প্রস্তুত করার ক্ষমতা এন্টিবডি রেস্পন্স (Antibody response) দেখা যায়। টিকা দেওয়ার ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এন্টিবডি টেস্ট করে টাইটার এন্টি-এইচ বি এস (Anti-HBs) দেখতে হয়। এন্টি-এইচবিএস ১০০ ইউনিট হলে ভাল, ১০-১০০ ইউনিট হলে মোটামোটি এবং ১০ ইউনিট এর কম হলে অতিরিক্ত আরেকটি ডোজ (বুস্টার ডোজ) নিতে হবে।

হেপাটাইটিস-ই কী! হেপাটাইটিস-ই কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ!
হেপাটাইটিস এ কী? হেপাটাইটিস এ লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস বি এর ল্যবরেটরী রক্ত পরীক্ষা সমূহ

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি রোগ নির্নয় এবং এর সঠিক চিকিৎসা নির্ণয় করা হয়। সাধারণত ৬ মাস পর এই রক্ত পরীক্ষা গুলো আবার কারানো হয় বোঝার জন্য যে, আক্রান্ত ব্যক্তি কি এই ভাইরাস থেকে পরিত্রান পেয়েছে, না কি দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক ইনফেকশন এ আক্রান্ত হয়েছে।

অনেক সময় ল্যবরেটরী রিপোর্টের সঠিক অর্থ না জানার ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে, এমন কি চিকিৎসক ও নার্স দের ক্ষেত্রেও। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত প্রত্যেকেরই উচিৎ, ল্যবরেটরী রিপোর্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নেওয়া ।

কিছু জরুরী শব্দ যেগুলো হেপাটাইটিস বি রোগ নির্নয় এর ল্যবরেটরী রিপোর্টে পাওয়া যায়:

এন্টিজেন (Antigen) : শরীরের কোন বাহিরের প্রোটিন (ফরেন সাবস্টেন্স) যেমন হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এর প্রোটিন কে এন্টিজেন বলে।

এন্টিবডি (Antibody) : হেপাটাইটিস বি এর এন্টিজেন কে প্রতিহতো করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (বডি’স ইম্মিউন সিস্টেম) যে প্রোটিন তৈরি করে তাকে এন্টিবডি বলে। হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করার বিভিন্ন রকম এন্টিবডি (আইজিএম (IgM) নতুন সংক্রমনের ফলে সৃষ্ট, এবং আইজিজ (IgG) দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস প্রতিরোধের জন্য সৃষ্ট) এর প্রয়োজন হয়।

হেপাটাইটিস বি সনাক্তকরনে ব্যবহৃত এন্টিজেন ও এন্টিবডি

এন্টিজেন ও এন্টিবডিহেপাটাইটিস বি সনাক্তকরনে
HBsAgএইচ বি এস এজি হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিজেন (hepatitis B surface antigen): হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের শরীরে এই বিশেষ এন্টিজেন পাওয়া যায়। “পজেটিভ (positive) ” অথবা * নেগেটিভ (negative)” রেজাল্ট দ্বারা হেপাটাইটিস বি সংক্রমনের বর্তমান অবস্থা নির্ণয় করা হয়।

এই এন্টিজেন টি প্রাথমিক অবস্থায় স্বল্পমেয়াদী বা একিউট ইনফেকশন নির্নয় করে এবং কোন শারীরিক লক্ষণ প্রকাশের আগ পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করে। আক্রান্ত ব্যক্তি সফল ভাবে এই ভাইরাস কে প্রতিহত করতে পারে তবে এইচ বি এস এজি (HBsAg) রক্ত থেকে চলে যেতে পারে।
HBeAgএইচ বি ই এ এজি হেপাটাইটিস বি ই এন্টিজেন (hepatitis B e antigen ) : হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মধ্যে এই বিশেষ এন্টিজেন পাওয়া যায়। এই এন্টিজেন এর উপস্থিতি সংক্রমনের বর্তমান মাত্রা নির্দেশ করে।
Anti-HBsএন্টি এইচ বি এস এন্টিবডি টু হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিজেন (antibody to hepatitis B surface antigen ) : শরীর এই এন্টিবডি টি তৈরী করে হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিজেন প্রকাশ পাবার পর। পজেটিভ (positive) রেজাল্ট নির্দেশ করে অতীতের ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিল বা সফল টিকাদান (ভ্যাকসিনেশন)। এই এন্টিবডি ভবিষৎ এ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমন থেকেও শরীরকে রক্ষা করবে।
Anti-HBcএন্টি এইচ বি সি এন্টিবডি টু হেপাটাইটিস বি কোর এন্টিজেন (antibody to epatitis B core antigen ) : শরীর এই এন্টিবডি টি তৈরী করে হেপাটাইটিস বি কোর এন্টিজেন প্রকাশ পাবার পর। “পজেটিভ (positive)” অথবা “রিএক্টিভ (reactive)” রেজাল্ট নির্দেশ করে অতীতে সংক্রমন হয়েছে।
যদি একজন ব্যক্তির ল্যবরেটরী পরীক্ষায় হেপাটাইটিস বি সনাক্ত হয় তখন আরো কিছু টেস্ট এর প্রয়োজন হয়। যে টেস্ট গুলো দ্বারা রক্তে ভাইরাসের উপস্থিতির মাত্রা নির্ণয় এবং হেপাটাইটিস বি ইএন্টিজেনস এবং এন্টিবডির মাত্রা চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
HBeAgএইচবি ইএজি (হেপাটাইটিস ‘বি’ ই-এন্টিজেন) চিকিৎসা চলাকালে শরীরে ইএন্টিজেন তৈরি হয় এবং এইচবিই-এন্টিজেন ( HBe Antigen ) এর মাত্রার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা চিকিৎসার কার্যকারীতা পর্যবেক্ষণ করেন।
Anti-HBeএন্টি – এইচবিই (এইচবিই -এবি) হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ই এন্টিবডিস : শরীর এই এন্টিবডি তৈরি করে যখন রক্তে হেপাটাইটিস বি ই-এন্টিজেন প্রকাশ পায়। চিকিৎসকেরা এই এন্টিবডির উপস্থিতির মাধ্যমে চিকিৎসার সফলতা নির্ণয় করেন।
HBV DNAএইচবিভি ডিএনএ : এই টেস্ট রক্তে হেপাটাইটিস বি এর ডিএনএ সম্পর্কে তথ্য দেয়। এই টেস্ট গুলো সাধারনত এপরে উল্লেখিত টেস্ট গুলোর সাথে করা হয়। এটা একটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা, রোগের সঠিক অবস্থা, চিকিৎসা পদ্ধতি ও সার্বিক ফলাফল এর দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এন্টিভাইরাল ট্রিটমেন্ট পর্যবেক্ষনে ব্যবহার করা হয়।

হেপাটাইটিস বি ম্যানেজমেন্ট

রক্ত পরীক্ষায়, আপনার শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বা আছে জানতে পারাটা আপনার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক কিন্তু ভাল খবরটা হচ্ছে বেশীর ভাগ ক্রনিক হেপাটাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিই দীর্ঘ ও সুস্থ্য জীবন নিয়ে বেচে থাকতে পারে।

সবসময় হেপাটাইটিস বি এর ম্যানেজমেন্ট ও চিকিৎসায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং প্রতি বছরই এই চিকিৎসা আরও আধুনিকতর হচ্ছে। একজন ভাল চিকিৎসক খুজে বের করা যিনি সব সময় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখছেন এবং তার সাথে চাহিদা মত যোগাযোগ করা যাচ্ছে।

লিভার অকার্যকর হচ্ছে কিনা এটা জানার সবচেয়ে কার্যকরী পরীক্ষা হলো লিভার ফাংশন ব্লাড টেস্ট এবং লিভার বায়োপসী। লিভারে ক্যান্সার হয়েছে কিনা পরীক্ষার জন্য মাঝে মাঝে আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট করা হয়ে থাকে।

যদিও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত হবার কারনে আপনার লিভার খানিকটা ড্যামেজ বা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটা খুবই জরুরী যে, বাড়তি লিভার ড্যমেজ এর ব্যপারে সতর্ক থাকা। বিভিন্ন বস্তুর কারনে লিভার ড্যামেজ হতে পারে। স্বাস্থ্যকর লিভার এর জন্য এটা খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না কিন্তু ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে এর বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরী।

মনে রাখবেন আপনার খাদ্য, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং চামড়ার মাধ্যমে শরীরে যে সব বস্তু প্রবেশ করে তার সবই লিভার হয়ে শরীরের অনান্য অংশে পৌঁছায়। কিছু নিয়ম আক্রান্ত ব্যক্তিরা মেনে চললে এই বাড়তি লিভার ড্যামেজ হবার সম্ভাবনা থেকে বাচতে পারেন

যেমন: মদ্যপান পরিহার করা, হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ পরীক্ষা করা ও প্রতিশেধোক টিকা নেওয়া, শরীরের ওজন স্বাস্থ্যসম্মত রাখা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহন – অধিক ফ্যাট লিভারের ক্ষতি করে, শরীরের অনান্য অঙ্গ প্রতঙ্গ এর যত্ন নেওয়া ও নিয়মিত সেগুলোর পরীক্ষা করা এবং নিয়মিত ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

মনে রাখবেন লিভার ড্যামেজ ও লিভার ক্যান্সার প্রতিহত করতে প্রাথমিক পর্যয়েই তা নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরী।

হেপাটাইটিস বি চিকিৎসা

সাধারনত একিউট হেপাটাইটিস বি এর জন্য কোন চিকিৎসা নেবার প্রয়োজন হয় না। কিছু লক্ষন দেখা দেয় যেমন জন্ডিস, বমি বমি ভাব,বমি হওয়া এবং স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দূর্বলতা অনুভূত হওয়া, এ সব কারনে এই সময়টায় প্রয়োজনী বিশ্রাম নেওয়া জরুরী।

কিছু ব্যক্তি যে ছোটবেলা থেকেই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত তা তার কাছে অজানা থেকে যায় এবং পরবর্তীতে ক্রমিক হেপাটাইটিস বি এ রুপান্তরিত হবার ফলে তার উপসর্গ গুলো দেখা যায়। খুবই অল্প সংখ্যক ব্যক্তির মাঝেই একিউট হেপাটাইটিস বি অবস্থাতেই গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয় তাকে ফালমিনেন্ট হেপাটাইটিস (fulminant hepatitis) বলে।

যার চিকিৎসার জন্য হাসপাতলে ভর্তি হওয়া জরুরী হয়ে পরে। বেশীর ভাগ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই একিউট হেপাটাইটিস বি এর অল্প উপসর্গ দেখা দেয় এবং তা ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়।

তার মানে, সেই ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্ত এবং সে পরবর্তীতে হয়ত আর কখনও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবে না কারন তখন তার শরীর হেপাটাইটিস বি ইমিউন বা প্রতিরোধক হয়ে গেছে।

ক্রমিক হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, লিভারে ক্ষতির পরিমান কমাতে ও লিভারে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে। আপনি যখনই ল্যবরেটরী পরীক্ষায় হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা জানতে পারবেন তখনই আপনার উচিৎ লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ (হেপাটোলজীস্ট – Hepatologiest) বা পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজীস্ট – Gastroenterologist) এর স্বরনাপন্য হওয়া।

তিনি পরীক্ষা করবেন, আপনি এই ভাইরাসে কত দিন হলো আক্রান্ত হয়েছেন, ভাইরাসের কার্যক্রম (এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না) এবং আপনার লিভারে এই ভাইরাস কোন ক্ষতি সাধন করেছে কি না। এসব বিষয় জানার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন।

হেপাটাইটিস বি চিকিৎসায় ইন্টারফেরন থেরাপি

যদি চিকিৎসকেরা হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার প্রয়োজনীতা অনুভব করেন তখন তারা প্রচলিত প্রধান দুটি পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন একটি হলো ইন্টারফেরন থেরাপী যেমন ইন্টারফেরন আলফা বা পাগিলেটেড ইন্টারফেরন, আরেকটি মুখে খাবার টেবলেট নিউক্লিওসাইড বা নিউক্লিওটাইড এজেন্ট যেমন টেনোফোভির, ইন্টাকাভির, ল্যামিভুডিন, এ্যডিফোভির বা টেলবিভুডিন ।

ইন্টারফেরন আলফা(Interferon alpha)

ইন্টারফেরন আলফা হলো ইনজেকটেড ঔষধ যা সপ্তাহে তিন বার ইনেজেকশনের মাধ্যমে শরীরে দেওয়া হয়। এটা ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করতে শরীরকে সাহায্য করে। এই ঔষধ ব্যবহার কালে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন ফ্লুর মত লক্ষন, অবসাদ এবং মাথাব্যথা। এফডিএ (FDA) এই ঔষধ কে অনুমোদন দিয়েছে রোগীর হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য ১৯৯১ সালে।

প্যগিলেটেড ইন্টারফেরন(Pegylated Interferon)

প্যগিলেটেড ইন্টারফেরন হলো ইন্টারফেরন আলফা’ এর – পরিবর্ধিত ইনজেকটেড ঔষধ। যা সপ্তাহে এক বার ইনেজেকশনের মাধ্যমে শরীরে দেওয়া হয়।। এটা ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করতে শরীর কে সাহায্য করে। এই ঔষধ ব্যহার কালে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন ফুর মত লক্ষন, অবসাদ এবং মাথাব্যথা। এফডিএ (FDA) এই ঔষধ কে অনুমোদন দিয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য ২০০৫ সালে।

হেপাটাইটিস বি এর ঔষধ

হেপাটাইটিস বি এর ঔষধ এর নামকাজ
Tenofovirটেনোফোভির হলো মুখে খাবার ঔষধ যা দিনে একটি করে খেতে হয়। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ের ডিনোভো (শুরুর দিকের) চিকিৎসার ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
Entecavirএন্টেকাভির হলো মুখে খাবার ঔষধ যা দিনে একটি করে খেতে হয়। এই ঔষধে কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে তার মদ্যে একটি হলো কিডনী সমস্যা, সে কারনে চিকিৎসক দের এই সময় রোগীদের বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়। এফডিএ (FDA) এই ঔষধ কে অনুমোদন দিয়েছে রোগীর হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য ২০০২ সালে।
Lamivudineল্যামিভুডিন হলো মুখে খাবার ঔষধ যা দিনে একটি করে খেতে হয়। এই ঔষধে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। এফডিএ (FDA) এই ঔষধ কে অনুমোদন দিয়েছে আক্রান্ত ব্যক্তির হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য ১৯৯৮ সালে।
Adefovirএ্যডিফোভির হলো মুখে খাবার ঔষধ যা দিনে একটি করে খেতে হয়। এই ঔষধে কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে তার মধ্যে একটি হলো কিডনী সমস্যা, সে কারনে চিকিৎসক দের এই সময় রোগীদের বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়। এফডিএ (FDA) এই ঔষধ কে অনুমোদন দিয়েছে রোগীর হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য ২০০২ সালে।
Telbivudineটেলবিভুডিন ক্রনিক হেপাটাইটিস বি সংক্রমনের চিকিৎসার জন্য লাইসেন্স প্রাপ্ত মুখে খাবার ঔষধ কিন্তু অতি ব্যয়বহুল হওয়ার কারনে এনআইসিই (NICE) একে ব্যবহারে উৎসাহী করে না।

গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস বি

জন্মের সময় হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মা থেকে এই ভাইরাস নবজাতকে সংক্রমিত হতে পারে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, শরীরে সংক্রমিত হেপাটাইটিস বি ইনফেকশন প্রতিহত করতে বয়স একটা বড় বিষয়। জন্ম নেবার সময় আক্রান্ত নবজাতক কে সারা জীবন এই ভাইরাস শরীরে বয়ে বেড়াতে হবে।

এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা এবং ঔষধ আছে বিধায় প্রত্যেকটি গর্ভবতী মহিলার এর উচিৎ তার সন্তান জন্ম দেবার আগে হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করে নেওয়া।

যদি একজন গর্ভবতী মহিলা হেপাটাইটিস বি পরীক্ষায় পজেটিভ হন তাহলে চিকিৎসক তার নকজাতকের যেন এই ভাইরাস সংক্রমিত না হয় তার ব্যবস্থা করবেন। তার পরিবার এর অন্য সদস্যদেরও উচিৎ হবে হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করে নেওয়া এবং রেজাল্ট নেগেটিভ হলে প্রতিরোধোক টিকা নিয়ে নেওয়া।

আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলার শিশু জন্ম নেবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে হেপাটাইটিস বি প্রতিশোধক টিকা, বার্থডোজ এবং সাথে ইমিউনোগ্লোবিউলিন (immuno globulin) দিতে হবে। এই ব্যবস্থা নিলে নবজাতকের শরীরে তার মা থেকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকবেনা।

হেপাটাইটিস বি এর সঙ্গে জীবনযাপন করা

হেপাটাইটিস বি এর দ্বারা আক্রান্ত মানুষেরা একটি দীর্ঘ সময় বাঁচতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মানুষ এভাবে জীবন পরিচালনা করলে অনেকদিন সুস্থ থাকতে পারেন।

মদপান করবেন না

অ্যালকোহল যকৃতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একেবারেই মদ পান করবেন না।

সাবধানে ঔষধ সেবন করুন

অ্যাসেটামিনোফেন, আয়রন,ভিটামিন এবং ভেষজ ঔষধ সেবনের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করুন

ফ্যাটি লিভার মানে হলো যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া। অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যালকোহল ব্যবহার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা থাকা, ফ্যাটি লিভারের কারণ।ফ্যাটি লিভার হেপাটাইটিস বি কে আরও খারাপ করতে পারে। কিভাবে ফ্যাটি লিভারের প্রতিরোধ করা যেতে পারে সেই সম্পর্কে আপনার স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রদানকারীকে জিজ্ঞাসা করুন।

নিরাপদ যৌনক্রিয়ার অভ্যাস করুন

যৌন ক্রিয়ার সময় অবশ্যই কন্ডম ব্যবহার করুন।

কোন দেশে হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগী বেশি

নীচে তালিকাভুক্ত দেশগুলিতে হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগী বেশি। যদি আপনি এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কোনও দেশে জন্মে থাকেন, আপনার উচিত হেপাটাইটিস বি এর জন্য পরীক্ষা করানো।

অঞ্চলের নামদেশের নাম
আমেরিকার অঞ্চলবেলিজ, কলোম্বিয়া, ডমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, এল স্যালভাডর, ফ্রেঞ্চ গায়না, গুয়াতেমালা, হাইতি, হন্ডুরাস, জামাইকা, পেরু, পোয়ের্তো রিকো, সুরিনাম, ব্রাজিলের অংশ বিশেষ, দক্ষিণ কলোম্বিয়া, উত্তর বলিভিয়া, উত্তর আমেরিকার দেশীয় জনসাধারণ
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অঞ্চলবাংলাদেশ, ভুটান, জিবুতি, প্যালেস্টাইন (গাজা স্ট্রিপ), ভারত, কুয়েত, লিবিয়া, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সোমালিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান, সিরিয়া, থাইল্যান্ড, টিউনিসিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরসাহী, ইয়েমেন।
আফ্রিকার অঞ্চলসিশেলস ব্যতীত সকল দেশগুলি
ইউরোপীয় অঞ্চলআলবেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, ইটালি, কাজাখস্তান, কোসোভো, কিরগিজস্থান, মলদোভা, রোমানিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কি, উজবেকিস্তান
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলব্রুনেই দার-এস-সালাম, কাম্বোডিয়া, চীন, ফিজি, কিরিবাতি, লাওস, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নাউরু, নিজ জিল্যান্ড, নিউই, পালাউ, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া, সামোয়া, সিঙ্গাপুর, সলোমন আইল্যান্ডস, তাহিতি, টোঙ্গা, তুভালু, ভানুয়াটু, ভিয়েতনাম

লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে – লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রকাশনা হতে।

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।