কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কী? ক্লাউড সিডিং কী?কিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হয়?

সূচিপত্র-Table Of Contents
  1. কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কী? ক্লাউড সিডিং কী?কিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হয়?
  2. বৃষ্টি কিভাবে হয়?
  3. কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কী?
  4. ক্লাউড সিডিং কী?
  5. কৃত্রিম বৃষ্টি পাতের জনক কে?
  6. কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য কি লাগে?
  7. কিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়?
  8. আধুনিক লেজার প্রযুক্তি দিয়ে বৃষ্টিপাত
  9. কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির ধাপ
  10. কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ব্যবহার
  11. ভবিষ্যতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কী? ক্লাউড সিডিং কী?কিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হয়?

বর্ষাকালে প্রকৃতির নিয়মে বৃষ্টিপাত হয়।প্রকৃতির দান হিসেবে ঝরেপরা বৃষ্টির পানি চাষাবাদ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।ফসল উৎপাদনের জন্য পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করতে হয়। ভূনিম্নস্থ পানি জমা হয় বৃষ্টির পানি শোষণের মাধ্যমে। গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেই পানি তুলে জমিতে সেচ দেয়া হয়। মোদ্দাকথায় বলতে গেলে পুরো কৃষি ব্যবস্থা নির্ভর করে বৃষ্টির পানির উপর। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলে খরা সৃষ্টি হয় খরার ফলে ফসল উৎপাদন হয় না, দেশে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। প্রকৃতির উপর নির্ভর না করে মানুষ কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। আসুন আজ জেনে নেই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

আপনি আরো পড়তে পারেন….. বৃষ্টির পানির উপকারিতা কী?বৃষ্টির পানির অপকারিতা! …. বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হয় কেন?

বৃষ্টি কিভাবে হয়?

সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের পানি বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে যায় ফলে জলীয় বাষ্প সৃষ্টি হয়।জলীয় বাষ্প হালকা হয় তাই এটি বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে উঠে যায়। উপরে উঠে গিয়ে বাতাসের ধূলিকণা, বালুর কণা ইত্যাদির সাথে মিশে জমে যায় এবং মেঘ সৃষ্টি করে।জলীয় বাষ্প জমতে জমতে মেঘের আকৃতি বড় হয়ে যায়। মেঘের আকৃতি বড় হলে এর ওজন বেরে যায় এবং মধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের দিকে নেমে আসে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণ বাতাসের সাথে সংঘর্ষের ফলে মেঘ গলে যায় এবং তরল পানি হিসেবে ভূপৃষ্টে পতিত হয়। তখন একে বলা হয় বৃষ্টি।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কী?

কৃত্রিম উপায়ে মেঘ সৃষ্টি করে সেই মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটানো কে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বলে।
উইকিপেডিয়া

ক্লাউড সিডিং কী?

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ক্লাউড সিডিং।কৃত্রিম ভাবে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাত ঘটানোকে ক্লাউড সিডিং বলে।

উইকিপেডিয়া

কৃত্রিম বৃষ্টি পাতের জনক কে?

কৃত্রিম বৃষ্টি পাতের জনক
কৃত্রিম বৃষ্টি পাতের জনক

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট শায়েফার প্রথম ক্লাউড সিডিং নিয়ে গবেষনা করে ছিলেন।শায়েফার জমাটবদ্ধ কার্বন ডাইঅক্সাইডের টুকরা বা ড্রাই আইস
বার্কশায়ার শহরে অবস্থিত পাহাড়ের বাতাসে ছুঁড়ে দিয়ে তুলোর মতো মেঘ বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তাঁকেই কৃত্রিম মেঘের জনক ও কৃত্রিম বৃষ্টি পাতের জনক বলা হয়ে থাকে। ১৯৪৬ সালের জুলাইতে বিজ্ঞানী ‘ভিনসেন্ট শেইফার’ প্রথমে কৃত্রিম বৃষ্টির নীতি আবিষ্কার করেন। এরপর আরেক নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ‘ল্যাংমুর’ একত্রে মিলে কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টি করার পন্থা উদ্ভাবন করেন।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য কি লাগে?

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য কি লাগে?

ক্লাউড সিডিং ঘটানোর জন্য সাধারণত দুটি পদার্থ ব্যাবহার করা হয়-

১. ড্রাই আইস (Dry ice)

কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে তীব্র চাপে জমাট বাঁধানো হয়।এটা ড্রাই আইস নামে পরিচিত।এর তাপমাত্রা -78°C। এত ঠাণ্ডার কারণে কোন বস্তুকে জমাট বাধাতে এটি ব্যবহৃত হয়।

২. সিলভার আয়োডাইড

সিলভার ও আয়োডিন এই দুটি যৌগ দিয়ে তৈরি হয় সিলভার আয়োডাইড। এটিও শীতল করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
সিলভার আয়োডাইড নিজে কেলাস হিসেবে কাজ করে এবং আশপাশের বাতাস কে জমাট বাধায়।

কিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়?

ক্লাউড সিডিং ঘটানোর জন্য দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়-

  1. উড্ডয়ন পদ্ধতি বা Flight Method
  2. পৃষ্ঠ পদ্ধতি বা Surface Method
কিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়?

উড্ডয়ন পদ্ধতি বা Flight Method

হেলিকপ্টার,রকেট অথবা বিমান নিয়ে উড়ে মেঘের উপরে যাওয়া হয় এরপর ড্রাই আইস বা সলভার আয়োডাইড ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই রাসায়নিকগুলোর প্রভাবে মেঘের জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে এবং ভারি হওয়ার কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে বৃষ্টি হয়ে পরে।

পৃষ্ঠ পদ্ধতি বা Surface Method

এই পদ্ধতিতে ড্রাই আইস বা সলভার আয়োডাইড কে কামান বা রকেট লঞ্চার দিয়ে রকেটের মাধ্যমে মেঘের উপর ছুড়ে দেয়া হয়। রকেট বা মিসাইলের একটি অংশ রাসায়নিক বহন করে এটি মূল রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঘের উপর চলতে থাকে এবং রাসায়নিক পদার্থ মেঘের উপর ছিটিয়ে দেয়। রকেটের অপর অংশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর প্যারাশুটে করে নিচে নেমে আসে যাতে নষ্ট না হয়ে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হতে পারে।

আধুনিক লেজার প্রযুক্তি দিয়ে বৃষ্টিপাত

উড্ডয়ন পদ্ধতি ও পৃষ্ঠ পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। মানে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি আরকি! আমেরিকার সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মেঘের ওপর উচ্চশক্তির লেজার রশ্মি ফেলে বৃষ্টি নামানোর উপায় বের করতে গবেষণা করছেন।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির ধাপ

ক্লাউড সিডিং তিনটি ধাপের মাধ্যমে ঘটানো হয়ে থাকে। যথা

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির ধাপ

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির ১ম ধাপ

বড় কোন পানির উৎস থেকে দ্রুত ঘূর্ণায়মান দৈত্যাকার পাখার সাহায্যে পানি বাষ্প করা হয় অথবা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকে অবস্থিত জলীয় বাষ্প কে আলোরণের মাধ্যমে উপরের দিকে পাঠানো হয়। এভাবে বর্ষন মেঘ সৃষ্টি করা হয়।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির ২য় ধাপ

বর্ষন মেঘ সৃষ্টি করার পর বিভিন্ন শীতলিকারক রাসায়নিক পদার্থ যেমন- silver iodide,potassium iodide,dry ice,Liquid propane,Sodium Chloride ইত্যাদি বিমান বা রকেটের সাহায্যে বর্ষণ মেঘের উপর ছিটিয়ে দেয়া হয়। এতে বর্ষণ মেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করে।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত সৃষ্টির ২য় ধাপ

এই রাসায়নিকগুলোর প্রভাবে মেঘের জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে এবং ভারি হওয়ার কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে বৃষ্টি হয়ে পরে।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ব্যবহার

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ব্যবহার
  1. প্রাকৃতিক উপায়ে বৃষ্টিপাত না হলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে খরা দূর করা যায় এবং ফসল ফলানো যায়।
  2. ইন্দোনেশিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধ্বস হয় এতে বহু মানুষের প্রাণহানী ঘটে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত কমাতে ঐ এলাকার আশপাশের বাতাসে রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে দিয়ে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয় এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাটিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার আগেই আসপাশে বৃষ্টিপাত হয়।
  3. আরব আমিরাতের মরুভূমিতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে।
  4. কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে শুষ্ক আবহাওয়াকে সহনশীল করার নজির বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা যায়।
  5. ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক গেমসের ঠিক আগে ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে বৃষ্টি ঝরিয়েছিল চীন, যাতে পুরো আয়োজন বৃষ্টির কারণে বিঘ্নিত না হয়।

কোন দেশ সবচেয়ে বেশি কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটায়?

চীনই সবচেয়ে বেশি কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঝরায়।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের উপকারিতা

ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না৷ কেননা যে পরিমাণ সিলভার আয়োডায়িড বৃষ্টির পানির সঙ্গে মাটিতে দ্রবীভূত হয়, তাতে রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ এতই সামান্য, যে তাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না৷

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ক্ষতিকর ভূমিকা

  1. একটি দেশ কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটালে পার্শ্ববর্তী দেশের বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে যায় বলে মনে করা হয়। এতে ঐ দেশে খরা সৃষ্টি হয়।
  2. অতিরিক্ত কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটালে বায়ু দূষণ ঘটে।
  3. অনেক গবেষক মনে করেন বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত।

ভবিষ্যতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত

খুব নিকট ভবিষ্যতে মানুষ এমন উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করবে যা শুধু আকাশে ভেসে থাকা মেঘগুলোকে ছেঁকে এনে বৃষ্টি ঝরাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সমুদ্র থেকে ইচ্ছেমতো পানিকে বাষ্পীভূত করে মেঘ সৃষ্টিতেও সক্ষম হবে। চিন্তা করুন তো, ভবিষ্যতের কোনো একদিন হয়তো দিনাজপুরের কয়েক হেক্টর ধানি জমিতে সেচ দেবার জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ তৈরি করে সেগুলোকে উড়িয়ে এনে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট জায়গায়, ঠিক নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টিই ঝরানো হচ্ছে!
আশা নিয়ে মানুষ বাঁচে!!!!

Cloud Seeding in bangla

Cloud Seeding ki? krittim bristipat ki? kivabe krittim bristipat ghotano hoy?

তথ্যসূত্র : উইকিপেডিয়া

ট্যাগ: ক্লাউড সিডিং ক্লাউড সিডিং ক্লাউড সিডিং ক্লাউড সিডিং ক্লাউড সিডিং ক্লাউড সিডিং

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।