চোখের অঞ্জনি কী?চোখে অঞ্জনি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার!

চোখের অঞ্জনি কী?চোখে অঞ্জনি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার!

আমাদের চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। অনেকসময় চোখের ছোটখাটো সমস্যাও অবহেলার কারণে বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চোখে অঞ্জনি হওয়া আমাদের দেশে খুব বেশি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ জীবনে ২-৩ বার চোখের অঞ্জনিতে আক্রান্ত হতে পারে।

চোখের অঞ্জনি কী?চোখে অঞ্জনি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার!

আপনি আরো পড়তে পারেন …………… চোখ ওঠা রোগ! চোখ উঠা লক্ষণ ও প্রতিকার!

চোখের অঞ্জনি কী?

চোখের পাপড়ি যেখান থেকে বের হয় সেই রেখা ঘেঁষে মাঝেমধ্যে যে লাল ছোট দানার মতো তৈরি হয় তাকে চলতি কথায় অঞ্জনি বলে।

উইকিপেডিয়া

চোখের অঞ্জনি English Meaning

চোখের অঞ্জনি এর ইংরেজি হলো-stye,hordeolum, sty
(an infection of the sebaceous gland of the eyelid)

চোখ অঞ্জনি এর বাংলা প্রতিশব্দ

অঁজন, অঁজনিকা, আঁজনি, আঞ্জনী,চোখের আঞ্জুল

চোখ অঞ্জনি মেডিকেল টার্ম

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে স্টাই (stye) বা হরডিওলাম (internal and external hordeolum)।

চোখে অঞ্জনি হয় কেন?

চোখে অঞ্জনি হয় কেন?

চোখের পাপড়ির গোড়ার প্রান্তের ফলিকল এবং চোখের আর্দ্রতা রক্ষাকারী মেবোমিয়ান গ্রস্থিতে পুঁজ সৃষ্টিকারী সংক্রমণই অঞ্জনি। এই গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গিয়ে ভেতরে ময়লা জমা হয় এবং প্রদাহের ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। কখনো অন্যান্য গ্রন্থিও আক্রান্ত হতে পারে।

এই দানাটি লাল হয়ে ফুলে যায় ও ব্যথা হয় এবং পরে সাদা পুঁজবিন্দু দেখা দিতে পারে। অঞ্জনির সঙ্গে চোখের পাপড়িরও প্রদাহ থাকতে পারে। প্রদাহের কারণ হিসাবে স্ট্যাফাইলোকক্কাস জীবাণুকে দায়ী করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখের উপরের পাতায় অঞ্জনি হয়। তবে, নিচের পাতায়ও এটি হতে পারে।

চোখের অঞ্জনি কি ছোঁয়াচে?

চোখের অঞ্জনি ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি এক জনের কাছ থেকে অন্যজনের চোখে ছড়ায় না। অঞ্জনিতে আক্রান্ত কারো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে নিজের চোখ অঞ্জনি হবে না।তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত অঞ্জনি স্পর্শ,ও ব্যবহার্য জিনিষের মাধ্যমে ছড়ায়।

চোখের অঞ্জনির লক্ষণ ও উপসর্গ

চোখের অঞ্জনির লক্ষণ ও উপসর্গ
  • চোখের পাতা ভারী ভারী লাগা।
  • আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে ফুলে ওঠা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • পুঁজ জমে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা হওয়া।
  • আক্রান্ত স্থানের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
  • চোখ চুলকানো।
  • চোখে দেখতে সমস্যা-হওয়া।
  • চোখের ভেতর কিছু আটকে আছে এরকম: অনুভূতি হওয়া।
  • অনেকসময় জ্বর-জ্বর অনুভূত হতে পারে।

চোখের অঞ্জনি কতদিন থাকে?

সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে অঞ্জনি ভালো হয়ে যায়। অঞ্জনির কারণে চোখে খুব বেশি জটিলতা দেখা দিলে কোনো কোনো সময় অপারেশনও লাগতে পারে, তবে সচরাচর এমন ঘটে না।

চোখের অঞ্জনি হলে কি করবো?

  • চোখ চুলকানো থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • ঠাণ্ডা বা গরম পানি দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পরপর চোখ ধোয়া উচিত।
  • রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি ও সাবান দিয়ে চোখের পাতা পরিষ্কার করতে হবে।
  • সানগ্লাশ ব্যবহার করতে হবে।
  • চোখে হাত দেয়ার আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।

চোখে অঞ্জনি হলে কি করা উচিৎ নয়?

  • চোখের পাতা অযথা ডলাডলি করা যাবে না।
  • মেকাপ করার অভ্যাস থাকলে বাদ দিন।
  • নিজে সূঁচ বা ধারালো কিছু দিয়ে অগুনি গলানো একদমই ঠিক নয়, কারণ এতে সংক্রমণের প্রবল সম্ভাবনা থাকে
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অঞ্জনি নিজে থেকেই সেরে যায় এবং ভেতরের ময়লা বের হয়ে আসে।

চোখ অঞ্জনি ঘরোয়া চিকিৎসা

এক টুকরো তুলো বা কাপড়ের কুণ্ডলি গরম পানিতে ভিজিয়ে ১০ মিনিট করে দিনে চারবার সেঁক দেওয়া যেতে পারে। বরিক পাউডার মেশানো কুসুম গরম পানিতে তুলো অথবা নরম কাপড় ভিজিয়ে তা চোখে লাগিয়ে ভাপ দেওয়া যেতে পারে।


এক কাপ গরম পানিতে একটি টি ব্যাগ দিন। কিছুক্ষণ রেখে টি ব্যাগটা বের করে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে চোখের ওপর রাখুন টি ব্যাগটা। ৫-১০ মিনিটের মতো রাখলেই হবে।
বরিক পাউডারের সেক খুব উপকারী, এটি জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।

চোখ অঞ্জনি হলে ব্যথা কমানোর উপায়

এই রোগ হলে অনেক সময় চোখে তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথা কমানোর জন্য সেক দেওয়া ভালো। গরম পানির ভাঁপ দিলেও ব্যথা কমে। বোরিক পাউডার দিয়ে চোখের পাতার উপর প্রলেপ দিলে ব্যথা কমে।

পেয়ারা পাতাকে চুলার আঁচে মুচমুচে করে কাপরে মুড়িয়ে অঞ্জনির উপর ধরে থাকলে ব্যথা কমে।প্রতিদিন ২-৩ বার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে পুনরায় আঞ্জনি হওয়া থেকেও দূরে রাখবে এটি।

আক্রান্ত চোখে প্রথমে গরম ভাপ নিন ১০ মিনিট। তার পর একটি কটন তুলোর বলে ক্যাস্টর অয়েল মাখিয়ে আলতো করে ধরে থাকুন চোখের পাতায়। ব্যথা মরবে।

চোখের অঞ্জনি পাকানোর উপায়

অঞ্জনি হওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে না পাকলে নিজে এটা দ্রুত পাকানো যায়। অঞ্জনি পেকে গেলে পুঁজ দ্রুত বের হয়ে যায় ফলে বেশ আরাম বোধ হয়। সাথে ব্যথা কমে।

অঞ্জনি পাকানোর উপায় হিসেবে নিচের কাজগুলো করতে পারেন-
চোখের পাতার ফোলা অংশের যে স্থানে অঞ্জনির মুখ বা উচু অংশ আছে সেখানে বরিক পাউডার গুড়া করে সামান্য পানিতে গুলে পেস্ট বানিয়ে প্রলেপ দিলে দ্রুত অঞ্জনি পেকে গলে যাবে।

পুরাতন ঘি দিয়ে প্রলেপ দিলেও অঞ্জনি পেকে যায়। হরিতকি চূর্ণ প্রলেপ দিলেও এটি অঞ্জনি পাকতে সাহায্য করে।

চোখের অঞ্জনি ওষুধ

ব্যথা বেশি থাকলে ১টা করে দিনে ৩ বার প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
সংক্রমণ বেশি হলে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। অঞ্জনির চিকিৎসায় যেসব এন্টিবায়োটিক বেশ কার্যকর যেগুলো হলো- Erythromycin,amoxicillin, cephalosporin, tetracycline, doxycycline ইত্যাদি।

চোখের অঞ্জনি ড্রপ

চোখের অঞ্জনি হলে যেসব ড্রপ ব্যবহার করা উচিত সেগুলো হলো-

চোখের অঞ্জনি ড্রপ

চোখের অঞ্জনি হোমিও ঔষধ

চোখের অঞ্জনির লক্ষণ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করা যায়। যেমন Puls, H/S, Sulp, Staphy, R. T 3 phos ইত্যাদি ছাড়াও অন্যান্য ঔষধ লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়। বেলাডোনা ৩ শক্তি মাত্রায় দিনে ৩-৪ বার সেবন করা উজিত।

চোখ অঞ্জনির চিকিৎসা

যদি ৪-৫ দিনেও অগুনি ভালো না হয় তবে চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং ১-২ সপ্তাহের মধ্যেও অগুনি না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক, ওষুধ খাওয়া লাগতে পারে।বারবার অগুনি হলে গ্রন্থির মুখে কোনো সমস্যা,দীর্ঘদিন ধরে পাপড়ির প্রদাহ বা পাপড়িতে খুশকি আছে কি না তা দেখতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

চোখ অঞ্জনি হলে কখন ডাক্তার দেখাবো

  • চোখে দেখতে সমস্যা হলে।
  • অগুনির মুখে ফোস্কার মতো পড়লে এবং তা থেকে যা তৈরি হলে।
  • চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে উঠলে
  • চোখ থেকে রক্ত পড়লে।
  • চোখে অসহ্য ব্যথা হলে।

চোখের অঞ্জনি প্রতিরোধ করার উপায়

  • নিয়মিত চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে
  • অঞ্জনি হওয়ার পর চোখে ময়লা বা পিচুটি থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে
  • চোখে হাত দিয়ে চোখ পরিষ্কার করার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।