উচ্চমাত্রার জ্বর,খিঁচুনি, নাক দিয়ে রক্ত-পরার প্রাথমিক চিকিৎসা

জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা

অনেক সময় হঠাৎ করে বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যায় পরতে হয় এসময় আমাদের হুঁশ কমে যায়। সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে সাধারণ সমস্যায় রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাই আসুন আজ জেনে সেই এমন জরুরি কতগুলো প্রাথমিক চিকিৎসা যার দ্বারা জীবন বাঁচানো সম্ভব।

উচ্চমাত্রার জ্বর,খিঁচুনি, নাক দিয়ে রক্ত-পরার প্রাথমিক চিকিৎসা, জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা

আপনি আর পড়তে পারেন …… শিশু পানিতে ডুবে গেলে কি করবেন!পানিতে ডোবার প্রাথমিক চিকিৎসা! …. হঠাৎ অজ্ঞান হওয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা

উচ্চমাত্রার জ্বর এর প্রাথমিক চিকিৎসা

উচ্চমাত্রার জ্বর এর প্রাথমিক চিকিৎসা
উচ্চমাত্রার জ্বর এর প্রাথমিক চিকিৎসা

মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কারো শরীরের তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে এ অবস্থাকে আমরা ‘জ্বর’ বলে থাকি।

এই তাপমাত্রা বেড়ে যখন ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়েও বেশি হয় তখন তাকে উচ্চমাত্রার জ্বর বলা হয়।

উচ্চমাত্রার জ্বর বেশিক্ষণ থাকলে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির পরিমাণ বেশি তাই জরুরী ভিত্তিতে উচ্চমাত্রার জ্বর কমানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

কিভাবে উচ্চমাত্রার জ্বর কমাবেন

  • প্রথমে থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপুন। জ্বর কমাবার অষুধ (paracetamol) খাইয়ে দিন।
  • যদি রোগী শীত অনুভব করে তবে বুঝতে হবে জ্বর আরো বাড়বে।
  • মাথায় ট্যাপের পানি ঢালুন বা আইস ক্যাপ দিন এবং শরীর কাঁথা / কম্বল / লেপ দিয়ে ঢেকে রাখুন যতক্ষণ রোগী শীত অনুভব করে।
  • অষুধ খাওয়াবার আধঘণ্টা পর শীত অনুভব করার ভাবটা কমে যাওয়ার কথা। যদি তাই ঘটে তবে শরীরের ভারী কাপড় সব খুলে ফেলুন।
  • ফ্যান ছেড়ে দিন।
  • এবার ট্যাপের পানিতে তোয়ালে বা গামছা ভিজিয়ে পানি নিংড়ে নিয়ে আস্তে আস্তে সমস্ত শরীর মুছতে থাকুন যতক্ষণ না জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট-এ নেমে আসে। জ্বর কমে গেলে মাথা ভালো করে মুছে দিন এবং রোগীকে স্বাভাবিক কাপড় পরিয়ে রাখুন।

খিঁচুনি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা

খিঁচুনি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা
খিঁচুনি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা

খিঁচুনি অনেক কারণে হতে পারে। তার মধ্যে মৃগী রোগীর যে-খিঁচুনি হয় তার সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কমবেশি পরিচিত।

এছাড়া শিশুদের উচ্চমাত্রার জ্বরের সময় খিচুনি হতে পারে। যে কারণেই হোক, পরিবারে কারো খিঁচুনি হতে দেখলে নিচের কাজগুলো করুন-

  • প্রথমে রোগীকে বিছানায় শোয়াতে হবে এবং শ্বাস প্রশ্বাস যাতে ঠিকমত নিতে পারে সেজন্য শ্বাসনালীর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • মুখে লালা, খাবার বা ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • জিহ্বা যেন পিছনে চলে গিয়ে শ্বাসনালী বন্ধ করে না-দেয় বা দাঁত দিয়ে জিহ্বা না কাটে সেজন্য মুখে চামচ দিয়ে দাঁত থেকে জিহ্বাকে সরিয়ে রাখতে হবে।
  • মৃগী রোগীর খিঁচুনি বেশিক্ষণ থাকলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
  • উচ্চমাত্রার জ্বরের জন্য শিশুর খিঁচুনি হলে জ্বর কমাবার সব ব্যবস্থা নিতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে খিঁচুনি না-থামলে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হবে।

শিশুদের উচ্চমাত্রার জ্বরে খিঁচুনির ঔষধ

সাধারণত শিশুদের ৬ বছর বয়স পর্যন্ত উচ্চমাত্রার জ্বরে খিঁচুনি হতে পারে। সেজন্য ৬ বছর বয়স পর্যন্ত এসব শিশুর জ্বর হলেই চিকিৎসকের পূর্ব-নির্ধারিত ডোজে ডায়াজিপাম টেবলেট খাওয়ানো শুরু করতে হবে এবং কমপক্ষে ৫ দিন বা যতদিন জ্বর থাকে ততদিন খাওয়াতে হবে।

জ্বর যাতে ১০০ ডিগ্রির উপরে উঠতে না পারে সেজন্য প্যারাসিটামল প্রয়োজনে ৪ ঘণ্টা পরপর খাইয়ে যেতে হবে।

মৃগী রোগীর সাবধানতা

যাদের মৃগী রোগ আছে তাদের জন্য আরো কিছু পরামর্শ হলো:

  • মৃগী রোগীকে একা কোথাও যেতে দিবেন না।
  • পুকুর-নদী-বিল-ঝিলে গোসল করতে দিবেন না।
  • চুলার কাছে যেতে দিবেন না।
  • একা একা কোনো মেশিনে কাজ করতে দিবেন না।
  • মৃগী রোগগ্রস্ত লোক কখনো গাড়ি চালাবে না।
  • বাথরুম ব্যবহারের জন্য ভিতরে ঢুকলে সিটকিনি লাগাবে না।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ মত অষুধ চালিয়ে যেতে হবে (খিঁচুনিমুক্ত অবস্থায়ও কমপক্ষে ৩ বছর)

নাক দিয়ে রক্ত-পরার প্রাথমিক চিকিৎসা

নাক দিয়ে রক্ত-পরার প্রাথমিক চিকিৎসা
নাক দিয়ে রক্ত-পরার প্রাথমিক চিকিৎসা

অনেক সময় দেখা যায় হঠাৎ করে পরিবারের কারো নাক দিয়ে রক্ত পরছে। তখন সবার মধ্যে একটা চরম আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে।

আতঙ্কিত না-হয়ে বরং জরুরী ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি উচ্চ রক্তচাপের রোগীর এ-অবস্থা দেখা দেয় তবে তাড়াতাড়ি রক্তচাপ মাপার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বেশি রক্তচাপ হলে তা কমাবার পদক্ষেপ নিতে হবে।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাকের ভিতরের ময়লা জোর করে সাফ করার পর একটু ছুলে গিয়ে রক্ত-পরা শুরু হতে পারে। নাকের এ অংশে রক্ত চলাচল খুব বেশি হয়, তাই সহজে রক্ত-পরা বন্ধ হতে চায় না।

যে কারণেই নাক দিয়ে রক্ত পড়ুক না কেন, রক্ত-পরা বন্ধ করতে হলে আপনাকে দুই আঙুল দিয়ে নাক চেপে ধরতে হবে এবং মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। ১ মিনিট পরপর কয়েক সেকেন্ডের জন্য চাপটা একটু ঢিলা করতে হবে। তারপর আবার চেপে ধরতে হবে। এভাবে ২০ মিনিট ধরে রাখতে হবে এবং এ-সময়টিতে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে।

আশা করা যায়: এসময়ের মধ্যে রক্ত-পরা বন্ধ হয়ে যাবে। যদি না-হয় তবে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে অথবা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তথ্যসূত্র- icddrb

লেখক
ডাঃ এম মতিউর রহমান

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।