নিপাহ ভাইরাস কী? নিপাহ ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়!

নিপাহ ভাইরাস কী? নিপাহ ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়!

বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে শীতকালে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিস (encephalitis) নামের জ্বরজাতীয় একটি রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগে মস্তিস্কে তীব্র প্রদাহ হয়।

বাংলাদেশে এপর্যন্ত নিপাহ এনসেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত শতকরা ৭২% জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার পর যারা বেঁচে থাকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দীর্ঘদিন সময় লাগে।

নিপাহ ভাইরাস কী? নিপাহ ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়!

আপনি আরও পড়তে পারেন … জিকা ভাইরাস কী? জিকা ভাইরাস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

নিপাহ ভাইরাসের বাহক কোন প্রাণী?

বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের বাহক।

নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ

এ রোগে আক্রান্ত হলে জ্বরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায় যেমন-

  • মাথাব্যথা
  • খিঁচুনি
  • শরীরে ব্যথা
  • বমি
  • প্রলাপ বকা
  • মানুষকে চিনতে না-পারা
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়াসহ আরো নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

মানুষ কীভাবে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়?

নিপাহ ভাইরাসের ছবি

বাংলাদেশে একটি বিশেষ ধরনের বাদুড়ের শরীরে Nipa ভাইরাস পাওয়া গেছে। এই বাদুড়ের লালা ও মলমূত্রের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকে আক্রান্ত করে। বাংলাদেশে সাধারণত শীতকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে দেখা যায়।

শীতকালে কাঁচা খেজুরের রস খেতে প্রায় সবাই ভালোবাসে। আমাদের দেশে গাছিরা শীতকালে সাধারণত বিকেল বেলায় খেজুর গাছে হাঁড়ি লাগায় এবং সারারাত ধরে হাঁড়িতে রস জমা হয়।

ভোরবেলায় গাছিরা এই রস সংগ্রহ করে থাকে। এই রসে জীবাণু থাকলে এর মাধ্যমেই নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়ে পরে।

বাদুড় কিভাবে নিপাহ ভাইরাস ছরায়?

নিপাহ ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়

রাতের বেলা বাদুড় খেজুরের রস চেটে খায় এবং কখনো কখনো হাঁড়িতেই মলমূত্র ত্যাগ করে । বাদুড়ের লালা বা মলমূত্রের মাধ্যমে Nipa Virus খেজুরের রসে মিশে যায়।

Nipa Virus আছে এমন রস মানুষ পান করলে এই ভাইরাস মানুষকে এই রোগে আক্রান্ত করতে পারে। নিপাহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির নিবিড় সংস্পর্শে আসলে অন্যদের মধ্যে এ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে ।

নিপাহ ভাইরাস রোগ প্রতিরোধের উপায়

যেহেতু Nipa Virus আছে এমন কাঁচা খেজুরের রস পান করার ফলে এই রোগটি ছড়ায়, তাই রোগ প্রতিরোধের একটি উপায় হতে পারে কাঁচা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকা।

কিন্তু এর ফলে মানুষ অতি সুস্বাদু একটি প্রাকৃতিক নির্যাস থেকে বঞ্চিত হবে। কাজেই, খেজুরের রস পান করতে হলে অত্যন্ত সহজ উপায়ে খেজুর গাছের হাঁড়ি ও রসের প্রবাহকে ঢেকে রসকে ভাইরাসমুক্ত রাখা যায়। হাঁড়ি ও রসের প্রবাহকে আবৃত করার জন্য ব্যবহৃত বস্তুটি আমাদের গ্রামাঞ্চলে বানা নামে পরিচিত। খেজুর গাছে বানা ব্যবহারের ফলে বাদুড় আর রসের সংস্পর্শে আসতে পারে না, ফলে লালা বা মলমূত্র ছড়াতে পারে না।

নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

বাঁশ, পাটকাঠি, ধইঞ্চার কাঠি বা পলিথিন দিয়ে এই বানা তৈরি করা যেতে পারে। এসব জিনিস গ্রামগঞ্জে খুবই সহজলভ্য এবং অল্প দামে পাওয়া যায়।

আমরা যারা রস খেতে চাই এবং সুস্থ থাকতে চাই তাদের সবার উচিত বানার ব্যবহার ছাড়া সংগৃহীত কাঁচা রস না – খাওয়া।

রস খাওয়ার আগে যে গাছ থেকে তা সংগৃহীত হয়েছে তাতে বানা লাগানো ছিলো কি না তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। মানুষকে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে হবে।

গাছিদের পাশাপাশি গাছমালিকেরাও যেন বানা তৈরি করেন তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গাছি ভাইদেরকে বানা ব্যবহার করে রস সংগ্রহ করার উপায়টির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। এতে বাজারে প্রাপ্ত খেজুরের রসও নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভবপর হবে।

আমাদের সবার সচেতনতার মাধ্যমে খুব সহজে নিপাহর মতো একটি ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব।

লেখক
রেবেকা সুলতানা এবং নাজমুন নাহার
আইসিডিডিআর,বি

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।