বন্দে মাতরম অর্থ কী?রচনাকাল,প্রেক্ষাপট,ইতিহাস#

বন্দে মাতরম অর্থ কী?

ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা একটি সাধারণ ঘটনা। হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় মুসলমানদের মুখে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে উচ্চারিত হয় আল্লাহু আকবার স্লোগান হিন্দুরা বন্দে মাতারাম বলে হুংকার ছারে। একটি সাধারণ শব্দ কালের বিবর্তনে কট্টর হিন্দুত্ব পরিচায়ক শব্দে পরিণত হয়েছে। আধুনিক অনেক হিন্দু জানেন না বন্দে মাতারাম অর্থ কী?আজ তাহলে বন্দে মাতারাম শব্দের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করা যাক।

বন্দে মাতরম অর্থ কী
বন্দে মাতরম অর্থ কী

আরো পড়ুন ……… ডাকসাইটে অর্থ কী? ……. মাগি শব্দের অর্থ কী? …… বরোভাতারি মানে কি?

বন্দে মাতারাম অর্থ কী?

বন্দেমাতরম দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগিক শব্দ। বন্দে অর্থ মাথা নত করা বা ভক্তিভরে প্রশংসা করা আর মাতরম অর্থ মাতার। সুতরাং বন্দেমাতরম শব্দের শাব্দিক অর্থ মায়ের কাছে মাথা নত করা বা মায়ের বন্দনা গাওয়া।

বন্দেমাতরম ইংরেজি অর্থ

salute thee. mother ! Hail, my country ! “I praise to motherland.
There mother means “Bango Matha” or ” Bharot Matha”

তথ্যসূত্র : wikipedia

বন্দে মাতারাম গানের বাংলা অর্থ

প্রথম দুই লাইন

বন্দে মাতরম্ ! (মা তোমায় বন্দনা করি।)
সুজলাং সুফলাং (সুজলা সুফলা)
মলয়জশীতলাম্ (বাতাসে শীতল করা)
শস্যশ্যামলাং (ফসলে ফসলে সবুজ)
মাতরম্ ! (মা গো)
বন্দে মাতরম্৷. (মা তোমায় বন্দনা করি।)

শুভ্র-জ্যোৎস্না (সাদা জোছনায়)
পুলকিত-যামিনীম্ (আনন্দিত রাত)
ফুল্লকুসুমিত (হাসিভরা ফুলে ছাওয়া)
দ্রুমদলশোভিনীম্, (গাছে গাছে শোভা পাওয়া)
সুহাসিনীং (সুন্দর হাসিমাখা)
সুমধুরভাষিণীম্ (সুমধুর কথা বলা)
সুখদাং বরদাং (সুখ দাত্রী, বর দাত্রী)
মাতরম্ ৷৷ (মা গো)
বন্দে মাতরম্ ৷ (মা তোমায় বন্দনা করি।)
বন্দেমাতরম মানে

বন্দেমাতরম পুরো গান

বন্দে মাতরম্ ৷
সুজলাং সুফলাং
মলয়জশীতলাম্
শস্যশ্যামলাং
মাতরম্ !

শুভ্র-জ্যোত্স্না-পুলকিত-যামিনীম্
ফুল্লকুসুমিত-দ্রুমদলশোভিনীম্
সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্
সুখদাং বরদাং মাতরম্ ৷৷

সপ্তকোটীকন্ঠ-কল-কল-নিনাদকরালে
দ্বিসপ্তকোটীভুজৈধৃতখরকরবালে
অবলা কেন মা এত বলে !
বহুবলধারিণীং
নমামি তরিণীং
রিপুদলবারিণীং
মাতরম্ ৷

তুমি বিদ্যা তুমি ধর্ম্ম
তুমি হৃদি তুমি মর্ম্ম
ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে ৷
বাহুতে তুমি মা শক্তি
হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি
তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে ৷

ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কমলা কমল-দলবিহারিণী
বাণী বিদ্যাদায়িণী
নমামি ত্বাং
নমামি কমলাম্
অমলাং অতুলাম্
সুজলাং সুফলাং
মাতরম্

বন্দে মাতরম্
শ্যামলাং সরলাং
সুস্মিতাং ভূষিতাম্
ধরণীং ভরণীম্
মাতরম্ ৷

বন্দেমাতরম গানটি রচিত হয় কত সালে?

১৮৮২ সালে বিখ্যাত বাঙ্গালি লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আনন্দমঠ উপন্যাস রচনা করেন। এই উপন্যাসে বন্দেমাতরম গান টি অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
১৮৯৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে বন্দেমাতরম গানটি প্রথম গাওয়া হয়। গানটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গাওয়া হয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্দেমাতরম গান গেয়েছিলেন

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসটি ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । ১৭৬৩ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ও ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পটভূমিতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি রচনা করেন ।

বন্দেমাতরম গানের রচয়িতা কে?

বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই সংগীত রচনা করেন।

বন্দেমাতরম গান রচনার প্রেক্ষাপট

বঙ্কিমচন্দ্র যখন ব্রিটিশ ভারতের সরকারি চাকুরি করতেন তখন মনে মনে গানটি রচনার কথা ঠিক করে ফেলেন।১৮৭৬ সালে তার মনে গানের কথাগুলো তৈরি হয়ে যায়। জাতীয়তাবাদ চাঙ্গা করতেই তিনি অবচেতনভাবে গানটির কথা ভেবেছিলেন।তবে ঠিক কত সালে তিনি গানটি খাতায় লিখেছিলেন তার কোন তথ্য নাই।

১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে প্রথম গানটি প্রকাশিত হয় বঙ্কিমচন্দ্র যদুভট্টকে গানের সুর করার জন্য অনুরোধ করেন।

যদুভট্ট
যদুভট্ট

যদুভট্ট বা যদুনাথ ভট্টাচার্য (১৮৪০-১৮৮৩) ঊনবিংশ শতকের ভারতীয় কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ও সংগীতজ্ঞ। বিষ্ণুপুর ঘরানার সংগীতকে স্বকীয়তায় সমৃদ্ধ করে, তার রূপ-রসের আস্বাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করে নিজের অতুল যশ ও বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেছিলেন।

বন্দেমাতরম ইতিহাস

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মানুষকে উদ্দীপিত করতে এই শব্দ ব্যবহার করত।তখন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জাতীয় ধ্বনিতে পরিণত হয় “বন্দেমাতরম”। উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য বন্দেমাতরম কে জাতীয় ধ্বনি হিসেবে ব্যবহার করে।

ব্রিটিশ সরকার এই ধ্বনির প্রভাব বুঝতে পেরে একবার এটির উচ্চারণ নিষিদ্ধ করেছিলো। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী “বন্দেমাতরম” ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন।

  • ১৮৯৬ সালে বিডন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্দেমাতরম গান গেয়েছিলেন।
  • ১৯০১ সালের কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গানটি দক্ষিণাচরণ সেন গেয়েছিলেন।
  • ১৯০৫ সালে কংগ্রেসের বারাণসী অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেছিলেন সরলা দেবী চৌধুরাণী।
  • ১৯০৫ সালে হীরালাল সেন তার রাজনৈতিক সিনেমায় গানটি ব্যবহার করেন।
  • ব্রিটিশ পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার আগে মাতঙ্গিনী হাজরার শেষ উচ্চারিত শব্দ ছিল “বন্দেমাতরম”।
  • ১৯০৭ সালে ভিখাজি কামা ভারতের জাতীয় পতাকায় গানটির বন্দেমাতরম শব্দ খোদাই করেন।
  • ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আইন চালু হওয়ার পর হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা হয়। সে সময় হিন্দুদের জাতীয় ধ্বনি ছিলো বন্দে মাতরম।
  • বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য যে তুমুল আন্দলন গড়ে উঠেছিলো তার জাতীয় ধ্বনি ছিলো বন্দে মাতরম।

ভারতের জাতীয় ধ্বনি কী?

ভারতের জাতীয় ধ্বনি “সত্যমেভ জয়তু’ তবে বন্দেমাতরম অন্যতম প্রভাববিস্তারকারী শব্দ।

বন্দেমাতরম নিয়ে কৌতুক

যাই হোক, বন্দে মাতরম শুনে এক অশিক্ষিত শ্রোতা জিজ্ঞেস করলোঃ বন্দের (মাঠের) ভিতরে মাতম (কান্দন) কিল্লাগি করতো? তার মানে একজন অশিক্ষিত লোক বন্দে কথাটাও বুঝবে না, মাতরম তো একদম বুঝবে না। ‘মা গো’ না বলে ‘মাতরম’ বলে দেখুন কয়জন বুঝে।

Vande Mataram meaning in Bangla

Bonde matoram ortho ki? Bondematoram gan ke likhesen?bondemataram koto sale lekha hoy?bondemataram ganer itihash,

Tag: বন্দে মাতরম অর্থ বন্দে মাতরম অর্থ বন্দে মাতরম অর্থ বন্দে মাতরম অর্থ বন্দে মাতরম অর্থ বন্দে মাতরম অর্থ বন্দে মাতরম অর্থ বন্দে মাতরম অর্থ

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।