ম্যালেরিয়া জ্বর কী? ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিরোধ।

সূচিপত্র-Table Of Contents
  1. ম্যালেরিয়া জ্বর কী?
  2. ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা

ম্যালেরিয়া জ্বর কী?

ম্যালেরিয়া পরজীবী দ্বারা সংঘটিত এক ধরনের সংক্রামক রোগ। এটি এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশা দ্বারা ছড়ায়। পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোতে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।

ম্যালেরিয়া জ্বর কী? ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিরোধ।

আপনি আরও পড়তে পারেন ….. ডেঙ্গু জ্বর কী? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার,প্রতিরোধ! …. কালাজ্বর কী? কালাজ্বর এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ! …. চিকুনগুনিয়া রোগ কী?চিকুনগুনিয়া লক্ষণ ও প্রতিরোধ!কান পাকা রোগ! লক্ষণ ও প্রতিকার!

বাংলাদেশের কোন জেলায় ম্যালেরিয়া জ্বর বেশি?

বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা (বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি), চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল (হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর) এবং কুড়িগ্রাম জেলায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। যারা এই রোগে মৃত্যুবরণ করে তাদের অধিকাংশই শিশু ও গর্ভবতী মহিলা। আমাদের দেশে সারা বছরই ম্যালেরিয়া কম-বেশি বিস্তার লাভ করে থাকে। তবে, বর্ষার শুরুতে এবং শেষে ম্যালেরিয়ার বিস্তার বেশি হয়ে থাকে।

ম্যালেরিয়া জ্বর এর কারণ

সংক্রামিত স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড়ে প্লাজমোডিয়াম পরজীবী শরীরে প্রবেশ করলে ম্যালেরিয়া রোগ হয়।

কোন মশা ম্যালেরিয়া ছরায়?

অ্যানোফিলিস মশা
অ্যানোফিলিস মশা

স্ত্রী এনোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া ছরায়। স্ত্রী এনোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া জীবানুর বাহক। এই মশার দেহে জীবানুর যৌন জনন সম্পন্ন হয় তাই একে মূখ্য পোষক ও বলা হয়।

ম্যালেরিয়া জীবাণুর জীবনচক্র

ম্যালেরিয়া জীবাণুর জীবনচক্র

ম্যালেরিয়া জীবাণুর নিম্নলিখিত দু’টি জীবনচক্র রয়েছে:

১. মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া জীবাণুর অযৌন চক্র (সাইজোগনি):

মানবদেহে এই চক্রটির দু’টি পর্যায় রয়েছে, একটি যকৃত এবং অন্যটি লোহিত রক্ত কণিকা পর্যায়

২. মশার দেহে ম্যালেরিয়া জীবাণুর যৌনচক্র (স্পোরোগনি):

স্ত্রী এনোফিলিস মশার দেহে এটি ঘটে।জীবাণুর প্রজাতিভেদে এ-চক্রটি সম্পন্ন হতে ৭-১৪ দিন সময় লাগে

মানুষের দেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু কিভাবে প্রবেশ করে?

ম্যালেরিয়া জ্বর কিভাবে ছড়ায়

বাহক মশা ম্যালেরিয়া রোগীকে কামড়ানোর সময় পরজীবী গ্রহণ করে এবং সংক্রমণযোগ্য হয়ে পড়ে। এই মশা সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তার শরীরে ম্যালেরিয়ার পরজীবী প্রবেশ করে এবং সেই ব্যক্তি ৮-১০ দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসা না পেলে এক পর্যায়ে সে ম্যালেরিয়া জীবাণুর বাহকে পরিণত হয়। এই রোগীকে ভেক্টর বা বাহক মশা কামড়ানোর সময় ম্যালেরিয়ার পরজীবী গ্রহণ করে। এইভাবে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ চক্রাকারে চলতে থাকে।

ম্যালেরিয়ার জীবাণু কত দিন পর রোগ প্রকাশ করে?

জীবাণুর নামম্যালেরিয়া জ্বরের নামকত দিন সুপ্ত থাকে
Plasmodium vivaxবিনাইন টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর১২ – ২০ দিন
Plasmodium malariaeকোয়ারটান ম্যালেরিয়া জ্বর ১১-১৬ দিন
Plasmodium falciparum,ম্যালিগন্যান্ট টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর৮ – ১৫ দিন
Plasmodium ovaleমাইল্ড টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর১৮-৪০ দিন

ম্যালেরিয়া জ্বর কত ঘন্টা পরপর আসে?

জীবাণুর নামম্যালেরিয়া জ্বরের নামজ্বর আসার সময়
Plasmodium vivaxবিনাইন টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বরজ্বর আসে ৪৮ ঘণ্টা অন্তর অন্তর
Plasmodium malariaeকোয়ারটান ম্যালেরিয়া জ্বরজ্বর আসে ৭২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর
Plasmodium falciparum,ম্যালিগন্যান্ট টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বরজ্বর আসে ৩৬-৪৮ ঘণ্টা অন্তর অন্তর
Plasmodium ovaleমাইল্ড টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বরজ্বর আসে ৪৮ ঘণ্টা অন্তর অন্তর

ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ

ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ
  • জ্বর বা জ্বরের ইতিহাস ম্যালেরিয়া রোগের অন্যতম প্রধান উপসর্গ।
  • ৪৮ বা ৭২ ঘন্টা পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা।
  • প্রচণ্ড ঘাম দিয়ে জ্বর ছেরে যাওয়া
  • জ্বর ছাড়া এমন কোনো সুনির্দিষ্ট উপসর্গ ও লক্ষণ নেই যা দেখে বলা যাবে যে রোগটি ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় অন্যান্য যেসব রোগে জ্বর হয় তার মধ্যে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, কান পাকা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া উল্লেখযোগ্য।

ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী জীবাণুর প্রজাতিসমুহ

ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী জীবাণুর ৪ টি প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলো-

জীবাণুর নামম্যালেরিয়া জ্বরের নাম
Plasmodium vivaxবিনাইন টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর
Plasmodium malariaeকোয়ারটান ম্যালেরিয়া জ্বর
Plasmodium falciparum,ম্যালিগন্যান্ট টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর
Plasmodium ovaleমাইল্ড টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর

বাংলাদেশে কত প্রজাতির ম্যালেরিয়া জীবাণু রয়েছে?

বাংলাদেশে প্রধানত দুই প্রজাতির জীবাণু রয়েছে-

জীবাণুর নামম্যালেরিয়া জ্বরের নাম
প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপেরাম (Plasmodium falciparum)
ম্যালিগন্যান্ট টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর
প্লাজমোডিয়াম ভাইভেক্স (Plasmodium vivax)বিনাইন টারসিয়ান ম্যালেরিয়া জ্বর

এই দুই প্রজাতির মধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপেরাম এর মাধ্যমে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হয় এবং এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া জ্বর

গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া হলে তা মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে এবং এটি মা ও গর্ভজাত শিশু উভয়ের জন্য বিপজ্জনক। গর্ভাবস্থায় ও প্রসব পরবর্তীকালে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হলে মৃত্যুর হার অনেক বেশি থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের মারাত্মক ম্যালেরিয়ায় কিছু জটিলতা বেশি পরিমাণে দেখা যায়,

  • যেমন রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা (hypoglycemia),
  • ফুসফুসে পানি জমা
  • গর্ভপাত
  • গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু
  • স্বল্প ওজনের শিশু প্রসবের সম্ভাবনা, ইত্যাদি।

মারাত্মক ম্যালেরিয়া জ্বর কী?

ফেলসিপেরাম ম্যালেরিয়াকে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে। বর্তমানে জ্বর আছে বা বিগত ৪৮ ঘণ্টায় জ্বরের ইতিহাস আছে এমন রোগীর রক্তকাঁচ পরীক্ষা অথবা দ্রুত রোগনির্ণয় পদ্ধতিতে প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপেরাম পাওয়া গেলে এবং সেই সঙ্গে নিচে বর্ণিত যেকোনো এক বা একাধিক লক্ষণ থাকলে তাকে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়।

মারাত্মক ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ

  • সাম্প্রতিক আচরণে ও কথাবার্তায় অসংলগ্নতা
  • ঘুমঘুম ভাব
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা অজ্ঞান হওয়ার পূর্বাবস্থা
  • খিঁচুনি
  • রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা
  • মারাত্মক রক্তস্বল্পতা (severe anaemia)
  • দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন ক্ষীণ হওয়া এবং রক্তচাপ অত্যধিক কমে যাওয়া
  • অত্যধিক দুর্বলতা, যার কারণে নিজে নিজে বসতে, দাঁড়াতে বা হাঁটতে না পারা
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া অথবা ফুসফুসে পানি জমা (pulmonary oedema)
  • প্রস্রাব কম হওয়া অথবা কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া (renal failure)
  • জন্ডিস
  • রক্তক্ষরণের প্রবণতা (bleeding tendency)
  • অচেতনতা (coma)
  • রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা (hypoglycaemia)
  • রক্তে অম্লতা (acidosis) বৃদ্ধি
  • হঠাৎ কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়া
  • প্রস্রাবের সাথে হিমোগ্লোবিন যাওয়া
  • (haemoglobinuria)

তবে মনে রাখতে হবে যে,
মারাত্মক ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য রোগের সম্ভাবনাও থাকতে পারে। সুতরাং সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের পূর্ণ ইতিহাস জানা প্রয়োজন এবং শারীরিক ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা একান্তই জরুরি

মারাত্মক ম্যালেরিয়ার রোগীর মধ্যে পূর্বে বর্ণিত এক বা একাধিক রোগের লক্ষণ থাকতে পারে

আক্রান্ত হওয়ার পর এসব রোগীর পরবর্তীতে অন্যান্য রোগের লক্ষণও দেখা দিতে পারে

মারাত্মক ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠি

  • ম্যালেরিয়া-প্রবণ অঞ্চলের শিশু, বিশেষত যাদের বয়স ৬ মাস থেকে ৬ বছর
  • ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকার গর্ভবতী মহিলা, বিশেষত যারা প্রথমবারের মতো সন্তানসম্ভবা
  • কম প্রকোপবিশিষ্ট অঞ্চল অথবা একেবারেই ম্যালেরিয়া নেই এমন এলাকা থেকে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় আগত ভ্রমণকারী ব্যক্তিবর্গ, যেমন পর্যটক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী।
  • ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলের জনগণ যারা বেশ কয়েক বছর অন্য দেশে বা অন্য এলাকায় (যেখানে ম্যালেরিয়া নেই) বসবাস করে পুনরায় নিজ এলাকায় ফেরত আসে।

ম্যালেরিয়া রোগীর অচেতনতার মাত্রা পরিমাপ করা

ব্যথা এবং মৌখিক নির্দেশ অনুযায়ী রোগীর হাত-পা নড়াচড়া এবং কথা বলার সামর্থ্যের ওপর অচেতনতার মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

যারা কথা বলতে পারে না এমন শিশুদের কান্না, মায়ের মুখের দিকে তাকানো এবং ব্যথায় সাড়া দেওয়ার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক তাদের অচেতনতার মাত্রা পরিমাপ করতে পারেন।

ম্যালেরিয়ার জীবাণু কিভাবে পরীক্ষা করা হয়?

ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে রক্তকাঁচ পরীক্ষা অথবা দ্রুত রোগনির্ণয় পদ্ধতির (rapid diagnostic test, RDT) মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

রক্তকাঁচ পরীক্ষা

ম্যালেরিয়া পরজীবী সনাক্তকরণের জন্য সংগৃহীত রক্তকাঁচের ‘থিক’ এবং ‘থিন’ ফিল্ম পরীক্ষা করা হয়।থিক ফিল্ম দ্বারা জীবাণুর উপস্থিতি ও পরিমাণ এবং থিন ফিল্ম দ্বারা জীবাণুর প্রজাতি (species) নির্ণয় করা হয়

র‍্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (RDT)

এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপেরাম অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। এই পরীক্ষার ফলাফল মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে পাওয়া যায়

রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয়

রোগীর আচরণে অসংলগ্নতা বা বিভ্রান্তি দেখলে কিংবা কখনো অচেতন হয়ে পড়লে বা খিঁচুনি উঠলে অতি সত্তুর তার রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করা উচিত। গ্লুকোমিটারের সাহায্যে ১-২ মিনিটের মধ্যেই এই পরীক্ষাটি করা যায়।

হিমোগ্লোবিন নির্ণয়

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষত্রে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব কম (৫ গ্রাম/ ডিএল অথবা এর কম) দেখা গেলে রোগীকে রক্ত দিতে হবে।

লাম্বার পাংচার (lumbar puncture)

যেসব রোগীর মধ্যে আচরণের পরিবর্তন, অচেতনতা অথবা খিঁচুনি দেখা যায় তাদের ক্ষেত্রে লাম্বার পাংচারের মাধ্যমে মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিস আছে কি না তা জেনে নেওয়া উচিত।

ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা

জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা [ অনুসরণ করে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করা হয়। জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ওয়েবসাইটে (www.nmcp.info) গিয়ে যে কেউ এই নীতিমালাটি ডাউনলোড করতে পারেন। বতর্মানে ম্যালেরিয়া উপদ্রুত এলাকার সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

ম্যালেরিয়া জ্বরের ঔষধ

১. ফেলসিপেরাম ম্যালেরিয়ার ঔষধ

ক) সাধারণ ম্যালেরিয়ার ঔষধ

সাধারণ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করলে মারাত্মক ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথেই আর্টিমিথার লুমিফ্যানট্রিন সম্বনিত চিকিৎসা (ACT) শুরু করতে হবে। প্রথম ডোজ দেওয়ার ৮ ঘণ্টা পর ২য় ডোজ, ২৪ ঘণ্টা পর ৩য় ডোজ, এবং পরবর্তী তিনটি ডোজ ১২ ঘণ্টা পরপর দিতে হবে। যদি কোনো ক্ষেত্রে ACT দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে নিম্নোক্ত চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

কুইনাইন (৭ দিন) + টেট্রাসাইক্লিন (৭ দিন)

অথবা
কুইনাইন (৭ দিন) + ডক্সিসাইক্লিন (৭ দিন)

অথবা
কুইনাইন (৭ দিন) + ক্লিনডামাইসিন (৭দিন)

অথবা
সহজলভ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত যেকোনো ACT (যেমন আর্টিসনেট-মেফ্লোকুইন, আর্টিসনেট-অ্যামোডিয়াকুইন)

সর্তকতা: আট বছরের কমবয়সী শিশু এবং দুগ্ধদানকারী ও গভর্বর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে টেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন সেবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, উপরোক্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে ACT-র সাথে এক ডোজ ০.৭৫ মিগ্রা/ কেজি শরীর-ওজন প্রিমাকুইন দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় এবং চার বছরের কমবয়সী শিশুদের প্রিমাকুইন দেওয়া যাবে না।

খ) মারাত্মক ম্যালেরিয়ার ঔষধ

মারাত্মক ম্যালেরিয়া নির্ণিত হওয়ার সাথে সাথে রোগীকে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর আগেই কুইনাইন আইএম/রেক্টাল আর্টিসনেট দিতে হবে (যদি সহজলভ্য হয়)। একজন জটিল ম্যালেরিয়া রোগীর জন্য আইভি আর্টিসনেট সর্বোত্তম চিকিৎসা এবং এটি হাসপাতালেই সম্ভব।

২. ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ঔষধ

ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ক্লোরোকুইনের (৩ দিন) সাথে প্রিমাকুইন (১৪ দিন) দেওয়া প্রয়োজন। তবে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রিমাকুইন বজর্ন করতে হবে।

উল্লেখ্য, যেকোনো ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ীই উল্লিখিত চিকিৎসা-ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবার জন্য রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়াই উত্তম।

ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ

  • দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা প্রদান
  • এলাকাতে মশার জন্ম ও বংশ বিস্তার রোধ করা
  • দ্রুত মহামারী চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করা
  • কীটনাশকে চুবানো মশারী ব্যবহার করা
  • মশা তাড়াবার জন্য ধোঁয়া, যেমন মানসম্মত মশার কয়েল, ধূপ, প্রভৃতি ব্যবহার করা
  • যতটুকু সম্ভব শরীর ঢেকে রাখা (ফুল হাতা শার্ট পরিধান ইত্যাদি)
  • সম্ভব হলে শোবার ঘরের দরজা এবং জানালায় মশা ঠেকানোর জাল ব্যবহার করা
  • আবদ্ধ জলাশয়, যেমন অপ্রয়োজনীয় ডোবা, গর্ত, নর্দমা (যেখানে মশা ডিম পাড়ে ও বংশ বিস্তার করে) ভরাট করে ফেলা, অথবা আবদ্ধ জলাশয়ে শুককীট খেকো মাছ চাষ করা ও পানির কিনারায় ঘাস পরিষ্কার করা
  • মশা ধ্বংসকারী কীটনাশক ছিটিয়ে মশা ধ্বংস করা
  • বসতবাড়ী ও চার পাশে বেড়ে ওঠা অপ্রয়োজনীয় ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার রাখা
  • ম্যালেরিয়া উপদ্রুত অঞ্চলের জনগণকে উপযুক্ত স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করা
  • ম্যালেরিয়া রোগ এবং তার বিস্তার সম্বন্ধে জনগণকে বাস্তব ধারণা দিয়ে বিভিন্ন প্রতিরোধ কার্যক্রমে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
  • বিভিন্ন প্রকার পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে জনগণকে সচেতন করে তোলা

লেখক- ডাঃ তফসির আহম্মেদ চৌধুরী, আইসিডিডিআর,বি

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।