সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে
জীবনকে সবাই ভালবাসে। মরতে সবারই ভয় লাগে। অনেক সময় কারো চাপে পরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় মানুষ। আত্মহত্যা মহাপাপ। সব জেনে বুঝেও পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকে এই মহা পাপ করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু আপনি জানেন কি? পৃথিবীর বুকে আছে এমন এক গাছ যার সংস্পর্শে গেলে আপনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন। ভাবা যায় গাছের কি ক্ষমতা মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।
এখন নিশ্চয়ই আপনার জানতে ইচ্ছা করছে কি এমন গাছ যে গাছের কারণে মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। তাহলে আর দেরী কেন আসুন জানা যাক সে আশ্চর্য Suicide Plant”র অসীম রহস্য সম্পর্কে।
আপনি আরো পড়তে পারেন…. বাঁশ ফুল।বাঁশ ফল এর অসীম রহস্য ….. রাতে গাছের নিচে ঘুমানো উচিৎ নয় কেন?
Suicide Plant এর পরিচয়
Suicide Plant”র Urticaceae পরিবারের কাঁটা জাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ বিভিন্ন বাহারি নামে পরিচিত। যেমন – স্টিংগিং ব্রাস,স্টিংগার,গাম্পি গাম্পি , মুনলাইটার,মালবেরি লিভড স্টিংগার ইত্যাদি।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট গাছ](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/গাছ-300x204.jpg)
এদের পাতা, কান্ড, ফলে সূক্ষ্ণ লোমের মত কাটা থাকে বলে এদের নাম স্টিংগিং ব্রাশ রাখা হয়েছে। আহ! যেমন কর্ম তেমন নাম। এদের দেহের সূক্ষ্ম কাঁটাগুলোর গোড়ায় বিষথলি থাকে।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে স্টিংগিং ব্রাশ](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/কাঁটা-300x204.jpg)
প্রাণীর ত্বকে কাটা বিদ্ধ হলে বিষথলি থেকে ইনজেকশন এর মত বিষ দেহ কোষে প্রবেশ করে।এই উদ্ভিদের বিষ হলো নিউরোটক্সিক ধরনের।নিউরোটক্সিক বিষ স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
Suicide Plant এর বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস
Kingdom | Plantae |
Clade | Tracheophytes |
Clade | Angiosperms |
Clade | Eudicots |
Clade | Rosids |
Order | Rosales |
Family | Urticaceae |
Genus | Dendrocnide |
Species | D. moroides |
Suicide Plant এর বৈজ্ঞানিক নাম কি?
Dendrocnide moroides
Suicide Plant এর দৈহিক গঠন
Suicide Plant গুচ্ছাকারে না জন্মে এককভাবে জন্মে। প্রত্যেক উদ্ভিদ লম্বায় ১-৩ মিটার হয়। পাতা সরল ও হৃদপিন্ডাকার।পাতার দৈর্ঘ্য।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট পাতা](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/পাতা-300x204.jpg)
১২-২২cm প্রস্থ ১১-১৮cm।পাতার কিনারা খাঁজকাটা। পাতার উভয় পৃষ্ঠে সাদাটে লোমের মত কাটা থাকে।কান্ড নরম নলাকার। কান্ড পাতার মতোই সূক্ষ্ম লোমের মত কাটায় আবৃত।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট কাণ্ডের কাটা](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/কাণ্ডের-কাটা-300x204.jpg)
সুইসাইড প্লান্ট কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার রেইনফরেস্টে Suicide Plant বেশি পাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়ার রেইনফরেস্টে Suicide Plant অল্পসংখ্যায় দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের এটি বেশ পরিচিত উদ্ভিদ।
মারণঘাতি গুণের কারণে সংরক্ষণের অভাবে Suicide Plant”র সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
Suicide Plant এর প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি
Suicide Plant ফুলের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। একই গাছে স্ত্রী ও পুং উভয় ফুল ফোটে। একটি পুং ফুলকে ঘিরে কয়েকটি স্ত্রী ফুল ফোটে।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট ফুল](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/সুইসাইড-প্লান্ট-ফুল-300x204.jpg)
পরাগায়নের পর স্ত্রী ফুলের গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয়।ফল রসালো ছোট জামের মত। ফলগুলোতে একটি করে বীজ থাকে। ফলের রং উজ্জ্বল পিংক বা পার্পল।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট ফল](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/সুইসাইড-প্লান্ট-ফল-300x204.jpg)
ফলের বাইরে ঘন কাঁটার আবরণ থাকে। কাঁটা ত্বকে ফুটলে বিষ প্রবেশ করে এবং মারাত্বক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। কাঁটা পরিষ্কার করতে পারলে ফল খাওয়া যায়।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট বীজ](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/সুইসাইড-প্লান্ট-বীজ-300x204.jpg)
সুইসাইড প্লান্ট আত্মহত্যায় বাধ্য করে
প্রচারণাস্থানীয় লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, একজন শিকারি তার ঘোড়ায় চড়ে বনের গহীনে গিয়েছিলেন। প্রথমে ঘোড়াটির ত্বকে Suicide Plant”র পাতা থেকে কাঁটা ফুটে যায় এবং ঘোড়ার দেহে বিষ প্রবেশ করে। বিষের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ঘোড়া পাহাড় থেকে খাদের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। শিকারি ত্বকে কাঁটা বিধলে শিকারিও নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট আত্মহত্যায় বাধ্য করে](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/ঘোড়ার-আত্মহত্যা-300x204.jpg)
Suicide Plant”র কাঁটা দেখতে ইন্জেকশনের সিরিঞ্জের মত। কাঁটার ভেতরের অংশ ফাঁপা। কাটার গোড়ায় বীষথলি থাকে। কাঁটা ত্বকে ঢুকলে বিষথলিতে চাপ পরে ফলে থলি থেকে বিষ কাঁটার ফাঁপা নল দিয়ে মাংশপেশিতে প্রবেশ করে।
এই বিষ নিউরোটক্সিক ধরণের। রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে মস্তিষ্ক সহ দেহের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত স্নায়ুতন্তু কে আক্রমণ করে।
বিষের প্রভাবে তিব্র যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। এই যন্ত্রণা সহ্য করা যেকোন প্রাণির ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব। বিষের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেক প্রাণী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। শুষ্ক মৌসুমে পাতা,কাণ্ড,ফলের উপর থেকে বিষাক্ত কাঁটা বাতাসে উড়ে বেড়ায়।
এই কাঁটা নাক দিয়ে শ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে তিব্র হাঁচি শুরু হয়। অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পরে।
Suicide Plant”র বিষের রাসায়নিক গঠন
Suicide Plant”র Moroidin নামক বিষ থাকে। এই বিষের রাসায়নিক গঠন a bicyclic octapeptide containing an unusual C–N linkage between tryptophan and histidine.
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্টে Moroidin নামক বিষ থাকে](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/600px-Moroidin.svg-300x138.png)
Suicide Plant”র বিষের প্রভাব
দেহে বিষ প্রবেশ করার পর দেহে বিষের প্রভাব কয়েক ঘন্টা থেকে ২দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে বেশি মাত্রায় বিষ প্রবেশ করলে কয়েক মাস পর্যন্ত এর প্রভাব স্থায়ী হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে পানি লাগলে যন্ত্রণা আরো বৃদ্ধি পায়।
কাঁটা ত্বকে বিদ্ধ হওয়ার পর আক্রান্ত স্থানটি ছোট, লাল বিন্দুর মত র্যাস উঠে ভরে যায়। এরপর প্রতি ঘন্টার ব্যবধানে ত্বকের উপরের অংশ পরিবর্তন হতে থাকে। ২ থেকে ৩ ঘন্টা পর আক্রান্ত স্থান ফুলে উঠে এবং র্যাশ গুলো বড় আকৃতি ধারণ করে।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্ট বিষের প্রভাবঃ](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/বিষের-প্রভাব-300x300.jpg)
সময়ের সাথে সাথে যন্ত্রণার তিব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আপনি ঘুমাবেন তার উপায় নেই। বিষের প্রভাবে ঘুম উড়ে যায়। এই অবস্থায় কোন কিছুই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না। আপনি যন্ত্রণা ভুলার জন্য আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন।
সুইসাইড প্লান্ট বিষক্রিয়ার চিকিৎসা
Suicide Plant”র কাঁটার আঘাতে সৃষ্ট বিষক্রিয়া নিরাময়ের জন্য আজ পর্যন্ত কোন নির্ভরযোগ্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি। গায়ের পশম তোলার জন্য ব্যবহৃত হেয়ার রিমুভাল স্ট্রাইপ ব্যবহার করে ত্বক থেকে কাঁটা অপসারণ করতে পারলে যন্ত্রণা অনেকখানি কমে যায়।
সুইসাইড প্লান্টের ক্ষত সারাতে প্রচলিত ঔষধ
Cunjevoi বৈজ্ঞানিক নাম Alocasia brisbanensis(মান কচুর মতো দেখতে এক ধরনের উদ্ভিদ)।
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে সুইসাইড প্লান্টের ক্ষত সারাতে প্রচলিত ঔষধ](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/220px-Alocasia_brisbanensis_-_Wilson_River-198x300.jpg)
অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব অঞ্চলের আদিবাসীরা এই উদ্ভিদের পাতা বা কন্দের রস সুইসাইড প্লান্টের বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট ক্ষত সারাতে ব্যবহার করত। তারা বিশ্বাস করতো এই রস ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মজার বিষয় হলো এই উদ্ভিদটি সুইসাইড প্লান্ট এর আশপাশে জন্মায়। তবে বর্তমানে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে এ পদ্ধতিটি বিষ কমার বদলে আরও বাড়িয়ে দেয়।
- আক্রান্ত স্থানে ডেটল ঘষলে অনেকখানি আরাম পাওয়া যায়। ডেটল ব্যথা কমাতে এবং সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
- আক্রান্ত স্থানে গরম পানি ঢাললে ব্যথা অনেক খানি উপশম করে।
- Chris Shaw’s Remedy তৈরি করা হয় 0.9% Hydrochloric acid দিয়ে। এটা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে বর্তমান গবেষণায় দেখা যায় এটা ততটা ফলপ্রসূ নয়।
- Paw Paw Ointment ত্বকে লাগালে কিছুটা ব্যথা উপশম করে।
Suicide Plant Description in bangla
Suicide Plant called ‘Gympie-Gympie’ stinging brush, mulberry-leaved stinger, the suicide plant, or moonlighter.A factsheet by the Australian Geographic says that the plant is well-known as ‘Gympie-Gympie’ and is part of the Dendrocnide moroides species.
প্রধান লেখক
![সুইসাইড প্লান্ট মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে sujon](https://kotokisuojana.com/wp-content/uploads/2020/11/sujon-300x59.jpg)
Please Click On Just One Add To Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।
All photo credit goes to sutterstock.com