হাইপোগ্লাইসেমিয়া কী? এর কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

হাইপোগ্লাইসেমিয়া কী? এর কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ অতিরিক্ত কমে গেলে সেই অবস্থাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। হঠাৎ করে যদি ডায়াবেটিস রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় তবে সর্বপ্রথম Hypoglycemia-র কথা মাথায় রাখা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে।

অনেক সময় হঠাৎ করে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গিয়ে Hypoglycemia সৃষ্টি হয়।Hypoglycemia হলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ২.৫ মিলিমোল/লিটার-এর কম হয়ে যায়।এসময় যদি সঠিক চিকিৎসা না-করা হয় তবে রোগীর মার ত্মক ক্ষতি হতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া কী? এর কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

আপনি আরও পড়তে পারেন …… ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন!গর্ভকালীন ডায়াবেটিস!গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্থ থাকার উপায়!

হাইপোগ্লাইসেমিয়া কী?

ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ হঠাৎ বিপদজনক ভাবে কমে যাওয়াকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে।

কিভাবে বুঝবেন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে?

Hypoglycemia নির্ণয় করা সহজ। কোনো ডায়াবেটিস রোগীর উপরোক্ত লক্ষণ দেখা গেলে প্রথমেই Hypoglycemia সন্দেহ করা উচিত এবং দ্রুত চিকিৎসাও শুরু করা উচিত।

ডায়াবেটিস রুগীর সুগার নিল হয় কেনো?

Hypoglycemia হলে ডায়াবেটিস রুগীর সুগার নিল হয়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার অনেক কারণ আছে। তবে, সাধারণ কিছু কারণ আছে যার জন্য Hypoglycemia বেশি হয়। যেমন:

  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা।
  • কোনো বেলার খাবার না খাওয়া বা খেতে দেরি করা।
  • ইনসুলিনের ডোজ বেশি নেওয়া।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বেশি। পরিমাণে খাওয়া।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা।
  • লিভার বা কিডনিতে সমস্যা থাকা।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রকারভেদ

Hypoglycemia কে মৃদু, মধ্যম ও তীব্র এই তিনভাগে ভাগ করা হয়। তীব্র Hypoglycemia খুবই বিপদজনক। তীব্র Hypoglycemia-য় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ বা উপসর্গ

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ !হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ বা উপসর্গ!
ছবি নেয়া হয়েছে এই ওয়েবসাইট থেকে – farjanaanzin.wordpress.com

Hypoglycemia-র লক্ষণ বা উপসর্গ দেখুন…

  • অস্বস্তিবোধ করা।
  • হঠাৎ অস্থিরতা দেখা যায়।
  • শরীর থেকে ঘাম ঝড়তে থাকে।
  • বমিভাব বা বমি হয়।
  • বুক ধড়ফড় করা।
  • বিভ্রান্তি হয় ফলে কোন কিছু হাতের কাছে থাকলেও খুজতে থাকে বা অবাস্তব কথা বলে।
  • জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
  • অস্পষ্টভাবে কথা বলা
  • তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব মানে ঘুমে চোখের পাতা বুজে আসে।
  • মাথাব্যথা শুরু হয় অনেক সময় ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে।
  • হঠাৎ তীব্র ক্ষুধা-লাগা
  • হঠাৎ ভাবাবেগ বা আচরণের পরিবর্তন।
  • হাত-পা কাঁপতে থাকা অথবা খিঁচুনি হওয়া।
  • দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা দেখতে সমস্যা হওয়া, ইত্যাদি।

সব রোগীরই যে একরকম লক্ষণ থাকবে তা নয়। Hypoglycemia-র তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। ঘুমের মধ্যেও Hypoglycemia হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীরা অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখে, ঘাম হয়, কাঁপতে থাকে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা
  • Hypoglycemia নির্ণয় করতে পারলে সাথে সাথে রোগীকে চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার দিতে হবে ।
  • চিনির বা গ্লুকোজের শরবৎ, মিষ্টি, ড্রিংকস, ফলের রস, চকলেট, ইত্যাদি দেওয়া যায়।
  • ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করতে হবে। তখন যদি গ্লুকোজের মাত্রা কম থাকে আবার উল্লিখিত খাবার দিতে হবে। এরপর অতি দ্রুত রোগীকে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় বাসায় বা আশেপাশে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে না।তখন রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে তবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে রোগীকে অবশ্যই মিষ্টিজাতীয় খাবার দেওয়া উচিত।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা

তীব্র Hypoglycemia-র চিকিৎসা কখনই বাসায় করা যাবে না। তীব্র Hypoglycemia-র রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। মাংসপেশীতে গ্লুকাগন ইনজেকশন দিলে দ্রুত রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যায়। শিরায় গ্লুকোজ দিলে রোগী দ্রুত আরাম পায়। রোগী যদি অজ্ঞান থাকে তবে শিরায় গ্লুকোজ দিলে দ্রুত ভালো হয়ে ওঠে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধের উপায়

ডায়াবেটিস রোগীদের যেকোনো সময় Hypoglycemia হতে পারে। তাই সবারই এবিষয়ে ধারণা থাকা দরকার। চিকিৎসকের উচিত ডায়াবেটিস রোগীদেরকে বিষয়টি সময় নিয়ে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া।

রোগীর আত্মীয়স্বজনকেও বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের বাসায় গ্লুকোমিটার অবশ্যই রাখা উচিত এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনদেরও এর ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। গ্লুকোমিটারের দাম খুব বেশি নয় এবং এর ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া সম্পর্কে সতর্কতা

সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে Hypoglycemia-র ফলে সৃষ্ট বড় রকমের বিপর্যয় ঠেকানো যেতে পারে। চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ানোর মতো সাধারণ পদক্ষেপের মাধ্যমে যেমন রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব, অপরপক্ষে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। কাজেই, হাইপোগ্লাইসেমিয়া সম্পর্কে রোগী এবং তার আশপাশের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং এই অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে সবাইকে ভালোভাবে জানতে হবে।

লেখক
ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
পাবনা মেডিকেল কলেজ