অ্যাম্বারগ্রিস কি? তিমি মাছের বমি সাত রাজার ধন!

অ্যাম্বারগ্রিস কি? তিমি মাছের বমি সাত রাজার ধন!

বমি শব্দটি শুনলেই আমাদের নিজেদের বমি পায়। সত্যি সত্যি বমি না হলেও ওয়াক থু করে এক দলা থুতু বের করি। সব প্রাণির বমি ঘৃণিত বস্তু হলেও ১ টি প্রাণির বমি কিন্তু মহামূল্যবান। জানতে ইচ্ছে করছে বুঝি কোন প্রাণির বমি এত মূল্যবান? হুম শুনুন তাহলে, প্রণিটির নাম হলো স্পার্ম হোয়েল বা স্পার্ম তিমি।

স্পার্ম তিমি মাছের বমি কে বলা হয় অ্যাম্বারগ্রিস। মাত্র ১ গ্রাম অ্যাম্বরগ্রিসের দাম কয়েক হাজার ডলার হতে পারে।ভাবাযায় তাহলে কেউ ১ কেজি ওজনের এই মাল পেয়ে গেলে কি পরিমাণ অর্থ হাতে পাবে? তাহলে আসুন আজ প্রবেশ করি গভীর সমুদ্রতলে আর দেখা করি স্পার্ম হোয়েলের সাথে তার থেকে জেনে নেই এই অ্যামবারগ্রিস এর রহস্য সম্পর্কে….

আপনি আরো পড়তে পারেন…. বাদুড় কি মুখ দিয়ে হাক্কা দেয়? তিমিরা দলবেধে আত্মহত্যা করে কেন?

অ্যাম্বারগ্রিস কি?

স্পার্ম হোয়েল বা স্পার্ম তিমি মাছের বমি কে অ্যাম্বারগ্রিস বলে। জীবাশ্ম বা ফসিল হিসেবে পাওয়া কাঠের রেজিনের মত পদার্থ কে বলে অ্যাম্বার।স্পার্ম তিমির বমি অ্যাম্বার এর মত দেখতে কিছুটা তাই এটিকে অ্যামবারগ্রিস বলে।
এটি সাধারণত মোমের মত শক্ত পদার্থ যা স্পার্ম তিমির পেটে বা অন্ত্রে তৈরি হয়। সাগরের পানিতে এটি ভেসে থাকে এবং ভাসতে ভাসতে সাগর তীরে চলে আসে।এজন্য একে “floating gold” বা ভাসমান সোনা হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে।
এটি ‘সমুদ্রের ধন’ নামেও পরিচিত।খুব মূল্যবান সুগন্ধি তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হয়।এর সাথে মানুষের কদাচিৎ দেখা মেলে। দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এটি খুবই মূল্যবান।

অ্যাম্বারগ্রিস কি? তিমি মাছের বমি কি? তিমির বমি কি?

অ্যম্বরগ্রিস নামের উৎপত্তি

অ্যাম্বারগ্রিস’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত একটি অ্যাম্বর অপরটি গ্রিস। প্রাচীন ফরাসি শব্দ ‘অ্যাম্বের গ্রিস’ বা ‘ধূসর অ্যাম্বার’ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে অ্যামবারগ্রিস শব্দটি। জীবাশ্ম গাছের রেজিনকে অ্যাম্বার বলা হতো।

তবে অনেক ভাষাবিদ মনে করেন এই শব্দটি পার্শিয়ান ভাষা থেকে এসেছে। প্রায় ১০০০ বছরের বেশি সময় ধরে এটি মনুষ্য সমাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শতাব্দি প্রাচীন এক বিস্ময়কর বস্তুর নাম এই অ্যামবারগ্রিস।তিমি মাছের বমি।

অ্যাম্বারগ্রিস এর উৎস

বহুকাল থেকে মূল্যবান এই পদার্থ মানুষ ব্যবহার করে আসলেও এর উৎস সবার কাছে অজানা ছিল। কেউ মনে করতো সাগরের ঢেউয়ের মাথায় যে ফেনা থাকে তা জমে গিয়ে তৈরি হয় এটি।

কেউ আবার মনে করতো সমুদ্রে বিচরণকারী পাখি মরে গেলে তাদের মৃতদেহ সমুদ্রের পানিতে থাকতে থাকতে এদের বর্জ্য থেকে একসময় এটি তৈরি হয়।

অনেক কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৮০০ সালের কোন এক বছর আবিষ্কৃত হয় যে, স্পার্ম হোয়েল নামক তিমি মাছের বমি থেকে তৈরি হয় এই মহামূল্যবান পদার্থ অ্যামবারগ্রিস। তিমির প্রজাতির মধ্যে এদের সংখ্যা বিরল।

বিখ্যাত তিমি বিশেষজ্ঞ ক্রিসটোফার কেম্প তার বই ‘Floating Gold: A Natural (and Unnatural) History of Ambergris’-এ বলেন, অ্যাম্বারগ্রিস শুধু মাত্র স্পার্ম তিমিদের দ্বারা উৎপন্ন হয় এবং তাদের মধ্যে মাত্র ১% এটি উৎপাদন করে।

অ্যাম্বারগ্রিস এর উৎস, স্পার্ম হোয়েলের বমি
স্পার্ম হোয়েল

এই স্পার্ম হোয়েলের মাথায় স্পার্ম ওয়েল থাকে এটিও খুব দামি। মানে মরার উপর খড়ার ঘাঁ আরকি,একে তো দামি এম্বারগ্রিস তার উপর স্পার্ম ওয়েল। এই দুটি দামি বস্তুর জন্য চোরা শিকারীর হামলায় স্পার্ম হোয়েলের বংশ প্রায় ধ্বংসের মুখে।

বর্তমানে এই তিমি শিকার নিষিদ্ধ সাথে অ্যাম্বরগ্রিস, তিমি মাছের বমি কেনাবেচা করাও নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

অ্যাম্বারগ্রিস তৈরির প্রক্রিয়া

বেশিরভাগ তিমির দাঁত নেই তাই ফিল্টার ফিডিং প্রক্রিয়ায় খাবার সংগ্রহ করে। কিছু তিমির দাঁত আছে এরা বড় বড় প্রাণিকে শিকার করে খায়।

এইরকম একটি দাঁতওয়ালা তিমি হলো স্পার্ম হোয়েল। এরা খাদ্য হিসেবে স্কুইড,অক্টোপাস,ক্যাটল ফিস,সামুদ্রিক পাখি শিকার করে খায়। শিকারের দেহের ধারালো শক্ত অংশ যেমন- দাঁত,নখর,ঠোট,পা হজম হয়না।

এগুলো পেটের মধ্যে অবিকৃত অবস্থায় থাকে। এই অপাচ্য ও ধারালো টুকরার আঘাতে যাতে তিমির পেটে কোর ক্ষত সৃষ্টি না হয় তার জন্য এদের পরিপাক তন্ত্র থেকে এক ধরণের চটচটে আঠালো পদার্থ ক্ষরিত হয়ে ঐ ধারালো বস্তুগুলোকে আবৃত খরে ফেলে।

অ্যাম্বারগ্রিস তৈরির প্রক্রিয়া
অ্যাম্বারগ্রিস তৈরির প্রক্রিয়া

সময়ের সাথে সাথে ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় এবং বস্তুর আকারও বৃদ্ধি পায়। এই ক্ষরণ থেকেই তৈরি হয় মূল্যবান অ্যামবারগ্রিস। একসময় এটি আর পায়ু পথে বের হয় না। তখন বাধ্য হয়ে তিমি বমি করে।সেই বমির সাথে বের হয়ে আসে মূল্যবান বস্তুটি।এজন্য অ্যাম্বারগ্রিজকে তিমি মাছের বমি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

দুঃখের বিষয় কি বলবো কখনো এই অ্যাম্বরগ্রিস সারা জীবন তিমির পেটের ভেতরে থেকে যায়। যখন এটি মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে তখন অনেক সময় মলদ্বার ফেটে গিয়ে অনেক তিমি মৃত্যুবরণ করে।

তিমি মারা যাওয়ার পর অ্যাম্বারগ্রিসের টুকরোগুলো সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়।তিমির শরীর থেকে নিসৃত হওয়ার পর মাটিতে পতিত হওয়ার আগে বছরের পর বছর এটি সাগরের পানিতে ভাসমান থাকে।

অ্যাম্বারগ্রিস এর বাহ্যিক গঠন

এটি বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। ওজনের দিকদিয়ে এটি ১৫ গ্রাম থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এটি দেখতে হালকা সাদা বর্ণের মমের মত নরম ও আঁশটে গন্ধ বিশিষ্ট হয়।

অ্যাম্বারগ্রিস এর বাহ্যিক গঠন, তিমির বমির ছবি, তিমির বমি দেখতে কেমন?

সময়ের সাথে সাথে এটি সূর্যের আলো ও লবণাক্ত পানির প্রভাবে শক্ত ও ধূসর বা বাদামি রংয়ের হয়। বয়স বৃদ্ধির ফলে এর থেকে সুন্দর গন্ধ বের হতে থাকে। এর গন্ধ কিছুটা আইসোপ্রোপানল এর মত।

অ্যাম্বারগ্রিস এর রাসায়নিক গঠন

১৯৪৬ সালে রুইসকা এবং ফার্নান্দ লারডন অ্যাম্বারগ্রিসে থাকা বিশেষ উপাদান ‘অ্যামব্রিন’ আবিষ্কার করেন। অপরিশোধিত অ্যামবারগ্রিস কে অ্যালকোহল মিশ্রণের সাথে গরম করে অ্যামব্রিন আলাদা করা হয়।

অ্যামব্রিন গন্ধবিহীন পদার্থ। একে জারিত করলে অ্যামব্রিনের ভাঙ্গনে অ্যামব্রিক্সান এবং অ্যামব্রিনল তৈরি হয়। অ্যামব্রিক্সান ও অ্যামব্রিনল এর কারণে অ্যামবারগ্রিস এত সুগন্ধ বিশিষ্ট হয়।

অ্যাম্বারগ্রিস এর রাসায়নিক গঠন, তিমি মাছের বমির উপাদান, তিমির বমিতে কি কি থাকে?


বর্তমানে কৃত্রিমভাবে অ্যামব্রিনল ও অ্যামব্রিক্সান ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুত করা হয়। এটি আসল এম্বারগ্রিস এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অ্যাম্বারগ্রিস কোথায় পাওয়া যায়?

অ্যামবারগ্রিস মূলত পাওয়া যায় আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল, ব্রাজিল, মাদাগাস্কার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এবং মলুচ্চা দ্বীপপুঞ্জে। বেশিরভাগ বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করা আটলান্টিকের বাহামা থেকে।

অ্যাম্বারগ্রিস এর ব্যবহার

সুগন্ধি পারফিউম শিল্পে সুগন্ধ দীর্ঘস্থায়ীকরণে ব্যবহার করা হয়।
কস্তরি মৃগের ন্যায় গন্ধ বিশিষ্ট পারফিউম তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হয়।

তিমি মাছের বমি কি কাজে লাগে?
অ্যাম্বারগ্রিস এর ব্যবহার
সুগন্ধি তৈরিতে অ্যাম্বারগ্রিস এর ব্যবহার
  1. খাবার ও পানীয় সুগন্ধি করতে এম্বারগ্রিসের ব্যবহার করা হয়।
  2. ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস এর প্রিয় খাবার হিসেবে ডিম এবং অ্যাম্বারগ্রিস পরিবেশনের তথ্য পাওয়া যায়।
  3. ইউরোপে হট চকোলেট এবং তুরস্কে কফিতে ফ্লেভার হিসেবে এটি ব্যবহার করা হতো।
  4. মিশরে অ্যাম্বারগ্রিসকে সিগারেটে ঘ্রাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  5. ব্রেইন, হার্ট এবং ইন্দ্রিয়ের রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ হিসেবে ব্যবহার আছে।
  6. যৌন উত্তেজক হিসেবেও এটি বিক্রি হয়।
  7. মাথাব্যথা, সর্দি, মৃগী এবং অন্যান্য রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

অ্যাম্বারগ্রিস এর দাম কত?

অ্যাম্বরগ্রিস এর দাম, তিমি মাছের বমির দাম কত?

১ কেজি অশোধিত এম্বারগ্রিস এর দাম ১২০০০-২৫০০০ ডলার। উন্নতমানের হলে সেক্ষেত্রে দাম দের কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

তিমি মাছের বমির দাম কত?

অ্যাম্বরগ্রিস এর দামের মত।

তিমি মাছের বমি দিয়ে কি তৈরি হয়?

মূল্যবান সুগন্ধি

Ambergris ki? Timi maser bomi mohamulloban keno?

Ambergris ki? timir bomi mulloban keno? timir bomi die ki hoy? tmi maser bomi ki?

Please click on Just one Add to Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।