ইবোলা ভাইরাস কী? ইবোলা ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

ইবোলা ভাইরাস কী?

ইবোলা ভাইরাস রোগ বা ইবোলা হেমোরেজিক (Ebola virus disease/Ebola: haemorrhagic fever) ইবোলা নামক একটি ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত একটি রোগ। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে এই রোগ বর্তমানে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।

ইবোলা ভাইরাস কী? ইবোলা ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

১৯৭৬ সালে সর্বপ্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর তেমন না ছড়ালেও বর্তমানে এই রোগ আবার মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে এবং অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন … নিপাহ ভাইরাস কী? নিপাহ ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়! …… জিকা ভাইরাস কী? জিকা ভাইরাস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ! …. ম্যালেরিয়া জ্বর কী? ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিরোধ।

Info Box
ইবোলা ভাইরাস

নাম – ইবোলা ভাইরাস
পরিবার -Filoviridae
আকৃতি – সূত্রাকার কিছুটা প্যাঁচানো
পরিমাপ – 14,000 nanometers in length with a diameter of 80 nanometers
প্রধান বাহক – বাদুড়

ইবোলা কী?

ইবোলা সম্পর্কে শুরুতেই সংক্ষেপে বলা যায় যে, এটি প্রতিষেধকবিহীন একটি ছোঁয়াচে জ্বর যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করে।

এপ্রিলের শুরুর দিকে জানান দিয়ে ইতোমধ্যেই আফ্রিকার কঙ্গোতে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন ছেড়ে ইবোলা এখন ধীরে ধীরে এশিয়া এবং ইউরোপের দিকে এগোচ্ছে ।

ইবোলা ভাইরাস আগে রক্তপাতজনিত জ্বর [Ebola haemorrhagic fever (EHF)] হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলো। ইবোলা মূলত একটি আরএনএ ভাইরাস।

ইবোলা ভাইরাস নামকরণ

ইবোলা ভাইরাস এর নামকরণ করা হয়েছে কঙ্গোর ইবোলা নদীর নামে।

ইবোলা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল কোথায়?

ইবোলা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী।

ইবোলা ভাইরাসের টিকা কখন আবিষ্কার করা হয়?

ইবোলা ভাইরাসের টিকা প্রথম আবিষ্কার করা হয় ২০১৭ সালে।

ইবোলা ভাইরাসের টিকার নাম কী?

টিকার নাম ‘আরভিএসভি ঝেবোভ’। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই টিকা সফল ভাবে কার্যকর হয়েছে।

ইবোলা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারক কে?

Gary Kobinger ও Frank Plummer

ইবোলা কি ধরনের ভাইরাস?

ইবোলা এক সূত্রক আরএনএ ভাইরাস

ইবোলা ভাইরাসের প্রকারভেদ

ইবোলা ভাইরাস গোত্রের ৫টির মধ্যে ৩টি প্রজাতি মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়ে গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে। বাকি ২টি মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়।

এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে জায়ার (Zaire)। যেতে পারেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে আর সেখানে নিজের অজান্তেই এই রোগ ছড়িয়ে দিতে পারেন।

ইবোলার লক্ষণ

ইবোলা ভাইরাস লক্ষণ
  • ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে হালকা জ্বর, মাথা ব্যথা এবং শরীরব্যথা অনুভব করে; কিছুদিন পর তীব্র মাথাব্যথা ও জ্বর দেখা দেয় এবং রোগী শরীরে তীব্র ব্যথা অনুভব করে।
  • ত্বকে দানা-দানা দাগ দেখা দেয়।
  • মুখে ঘা হয়।
  • ডায়রিয়া এবং মারাত্মক বমি শুরু হতে পারে।
  • চূড়ান্ত পর্যায়ে শরীরের ভিতরে ও বাইরে রক্তপাত শুরু হতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, কিডনি, হৃদপিণ্ড অকেজো হয়ে তার মৃত্যুও হতে পারে।

এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লুর মতোই। সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়া এবং জ্বর এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ। তাই, কারো উপরোক্ত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।

রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে এটা ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস, কলেরা বা অন্য কোনো রোগের জীবাণুর কারণে হচ্ছে কি না।

ইবোলা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?

ইবোলা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়

ইবোলা ভাইরাসজনিত রোগ মানুষ ও অন্যান্য সমগোত্রীয় প্রাণী, যেমন গরিলা, শিম্পাঞ্জীসহ গৃহপালিত শুকরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি রোগ।

বলা হয়ে থাকে, বাদুড়ের খাওয়া ফল খেয়েই ইবোলা ভাইরাস মানুষের দেহে প্রথম প্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করে।

ইবোলা আক্রান্ত মানুষের দেহরস (body fluids) অপর কোনো মানুষের দেহের সংস্পর্শে আসলে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারে ।

এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পরও ভাইরাসটি বেশ কয়েকদিন টিকে থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে এই রোগে মৃত্যুর হার ৫০-৯০%।

আশার কথা হলো, রোগটি ফ্লু এবং অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগের মতো ছড়ায় না, আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসলে এই রোগে সংক্রামিত হওয়ার ভয় নেই।

ইবোলা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা

প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণে পশ্চিম আফ্রিকায় এপর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং সেই সঙ্গে এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছে।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। আমাদের দেশেও সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন কেননা একবার যদি কোনো ব্যক্তির দ্বারা এর সংক্রমণ ঘটে যায়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।

ইবোলা ভাইরাস এর চিকিৎসা

শরীরের পানিশূন্যতা রোধ (রিহাইড্রেশন) এবং হালকা বেদনানাশক দিয়ে ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করা হচ্ছে। খুব একটা কার্যকর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। কোনো প্রতিষেধক টিকাও নেই।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই রোগের লক্ষণগুলো অন্য আরো অনেকগুলো রোগের লক্ষণের সাথে মিলে যায়। ফলে, রোগ শনাক্ত করতে সময় লেগে যায়।

তাই সঠিক রোগ শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়াটাও অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

তবে, যদি রোগ দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায় তাহলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

হোমিওপ্যাথির দ্বারা এই রোগ নিরাময়ের চেষ্টা চলছে এবং ভবিষ্যতে সফলতা আসতে পারে।

ইবোলা ভাইরাসের ৩টি ভয়াবহতা

১. এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কৃত হয় নি
২. এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত শরীরের ভিতরকার তরলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। রোগীর মৃত্যুর পর মৃতদেহে এই ভাইরাস জীবিত থেকে যায় এবং অন্যান্য মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে
৩. দশ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৬ জনেরই মৃত্যুর সম্ভাবনা থেকে যায় ইবোলা সম্পর্কে ভ্রমণকারীদের যা জানা প্রয়োজন

যেহেতু পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, দ্য সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতকর্তা জারি করেছে।

ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

যেহেতু এ-রোগের কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয় নি সেহেতু এই ভাইরাসটি যাতে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না-পারে এ-ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় তবে তাকে কিভাবে পৃথক করে চিকিৎসা দিতে হবে সেই ব্যাপারেও প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।

এই ভয়াবহ ভাইরাসটি যাতে কোনোভাবেই আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ।

ইবোলা ভাইরাসের সতর্কতা

  • সবসময় সাবান ও গরম পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে খেয়াল রাখতে হবে যেন হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখে হাত লাগনো না-হয়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কোনো প্রকার তরল যাতে আপনার সংস্পর্শেনা-আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • যদি কোনো কারণে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তবে সাথে সাথে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে যাতে অন্য কেউ এ-রোগে আক্রান্ত না-হয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
  • বিমানবন্দরে এ-রোগের পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে যেন বাইরে থেকে আসা কারোর মধ্যে এ-রোগ থাকলে তা দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং তাকে সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে পৃথক করা যায়।
  • বাংলাদেশে যাতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে সকলকে সচেতন হতে হবে।
  • জ্বর-সর্দি-কাশি হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হবে।
  • ভীত না হয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা গেলে এ-রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

এ-রোগ সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানতে চাইলে বা এবিষয়ে যেকোনো সহায়তা চাইলে ঢাকার মহাখালিতে অবস্থিত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাথে ০১৯৩৭০০০০১১ বা ০১৯৩৭ ১১০০১১ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন ।

লেখক
ডাঃ রীনা দাস, আইসিডিডিআর,বি

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।