উড়ো মাছ বা উরুক্কু মাছ! যে মাছ উড়তে পারে।
মাছতো জলেই সাতার কাটে এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু কিছু মাছ আছে যারা জলের বাইরে সাঁতার কাটতে পারে জলের বাইরে সাঁতার কাটতে পারে এমন মাছ কে বলে উরুক্কু মাছ বা উড়ো মাছ।উড়ো মাছগুলো জলেও সাঁতার দেয়, শুন্যেও উড়ে।এদের ওড়া দেখতে বড় মজার। জাহাজ চলেছে ; শান্ত সমুদ্র। হঠাৎ দেখা গেল তার মধ্য থেকে কয়েকটা মাছ শূন্যে লাফ দিয়ে উঠে উড়তে আরম্ভ করলো।এদের রূপালি ডানা আর নীল দেহ সূর্যের আলোয় যখন ঝক ঝক করে তখন ভারী সুন্দর দেখায়।
আপনি আরও পড়তে পারেন…….. গরুর ১৫ টি অজানা তথ্য।যা আপনি জানেন না!
উরুক্কু মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ও শ্রেণিবিন্যাস
Kingdom | Animalia |
Phyllum | Chordata |
Class | Actinopterygii |
Order | Beloniformes |
Family | Exocoetidae |
Genus | Parexocoetus |
Species | Parexocoetus brachypterus |
ভূমধ্যসাগরেও একরকম মাছ আছে তাদের নাম উড় গারনার্ড। এরাও উড়তে পারে; কিন্তু এখানে যে মাছের আলোচনা করছি এটা তাদের মতো নয়।এখানে আলোচিত মাছটি “হেরিঙ” শ্রেণীর অন্তর্গত ।
উরন্ত মাছ কথায় পাওয়া যায়?
গ্রীষ্মপ্রধান স্থানের সমুদ্রে প্রায়ই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়োমাছ দেখতে পাওয়া যায়।জাপান, ভিয়েতনাম, বার্বাডোস ও ভারতে এ মাছ প্রচুর পাওয়া যায়। ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র বার্বাডোসে উরন্ত মাছ এতো বেশি পরিমাণে পাওয়া যেতো যে একসময় এই দেশের নামই ছিল ‘উড়ুক্কু মাছের ভূমি’।বর্তমানে বার্বাডোসের জাতীয় মাছ এই উড়ুক্কু মাছ।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত উড়ুক্কু মাছের প্রজাতি
বাংলাদেশের সমুদ্রে উরন্ত মাছের তিনটি প্রজাতি আছে সকল প্রজাতি ২টি গণের অন্তর্ভূক্ত। সেগুলো হলো: Cypselurus comatus, Cypselurus poecilopterus, Exocoetus volitans।
উড়ুক্কু মাছ কিভাবে উড়ে?
কিন্তু এদের ওড়া ব্যাপারটা পাখী বা বাদুড়ের ওড়ার মত নয়।উড়ার জন্য উড়ুক্কু মাছের কোনো ডানা নেই।এদের ডানার পরিবর্তে ফাঁপা বায়ুপূর্ণ বক্ষ পাখনা থাকে। পাখনার ভেতরে হাওয়া ভরা থাকায় ওজনেও হালকা।উরন্ত মাছ এই বক্ষপাখনার সাহায্যেই বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। উড়ুক্কু মাছের উড্ডয়ন কিন্তু প্রকৃত উড্ডয়ন নয়। একে বলে গ্লাইডিং বা পাহাড় থেকে প্যারাশুটের মত মাটিতে নেমে আসার মত।আরও সহজ করে বললে, বাতাসে ভেসে থাকা।
পাখী বা বাদুড়ের মত এরা ডানা নাড়তে পারে না। এদের ডানা দুখানা বাতাসে প্যারাশুটের কাজ করে। এর সাহায্যে এরা বাতাসে ভেসে থাকে মাত্র। যখন এরা সমুদ্র থেকে লাফ মারে তখন কেবল ডানাই মেলে না, লেজও প্রসারিত করে।এদের ডানা দুখানা বেশ বড়।দেখতে কতকটা পাখীর ডানার মত। এই ডানার জন্যে কিন্তু এদের সাঁতারের কোন বাধা হয় না। সাঁতার দেবার সময় ডানা দুটি দু’পাশে মোড়া থাকে।
পানির নিচে গড়পড়তা উড়ুক্কু মাছের বেগ হয় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের কাছাঁকাছি।তবে পানির ওপরে ৩১২ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত তারা দিব্যি ভেসে বেড়াতে পারে। মাছগুলো একসঙ্গে ৫০/৬০ গজ কখনও কখনও তারও বেশী উড়তে পারে।বাতাসের গতি বা ঢেউযের অবস্থার উপর নির্ভর করে এরা ৩০ সেকেন্ড অবধি বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। উড়ার পর জলে নেমে ফুলকা দুটি জলে ভিজিয়ে নেয় তা না হলে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে।
এদের ওড়ার আর একটু বিশেষত্ব এই যে, এরা ওড়বার সময় ইচ্ছামত এদিক-ওদিক ঘুরতে পারে না, সোজা চলে। কেননা শূন্যে এদের লেজ বিশেষ কোন কাজে আসে না।দিনের বেলায় এরা জল থেকে বেশী ওপরে উঠতে পারে না; রাত্রে বাতাসের সাহায্যে জল থেকে প্রায় বিশ ফিট ওপরে ওঠে।এদের রূপালি ডানা আর নীল দেহ সূর্যের আলোয় যখন ঝক ঝক করে তখন ভারী সুন্দর দেখায়।
উড়ুক্কু মাছ কেনো উড়ে?
পানি ছেড়ে হাওয়ায় ভাসার পেছনে রয়েছে দুটি উদ্দেশ্য। প্রথমত, প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় খাবার ধরার জন্য এরা পানির উপরে ভেসে উঠে। দ্বিতীয়ত, আত্মরক্ষা করার জন্য উড়া।শত্রুর কবল থেকে রক্ষা পাবার জন্যে বা জাহাজের ভয়ে জল থেকে পালাবার সময় এরা লাফ মারে। সে সময়ই উড়ে। বড় মাছের তাড়া খেয়ে পালিয়ে বাঁচার জন্য পানি ছেড়ে হাওয়ায় উঠে কোনোমতে পালিয়ে বাঁচে।
উড়ুক্কু মাছের বিপদ
এদের এমন কপাল যে উড়েও শত্রুর হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই। সমুদ্রের গাংচিল পাখী ও ভীষণ বড় অ্যালবাট্রস পাখীরাও শিকারের জন্যে সমুদ্রের ওপর উড়ে বেড়ায়। যেই এই সব মাছ উড়তে আরম্ভ করে ওরাও অমনি এদের আক্রমণ করে।ডলফিনেরা (তিমি জাতীয় ক্ষুদ্রকায় জীব) এই সকল উড়ো মাছদের তাড়া করে তখন এই সব উড়ো মাছ আত্মরক্ষার জন্য বৃথাই শূন্যে লাফ, মারছে ।এইরকম ভাবে জলে ও শূন্যে শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে বেচারীরা প্রাণ হারায়।
ভীষণ বোকা উড়ন্ত মাছ
মাছগুলো ভারী বোকা। জাহাজের নাবিকেরা মাঝে মাঝে উড়োমাছ ধরবার জন্যে রাত্রে বড় বড় আলো জ্বালে। এই আলো দেখে বোকা মাছগুলো জাহাজের খোলে উড়ে এসে পড়ে এবং নাবিকেরা তৎক্ষণাৎ তাদের ধরে ফেলে।এই আলোর নেশাকে কাজে লাগায় মাছ শিকারিরা নজরকাড়া নানা রকম আলো দেখাতে দেখাতে সুকৌশলে ছড়ানো জালের মধ্যে আটকে ফেলে।
উড়ন্ত মাছ খেতে কেমন?
মাছগুলো খেতে ভারী সুস্বাদু।মাছের বাজারে এই মাছের বেশ চাহিদা রয়েছে।বাণিজ্যিকভাবে জাপান, ভিয়েতনাম, বার্বাডোস ও ভারতে এ মাছ প্রচুর ধরা হয়।
Please click on Just one Add to Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু