এলএসডি কি? ভয়ঙ্কর মারণ নেশা এলএসডি!

এলএসডি কি? ভয়ঙ্কর মারণ নেশা এলএসডি!

ধরুন আপনি রাস্তায় হেটে যাচ্ছেন হঠাৎ দেখতে পেলেন একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আপনার গলা জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো বাবা বাবা বলে, তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে? মনে মনে হয়তো নিশ্চয় ভাববেন ধূর শালা এমন আপদ কোথা থেকে আসলো…..
কিছুক্ষণ পর লোকজন ভীড় জমাতে শুরু করলে ভয়ে আপনার ঘাম ছুটতে শুরু করবে এই ভেবে যে অবৈধ সন্তান জন্ম না দিয়েও বেজন্মা সন্তানের বাবা হওয়ার দরুণ এবার সম্মানটা খোয়া গেল।

আপনি আরও পড়তে পারেন…এক্সটাসি বা আইস মারণ মাদক …… ডিএমটি সব মাদকের বাপ .. শয়তানের শ্বাস মাদক কী? সবচেয়ে ভয়ংকর মাদক স্কোপোলামিন!

যাইহোক মেয়েটাকে ভালোমত জিজ্ঞাসাবাদ করার পর যখন জানা যায় সে আসলে নেশার ঘোরে কল্পনায় আপনাকে তার নিজের বাবা ভেবে বসেছে, তখন নিশ্চয় এমন প্রশ্ন মাথায় আসে কি এমন নেশা যা মেয়েটিকে দিনদুপুরে নিজের বাপকে ভুলিয়ে দিতে পারে? হ্যাঁ আছে এমন নেশা যা এই কাজটি করতে পারে তার নাম হলো এলএসডি।

এলএসডি কি?

LSD এর পূর্ণরূপ হলো লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড।এলএসডি স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি পদার্থ। LSD সাইকোডেলিক ধরনের ঔষধ,যা শরিরে প্রবেশ করলে মানব মস্তিষ্কের মনোজগৎে অদ্ভুত প্রভাব ফেলে।
এই ধরনের মাদকের প্রভাবে মানুষ আশেপাশের পরিবেশ ও বাস্তবতাকে মুহূর্তেই ভুলে গিয়ে অলীক বস্তু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন।

এলএসডির-রাসায়নিক-গঠন
রাসায়নিক গঠন lsd

LSD”র ব্যবহার

মনোরোগের চিকিৎসকগণ চরম মানুষিক সমস্যা সমাধানের জন্য LSD ব্যবহার করে।

নেশার বা মাদকতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌছার জন্য মানুষ LSD গ্রহণ করে।হতাশাগ্রস্থ বা শোকাহত মানুষ হতাশা ও শোক ভুলে একটু আনন্দদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করার জন্য LSD গ্রহণ করে।

পথভ্রষ্ট ধর্মগুরু আধ্যাত্মিক ক্ষমতা লাভের জন্য কঠোর তপস্যায় মনোনিবেশ করতে LSD ব্যবহার করে।

কিছু গবেষক গবেষণাকাজে অধিক মনোনিবেশ করতে LSD ব্যবহার করে।তাদের ধারনা এলএসডি মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এলএসডি কিভাবে খায়?

এলএসডি কিভাবে খায়? এলএসডি দিয়ে কিভাবে নেশা করে?

নেশা করার উদ্দেশে LSD ব্যবহারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো জিভের নিচে রেখে ব্যবহার করা। তবে চিকিৎসকগণ ইনজেকশনের মাধ্যমে অথবা ক্যাপসুলের মাধ্যমে রোগীর উপর প্রয়োগ করেন।

LSD কিভাবে বিক্রি হয়?

এলএসডি-কিভাবে-বিক্রি-হয়?

বল্টার কাগজ, চিনির কিউব, বা জিলেটিনে বিক্রি করা হয়। এটি ইনজেকশন হিসেবেও বিক্রি হয়।

এলএসডির গ্রহন মাত্রা

LSD এর ডোজ সাধারণত মাইক্রোগ্রামে (µg) বা এক গ্রামের এক মিলিয়ন ভাগে পরিমাপ করা হয়।
LSD এর একটি ডোজ ৪০ থেকে ৫০০ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে মানে এটি একটি বালুকণার ওজনের দশ ভাগের এক ভাগের সমান।
নেশা বা হেলুসিনেশন তৈরীর জন্য অন্যান্য ড্রাগের যেখানে কয়েকশ’ গ্রাম পর্যন্ত গ্রহণ করতে হয় সেখানে এলএসডি প্রয়োজন হয় সর্বোচ্চ ১৫০ মাইক্রোগ্রামের মতো।
এমনকি ২৫ মাইক্রোগ্রাম LSD মোটামুটি মাদকতা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।

এলএসডির উৎস কি?

এলএসডির-উৎস কি? কোথায় এল এস ডি তৈরি হয়? কি দিয়ে এলএসডি তৈরি হয়?

রাই এবং এই ধরনের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের দেহ থেকে রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে এলএসডি তৈরি করা হয়।

এলএসডি আবিষ্কারের কাহিনী

সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান ত্রিশের দশকে এলএসডি আবিষ্কার করেন এরগট নামক এক ধরনের প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস দমনের কার্যকরী ওষুধ হিসেবে।

আসলে তিনি কম রক্তচাপ, মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতি শ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত করার ওষুধ তৈরির জন্য লাইসার্জিক অ্যাসিড নিয়ে কাজ করছিলেন হফম্যান।

আলবার্ট-হফম্যান-এলএসডি-আবিষ্কারক
আলবার্ট-হফম্যান-LSD-আবিষ্কারক

১৯৩৮ সালে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের কাছে হফম্যান এর এই মাদক আবিষ্কার কোনো গুরুত্ব পায়নি।

একদিন ২৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি নিজের জিভে স্পর্শ করালেন। ফলাফল হিসেবে তিনি চোখের সামনে এক মায়াবি স্বপ্নের জগৎে পরিভ্রমণ করলেন।


পরেরদিন তিনি আগের তুলনায় প্রায় দশগুণ বেশি ২৫০ মাইক্রোগ্রাম নিলেন।আগের ফলাফলের তুলনায় এবারের ফলাফল ছিল তিব্র মাদকতাপূর্ণ।

এই ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত হোন এবং দ্রুত চিকিৎসককে ডেকে নিজের রক্তচাপ,হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করান কিন্তু কোন সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মানে তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন।এই ঘটনার পর তার সহকর্মীরা একে একে টেস্ট করলেন।

সবাই একই ফলাফল দেখতে পেলেন। এবার সবাই হফম্যানের আবিষ্কার কে স্বীকৃতি দিলেন আর এর সাথে পরিচিতি পেল ভয়ঙ্কর মারণ নেশার অমোঘ অস্ত্র LSD

এলএসডির বৈধতা

এলএসডি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবৈধ। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এলএসডিসহ সব ধরণের সাইকাডেলিক ড্রাগ নিষিদ্ধ করে। এরপর ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা কাজে এলএসডি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এলএসডি সেবনে মস্তিষ্কে কি ঘটে

LSD গ্রহনের পর রক্তে মিশে গেলে তা মস্তিষ্কে পৌছে যায় এবং সেরোটোনিন এর কাজের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
এ কারণে LSD গ্রহণকারী পারিপার্শ্বিক ঘটনা বুঝতে পারে না এবং ‘হ্যালুসিনেশন এর শিকার হয় এসময় সেবনকারী এমন অলীক দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই।
তখন সে বাস্তব এবং কল্পনার জগতের মধ্যে মিল খুঁজে পায় না।
বিজ্ঞানীদের মতে LSD সেবনকারী যে কল্পনাজগত চোখের সামনে দেখতে পান, সেসব মস্তিষ্কে জমে থাকা তথ্যভাণ্ডার থেকে আসে।এসব বাইরের পৃথিবী থেকে আসে না। কল্পনাশক্তির সাহায্যে তারা এই দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে পায়।

এলএসডির-প্রভাব
মস্তিষ্কে কি ঘটে lsd সেবনে

গবেষকদের মতে, এলএসডি গ্রহণের পর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।

মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজের জন্য বিশেষভাবে দক্ষ এইসব দক্ষ অংশগুলোকে নিয়ে তৈরিহয় এক একটি ইউনিট।

কোন কাজ সফলভাবে সম্পাদন করার জন্য এই ইউনিটগুলো পরস্পরের সাথে স্নায়ু তন্তুর সাহায্যে যুক্ত থাকে।

যদি কোন কারণে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যায় তবে চিন্তা শক্তি ও বিবেচনা করার ক্ষমতা মস্তিষ্কের হারিয়ে যায়।

এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন ইউনিটগুলোর যোগাযোগ ব্যাবস্থা দূর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ তিব্র হেলুসিনেশন তৈরি হয়।

বাস্তব দৃশ্য দেখা ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স কাজ করে।

এটি কল্পনীয় ও বাস্তব দৃশ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। LSD এর প্রভাবে এই পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা হারিয়ে যায় ফলে নেশাকারী বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা সে মনে মনে যা চিন্তা করে তাই বাস্তবে দেখতে পারে।

তথ্য সবসময় মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স থেকে আসে না।

একটা উদাহরণ দেই তাহলে সহজ হয়ে যাবে ব্যপারটা,

মনে করুন আপনি নদীর উপর নৌকায় বসে আছেন আপনি কল্পনা করছেন যদি সাঁতার কাটা যেত তাহলে কেমন হতো কিন্তু আপনি সাঁতার কাটার জন্য পানিতে নামবেন না কারণ আপনি সাঁতার জানেননা এটা আপনার জানা আছে।

কিন্তু LSD সেবনকারী তার বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে তাই সাঁতার না জানার কথা বেমালুম ভুলে পানিতে ঝপাৎ করে নেমে পরবে।

শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপর এলএসডির প্রভাব

LSD গ্রহণের ফলে মানুষের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

এ ছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ঘামসহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যাও তৈরি হয়।

এলএসডি গ্রহণ করে ভুল রাস্তা দেখে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া বা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনা অনেক ঘটেছে বলে জানা যায়।

এ ছাড়াও বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় ভোগা ব্যক্তিরা এলএসডি গ্রহণের পর আরো বেশি বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হতে পারেন বলেও উঠে এসেছে অনেক গবেষণায়।

এলএসডির দাম কত?

৫০-১৫০ মাইক্রোগ্রামে LSD এর এক হিট বা সর্ট ধরা হয়। এই এক হিটের দাম ১০ -২০ ডলার মানে ১০০০-২০০০ টাকা। কিন্তু বিভিন্ন দেশে এক হিটের দাম ১০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এক হিট সেবন করলে প্রায় ২৪ ঘন্টা সেবনকারী নেশার মধ্যে থাকে।

এলএসডি ড্রাগ কি?

LSD এর পূর্ণরূপ হলো লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড। এলএসডি ড্রাগ স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি পদার্থ। LSD ড্রাগ সাইকোডেলিক ধরনের ঔষধ,যা শরিরে প্রবেশ করলে মানব মস্তিষ্কের মনোজগৎে অদ্ভুত প্রভাব ফেলে।

Please click on Just one Add to Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।