কারেন্ট শক খেলে কি হয়?
কারেন্ট-শক-খেলে-কি-হয়?বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে অথবা অসাবধানতাবসত বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসলে আমাদের অনেকেরই শক লাগে।কিন্তু আমরা জানিনা কারেন্ট শক খেলে কি হয়? শক লাগার পরিণাম জানলে হয়তো আমরা সব সময় সাবধান থেকে বিদ্যুতের কাজ করতে পারব।মৃত্যুর হাত থেকে সহজেই বেঁচে যাব। তাহলে আসুন আর দেরি না করে জেনে নেই কারেন্ট শক খেলে কি হয়?
কারেন্ট শক কি?
প্রাণিদেহ খুব অল্প মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে (যেমন-একটি মানব দেহ মাত্র 10 থেকে 20 মিলিভোল্ট কারেন্ট/বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে)।এর থেকে বেশি কারেন্ট/বিদ্যুৎ প্রাণিদেহে প্রবেশ করলেই দেহের পেশি বেশি সংবেদনশীল হয়ে পরে অর্থাৎ দেহের পেশি স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় বেশি সংকুচিত হয়।পেশীর অতিসংবেদনশীলতার কারণে মানবদেহ বা প্রাণিদেহ দেহে ঝাকুনি হয় এই ঘটনাকে বলে কারেন্ট শক।
কারেন্ট শক খেলে মানুষ মরে কেন?
মস্তিষ্ক হতে বিভিন্ন অঙ্গে সংকেত পরিবহন করে নিউরন।নিউরন সোডিয়াম ও পটাসিয়াম চ্যানেলের ইলেক্ট্রন কমবেশি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।এর মানে বিভিন্ন অঙ্গ হতে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক হতে বিভিন্ন অঙ্গে স্নায়ুবিক সংকেত পরিবাহিত হয় বৈদ্যুতিক পালস হিসেবে।
প্রাণিদেহে অবস্থিত পেশীকলাতে মস্তিষ্ক হতে প্রেরিত এই বৈদ্যুতিক শক বা পালস পৌছালে পেশি সংকুচিত হয়। এই সংকোচন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, বৈদ্যুতিক পালস শেষ হলে পেশি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ভাবা যায় মশাই!
মস্তিষ্ক পেশীকলা থেকে কাজ আদায় করে নেয় কারেন্ট শক দিয়ে।প্রাণীদের হৃদপিন্ডে যে পেশীকলা থাকে এটাও এর ব্যাতিক্রম নয়।প্রাণিদের হার্ট বা হৃদপিন্ডের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে।হৃদপিন্ডের ডান অলিন্দের প্রাচীরে SA Node নামক একটি অঙ্গ আছে এর অপর নাম পেসমেকার এই অঙ্গটিই কারেন্ট তৈরি করে।
উৎপাদিত কারেন্ট পারকিঞ্জে তন্তুু(ধরুন কারেন্টের তার) দিয়ে সারা হৃদপিন্ডে প্রবাহিত হয়।এভাবে হৃদপিন্ডের সকল পেশিতে ছন্দবন্ধ প্রক্রিয়ায় একসাথে কাজ করে। পেসমেকার কারেন্ট উৎপাদনের পাশাপাশি রেগুলেটর হিসেবে কাজ করে।
অর্থাৎ পেশমেকার নীজ উৎপাদিত বিদ্যুৎ দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।পেশমেকার যখন সুইচ অন করে শক দেয় তখন হার্ট সংকুচিত হয় আবার সুইচ অফ করলে হার্ট প্রসারিত হয়।এখন যদি কোন প্রাণী কারেন্টের তারের সংস্পর্শে আসে এবং বিদ্যুৎ দেহের মাধ্যমে ৩য় কোন মাধ্যমে প্রবেশ করে অর্থাৎ বর্তনী পূর্ণ করে, তবে হার্টে কারেন্টের অনবরত প্রবাহ চলে।
পেশমেকার এবার বাইরের কারেন্ট কে অন অফ করতে পারে না ফলে হার্ট সংকুচিত হলেও আর প্রসারিত হয় না। হার্ট রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয়। হার্ট রক্ত পাম্প করা বন্ধ করলে অক্সিজেন ও খাবারের অভাবে কোষের মৃত্যু ঘটে। কোষের মৃত্যু ঘটলে প্রাণির মৃত্যু ঘটে।(কারেন্ট শক খেলে কি হয়?)
কারেন্ট শক খেলে কি হয়?
১।মৃদু ঝাকুনি
1 থেকে 5 মিলি অ্যাম্পিয়ারের শক খেলে তেমন ক্ষতি হয় না। পেশী স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সংকুচিত হওয়ার জন্য একটু ঝাকুনি অনুভূত হয়। 6 থেকে 16 মিলি এম্পিয়ারের শকে আপনি মরবেন না। তবে তীব্র ব্যথা যুক্ত ঝাঁকুনি অনুভব করবেন। শক খাওয়ার পরেও পেশী শিথিল হয়ে থাকবে কোন শক্তি পাবেননা মনে হবে আপনার অঙ্গ অসাড় হয়ে গেছে।
২।পুড়ে যাওয়া
100 মিলি এম্পিয়ার এর উপরে কারেন্ট শক খেলে। দেহে আগুন ধরে যেতে পারে।ত্বক ও পেশি পুড়ে যায়। অনেক সময় তিব্র শকের পর দেহের ত্বক পুড়ে গিয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে।
৩।অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বিকল হওয়া
তীব্র কারেন্ট শক এর ফলে মাংসপেশি, কিডনি, ফুসফুস,ও কলিজা বিকল হয়ে যেতে পারে। তীব্র কারেন্ট শক এ দেহ কোষের সাইটোপ্লাজম নষ্ট হয়ে যায়। সাইটোপ্লাজম নষ্ট হলে কোষ মারা যায়।
৪।ব্রেইন ড্যামেজ
বেশি ভোল্টেজ এর কারেন্ট শক খেলে ব্রেইনের নিউরনগুলোর সিন্যাপস নষ্ট হয়ে যায়। ব্রেনের কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।মস্তিষ্ক দেহের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শক খাওয়ার পর বেঁচে থাকলেও ব্যক্তিটি ব্রেইন হিসেবে পরিগণিত হয়।
৫।হার্ট অ্যাটাক
বেশি ভোল্টেজ এর কারেন্ট শক খেলে মানুষের হৃদপিন্ডের পেসমেকার তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক হয়।আবার হৃদপিন্ডের কোষগুলো মারা গিয়েও হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৬।স্ট্রোক হওয়া
মানবদেহে অতিরিক্ত মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবেশ করলে হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়, হৃদপিণ্ড বন্ধ হলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ফলে স্ট্রোক হয়। আবার মস্তিষ্কের ধমনীগুলো অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সেগুলো ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৭।তীব্র শ্বাসকষ্ট
মানবদেহে অতিরিক্ত মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবেশ করলে ফুসফুসের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়।
৮।অচেতন হয়ে যাওয়া
কারেন্ট শক খাওয়ার পর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ অনেকটাই কমে যায় ফলে মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে মানবদেহের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে মানুষ অচেতন হয়ে যায়।(পাখিদের কারেন্ট শক করে না কেনো?কারেন্ট-ইলেকট্রিক-বৈদ্যুতিক শক এর প্রাথমিক চিকিৎসা ,আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?)
মানুষের শরীরের রেজিস্ট্যান্স কত?
দেহ কতটা কারেন্ট প্রতিরোধ করে?
শুকনা ত্বক | 20 থেকে 30 কিলো ওহম/বর্গ সেন্টিমিটার রেজিস্ট্যান্স বা কারেন্ট প্রতিরোধ করে |
ভেজা ত্বক | ০.৫ কিলো ওহম/বর্গ সেন্টিমিটার রেজিস্ট্যান্স বা কারেন্ট প্রতিরোধ করে |
ক্ষতযুক্ত ত্বক | ০.২-০.৩ কিলো ওহম/বর্গ সেন্টিমিটার রেজিস্ট্যান্স বা কারেন্ট প্রতিরোধ করে |
মানবদেহে কি পরিমান বিদ্যুৎ প্রবেশ করলে কি পরিমান শক লাগে?
সর্বনিম্ন 1 মিলি অ্যাম্পিয়ার AC কারেন্ট মানবদেহে প্রবেশ করলে | শক লাগে |
সর্বনিম্ন 5 মিলি এম্পিয়ার DC কারেন্ট মানবদেহে প্রবেশ করলে | শক লাগে |
60 মিলি অ্যাম্পিয়ার AC কারেন্ট মানবদেহে প্রবেশ করলে | হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে |
300 থেকে 500 মিলি অ্যাম্পিয়ার DC কারেন্ট মানবদেহে কারেন্ট প্রবেশ করলে | হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে |
5 মিলি অ্যাম্পিয়ার Ac কারেন্ট মানবদেহে প্রবেশ করলে | হালকা শক লাগে |
6 থেকে 16 মিলি অ্যাম্পিয়ার AC মানবদেহে কারেন্ট প্রবেশ করলে | যন্ত্রণাদায়ক শক লাগে |
17 থেকে 99 মিলি অ্যাম্পিয়ার AC মানবদেহে কারেন্ট প্রবেশ করলে | মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি,ত্বক পুড়ে যেতে পারে। দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
100 থেকে 2000 মিলি এম্পিয়ার AC মানবদেহে কারেন্ট প্রবেশ করলে | হার্ট রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয়।একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন। পেশীকলার আগুন ধরে যেতে পারে। মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। |
What happen when you get electrocuted in bangla
current shock khele ki hoy? karent shot khele ki hoy? biddut pristo hoy keno? current shot khele manush more keno?
কারেন্ট শক খেলে কি হয়?current shock khele ki hoy?electric shock khele ki hoy?বৈদ্যুতিক শক খেলে কি হয়?ইলেকট্রিক শক খেলে কি হয়?
Tag: কারেন্ট শক খেলে কি হয়? কারেন্ট শক খেলে কি হয়? কারেন্ট শক খেলে কি হয়? কারেন্ট শক খেলে কি হয়? কারেন্ট শক খেলে কি হয়?
Please Click On Just One Add To Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।