কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট:

কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট:

সাধারণ রোগের চিকিৎসায় সাধারণ ঔষধ ব্যবহার করলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সাধারণ হয়। শরীর তাড়াতাড়ি এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কাটিয়ে উঠে। কিন্তু ক্যান্সার কোন স্বাভাবিক রোগ নয়। এর চিকিৎসার পদ্ধতি যেমন জটিল তেমনি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও জটিল।

ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি প্রয়োগ করার পর কিছু জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট গুলো ভালোমত ব্যবস্থাপনা না করতে পারলে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আসুন আজ জেনেনিই কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট কি?

আপনি আরো পরতে পারেন… কেমোথেরাপি দিলে চুল পরে কেন?

কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?

ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি প্রয়োগ করার পর দেহে যে সকল অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলে।

কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট কি?

কেমোথেরাপির পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেন হয়?

ক্যান্সার কোষ খুবই দ্রুত বর্ধনশীল। খাদ্য সংগ্রহের জন্য এই কোষগুলো পার্শ্ববর্তী ভালো কোষের মধ্যে শিকর প্রবেশ করিয়ে দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। এরফলে ভালো কোষগুলো দুর্বল হয়ে যায়, খাদ্যের অভাবে একসময় মারা যায়। দ্রুত বর্ধনশীল ক্যান্সার কোষ কে মারার জন্য কেমোথেরাপির ঔষধ হিসেবে বিভিন্ন কেমোথেরাপিউটিক এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়। এই এজেন্টগুলো ক্যান্সার কোষের খাদ্য সরবরাহে বাধা দিয়ে থাকে।

ক্যান্সার কোষের বিস্তার রোধ করতেও এজেন্টগুলো কাজ করে। কিন্তু এই ঔষধ ক্যান্সার কোষের পাশাপাশি ভালো কোষগুলোকেও মেরে ফেলে। ভালো কোষের মৃত্যুর কারণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ আগের মত আর কাজ করতে পারে না। অঙ্গের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে দেহে বিভিন্ন জটিরতা দেখা যায় একে বলে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সাইড ইফেক্ট।

কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট কি?

এই থেরাপির সাহায্যে যেহেতু ক্যান্সার কোষের সাথে ভালো কোষও কিছুটা মারা যায় সেহেতু এর প্রভাবে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখাযায়। ক্যান্সারের ধরণ ও কেমোথেরাপির ঔষধের প্রকৃতির উপর ভিত্তিকরে সাইড ইফেক্টগুলো ভিন্ন হয়। সব রোগীর একই ধরণের সাইড ইফেক্ট নাও থাকতে পারে।

একজনের দেহে একরকম সাইড ইফেক্ট দেখা গেলেও অন্যজনের দেহে অন্যরকম সাইড ইফেক্ট দেখা যায়। সচারাচর দৃষ্ট কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট গুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা যাক…

চুল পরে যাওয়া

কেমোথেরাপি দেয়ার পর চুলের যত্ন কিভাবে নিবেন?
কেমোথেরাপি দেয়ার পর চুলের যত্ন কিভাবে নিবেন?

চুল উৎপাদনের জন্য দায়ী গ্রন্থি থেরাপির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই রোগীর চুল পরে যায়। এটি প্রায় সকল ধরণের ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যায়। কেমোথেরাপি শুরু হওয়ার ২ সপ্তাহ পর থেকেই চুল পরতে থাকে প্রায় ৩-৪ সপ্তাহ পর মাথার সব চুল পরে মাথা ন্যাড়া হয়ে যায়।

বমিভাব

বমিভাব
বমিভাব

কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কেমোথেরাপিউটিক এজেন্টের প্রভাবে পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা অনেকখানি হ্রাস পায়। এরফলে পরিপাক ক্রিয়াও হ্রাস পায়। পরিপাক নালির পেরিস্টলসিস প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় এর ফলে খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্য গলা দিয়ে উপরে আসতে চায় মানে বমিভাব হয়। ভেগাস স্নায়ুর কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণেও বমিভাব সৃষ্টি হয়। রোগী বমি করে বারবার।

কোষ্ঠকাঠিন্য হয়

কোষ্ঠকাঠিন্য হয়
কোষ্ঠকাঠিন্য

পরিপাকতন্ত্রের বৃহদান্ত্রে মল থেকে বেশি পানি শোষিত হওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

ডায়রিয়া হয়

ডায়রিয়া হয়
ডায়রিয়া

পাকস্থলীর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে খাবার ঠিকমত হজম হয় না। বদহজমের কারণে ডায়রিয়া হয়। খাবারের সাথে প্রবেশ করা সামান্য জীবাণুর সংক্রমণেই ডায়রিয়া হয়।

ক্ষুধা মন্দা

ক্ষুধামান্দ্য
ক্ষুধামান্দ্য

খাবার ঠিকমত হজম হয়না বলে পেট সবসময় ভরা মনে হয়। ভরা পেটের জন্য ক্ষুধা লাগে না তাই রোগী খেতে চায় না। কেমোথেরাপির প্রভাবে পাকস্থলীর প্রাচীরে পরিপাকে সহায়ক এনজাইম ক্ষরণের ভারসাম্য নষ্ঠ হয় তাই খাবার সহজে হজম হয় না

মুখের ঘাঁ

মুখে-ঘাঁ
মুখে-ঘাঁ

মুখের ভেতর,ঠোটের কোণা,গলবিল ও খাদ্যনালির উপরের অংশে ঘাঁ দেখা যায়। ঝাল ও টক খাবার গ্রহণ করলে মুখের ভেতর খুব জ্বলুনি হয়।কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এটা|

খাবারের স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন

খাবারের-গন্ধ-পরিবর্তন
খাবারের-গন্ধ-পরিবর্তন

অনেক খাবারের গন্ধ শুকলেই বমির ভাব হয়। প্রিয় খাবার গুলোর গন্ধ অচেনা হয়ে যায়। অনেক সময় নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ ও গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

রক্ত কণিকার সংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধি

রক্ত-কণিকা-কমেযায়

শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা প্রথম থেরাপির পর থেকে কমতে শুরু করে। কখনো এই সংখ্যা না কমে হঠাৎ বেড়ে যায়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়

শ্বেত রক্ত কণিকা দেহের ভেতর প্রবেশ করা জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিন্তু থেরাপির প্রভাবে শ্বেত কণিকার সংখ্যা কমে যায় তাই দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। দেহ খুব সহজে সাধারণ জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত হয়ে রোগাক্রান্ত হয়।

ওজন কমে যায়

ওজন-কমে-যাওয়া

ঠিকমত খেতে না পারার কারণে ওজন কমে যায়। মেটাবোলিজমের ভারসাম্য নষ্ঠ হওয়ার কারণেও ওজন কমে যেতে পারে।

চরম ক্লান্তিভাব সৃষ্টি হয়

অবসাদগ্রস্ত
অবসাদগ্রস্ত

কেমোথেরাপি দেহের কিছু ভালো কোষ গুলোকেও মেরে ফেলে এবং অনেক কোষের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এরফলে দেহে প্রচুর শক্তির ঘাটতি হয়। শক্তির ঘাটতি দূরকরার একমাত্র উপায় খাদ্য গ্রহন করা কিন্তু রোগী ঠিকমত খেতে পারেনা তাই চরম ক্লান্তিভাব সৃষ্টি হয়।

মানসিক পরিবর্তন

মেজাজ-খিটখিটে-হয়
মেজাজ-খিটখিটে-হয়

মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে।কোন কাজে ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারে না।দ্রুত মনের অবস্থা পরাবর্তন হয়। হঠাৎ রেগে যায় আবার হঠাৎ করেই আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। কেউ একাই কোন কারন ছাড়াই হাসে বা কাঁদে। মেজাজ খিটখিটে থাকে। সামান্য কারণে রেগে গিয়ে তুলকালাম বাধিয়ে দেয়। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এটা|

ত্বকের লাবণ্যতা কমে যায়

লাবণ্যতা কমে যায়
লাবণ্যতা কমে যায়

কেমোথেরাপি দ্রুত বর্ধনশীল কোষকে আক্রমণ করে, ত্বক একটি দ্রুত বর্ধনশীল কোষ থেরাপির প্রভাবে ত্বকের অনেক কোষ মারা যায় এবং ত্বকের তৈল গ্রন্থির ক্ষরণ হ্রাস পায় এর ফলে ত্বকের লাবণ্যতা কমে যায়। ত্বক হয় শুষ্ক,রুক্ষ ও কালচে রঙের। অনেকের নখের কোণা কালো হয়ে যায়।

যৌন ক্ষমতা কমে যায়।
যৌন-অক্ষমতা
যৌন-অক্ষমতা

কেমোথেরাপি যৌন হরমোন ক্ষরণকারী গ্রন্থিগুলোর হরমোন ক্ষরণের ভারসাম্য নষ্ঠ করে ফেলে একারণে যৌনঅক্ষমতা সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক শুক্রাণু সৃষ্টি হয়না অনেকসময়। খুব কম পরিমাণ শুক্রাণু সৃষ্টি হয়। মহিলাদের মাসিকচক্র এলোমেলো হয়ে যায়। অস্বাভাবিক ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়। অনেকসময় ডিম্বাণু উৎপাদন বন্ধ থাকে।

তবে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ১-২ মাসের বেশি স্থায়ী হয়না। থেরাপি বন্ধ হলে ধিরেধিরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া যায়।

রেডিয়েশন থেরাপির সাইড ইফেক্ট কি?

কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপির সাইড ইফেক্ট প্রায় একই রকম। তবে রেডিয়েশন থেরাপির সাইড ইফেক্ট কেমোথেরাপির চেয়ে বেশি দীর্ঘ। অনেক সময় রেডিয়েশন থেরাপির সাইড ইফেক্ট সারাজীবন বহন করতে হয়।

কেমোথেরাপি দিলে কি হয়?

এই থেরাপির সাহায্যে যেহেতু ক্যান্সার কোষের সাথে ভালো কোষও কিছুটা মারা যায় সেহেতু এর প্রভাবে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখাযায়। ক্যান্সারের ধরণ ও কেমোথেরাপির ঔষধের প্রকৃতির উপর ভিত্তিকরে সাইড ইফেক্টগুলো ভিন্ন হয়।সব রোগীর একই ধরণের সাইড ইফেক্ট নাও থাকতে পারে।

Side Effects of Chemotherapy in bangla

side effects of chemotherapy drugs in bangla, Chemotherapy side effect ki? kemothepapir parsoprotikria ki? kemo therapi dile ki hoy.

লেখাটি অনুবাদ করা হয়েছে নিচের ডাক্তারের লেখা থেকে
ড. এস,এম,ডেভিডসন
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
কলরাডো,আমেরিকা

Info source: www.cancer.net www.cancer.gov www.healthline.com

Tag: কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

Please click on Just one Add to Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।