খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে?
শীতের সকালে খেজুরের রস খায়নি এমন বাঙ্গালি খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। খেজুর গাছে কলসি বাঁধার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। খেজুরের রস আমাদের রসনা মেটালেও খেজুর গাছের কিন্তু অনেক কষ্ঠ সহ্য করতে হয়। জ্যান্ত গাছের ছাল ছড়িয়ে রসের হাঁড়ি লাগানো হয়। বছরের পর বছর রস দেয়ার কারণে গাছের গায়ে প্রচুর ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত বুকে নিয়ে খেজুর গাছ দিব্বি বেঁচে থাকে। এই কারণে খেজুর গাছ কে “ক্ষত বৃক্ষ ” বা “Wounded Tree” বলা হয়।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আকুপাকু করে খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? আবার শীতকাল ছাড়া অন্য সময় কেন রস পাওয়া যায় না? অন্য গাছ কেন খেজুর গাছের মত রস দেয় না? হুম! প্রশ্ন অনেক হয়ে গেল কিন্তু উত্তর কই? ধৈর্যধরে বসুন আর লেখাটি পড়তে থাকুন তাহলে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। লেখাটি পড়ার সময় কিন্তু এড ক্লিক করতে ভুলবেন না। হা!হা!
আপনি আরো পড়তে পারেন…. বাঁশ ফুল।বাঁশ ফল বাঁশ ফলের ঔষধি গুণ …. খেজুরের রসের উপকারিতা কী?
খেজুর গাছের পরিচয়:
খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phoenix dactylifera(ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা)। খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক নামের ২য় অংশ dactylifera দুটি ভাষা থেকে এসেছে একটি অংশ dactulos এটি গ্রিক ভাষা থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ “খেজুর”। অপর অংশ fero এটি ল্যাটিন ভাষা থেকে এসেছে যার অর্থ “আমি বহন করি”। তাহলে dactylifera শব্দের পূর্ণ অর্থ হয় “খেজুর বহনকারী”।
খেজুর গাছ এক ধরণের তাল জাতীয় বৃক্ষ। মানে ডাব,তাল,সুপারি ইত্যাদি গাছের জ্ঞাতিভাই হল খেজুর গাছ। এটি একবীজপত্রী বৃক্ষ। সাইকাস জাতীয় নগ্নবীজী উদ্ভিদের বিবর্তনের ফলে খেজুর গাছের উদ্ভব হয়েছে।
এটি লম্বায় ১৫-২৫ মিটার বা ৫০-৮০ ফুট হয়। এর পাতা পক্ষল যৌগিক। কাণ্ড থেকে লম্বা যে দন্ডের মত অংশ বের হয় পুরটাই কিন্তু পাতা, অনেকে মনে করে শুধু কাঁটাযুক্ত ছোট অংশ পাতা এটা ভুল।
এদের কাণ্ড নরম রসালো কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে কাণ্ড শক্ত হতে থাকে। শুষ্ক মরুভূমিতে এরা ভালো জন্মে। তবে বিশ্বের নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলেও এদের ব্যপক বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়।
খেজুর রস সৃষ্টির প্রক্রিয়া
গাছ মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে এই পানি পাতায় পৌছে গেলে পাতায় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি হয়। সালোকসংশ্লেণের মাধ্যমে যে খাবার তৈরি হয় তা গ্লুকোজ। গ্লুকোজ পরে সুক্রোজ বা চিনিতে রূপান্তরিত হয়। গাছের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য এই চিনি খরচ হয়ে যায়।
খরচ হওয়ার পর যদি চিনি বেঁচে যায় তাহলে চিনিগুলো স্টার্চ নামক অদ্রবণীয় জটিল শর্করা হিসেবে জমা থাকে।চিনি মিস্টি হলেও স্টার্ট কিন্তু মিষ্টি নয়। বর্ষাকালে মাটিতে প্রচুর পানি থাকে তাই মূলের মাধ্যমে প্রচুর পানি শোষণ করে পাতায় প্রচুর খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে মাটিতে পানি কম থাকে তাই পানির অভাবে পাতায় কম খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য খেজুর গাছ অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করে রাখে।
তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে মূল থেকে পানির শোষণ কম হতে থাকে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সংকেত খেজুর গাছের কোষে এক ধরণের এনজাইম ক্ষরণ হতে থাকে এই এনজাইমের প্রভাবে জমিয়ে রাখা স্টার্চ ভেঙ্গে আবার চিনিতে পরিনত হয়। মূল থেকে উঠে আসা পানির সাথে এই চিনি মিশে একটি মিষ্টি সরবত তৈরি হয়। এটাই হলো খেজুরের রস। যেহেতু মূল থেকে উঠা পানি উপরের দিকে ধাবিত হয় তাই রস উপরের অংশে থাকা কোন ক্ষত দিয়ে বের হয়।
শীতকালে গাছের প্রস্বেদন কম হয় তাই গাছ থেকে খুব কম পরিমাণ পানি বাষ্পাকারে বের হয়। গাছে ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়ে চিনি মিশ্রিত রস বের হয়। রস যত বের হবে তত ব্যাপন চাপ ঘাটতি সৃষ্টি হয় এই চাপ ঘাটতির কারণে একটি চোষণ শক্তির উদ্ভব হয়। চোষণ শক্তির প্রভাবে মাটি থেকে পানি শোষিত হয় এবং পুরো শীতকাল জুড়ে রস বের হতে থাকে।
খেজুরের রসের অজানা তথ্য
- ১। তাপমাত্রা যত কমতে থাকবে মানে ঠাণ্ডা যত বাড়বে ততই রসের পরিমাণ বাড়বে। কারণ ঠাণ্ডা কমার ফলে প্রস্বেদন কমতে থাকবে।
- ২। ঠাণ্ডা যত বাড়বে ততই রস মিষ্টি হবে। কারণ ঠাণ্ডা বাড়লে খেজুর গাছের যে এনজাইম স্টার্চ কে চিনিতে পরিণত করে তার ক্ষরণ বাড়তে থাকে। এতে রস ঘন হয় ঘন রসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।
- ৩। ঠাণ্ডা বেশি হলে খেজুরের রস টলটলে পরিষ্কার হয়।
- ৪। ঠাণ্ডা কম হলে বা গরম আবহাওয়া র কারণে রস ঘোলাটে হয়। কারণ বেশি তাপমাত্রায় খেজুরের রস তৈরিকারী এনজাইম কম ক্ষরণ হয় এতে রসের সাথে চিনির পাশাপাশি অদ্রবণীয় স্টার্চ মিশে থাকে।
- ৫। পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের চেয়ে বেশী রস দেয় এবং রসও তুলনায় বেশী মিষ্টি হয়।
- ৬। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ এটেল মাটিতে জন্মানো গাছের রস বেশি হয়।
- ৭। কম বয়সি গাছের চাইতে বেশি বয়সি গাছের রস বেশি মিষ্টি।
- ৮। বেশি বয়সি গাছ কম বয়সি গাছ অপেক্ষা বেশি রস দেয়।
- ৯। কমপক্ষে ৫ বছর না হলে খেজুর গাছ রস উৎপাদন করতে পারে না।
- ১০। একটি পূর্ণবয়স্ক খেজুর গাছ এক মৌসুমে প্রায় ১৫০ লিটার রস উৎপাদন করতে পারে।
- ১১। খেজুর রস থেকে মদ উৎপাদন করা যায়।
- ১২। ডিসেম্বর হতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করতে হয়।
- ১৩। গাছের গোড়ায় রস সংগ্রহ করার জন্য ছিদ্র করলে মিষ্টি রস পাওয়া যাবে না।
প্রশ্ন ও উত্তরঃ
গরমকালে খেজুরের রস হয় না কেন?
গরমকালে স্টার্চ কে চিনিতে রূপান্তরকারী এনজাইম নিষ্ক্রিয় থাকে তাই খেজুরের মিষ্টি রস তৈরি হয় না।
খেজুরের রস কী ভাবে তৈরি হয়?
তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সংকেত খেজুর গাছের কোষে এক ধরণের এনজাইম ক্ষরণ হতে থাকে এই এনজাইমের প্রভাবে জমিয়ে রাখা স্টার্চ ভেঙ্গে আবার চিনিতে পরিনত হয়। মূল থেকে উঠে আসা পানির সাথে এই চিনি মিশে একটি মিষ্টি সরবত তৈরি হয়। এটাই হলো খেজুরের রস।
খেজুরের রস মিষ্টি হয় কেন?
ঠাণ্ডা বাড়লে খেজুর গাছের যে এনজাইম স্টার্চ কে চিনিতে পরিণত করে তার ক্ষরণ বাড়তে থাকে। এতে রস ঘন হয় ঘন রসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।
Tag: খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে? খেজুর গাছের রস হয় কেন শীতকালে?
Please Click on Just one Add to help us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।