গরুর অজানা তথ্য
কারো মাথা একটু ধীরে কাজ করলে আমরা কিন্তু ধিরেসুস্থে গালি দিইনা বরং দ্রুতগতিতে, সোল্লাসে চিৎকার করে বলে উঠি শালা গরু তোর মাথায় কিছু ঢোকেনা। গালি দেয়ার পর বাঙ্গালি বিরাট প্রশান্তিতে একটা মুচকি হাসি দেয়।
মনেহয় একটা জলজ্যান্ত মানুষকে গরু বানিয়ে সে মহান কোন কর্ম সম্পাদন করেছে। যাইহোক যতই গরু বলে গালিদিন না কেন এরা কিন্তু মোটেই ফেলনা বস্তু নয়। মানব সভ্যাতার বিবর্তনে এদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। আজ জেনেনেই গরুর ১৫ টি অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না।
আপনি আরো পড়তে পারেন… গরু-ছাগল জাবর কাটে কেন?
গরুর ১৫ টি অজানা তথ্য
ছোটবেলা থেকেই এদের সম্পর্কে সবার ভালো ধারণা আছে।কারণ পরীক্ষার খাতায় গরুর রচনা লেখতে লেখতে শিশুদের লেখক হওয়ার হাতেখড়ি হয়। তাই বাঙ্গালিকে জ্ঞান দিতে আসা স্পর্ধার বিষয়। কিন্তু কিছু জ্ঞান আপনার অজানা আছে তা এখন শিখে নেই…
প্রজাতি সংখ্যা কত?
প্রায় ১০০০ প্রজাতির cow আছে সারা বিশ্বে
প্রজাতি
এদের প্রধান ২টি প্রজাতি হলো Bos indicus এটি উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে বিস্তৃত অন্যটি Bos taurus যেটি শীতল পরিবেশে বিস্তৃত।সবচেয়ে ছোট আকৃতির মাত্র ২০ ইঞ্চি উচ্চতার গরুর মালিক কিন্তু বাংলাদেশ। ‘রানী’ নামের vechur জাতের এই গরুটি গিনেসবুক রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়া জাত হলো হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান। এই প্রজাতির একটি গাভি বছরে প্রায় ১০২২০ কেজি দুধ উৎপাদন করতে পারে।
Chianina জাতের গরু সবচেয়ে বড় আকৃতির। এই জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ১২০০-১৫০০ কেজি।
সূত্র- উইকিপেডিয়া
পৃথিবীতে গরুর সংখ্যা
বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ২ বিলিয়ন cow আছে। পৃথিবীর মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গরু আছে।২য় ও ৩য় স্থানে আছে ব্রাজিল ও চিন।
ভারত,ব্রাজিল,চিন মিলিয়ে যে পরিমাণ cow আছে তা পৃথিবীর মোট সংখ্যার ৬৫%। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে গরুর সংখ্যা প্রায় ২৪,০৮৬,০০০।
অভিজাত প্রতিকে গরুর ছবি ব্যবহার
বিভিন্ন দেশের আভিজাত্য প্রকাশকারী অনেক প্রতিকে এর ছবি ব্যবহার করা হয়। অনেক নামিদামি সংস্থার প্রতিক এর ছবি দিয়ে বানানো হয়। কয়েকটি লোগোর ছবি দেখুন।
ধর্মগ্রন্থে গরুর মর্যাদা
কোরআন শরিফে ‘সুরা বাকারা ‘ নাজিল হয়েছে গাভির নামে। এই সুরায় ইহুদিদের নবী মূসা (আ.) এর সাথে গাভি নিয়ে একটি ঘটনার বর্ণনা আছে।
হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ ও বলরাম ছোটবেলায় গাভি চড়িয়ে ও এর সাথে খেলে সময় কাটিয়েছেন। নন্দি নামের ধেনু মহাদেব শিবের বাহন। সমুদ্র মন্থনের সময় একটি পবিত্র গাভি উঠে আসে যার নাম “কামধেনু”। অনেক পূজার অর্ঘ হিসেবে গাভির দুধ প্রদান করা হয়। ভারতে গোহত্যা মহাপাপ এবং মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিযোগ্য।
ইহুদি ধর্মমতে কিয়ামত সংঘটিত সময় ঘনিয়ে আসলে পৃথিবীতে একটি লাল গাভী জন্ম নিবে। সেই লাল গাভী জন্ম হওয়ার পর তিন বছর বয়সে উপনীত হলে তারা সেটিকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই মেখে ইহুদি সম্প্রদায় পবিত্র হবে। এই ছাই মাখা ছাড়া ইহুদিরা পবিত্র হবে না।
আফ্রিকার অনেক দেশে এটি আভিজাত্যের প্রতীক। যার যার যত গরু আছে সে তত বড়লোক।
আফ্রিকার মাসাই উপজাতি মনে করে যে তাদের ঈশ্বর ইনগাই গরুর সংখ্যা হিসেব করে মানুষকে স্বর্গে স্থান দেবে।এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে।
বন্ধু এবং পরিবার
মানুষের মত এদেরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকে। এটি সংখ্যায় ৩-৪ টি। প্রত্যেক বন্ধুর সাথে আলাদা আলাদা সময় কাটাতে ভালোবাসে এরা। দিনের প্রায় ৬-৭ ঘন্টা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দেয় এরা।
এরা রাত্রিবেলা ঘুমানোর সময় পরিবারের সবার সাথে কাছাকাছি ঘুমাতে পছন্দ করে। কে কার কাছে ঘুমাবে এটা নির্দিষ্ট করে দেয় পরিবারের প্রধান। মা হিসেবে গাভির বেশ সুনাম আছে এরা নিজের সন্তানের খোঁজে মাইলের পর মাইল দৌড়াতে থাকে। এরা একা থাকতে ভালোবাসেনা,দলছুট হলে খুব জোড়ে চেঁচাতে থাকে।কখনো সঙ্গী না পেলে ভেড়ার সঙ্গে থাকতে এরা বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করে।
আবেগী মন
এদের মস্তিষ্কে আবেগ সৃষ্টি হয় ঠিক মানুষের মত। অন্যের ভালোবাসা এরা বুঝতে পারে। যেমন- ভালো আদরযত্ন পেলে এরা বেশি দুধ দেয়। দুধ দোয়ানোর সময় গান শোনালে এদের মন ভালো হয়ে যায়।
মন ভালো হলে এরা বেশি দুধ দেয়।
কোন ধাঁধাঁ সমাধান করতে পারলে এরা আনন্দে উত্তেজিত হয় যেমন- ঘরের দরজার ছিটকানি খুলে বের হয়ে আসার কৌশল আবিষ্কার করলে এরা বেশ প্রফুল্ল হয়।
দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর খোলা যায়গায় ছেড়ে দিলে এরা আনন্দে লাফালাফি করে। পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতি এদের বিষণ্ন করে তোলে।
এদের নাম রেখে নাম ধরে ডাকলে বেশ খুশি হয় এবং দুধও বেশি দেয়।
৩৬০ ডিগ্রি প্যানারমিক ভিশন
আমরা ক্যামেরায় প্যানারমিক মুডে ছবি তুলি যাতে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে চারপাশের সব দৃশ্যের খুঁটিনাটি ছবিতে চলে আসে।
প্রাকৃতিকভাবে এদের চোখে প্যানারমিক ভিশন আছে তাই এরা সামনে ও দুই পাশের দৃশ্য ঘাড় না ঘুরিয়ে দেখতে পারে।
এতে শত্রুর উপস্থিতি ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পায়।
গন্ধ বিচার ক্ষমতা
এরা প্রায় ৬ মাইল দূর থেকে আসা কোন গন্ধ অনায়াসে বুঝতে পারে। উচ্চ ও নিম্ন কম্পাংকের শব্দ শোনার ক্ষমতা মানুষের চেয়ে এদের বেশি।
দাঁতের সংখ্যা
মানুষের মত এদের ৩২ টি দাঁত আছে। এদের চোয়ালের সামনের দিকে উপরের পাটিতে দাঁত নেই। এখানে দাঁতের পরিবর্তে শক্ত প্যাড থাকে এটা ঘাস চিবাতে সাহায্য করে।
এদের দাঁতের সংখ্যা দেখে বয়স নির্ণয় করা যায়। এরা দিনে ৪০,০০০ বার চোয়াল নাড়ায়।
আলসেমি
এরা দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টা শুয়ে থাকে। দিনে ৪০ বার উঠাবসা করে। ঘোড়ার মত এরা দারিয়ে ঘুমাতে পারেনা তবে ঝিমাতে পারে। এরা ২৪ঘণ্টায় মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমায়।
গৃহপালিতকরণ
১০,৫০০ বছর পূর্বে এদের প্রথম গৃহপালিত করা হয়। ধারণা করা হয় বর্তমান কালের তুরস্ক,ইরান,পাকিস্তানে প্রথম গরু পোষা শুরু হয়।
মেসোপটেমীয় সভ্যতায় এদের পোষ মানানো হয়েছিল।
৯০০০ খৃষ্ঠপূর্বে গরুকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো।১৮৫০ সালের আগে প্রায় প্রতিটি পরিবারই গরু পালন করতো।
ওজন স্তর ক্ষয়ে ভূমিকা
গ্রীনহাউস গ্যাস ওজন স্তরের ক্ষয় করে। এই গ্যাসের ১৪.৪% তৈরি করে গবাদি পশু। এর মধ্যে ৬৫% তৈরি করে গরু। প্রতিবছর এরা ৮০-৯৩ মেগাটন মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করে যা ওজন স্তরের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
ঘাস খাওয়া গরু শস্যদানাভোজীর থেকে বেশি মিথেন উৎপন্ন করে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য গরুর বেশ অবদান আছে।
লাল রঙ কম দেখে
এদের চোখের রেটিনাতে লাল আলো সংবেদী কণিকা কম থাকে ফলে এরা লাল আলো কম দেখে। তবে হলুদ,সবুজ,বেগুনী,নীল রঙ এরা বেশ ভালো দেখে।
ষাঁড়ের সামনে লাল কাপড় নাড়ালে এরা লাল রঙ দেখে উত্তেজিত হয়না বরং কাপড় নাড়ানো দেখে উত্তেজিত হয়।
সিঁড়ি ভাঙ্গা
এরা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলেও একই সিঁড়ি দিয়ে আর নিচে নামতে পারে না।
দুধ দোয়ানোর যন্ত্র
১৯৪৮ সালে প্রথম দুধ দোয়ানোর যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়। এর আগে একজন মানুষ হাত দিয়ে ১ ঘন্টায় মাত্র ৬ টি গাভির দুধ দোয়াতে পারতো কিন্তু এই মেশিন ১ ঘন্টায় প্রায় ১০০ গাভির দুধ দোয়াতে পারে।
চামড়া দিয়ে বল তৈরি হয়
এদের চামড়া থেকে ফুটবল,ক্রিকেট বল, বাস্কেটবল, রাগবিবল,বেসবল তৈরি করা হয়।
Amazing fact about cow in bangla
amazing fact about cow in bangla, Gorur ojana tottho,
Please click on Just one Add to Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।