চামচিকা র অজানা তথ্য
হাতি গর্তে পরলে চামচিকাও লাথি মারে’ কেউ কঠিন বিপদে পরলে আশপাশের নগন্য মানুষদের কাছে হাস্যরসের পাত্র হয়ে যায় তখন এই প্রবাদটি খুব ব্যবহার করা হয়। চামচিকার আকৃতির কারণে হয়তো এদের এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়।
আপনি জানেন কি এরা মোটেও তুচ্ছ কোন প্রাণী নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের ব্যাপক অবদান আছে। ক্ষতিকর পোকা দমন করতেও এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনেকেই গালি দেয়ার ক্ষেত্রে চামচিকা শব্দ ব্যবহার করেন।
কিন্তু এই উপকারি প্রাণীটি সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন? আসুন আজ জেনেনেই…
চামচিকা র অজানা তথ্য
আপনি আরো পড়তে পারেন….. বাদুড় কি মুখ দিয়ে হাগে?
চামচিকার পরিচিতি
পৃথিবীতে যত স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে তার মধ্যে উড়তে পারার সক্ষমতা অর্জন করেছে একমাত্র বদুড় গোষ্টি। এই বাদুড়ের ২টি প্রধান দল আছে।একটিকে বলা হয় মেগাকাইরোপটেরা আর অন্যটি হলো মাইক্রোকাইরোপটেরা।
এই মাইক্রোকাইরোপটেরার সদস্য হলো চামচিকা। এই অর্থে এরা বাদুড়ের জ্ঞাতিভাই। অর্থাৎ ছোট আকৃতির এক প্রজাতির বাদুড় কে বলে চামচিকা।
শ্রেণিবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ |
পর্ব: কর্ডাটা |
শ্রেণী: Mammalia |
বর্গ: Chiroptera |
পরিবার: Vespertilionidae |
গণ: Pipistrellus |
প্রজাতি: P. coromandra |
বৈজ্ঞানিক নাম : P. coromandra
বিস্তৃতি
এদের বাংলাদেশের ঝোপঝাড়ে, পুরাতন দালান কোঠায়, বড় গাছের কোঠরে আগে বেশ দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন পরিবেশগত ক্ষতির কারণে আর তেমনটা দেখা যায় না।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেমন- আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে পাওয়া যায়।
মাথার গঠন
এদের দেহ থেকে মাথা আলাদা করলে দেখতে ছোট ইদুর বা কুকুর ছানার মত মনে হয়। শুধু মাথা দেখে এদের চেনা মুশকিল।
ডানার গঠন
এদের সত্যিকারে পাখির মত ডানা নেই। এদের ডানা একধরণের পাতলা চামড়া দিয়ে সৃষ্টি। এধরণের ডানাকে বলে প্যাটাজিয়াম। পাখির মত উড়তে পারলেও এদের ডানার গঠনের ভিন্নতার করণে এরা পাখি নয়।
এদের হাতেও মানুষের মত ৫ টি আঙ্গুল আছে। বুড়ো আঙ্গুল ছোট কিন্তু বাঁকি ৪ টি আঙ্গুল বেশ বড়। এই আঙ্গুলগুলো পরস্পরের সাথে একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত।
হাতের সাথে দেহের প্রান্তভাগের চামড়া প্রসারিত হয়ে ডানার মদ গঠন সৃষ্টি করে। এদের পায়ে ৫ টি আঙ্গুল থাকে। পায়ের সাথেও প্যাটাজিয়াম যুক্ত থাকে। পা খুবই দুর্বল তাই এরা ঠিকমত হাটতে পারে না।
পশম
এদের দেহ ঘন লোমে আবৃত থাকে। ডানায় কোন লোম নেই। স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য হলো ত্বকে লোমের উপস্থিতি।
ইকোলোকেশন
বাদুড়ের মত এদের ইকোলোকেশন ক্ষমতা আছে। এদের ইকোলোকেশন ডিটেকশন শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৪৫-৫৫ কিলোহার্জ।
স্বভাব ও বাসস্থান
এরা ছোটখাটো ঝোপের পাশে অবস্থিত বয়ষ্ক গাছ, মৃত গাছের কোঠর, ঘন পাতা বিশিষ্ট গাছের ডালে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে।
পরিত্যক্ত পুরাতন দালান কোঠা,ঘোয়াল ঘর, উঠানের বারান্দা থাকার জন্য এদের খুব প্রিয়। আপরি যাই বলুন এরা কিন্তু শহরের দালান কোঠায় থাকতে বেশি পছন্দ করে।
যদিও এদের বড় ভাই বাদুড় শহর পছন্দ করে না। এরা পুরোপুরি নিশাচর প্রাণী নয়। দিনের বেলা তীব্র আলোর সময় ঘুমিয়ে থাকে।
সন্ধার একটু আগে খাবারের সন্ধানে বের হয়। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই শিকার ধরে পেট ভরায় তারপর বাসায় চলে আসে।
সকালের কোমল আবহাওয়াতেও শিকার করে। ঘন অন্ধকারে এরা বাসা থেকে বের হয় না। বের হলেও খুব একটা দূরে যায় না।
এরা বাদুড়ের থেকেও ক্ষিপ্র।বাদুড়ের থেকেও বেশি গতিতে চলতে পারে। সামাজিক প্রাণী হিসেবে সন্তান পালনে এদের বেশ সুনাম আছে।
খাদ্যাভাস
এরা প্রধানত কিট পতঙ্গ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অসংখ্য কিটপতঙ্গ খেয়ে ফেলে।
একরাতে ৩ হাজার মশা খেতে পারে। সন্ধার ঘন্টা দুয়েক আগে কিচিরমিচির শব্দ তুলে শিকার ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারণ এই সময় প্রচুর পোকামাকড় উড়াউড়ি করে। গভীর রাতে এরা শিকার করে না।
প্রজনন
স্ত্রী প্রাণী বছরে দুবার প্রসব করে থাকে। প্রতিবার কমপক্ষে দুটি করে বাচ্চা প্রসব করে। প্রজননকালে পুরুষ প্রাণী স্ত্রীকে ডাকে এবং একসাথে শিশু পালনের স্থান নির্মান করে।
সদ্যজাত বাচ্চা মায়ের দুধ পান করে। বাচ্চার সামনের একটি বা দুটি দাঁত বাঁকানো হুকের মত এর সাহায্যে বাচ্চা মায়ের দেহের সাথে লেগে থাকে। এদের বাচ্চাকে pups বলে।
বাদুড় ও চামচিকার পার্থক্য
বিষয় | বাদুড় | চামচিকা |
---|---|---|
আকার | বড় আকৃতির | অপেক্ষাকৃত ছোট |
খাদ্যাভাস | ফলাহারী বা পােকাভোজী | পােকাভোজী |
চক্ষু | আকারে বড় | আকারে ছোট |
তুণ্ড | লম্বা | খাটো ও ভোতা |
কর্ণছত্র বা পিনা | সরল এবং পাতার ন্যায়, কর্ণ উপাঙ্গহীন | বড় ও অতিরিক্ত খণ্ড ট্রেগাস উপস্থিত, পাতার ন্যায় উপাঙ্গ উপস্থিত। |
লেজ | আন্তঃউর্বাস্থি পর্দা থেকে মুক্ত | লেজ উপস্থিত থাকলে আন্তঃউর্বাস্থি পর্দার মধ্যে আবদ্ধ। |
অগ্রপদের নখর | প্রথম ও দ্বিতীয় আঙ্গুল নখরযুক্ত | মাত্র প্রথম আঙ্গুল নখর যুক্ত। |
পেষণ দাঁত | ধারালাে কাসপ নাই তবে অনুদৈর্ঘ্য খাদ আছে | ধারালাে কাসপ এবং অনুপ্রস্থ খাদ উপস্থিত। |
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
চামচিকা আলো পছন্দ করে না কেন?
চামচিকা আংশিক নিশাচর এরা কম আলোতে সক্রিয় থাকে তাই দিনের তীব্র আলো পছন্দ করে না।
বাসা থেকে চামচিকা তাড়ানোর উপায় কি?
বাসায় চামচিকা ঢুকলে ভীত হওয়ার কিছুই নেই মানুষের উপস্থিতে এরা এমনি চলে যায়। বাসা এমনিতে না ছাড়লে ঘরে ধোয়া দিতে পারেন বা সন্ধার আগে দরজা,জানালা বন্ধ রাখুন। ঝাঁঝালো গন্ধ বিশিষ্ট কোন স্প্রে করতে পারেন।
চামচিকা ঘরে আসলে কি হয়?
অনেকে এদের ঘরে বা বসত ভিটায় ঢুকে পরাকে অমঙ্গলজনক মনে করে। এটি আসলে ঠিক নয়। এই কথা বিশ্বাস করা একধরণের কুসংস্কার। এই প্রাণী ঘরে ঢুকলে কোন অমঙ্গল হয় না।
Amazing fact about Chamchika in bangla
Chamchika er ojana tottho, badur o chamchika er moddhe parthokko ki ,
Please click on Just one Add to Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।