- জিকা ভাইরাস কী? জিকা ভাইরাস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ!
জিকা ভাইরাস কী? জিকা ভাইরাস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ!
জিকা ভাইরাস মশাবাহিত একটি ফ্লাভিাইরাস, যেটি অনেকটা ডেঙ্গু ভাইরাসের মতো। সম্প্রতি বিশ্বে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে এটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুত্রমতে, সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ২১টি দেশে zika virus র উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়েছে এবং বিশ্বে বর্তমানে ২২০ কোটিরও বেশি মানুষ এ-ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি একজন রোগী সনাক্ত হয়েছে।
তবে চট্টগ্রামে এই রোগী সনাক্ত হওয়ার পূর্বেই আমাদের নিকটবর্তী দেশ থাইল্যান্ডে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য প্রচারিত হয় এবং এর পর থেকেই এই ভাইরাস সম্পর্কে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
আপনি আরও পড়তে পারেন … নিপাহ ভাইরাস কী? নিপাহ ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়! ……. চিকুনগুনিয়া রোগ কী?চিকুনগুনিয়া লক্ষণ ও প্রতিরোধ! ….. ডেঙ্গু জ্বর কী? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার,প্রতিরোধ!
জিকা ভাইরাস কোন মশা ছরায়?
zika virus এডিস ইজিপ্টি মশার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এবং বংশ বিস্তার করে। তবে কিছু দিন আগ পর্যন্তও zika virus দ্বারা সংক্রামিত রোগকে তেমন কোনো হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয় নি।
জিকা ভাইরাস সাধারণ উপসর্গ
এই ভাইরাসের কারণে জ্বর, ফুসকুড়ি, চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত রোগীদেরকে সাধারণত হাসপাতালেও ভর্তি করার প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু সম্প্রতি zika virus র সাথে মাইক্রোসেফালি (microcephaly ) নামের একটি স্নায়ুবিক রোগের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জানতে পারায় আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি হুমকির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য জিকা ভাইরাস হুমকি
গর্ভবতী মা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নবজাতক শিশুদের জন্মগত রোগ মাইক্রোসেফালি (Microcephaly) অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও মাথার আকার তুলনামূলক ছোট হবার (১ শতাংশের কম) আশংকা থাকে।
এর ফলে পরবর্তীতে আক্রান্ত শিশুর মানসিক বা শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে ।এছাড়াও খুবই অল্প ক্ষেত্রে স্নায়ুর অবশজনিত রোগ গিলেন-বারি সিনড্রোম (Guillain-Barré syndrome) হবার আশংকা থাকে ।
জিকা ভাইরাস আবিষ্কার
১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা-নামক বনে সর্বপ্রথম zika virus সনাক্ত করা হয়। প্যান আমেরিকা স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি মধ্য ও ল্যাটিন আমেরিকায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ zika virus দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিলো।
যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা বিবিসি সম্প্রতি zika virus সম্পর্কে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা থেকে জানা যায়, ওইসব অঞ্চলে হাজার হাজার শিশু স্বাভাবিক আকৃতির তুলনায় ছোট আকৃতির মাথা এবং অপরিপক্ক মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে এবং এর ফলে কিছু কিছু দেশ এই সময়ে মহিলাদেরকে গর্ভধারণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
জিকা ভাইরাসের চিকিৎসা
এখনো পর্যন্ত zika virus র কোনো টিকা বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। তাই বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকিস্বরূপ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ভাইরাসটিকে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং এটি মোকাবেলার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
জিকা ভাইরাস লক্ষণ
সাধারণত শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে zika virus আক্রান্ত মানুষের মধ্যে রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। অন্যান্য ক্ষেত্রে, আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে বারো দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো দেখা যায় এবং সেগুলো ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অধিকাংশ সময় এ রোগটি নিজে নিজে ভালো হয়ে যায়।
- জিকা আক্রান্ত কোন দেশ থেকে ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে স্বল্প মাত্রার জ্বর (৯৯° ফারেনহাইট / ৩৭.২° সেন্টিগ্রেড- এর বেশী)
- চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ (র্যাশ)।
- এর সাথে মাথা ব্যথা।
- চোখ লাল হওয়া (চোখের প্রদাহ)। মাংসপেশীতে ব্যথা।
- গিটে গিটে ব্যথা।
- এরকম যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের আশংকা থাকে।
জিকা ভাইরাস যেভাবে ছড়ায়
- ১. প্রাথমিকভাবে জিকা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত এডিস ঈজিপ্টাই অথবা এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের জন্যেও এই মশাই দায়ী।
- ২. আক্রান্ত পুরুষ রোগীর সাথে অনিরাপদ যৌন সংসর্গ করলে (কনডম ব্যবহার না করলে) পুরুষ হতে নারীদের মাঝে এ রোগ ছড়াতে পারে ।
- ৩. গর্ভবতী মহিলা গর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যে জিকা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে, গর্ভের সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
- ৪. এছাড়াও জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহন করলে এবং ল্যাবরেটরীতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশতঃ এ রোগ ছড়াতে পারে।
জিকা ভাইরাস রোগনির্ণয়
জিকা ভাইরাস দ্বারা কেউ আক্রান্ত হয়েছে কি না প্রাথমিকভাবে তা নির্ণয় করা হয় সাধারণত রোগীর কাছ থেকে শোনা তার স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সাম্প্রতিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
আক্রান্ত ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত কি না সেসম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য তার কাছ থেকে জানতে হবে যে, সম্প্রতি এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আছে এমন কোনো স্থানে সে গিয়েছিলো কি না।
জিকা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, প্রস্রাব বা লালার নমুনা পরীক্ষা করে জিকা ভাইরাসের আরএনএ (ribonucleic acid-RNA)-এর উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।
জিকা ভাইরাসের ঔষধ
যেহেতু জিকা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধের জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো টিকা বা এর চিকিৎসার জন্য কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি, তাই আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ অনুযায়ী তার চিকিৎসা করা যেতে পারে তবে অবশ্যই কোনো রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
চিকিৎসাসেবা-সংক্রান্ত সাধারণ কিছু পরামর্শ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
- তরল খাবার খেতে হবে এবং বেশি করে পানীয় পান করতে হবে
- জ্বর ও মাথা ব্যথার জন্য প্রচলিত ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল বা এসিটামেনফেন) খেতে হবে।
- প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ খেলে সমস্যা হতে পারে। সুতরাং এজাতীয় কোনো ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়।
জিকা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়
১। সতর্কতা
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিষেধক টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। ব্যক্তিগত সচেতনতাই জিকা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উপায় ।
২। মশার কামড় থেকে সুরক্ষা
মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই জিকা থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। শরীরের বেশীর ভাগ অংশ ঢাকা রাখা (ফুল হাতা শার্ট এবং ফুল প্যান্ট পরা), জানালায় নেট লাগানো, প্রয়োজন ছাড়া দরজা জানালা খোলা না রাখা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রীম ব্যবহার করার মাধ্যমে মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়। শিশু, অসুস্থ রোগী এবং বয়স্কদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
আবাসস্থল ও এর আশে পাশে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। বাসার আশেপাশে ফেলানো মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোলা ইত্যাদি যে সকল স্থানে পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করতে পারে।মশা নিধনের জন্য মানসম্মত স্প্রে বা কয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশের ড্রেন সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং ময়লা আবর্জনা দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩। যৌন সংসর্গ থেকে সুরক্ষা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, জিকা আক্রান্ত কোন দেশ থেকে ফিরে আসার পর জিকা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ ব্যতিরেকে সকল পুরুষ ও মহিলা কে অন্তত ৬ মাস পর্যন্ত যৌন সংসর্গকালে নিরাপদ পদ্ধতি (কনডম) ব্যবহার করতে হবে।
৪। গর্ভকালীন সময়ে সুরক্ষা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, গর্ভকালীন সময়ে জিকা আক্রান্ত দেশসমুহে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। গর্ভকালীন সময়ে জিকা আক্রান্ত দেশসমুহে ভ্রমণ করলে অবশ্যই মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকার নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। জিকা আক্রান্ত দেশসমুহে অবস্থানকালীন এবং ফিরে আসার পর অন্তত ৬ মাস পর্যন্ত যৌন সংসর্গকালে নিরাপদ পদ্ধতি (কনডম) ব্যবহার করতে হবে।
৫। জিকা আক্রান্ত দেশসমুহে ভ্রমণকালীণ সুরক্ষা
জিকা আক্রান্ত দেশসমুহে ভ্রমণকালীণ মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকার নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, জিকা আক্রান্ত দেশসমুহে অবস্থানকালীন এবং ফিরে আসার পর সকল পুরুষ ও মহিলা কে অন্তত ৬ মাস পর্যন্ত যৌন সংসর্গকালে নিরাপদ পদ্ধতি (কন্ডম) ব্যবহার করতে হবে।
ভ্রমণকারীদের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
ভ্রমণকারীরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজেদের সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র (মশারি, মশা তাড়ানোর কয়েল বা স্প্রে, মশা নিরোধক লোশন, হালকা রঙের ফুল হাতা পোষাক প্রভৃতি) রাখতে পারে ।
বিশ্বের যেসব স্থানে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আছে সেসব স্থান থেকে আগত ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জিকা ভাইরাসের প্রবেশ রোধ করার জন্য বিমান, স্থল এবং সমুদ্রবন্দরসহ সব প্রবেশ পথে পর্যবেক্ষক দল ও সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে।
লেখক-তাসনীম আহমেদ এবং ড. বিশ্বজিৎ তালুকদার, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ
Please Click on Just one Add to help us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।