জিন স্প্লাইসিং কি?Gene Splicing কি?

জিন স্প্লাইসিং|Gene Splicing

জিন স্প্লাইসিং কি?

পৃথিবীর সকল জীবের দেহে বংশগতির উপাদান হিসেবে জিন(Gene) উপস্থিত থাকে। জীবের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য ধারণ ও বহন করে জিন(Gene)। জীন জেনেটিক কোড(Genetic Code)উৎপাদনে সক্ষম। এই জেনেটিক কোডের তথ্য অনুবাদ করে রাইবোজোম নামক কোষীয় অঙ্গানু বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করে।। উৎপাদিত প্রোটিনগুলো আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ গঠন করে।

জিন স্প্লাইসিং কি?
gene

জেনেটিক কোডে কোন ত্রুটি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রকাশ ঘটে। জিনে উপস্থিত স্থায়ী ত্রুটির কারণে যে রোগ হয় তা জেনেটিক রোগ নামে পরিচিত।জেনেটিক রোগ ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে নির্মূল করা যায় না।এই রোগ বংশ পরম্পরায় বয়ে চলে। জেনেটিক রোগ নির্মূল করার জন্য ত্রুটিপূর্ণ জিন সংশোধন করাই একমাত্র উপায়।

জিনের ত্রুটি সংশোধনের যে উপায়গুলো মানুষ আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি উপায় হল জিন স্প্লাইসিং। আসুন জানা যাক জিন স্প্লাইসিং(Gene Splicing) সম্পর্কে বিস্তারিত। প্রথমে কিছু মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

আপনি আরো পড়তে পারেন – নারীর সতীত্ব বা কুমারীত্ব কি? জীবিত মানুষ পানিতে ডুবে যায় কিন্তু মৃতদেহ পানিতে ভাসে কেন?

ডিএনএ/DNA

DNA
DNA

ডিএনএ হলো বংশগতির ধারক ও বাহক। এটি ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। ডিএনএ দ্বিসূত্রক প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো গঠন বিশিষ্ট। সূত্রক দুটি একে অপরকে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর জড়িয়ে ধরে। ডিএনএ তে নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক(Nitrogenous Base) হিসেবে উপস্থিত থাকে অ্যাডেনিন(A), গুয়ানিন(G), সাইটোসিন(C) ও থাইমিন(T)।

ডিএনএ সূত্রকের এর এক প্রান্ত 3 অন্যপ্রান্ত 5 প্রাইম নামে পরিচিত। ডিএনএ ট্রান্সক্রিপশন(Transcription)এর মাধ্যমে এম আরএনএ(mRNA) সৃষ্টি করে। এম আরএনএ ট্রান্সলেট হয়ে বিভিন্ন প্রোটিন সৃষ্টি করে।

এম আরএনএ(mRNA)

mRNA
mRNA

ট্রানসলেশন এর মাধ্যমে সৃষ্ট একসূত্রক আরএনএ কে বলা হয় এম আর এন এ। এম আরএনএ জেনেটিক কোড ধারণ করে।

এক্সন/Exon

এম আর এন এর যে অংশে সক্রিয় জেনেটিক কোড উপস্থিত থাকে সেই অংশকে এক্সন বলে। এক্সন ট্রান্সলেট হয়ে প্রোটিন সৃষ্টি করতে পারে।

এক্সন
এক্সন ও ইন্ট্রন

ইন্ট্রন/Intron

এম আর এনএনএ এর যে অংশ সক্রিয় জেনেটিক কোড ধারণ করে না সেই অংশকে ইন্ট্রন বলে।
এক্সন এর ফাঁকে ফাঁকে ইন্ট্রন গুলো অবস্থান করে।

জেনেটিক কোড(Genetic Code)
এক্সন ও ইন্ট্রন
জিনেটিক কোড

এম আরএনএ তে উপস্থিত তিনটি করে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক একত্রে একটি অ্যামাইনো এসিড নির্দেশ করে অর্থাৎ একটি অ্যামাইনো এসিড সংশ্লেষণ এর জন্য সংকেত প্রদান করে। অ্যামাইনো এসিডের সংকেত প্রদানকারী এই তিনটি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক কে একত্রে জেনেটিক কোড বলে। পৃথিবীর সকল জীবে 64 টি জেনেটিক কোড সৃষ্টি হয়। এগুলো প্রায় 20 ধরনের অ্যামাইনো এসিড সংশ্লেষ করে।(জিন স্প্লাইসিং)

জিন স্প্লাইসিং কি?Gene Splicing কি?

স্প্লাইসিং শব্দটির বাংলা অর্থ হলো সংযুক্তকরণ, জোড়া লাগানো, পুনর্গঠন, যুক্তকরণ ইত্যাদি।
কোন জেনেটিক উপাদান যেমন ডিএনএ অথবা আরএনএ এর নির্দিষ্ট খন্ড কর্তন করে সে কর্তিত অংশে নতুন ধরনের ডিএনএ,আরএনএ খন্ড অথবা জেনেটিক উপাদান যুক্ত করাকে জিন স্প্লাইসিং বলে।

জিন স্প্লাইসিং এর প্রকারভেদ

জিন প্রাইসিং মূলত দুই প্রকার। যথা ডিএনএ স্প্লাইসিং ও আরএনএ স্প্লাইসিং।

আরএনএ স্প্লাইসিং(RNA Splicing)

আর এন এ অণুতে সংঘটিত স্প্লাইসিং কে বলা হয় আরএনএ স্প্লাইসিং(RNA Splicing)। এটি দু’ভাবে ঘটে যেমন-
১।প্রাকৃতিক আরএনএ স্প্লাইসিং(Natural RNA Splicing)
২।কৃত্তিম আরএনএস প্রাইসিং (Alternative RNA Splicing)

১।প্রাকৃতিক আরএনএ স্প্লাইসিং

ডিএনএ হতে ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে এম আরএনএ(mRNA) তৈরীর সময় প্রাকৃতিক আরএনএ স্প্লাইসিং সংঘটিত হয়।

আরএনএ স্প্লাইসিং পদ্ধতি(Proscess of RNA Splicing)

দ্বিসূত্রক মাতৃ ডিএনএ হতে ট্রানস্ক্রিপশন এর মাধ্যমে একসূত্রক এম আর এন এ সৃষ্টি হয়।ট্রানস্ক্রিপশন এর Initiation বা সূচনাকরণ পর্যায়ের শেষে শিকল দীর্ঘকরণ পর্যায় (Elongation) আরম্ভ হয়।শিকল দীর্ঘকরণ (Elongation) পর্যায়ের শুরুতে প্রি-ম্যাচুর এম আরএনএ(Premature mRNA) সৃষ্টি হয়। প্রি-ম্যাচুর এম আরএনএ এর যে অংশগুলো জেনেটিক কোড ধারণ করে তাকে এক্সন বলে আর যে অংশগুলো জেনেটিক কোড ধারণ করে না তাকে ইন্ট্রন বলে।

mRNA-Splicing
mRNA-Splicing

ইন্ট্রন গুলো এক্সন এর ফাঁকে ফাঁকে অবস্থান করে।সক্রিয় জেনেটিক কোড ধারণকারী ম্যাচিওর এম আরএনএ(Mature mRNA) তৈরি করার জন্য এই ইন্ট্রন গুলো কে অপসারণ করতে হয়। ডিএনএ ইন্ট্রন গুলোকে স্প্লাইসিং পদ্ধতিতে অপসারণ করে ম্যাচিওর এম আরএনএ সৃষ্টি করে। ম্যাচিওর এম আরএনএ এর কোডিং অঞ্চলে কোন ইন্ট্রন উপস্থিত থাকে না।

২। কৃত্রিম RNA স্প্লাইসিং পদ্ধতি(Alternative RNA Splicing Proscess)

গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে mRNA খণ্ডের যে স্প্লাইসিং করা হয় তাকে কৃত্রিম RNA Splicing বলে। এটি তিন ভাবে করা যায়। যেমন-

*এক্সন স্কিপিং(Exon Skipping)

প্রি ম্যাচিওর mRNA এর নির্দিষ্ট কিছু এক্সন কেটে বাদ দেয়া হয় এতে ত্রুটিপূর্ণ জিনেটিক কোড বাদ পরে যায় ফলে বিশুদ্ধ জিনেটিক কোড তৈরি করা সম্ভব হয়। আবার অপ্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদনকারী জিনেটিক কোড ধারণকারী এক্সন গুলো বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদনকারী জিনেটিক কোড বিশিষ্ট এক্সন সংযুক্ত করা হয়।

*ইন্ট্রন রিটেনশন(Intron Retention)

এক্সন গুলোর মধ্যে বিরতি সৃষ্টি করার জন্যে কিছু ইন্ট্রন কে অপসারন না করে ঐ অবস্থায় রেখে দেয়া হয়।

*৩’’ ও ৫’’ প্রাইম পরিবর্তন(Alternative 3′ Splice Site and 5′ Splice Site)

mRNA খণ্ডের দুই প্রান্তে পরিবর্তন করা হয়।যেমন ৫” প্রান্ত কেটে সেখানে ৩” প্রান্ত যুক্ত করা হয় অথবা ৩” প্রান্ত কেটে সেখানে ৫” প্রান্ত যুক্ত করা হয়।

কৃত্রিম RNA স্প্লাইসিং
কৃত্রিম RNA Splicing

২। ডিএনএ স্প্লাইসিং(DNA Splicing)

কাঙ্খিত ডিএনএ খণ্ড সংগ্রহ করার পর ডিএনএ খন্ডকের নির্দিষ্ট অংশ কেটে বাহক ডিএনএতে(Vector) যুক্ত করা হয়। বাহক হিসেবে কাজ করে প্লাজমিড ডিএনএ। বাহক ডিএনএ তে উপস্থিত কাঙ্খিত ডিএনএ খন্ড পোষক দেহে সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

পোষক দেহ থেকে প্লাজমিড ডিএনএ খন্ড বা বাহক ডিএনএ খন্ড সংগ্রহ করা হয়। এবার বাহক ডিএনএ খন্ড হতে কাঙ্খিত ডিএনএ খন্ড সংগ্রহ করার পর অন্য ডিএনএ খন্ডের কর্তিত অংশে যুক্ত করা হয়। এটি রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি নামেও পরিচিত।

ডিএনএ স্প্লাইসিং
DNA Splicing

জিন স্প্লাইসিং এর ব্যবহার

  • রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রস্তুত করার সময় জিন স্প্লাইসিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।কোন জীবে নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে উন্নত জাত সৃষ্টি করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।যেমন- হাইব্রিড ফসল,ট্রান্সজেনিক প্রাণী।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে জেনেটিক রোগের স্থায়ী সমাধান করতে এটি ব্যবহৃত হয়।যেমন- হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ইত্যাদি।
  • ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করতে এই প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হয়।
giant-carrot-little
হাইব্রিড ফসল

লেখাটি অনেক পরিশ্রম করে লেখা হয়েছে।আপনার উপকারে আসলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।লেখাটি মূল্যবান মনে হলে শেয়ার করতে পারেন।বাংলা ভাষায় এই বিষয়ে আর একটিও লেখা কোথাও খুঁজে পাবেন না। ধন্যবাদ এতক্ষণ পড়ার জন্যে।

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।

All photo credit Goes to sutterstock.com