টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস|আই ভি এফ ইতিহাস#
বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষ চিকিৎসা শাস্ত্রেও ব্যাপক উন্নতি করে। অনেক অবিশ্বাস্য আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের চোখ ছানাবড়া করছে বিজ্ঞানীরা। তাদের আবিষ্কারের মধ্যে এমন একটি বড় আবিষ্কার হলো টেস্টটিউব বেবি বা আই ভি এফ পদ্ধতি। আমরা সবাই ফল দেখে পুলকিত হই কিন্তু এই ফলের পেছনে বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম দেখতে চাইনা। তাই আজ আসুন জেনে নেই টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস সম্পর্কে।
আপনি আরো পড়তে পারেন….. তিন স্ত্রী পুরুষ মিলে এক সন্তান জন্ম দেয়!!! …..সারোগেসি কি? …. টেস্ট টিউব বেবি কি?টেস্টটিউব বেবি কিভাবে হয়?
প্রথমে টেস্টটিউব বেবি ও আই ভি এফ এর গণ্ডগোল খোলাসা করা যাক। আই ভি এফ হলো একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় টেস্টটিউব বেবি।
টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস|আই ভি এফ এর ইতিহাস#
টেস্টটিউব বেবি সৃষ্টির প্রচেষ্টা শুরু হয় 1878 সালে Viennese embryologist, Samuel Leopold Schenk এর হাত ধরে। তিনি খরগোস ও শুকরের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে কৃত্রিম পরিবেশে টেস্টটিউব এর ভেতর নিষেক ঘটাতে সক্ষম হন।
Samuel Leopold Schenk এর এই গবেষণা ভবিষ্যতে টেস্টটিউব বেবি সৃষ্টির পথ সুগম করে উন্মোচন করে নতুন দিগন্তের।আই ভি এফ পদ্ধতির হাতেখড়ি বলা হয় এই গবেষণাকে।
–WIKIPEDIA
1934 সালে এই গবেষণা আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করে। Gregory Pincus এবং Ernst Vinzenz Enzmann খরগোশের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে এবং স্ত্রী খরগোশের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে খরগোশ কে গর্ভধারণ করান। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষ কৃত্রিমভাবে গর্ভসঞ্চার করার কৌশল সম্পর্কে জানতে পারে। ভ্রূণবিজ্ঞানীদের সামনে আই ভি এফ সম্পর্কে গবেষণার নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়।
রবার্ট জি. এডওয়ার্ডস একজন ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী মানুষের ক্ষেত্রে টেস্টটিউব বেবি সৃষ্টির কাজ শুরু করেন ১৯৫৫ সালে। তিনি ল্যবরেটরিতে টেস্টটিউব এর মধ্যে কৃত্রিম পরিবেশে মানব শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটাতে সক্ষম হন।তিনি স্ত্রীদেহের বাইরে ডিম্বাণুর জন্য কৃত্রিম পুষ্টিমাধ্যম তৈরি করতে সক্ষম হোন। সব ঠিকই ছিলো কিন্তু নিষিক্ত ডিম্বাণুকে স্ত্রীদেহের মধ্যে জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের কার্যকর উপায় তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই গবেষণার শেষধাপ সফলভাবে শেষ হচ্ছিল না।
১৯৬৮ সালে তার সাথে গবেষণায় যোগ দেন ভ্রূণবিদ্যার গবেষক প্যাট্রিক স্টেপটো। তারা দুজন দীর্ঘ ৪ বছর গবেষণা করেন এবং স্ত্রীদেহের ভেতর জরায়ুতে নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রতিস্থাপনের একটি উপায় খুঁজে পান।১৯৭২ সালে দুজনে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সময় টেস্টটিউবে তৈরি ভ্রুণ স্ত্রীদেহের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করেন। কিন্তু ভাগ্যের শিকে এবারও ছিড়লো না। তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হলেন।
ব্যর্থমনোরথে মন খারাপ করে বসে থাকলে তো আর সফলতার দেখা মিলবে না। তাই আবার পুনঃউদ্দমে কাজ করা শুরু করেন।
কিন্তু গবেষণার কাজে অর্থের অভাবে কাজ বাধাগ্রস্থ হয়ে যায়। নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে গবেষণা চালিয়ে নিতে থাকেন। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার দানের টাকা সংগ্রহ করে গবেষণার কাজ বেগবান রাখেন।
১৯৭৫ সালে তারা সফলতার সাথে স্ত্রীদেহের জরায়ুতে টেস্টটিউবে নিষিক্ত ডিম্বাণু স্থাপন করেন। কিন্তু এক্টোপিক প্রেগনেন্সির কারণে এবারও ব্যর্থ হন।
দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণার পর তারা ১৯৭৭ সালে নিঃসন্তান দম্পতি Lesley এবং Peter Brown এর উপর তাদের গবেষণার কৌশল প্রয়োগ করেন। এবার তারা সফলভাবে জরায়ুতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন। Lesley গর্ভবতী হন।
এবার শুরু হয় সাফল্যের ক্ষণ গণনা। Lesley র গর্ভাবস্থার সময় শেষ হয়। তাদের সামনে উপস্থিত হয় সাফল্যের মাহেন্দ্রক্ষণ। সময় ১৯৭৮ সাল ২৫ জুলাই রাত ১১:৫৭ মিনিট। স্থান Oldham General Hospital, Greater Manchester, UK পৃথিবীতে আগমন করে ১ম টেস্টটিউব বেবি যার নাম রাখা হয় লুইস ব্রাউন। জন্মের মাধ্যমেই ইতিহাস তৈরিকরা এক শিশু লুইস ব্রাউন। লুইস ব্রাউন ছিলো কন্যা সন্তান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে লুইস ব্রাউনের জন্ম এক বিরাট সাফল্যের মাইলফলক। এই ঘটনা পৃথিবীর মানুষকে দেখিয়ে দেয় বিজ্ঞানের অপার সম্ভাবনার দিগন্ত।
১৯৭৯ সালে এই গবেষক দুজন আরেকটি টেস্টটিউব বেবির সফল জন্মদান করাতে সাহায্য করেন। এবার এই বেবি ছিলো একটি ছেলে। তার নাম Alastair Montgomery.
এই বিস্ময়কর সফলতার জন্য ২০১০ সালে এডওয়ার্ড নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে ১ থেকে ২ শতাংশ শিশু আইভিএফ পদ্ধতিতে জন্ম নেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংক্ষেপে আই ভি এফ এর ইতিহাস
সাল | ঘটনা |
1878 সাল | কৃত্রিম পরিবেশে টেস্টটিউব এর ভেতর নিষেক |
1934 সাল | ডিম্বাণু টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে এবং স্ত্রী খরগোশের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে খরগোশ এর গর্ভধারণ |
১৯৫৫ সাল | স্ত্রীদেহের বাইরে ডিম্বাণুর জন্য কৃত্রিম পুষ্টিমাধ্যম তৈরি |
১৯৭২ সাল | টেস্টটিউবে তৈরি ভ্রুণ স্ত্রীদেহের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন |
১৯৭৮ সাল ২৫ জুলাই | পৃথিবীতে আগমন করে ১ম টেস্টটিউব বেবি যার নাম রাখা হয় লুইস ব্রাউন। |
১৯৭৮ সালের ৩ অক্টোবর | ভারতে টেস্টটিউব বেবি দূর্গা (কানুপ্রিয়া আগারওয়াল) জন্ম গ্রহণ করে। |
ভারতীয় বিজ্ঞানীর টেস্টটিউব বেবি আবিষ্কার
১৯৭৮ সালের ৩ অক্টোবর কলকাতার ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায় উন্নত গবেষণাগার ছাড়া মান্ধাতা আমলের সাধারণ উপকরণের সাহায্য নিয়ে টেস্টটিউব বেবির জন্ম দেন।শিশুটির নাম ছিলো দূর্গা (কানুপ্রিয়া আগারওয়াল)। রাজ্যের আইনপ্রণেতারা সুভাষ কে তার গবেষণার ফলাফল International scientific community র বিশ্ব সম্মেলনে উপস্থাপন করতে নিষিদ্ধ করে।
এর ফলে সুভাষের গবেষণার ফলাফল international scientific community র কাছে অজানা থেকে যায়। তার বিরাট সাফল্যের খবর পৃথিবীবাসির কাছে অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে থেকে যায়। রাজ্য সরকার তাকে এধরণের গবেষণার থেকে নিবৃত করতে আইন পাশ করে। সুভাষের অপরাধ ভারতে জন্মগ্রহন।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটিউব বেবি:
২৯ মে, ২০০১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.পারভিন ফাতেমা এর তত্ত্বাবধায়নে
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে মোঃ আবু হানিফ ও ফিরোজা বেগম দম্পতির কোলে বাংলাদেশের ১ম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয়। একসাথে ৩ টি শিশুর জন্ম হয়। তাদের নাম রাখা হয় হিরা, মনি ও মুক্তা।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
টেস্টটিউব বেবির জনক কে?
রবার্ট জি এডওয়ার্ড, ইংল্যান্ড
কত তারিখে বাংলাদেশে প্রথম টেস্টটিউব শিশুর জন্ম গ্রহণ হয়?
২৯ মে, ২০০১।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটিউব শিশুর নাম কী?
হিরা, মনি ও মুক্তা।
ভারতের প্রথম টেস্টটিউব শিশুর নাম কী?
দূর্গা(কানুপ্রিয়া আগারওয়াল)।
History of test tube baby in Bangla
Test tube beby itihash, IVF itihash, kivabe test tube baby toiri kora hoesilo? . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
Tag: টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস . . . . . টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস . . . . . . টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস . . . . . টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস . . . . . . টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস . . . . . . . টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস . . . . . . .
Please Click on Just one Add to help us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।