ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন!

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন!

দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না-থাকলে পায়ের অনুভূতিশক্তি কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের পায়ের নিচে শক্ত পাথর কণা পড়লে বা ফোঁড়া উঠলে তা অনুভব করতে পারে না এবং তখন তাদের পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও, ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে রক্ত চলাচল কমে যেতে পারে যা পরবর্তীতে পায়ের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

কোনো ডায়াবেটিস রোগীর যদি পায়ের অনুভূতিশক্তি কমে যায় (অবশ ভাব এবং সুড়সুড়ির অনুভূতি),এবং/অথবা পা/পায়ের আঙুলের আকার পরিবর্তন হয়ে যায় এবং/অথবা পা কেটে যায় এবং কাটা স্থানের ঘা বা ক্ষত না শুকায়, তাহলে তাকে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে এবং পায়ের যত্ন করতে হবে। একজন ডায়াবেটিস রোগী যদি দৈনিক তার পায়ের যত্ন নেয় তাহলে পায়ের আঙুল, পায়ের পাতা বা পা হারানোর ঝুঁকি বাড়ায় এমন পচনশীল ক্ষত প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও জরুরি।

আপনি আরও পড়তে পারেন … ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্থ থাকার উপায়!গর্ভকালীন ডায়াবেটিস!গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন নেয়ার উপায়

নিচের ধাপগুলো ফলো করুন…

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন

প্রতিদিন পা পরীক্ষা করুন

  • পায়ে কাটা, ক্ষত, ফোলা, লাল হয়ে-যাওয়া বা পায়ের কোনো আঙুলে/নখে সংক্রমণ হয়েছে কি না তা দৈনিক পরীক্ষা করুন
  • সারাদিনের কাজ শেষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পা থেকে জুতো খোলার পর পা পরীক্ষা করুন
  • লক্ষ্য করুন দুই পায়ের মধ্যে আকৃতি, রঙ বা তাপমাত্রার (ঠাণ্ডা/গরম) কোনো পার্থক্য আছে কি না।
  • আপনার যদি সামনে ঝুঁকে নিজের পা পরীক্ষা করতে সমস্যা হয়, তবে আপনি আয়না ব্যবহার করতে পারেন অথবা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের সাহায্য নিতে পারেন।

দৈনিক পা পরিষ্কার করুন

  • কুসুম গরম পানি ও সাবান দিয়ে প্রতিদিন পা পরিষ্কার করুন। খেয়াল রাখুন পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়। প্রয়োজনে থার্মোমিটার ব্যবহার করুন (৯০-৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা হলে নিরাপদ)
  • পায়ের আঙুলের মধ্যবর্তী ত্বক শুষ্ক রাখতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করুন। পা ভেজা থাকলে শুকনো কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন

পায়ের ত্বক নরম ও মসৃণ রাখুন

  • খুব অল্প পরিমাণে লোশন, ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম জেলি পায়ের উপরে এবং নিচে লাগান।
  • পায়ের আঙুলের মধ্যবর্তী ত্বকে লোশন বা ক্রিম লাগাবেন না কারণ তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে

কর্ন বা ক্যালাস মসৃণ রাখুন

  • পুরু বা শক্ত হয়ে যাওয়া ত্বক বা আঁচিলের মত বর্ধনশীল ত্বককে কর্ন বা ক্যালাস বলে। আপনার পায়ে কর্ন বা ক্যালাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • কোনো অবস্থাতেই ব্লেড বা রেজর দিয়ে কর্ন বা ক্যালাস কাটবেন না।

নিয়মিত পায়ের নখ কাটুন

  • নিয়মিত পা ধুয়ে এবং শুকিয়ে নখ কাটার যন্ত্র দিয়ে পায়ের নখ কাটুন। তবে, সামান্য নখ রেখে কাটুন।
  • আপনার পায়ের নখ যদি পুরু বা হলুদ হয়ে যায় অথবা পার্শ্ববর্তী ত্বকের ভিতর ঢুকে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সবসময় জুতা এবং মোজা পরুন

  • সবসময় জুতা-মোজা পরুন। ঘরের ভিতরে বা বাইরে কখনোই খালি পায়ে হাটবেন না।
  • জুতা পরার আগে এর ভিতরটা দেখে নিন। জুতার ভিতরের অংশ মসৃণ কি না বা এর ভিতরে কোনো বস্তু আছে কি না তা লক্ষ রাখুন।
  • আরামদায়ক এবং সুরক্ষিত সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করুন।
  • রাতে পায়ে ঠাণ্ডা ভাব অনুভূত হলে মোজা পরুন।

পায়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখুন

  • বসে কাজ করার সময় পায়ের নিচে টুল রেখে পা উঁচুতে রাখুন।
  • দীর্ঘসময় এক পায়ের উপর অন্য পা ভাঁজ করে বসবেন না।
  • পায়ে টাইট মোজা, ইলাস্টিক বা রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করবেন না
  • ধুমপান করবেন না। ধুমপান পায়ে রক্ত চলাচল কমিয়ে দিতে পারে।
  • পায়ে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করতে নিজেকে কর্মঠ রাখুন। দৈনিক ইটিতে, সাঁতার কাটতে অথবা সাইকেল চালাতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের জন্য উপযুক্ত জুতা নির্বাচনে কিছু পরামর্শ

  • মাপের জুতা পরা জরুরি।
  • পা ভালো রাখার জন্য সঠিক Walking shoes বা athletic shoes দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ভালো। এগুলো পায়ে বাতাস চলাচলে সাহায্য করে।
  • কখনোই প্লাস্টিকের তৈরি জুতা পরবেন না, কারণ এগুলোর সংকোচন-প্রসারণ হয় না বা এর ভিতরে বাতাস চলাচল করে না
  • জুতা কেনার সময় লক্ষ রাখুন যেন তা আরামদায়ক হয় এবং তাতে পায়ের আঙুলের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে
  • উঁচু হিল বা সরু অগ্রভাগবিশিষ্ট জুতা পরবেন না কারণ এগুলো পায়ের আঙুলের ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি করে
  • যদি আপনার এক পা অন্য পায়ের থেকে বড় হয়, তবে যে পা বড় সেই পায়ের মাপে জুতা কিনুন। ছোট পায়ের জন্য প্রয়োজনে জুতার ভিতর অতিরিক্ত সুকতলা ব্যবহার করুন।
  • বাজারে ডায়াবেটিস রোগীর জুতা পাওয়া যায়, সম্ভব হলে সেটা ব্যবহার করুন

উপসংহার

সঠিক যত্নই ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের সংক্রমণ, গ্যাংগ্রিন বা পচনের মতো বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে।

লেখক
ডাঃ শাহান পারভীন,
আইসিডিডিআর,বি
ডাঃ শামসুল আরেফিন, আইসিডিডিআর,বি

Tag: ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন