ডিএমটি কী? ডিএমটি মাদক সব নেশার বাপ!

ডিএমটি কী?DMT মাদক সব নেশার বাপ!

অনেক মাদক দ্রব্যের নাম শুনেছেন জীবনে কিন্তু মাদকের রাজা ডিএমটির নাম শুনেননি বোধহয়। আগে মনে করা হতো হেরোইন সর্বোচ্চ নেশা তারপর এই স্থান দখল করে এলএসডি কিন্তু সব মাদক কে হারিয়ে DMT সব নেশার বাপ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। মাদকতার সর্বোচ্চ শিখড়ে পৌছাতে এর সাথে পাল্লা দিতে পারে এমন মাদক আর নেই।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রাকৃতিকভাবে এই মাদকটি মানুষের মস্তিষ্কে তৈরি হয়। হুম! অবাক হলেন বুঝি? সত্যি তথ্য বলেছি মিথ্যা নয়! তাহলে আসুন প্রবেশ করি হেলুসিনেসনের স্বপ্নিল মায়াবী জগৎে আর খুঁজে দেখি সব নেশার বাপ সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য।

আপনি আরো পড়তে পারেন…. এলএসডি মাদকের ভয়াবহতা

ডিএমটি কি?

এটি একটি সাইকাডেলিক ড্রাগ যা তীব্র হেলুসিনেশন তৈরি করতে পারে।DMT উদ্ভিদ দেহ থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ যা মাদক হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি সংস্কৃতিতে বহু শতাব্দী ধরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
DMT এর রাসায়নিক নাম এন, এন-ডাইমাইথাইল্রিপটামিন। এটি হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামিন ড্রাগ।অনেক সময় একে দিমিত্রি নামেও ডাকা হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতে এই মাদকটি এলএসডি এবং ম্যাজিক মাশরুমের মতো মাদকতা তৈরি করে।

শক্তিশালী হ্যালুসিনোজেনিক ক্ষমতার জন্য দামি নেশার উপকরণ হিসেবে উন্নত দেশে বা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এটি ব্যবহার করে।এটি সেবনের পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিটে গভীর হ্যালুসিনেশন হয় এবং সেবককারী দ্রুত কল্পনার জগতে প্রবেশ করে।

ডিএমটি মাদক কি?

DMT একটি সাইকাডেলিক ড্রাগ যা তীব্র হেলুসিনেশন তৈরি করতে পারে।

ডিএমটির অন্যান্য নাম

এই মাদক বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
এটি fantasia,businessman’s trip,businessman’s special,45-minute,psychosis,spiritual molecule ইত্যাদি নামে পরিচিত।

ডিএমটি আবিষ্কারের ইতিহাস

প্রাক-কলম্বিয়ার সময় থেকেই DMT দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
DMT ১৯১৩ সালে প্রথম সংশ্লেষিত হয়েছিল। এটি রসায়নবিদ রিচার্ড হেলমথ ফ্রেড্রিক মানস্কে আবিষ্কার করেছিলেন ।১৯৪৬ সালে ব্রাজিলের রসায়নবিদ ও অণুজীব বিশেষজ্ঞ, ওসওয়াল্ডো গোনালভেস ডি লিমা   জুরেমা প্রেটা গাছের শিকরের ছাল থেকে একটি ক্ষার সংশ্লেষ করেন এবং এর নাম রাখেন নাইজেরিনা (নাইজেরিন)। উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ছিল Mimosa tenuiflora.  তিনি এটির মারাত্মক হেলুসিনেটিক প্রভাব সম্পর্কে জানতেন না।

এটি প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাপ্ত রাসায়নিক পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি যে ডিএমটি মাদক তা তিনি ঘুনাক্ষরেও টের পাননি।

১৯৫৯ সালে ডি লিমা Mimosa tenuiflora গাছের মূল আমেরিকান রসায়নবিদদের সরবরাহ করেন। তারা এই গাছের মূলে DMT মাদকের অস্তিত্ব খুঁজে পান।১৯৫৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত কেউ এই মাদকটির হেলুসিনেটিং প্রভাব সম্পর্কে জানতো না।

হাঙ্গেরি দেশের শারীরতত্ত্ববিদ ও মনরোগ বিশেষজ্ঞ  Stephen Szara তার গবেষণা পত্রে DMT সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং এর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেন।

ডিএমটির উৎস

Banisteriopsis caapi, Mimosa tenuiflora,Diplopterys cabrerana,Prestonia amazonica ইত্যাদি উদ্ভিদ প্রজাতির গাছের রস থেকে DMT পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসিরা এই গাছগুলোর রস থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে DMT তৈরি করে।

ডিএমটির উৎস Banisteriopsis caapi, Mimosa tenuiflora,Diplopterys cabrerana,Prestonia amazonica ইত্যাদি উদ্ভিদ প্রজাতির গাছ।
ডিএমটির উৎস

কিন্তু এই রসে খুব অল্প পরিমানে মাদক থাকে। ল্যবরেটরিতে প্রসেসিং এর মাধ্যমে বিশুদ্ধ DMT তৈরি করা হয়। প্রায় ৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৪ প্রজাতির প্রাণিদেহে প্রাকৃতিকভাবে এই মাদক উপস্থিত।কলোরাডো রিভার ফ্রগের বিষে ডিএমটি উপস্থিত থাকে।

কলোরাডো রিভার ফ্রগের বিষে ডিএমটি উপস্থিত থাকে।
কলোরাডো রিভার ফ্রগ

মানবদেহে ডিএমটির উপস্থিতি

বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে মানবদেহে প্রাকৃতিকভাবে DMT থাকে। মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি এটা ক্ষরণ করে তাই মানুষের ঘুম আসে। খুব বেশি বিষণ্নতার সময় এটির ক্ষরণ হয় ভালো অনুভূতি সৃষ্টির জন্য।
স্বপ্নে কল্পনার জগৎ সৃষ্টি হয় এটার প্রভাবে। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে মানুষ যে সব আজব দৃশ্য দেখে তা এর প্রভাব বলে মনে করে অনেক গবেষক।

মানবদেহে প্রাকৃতিকভাবে ডিএমটি থাকে। মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি এটা ক্ষরণ করে তাই মানুষের ঘুম আসে।
পিনিয়াল গ্রন্থি

ডিএমটি গ্রহণ পদ্ধতি

এই মাদকটি এলএসডির মত ব্লোটিং পেপারে ব্যবহার করা হয়। জিহ্বার উপর ব্লোটিং পেপার দিয়ে রাখলে এটি রক্তে মিশে যায়। তারাতারি ফলাফল পেতে ইনজেকশনের মাধ্যমে শীরায় পুশ করা হয়। সিগারেটের ধোয়ার মত গ্রহণ করা যায়। আদিবাসিরা তরল মদ হিসেবে অশোধিত DMT পান করে।

ডিএমটির ডোজ

০.০১-০.০৪ মিলিগ্রাম এক কেজি দৈহিক ওজন অনুপাতে গ্রহন করলে তিব্র নেশার সৃষ্টি হয় কিন্তু হেলুসিনেশন তৈরি হয় না। আপনার ওজন যদি ৬০ কেজি হয় তাহলে ৬০ কেজি*০.০৪ মিলিগ্রাম=২.৪ মিলিগ্রাম গ্রহণ করলেই নেশা সৃষ্টি হবে।

হেলুসিনেশন ও সাইকাডেলিক প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য ০.২-০.৫ মিলিগ্রাম/ কেজি মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে।

ডিএমটির দাম কত?

একবার নেশা করা যায় এমন একটি ট্যবলেটের দাম প্রায় ৪২ ডলার, বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪ হাজার। ব্লোটিং পেপার ও ইনজেকশনের দাম আরো বেশি।

মস্তিষ্কের উপর ডিএমটির প্রভাব

DMT গ্রহণ করার পর এটি রক্তের মাধ্যমে প্রবিহিত হয়ে মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের সেরাটোনিন ক্ষরণকারি অংশকে প্রভাবিত করে ফলে প্রচুর সেরাটোনিন ক্ষরিত হয় এই অবস্থাকে সেরোটোনিন সিনড্রোম ডিসঅর্ডার বলে।

এসময় মস্তিষ্কে একটি তীব্র সুখের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। কল্পনা শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কোন বিষয় চিন্তা করা মাত্রই তা চোখের সামনে দেখতে পাওয়া যায়। মনেহয় নতুন পৃথিবীতে আপনার আগমন হয়েছে যেখানে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।মনে করুন আপনার গায়ক হওয়ার খুব শখ কিন্তু হতে পারেননি।

কোন পার্টিতে গিয়ে DMT সেবন করুন দেখবেন মাদকের প্রভাবে দেখতে পাবেন ঐ পার্টির সেরা গায়ক আপনি।মানে কল্পনায় আপনি মস্তবড় সেলিব্রিটি হয়েগেছেন কিন্তু সেটা মাদকের প্রভাবে বাস্তব বলে মনে হবে। এটি সাইকাডেলিক মাদক হওয়ার জন্য সেবনকারী বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা।

মস্তিষ্কের উপর ডিএমটির প্রভাব
ডিএমটির প্রভাবে হেলুসিনেশন

ডিএমটির মানসিক প্রভাব

মাদকটি সেবনের পর মানুষের মনের ভেতর বিভিন্ন ধরণের বিচিত্র ও বর্ণময় চিন্তার উদ্ভব হয়। যেমন-

  • তীব্র উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়।
  • চিন্তাশক্তি ভাসমান হয়েযায়
  • নিজেকে সবচেয়ে সুখি ও ভাগ্যবান মনে হয়
  • প্রাণবন্ত হ্যালুসিনেশন শুরু হয়
  • সময়ের পরিবর্তিত বোধ করে সেবনকারী। কল্পনার সাহায্যে সে অতিত বা ভবিষ্যতের যেকোন দৃশ্য চোখের সামনে ছবির মত দেখতে পায়। সেইসব দৃশ্যে সে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। কোনভাবেই সে বুঝতে পারেনা এই দৃশ্য সত্যি নয়।
  • সমস্ত হতাশা নিমিষেই উড়ে যায়।
দেহের অন্যান্য অঙ্গের উপর প্রভাবচ
  • হার্ট রেট দ্রুত বেড়ে যায়
  • রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়
  • দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে।
  • মাথা ঘোরে।
  • চোখের পাতার দ্রুত ছন্দবদ্ধ  উঠানামা শুরু হয়।
  • বুকে ব্যথা বা পেশি শক্ত হয়।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হয়।
ডিএমটি সেবনকারীর মৃত্যুঝুঁকি

বেশিমাত্রায় এই ড্রাগ সেবন করলে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে সেবনকারীর হার্ট এটাক বা স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে সেরাটোনিন ক্ষরণ হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কানেকশন সিস্টেম নষ্ট হয়ে সেবনকারী কোমায় চলে যেতে পারে।

ডিএমটি ব্যবহারের সময় এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন
  • একা DMT ব্যবহার করবেন না। আপনার বিশ্বস্ত  লোকদের সাথে এটি ব্যবহার  করুন।
  • সেবনের পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার কাছাকাছি কমপক্ষে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছেন যিনি আপনাকে মারাত্মক শারীরিক বা মানসিক জটিলতায় সাহায্য করতে পারে।
  • নিরাপদ এবং আরামদায়ক জায়গায়  বসে এটি ব্যবহার করুন। যানবাহন চালানোর সময় এটি সেবন করবেন না।
  • অ্যালকোহল বা অন্যান্য ড্রাগের সাথে এটি একত্রিত করবেন না।
  • ডিএমটির প্রভাবগুলি বেশ তীব্র হতে পারে। আপনি  স্বাভাবিক মানসিক অবস্থাতে থাকলে এটি ব্যবহার করা ভাল।
  • যদি আপনি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ঔষধ গ্রহণ করেন, হার্টের জটিলতা থাকে বা ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

Please click on just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।