পারকিনসন্স ডিজিজ কী? কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

মানুষের অনেক রোগ হয় তার মধ্যে কিছু রোগ জীবাণুর কারণে হয় এগুলো বেশির ভাগই নিরাময় করা যায়।কিন্তু কিছু রোগ হয় জিনের ত্রুটির কারণে যেগুলো সহজে নিরাময় করা যায় না এমন একটি রোগ হলো পারকিনসন্স ডিজিজ বা পারকিনসন রোগ।

উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, সারাবিশ্বে প্রায় ১ কোটি মানুষ পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ লক্ষ এবং ইউরোপের ১২ লক্ষ মানুষ। বাংলাদেশে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ এ রোগে ভুগছে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ এ রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে। সাধারণত পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে।আজ পারকিনসন রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

পারকিনসন্স ডিজিজ কী? কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

আপনি আরো পড়তে পারেন….. একলাম্পসিয়া কী?একলাম্পসিয়ার কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!মৃগীরোগ বা এপিলেপ্সি কী? মৃগী রোগের কারণ,প্রকারভেদ ও চিকিৎসা!

পারকিনসন্স ডিজিজ কী?

পারকিনসন্স ডিজিজ বা সংক্ষেপে পিডি (PD) কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি রোগের নাম, যা মস্তিস্কের মধ্য অঞ্চলের স্নায়ুকোষের মৃত্যুর কারণে হয়ে থাকে। অ্যালজেইমার (alzheimer) রোগের পরে এটিই হলো বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাণঘাতী স্নায়ুতন্ত্রের রোগ।

পারকিনসন্স ডিজিজ আবিষ্কার করেন কে?

১৮১৭ সালে ইংরেজ ডাক্তার জেমস পারকিনসন তাঁর “An essay on the shaking palsy” নিবন্ধে সর্বপ্রথম এই রোগ সম্পর্কে তথ্য দেন। পরবর্তীতে তার নাম অনুসারেই এই রোগের নামকরণ করা হয়।

পারকিনসন্স ডিজিজ এর কারণ কী?

পারকিনসন্স ডিজিজের প্রাথমিক কারণ হিসেবে মধ্য মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়াল নাইগ্রা (substantial nigra ) অঞ্চলের ডোপামিন (dopamine) প্রস্তুতকারী স্নায়ুকোষের মৃত্যুকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কত বছর বয়সে পারকিনসন্স ডিজিজ হয়?

পঞ্চাশ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তবে, কম-বয়সের মানুষেরও এই রোগ হতে পারে। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি।

পারকিনসন্স ডিজিজ লক্ষণ ও উপসর্গ

পারকিনসন্স ডিজিজ একটি জটিল শারীরিক অবস্থা যা মানুষকে বিভিন্নভাবে আক্রান্ত করে।

এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো-

পারকিনসন্স ডিজিজ  মটর সিম্পটোম্পস

এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে চলাফেরা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া করতে সমস্যা, যেমন হাত-পায়ের কাঁপুনি, হাত-পা নাড়াতে না পারা ও ধীরগতিতে চলাচল।চলাফেরা এবং হাত ও পায়ের অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ, যাকে মটর সিম্পটোম্পস বলে।

পারকিনসন্স ডিজিজ নন মটর সিম্পটোম্পস

এ রোগের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে আছে চিন্তাধারা, আচার-ব্যবহার, ঘুম এবং বোধশক্তির পরিবর্তন।এগুলোকে নন-মটর সিম্পটোম্পস বলে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অনেক সময় পিডি-আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ ও উপসর্গ ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়ে থাকে।রোগীর মধ্যে অনেক সময় সাধারণভাবে যেসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার কথা সেগুলো না-ও দেখা দিতে পারে। তবে, রোগীর যেসব সমস্যা দেখা যায় সেগুলো দিনদিন অবনতির দিকে যেতে থাকে।

উপসর্গগুলোকে নিম্নোক্ত প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যেগুলো আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে:

১. ট্রেমর (tremor)

হাত স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় হাতের অনিয়ন্ত্রিত কম্পন হতে থাকে। অনেক সময় রোগী হাতের কম্পনকে কখনো বন্ধ করতে পারে না, অবিরাম চলতে থাকে।

২. ব্রাডিকাইনেসিয়া (bradykinesia)

অত্যন্ত ধীর গতির চলাফেরা, যেক্ষেত্রে শারীরিক গতিবিধি খুবই মন্থর হয়ে থাকে। এই অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তি দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধীরগতিতে হাঁটা, জিনিসপত্র ধরতে সমস্যা হওয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

৩. রিজিডিটি (rigidity)

আক্রান্ত ব্যক্তির মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়, যা তার চলাচলকে আরও বাধাগ্রস্ত করে তোলে। কখনো কখনো রোগীর মুখমণ্ডলের আকৃতির পরিবর্তন হয়ে যায় এবং পেশীতে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হয়।

পারকিনসন্স ডিজিজ কিভাবে হয়

পারকিনসন্স ডিজিজের সঠিক কারণ বা কেন এই রোগ হয়ে থাকে তা এখনো অজানা রয়ে গেছে। তবে, বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করা গেছে যে, স্নায়ুকোষের মৃত্যুর কারণ হলো নিউরনে উপস্থিত একধরনের প্রোটিন আলফা সাইক্লিন (alpha synuclein) এর প্রাব্যতা ( solubility) হ্রাস পাওয়া।

পারকিনসন্স ডিজিজের কারণ

এই প্রোটিন সাধারণত কোষের ভেতরে স্বচ্ছ ও দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। কিন্তু রোগাক্রান্ত অবস্থায় এই প্রোটিন তন্তুর মতো হয়ে যায়। আর এই তন্তুগুলো একত্রিত হয়ে লিউই বড়ি (lewy body) নামক অদ্রবণীয় ঘণীভূত বস্তুতে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে স্নায়ুকোষ মারা যায়। যার ফলস্বরূপ পিডি-র লক্ষণ দেখা দেয়।

গবেষকরা এই রোগ হওয়ার প্রবণতার জন্য জিনগত, পরিবেশগত ও জৈবিক কারণ চিহ্নিত করতে পেরেছেন।

জিনগত কারণ

পারকিনসন্স ডিজিজ জিনগত রোগ না-হলেও ১৫ শতাংশ মানুষের এই রোগ হয়ে থাকে যাদের নিকট আত্মীয়ের মধ্যে এই রোগ আছে বা ছিলো। কিছু নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তনের কারণে এই রোগ হতে পারে। জিনগুলোর মধ্যে SNCA এবং PRKM অন্যতম।

পরিবেশগত কারণ

আমাদের পরিবেশের প্রভাবের কারণে এই রোগ হতে পারে, যেমন ক্ষতিকারক পদার্থের সংস্পর্শে থাকার কারণে পিডি হতে পারে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। দীর্ঘসময় কীটনাশকের ব্যবহার বা সংস্পর্শ এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়িয়ে দেয়। পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিস্ক থেকে জৈব ক্লোরিনের সমন্বয়ে তৈরি কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে কোন সুনির্দিষ্ট মাত্রার কীটনাশক এর জন্য দায়ী তা এখনও জানা যায় নি।

মস্তিষ্কে ধাতব আয়নের পরিমান বৃদ্ধি পেলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এসব ধাতব আয়ন পরিবেশ থেকে আমাদের শরীরে আসতে পারে। বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক আয়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট ধাতব আয়ন অতিরিক্ত পরিমাণে মস্তিস্কে জমা হলে বা এগুলোর অনুপাতের তারতম্য হলে পারকিনসন্স ডিজিজের উপসর্গ দেখা দেয়।

গবেষকরা পিডি রোগীদের মস্তিষ্কে লৌহ (ferrus) এবং তামা (copper) আয়নের অতিমাত্রায় উপস্থিতি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এসব ধাতব আয়নের অতিমাত্রায় উপস্থিতি স্নায়ুকোষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করে। কোষ বিভিন্ন এনজাইম ও প্রোটিনকে জারিত (oxidize) করে এবং পর্যায়ক্রমে কোষ মৃত্যুর পথে ধাবিত হয়।

Molecular biological

RNA থেকে প্রোটিন তৈরি হওয়ার পর এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এবং রাইবোজোমে পরিবর্তিত হয়ে থাকে, যাকে post-transitional modification বলা হয়। আলফা সাইনুক্লিন – প্রোটিনের এই পরিবর্তন হলে এটি দ্রবীভূত অবস্থা থেকে তন্তুর মতো হতে পারে, যা পর্যায়ক্রমে পারকিনসন্স রোগের সৃষ্টি করে।

আলফা-সাইক্লিনের অ্যামাইনো এসিড চেইনের সাথে যদি ফসফেট গ্রুপ যুক্ত হয়ে যায় তাহলে প্রোটিনটি তন্তুর মতো হয়ে যায়, যা স্নায়ুকোষের জন্য ক্ষতিকারক এবং পরবর্তীতে কোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।

পারকিনসন্স ডিজিজ চিকিৎসা

যদিও পারকিনসন্স ডিজিজের কোনো নিরাময় নেই, তবুও এর চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। সঠিক চিকিৎসা রোগের বিস্তারকে বিলম্বিত করে। আর তা না-হলে রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যায়ক্রমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (paralysis) হয়ে যায় এবং রোগী শেষ পর্যন্ত মারা যায়। এই রোগের চিকিৎসা কয়েকটি পর্যায়ে হয়ে থাকে। রোগের উপসর্গ অনুসারে এগুলোর প্রয়োগ নিম্নরূপ:

পারকিনসন্স ডিজিজের ঔষধ

ওষুধ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মূলত পারকিনসন্স রোগীদের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মস্তিষ্কের কয়েকটি নির্দিষ্ট জৈব রাসায়নিক পদার্থের অভাবে এর প্রাথমিক উপসর্গ দেখা যায়, যার মধ্যে ডোপামিন অন্যতম। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে এই পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। লিভোডোপা হলো এমন একটি ওষুধ।

পারকিনসন্স ডিজিজের ঔষধ ফিজিওথেরাপি

পারকিনসন্স পারকিনসন্স ডিজিজে চলাচলে বাধা ও কাঁপুনি দেখা দেয় বলে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগীদের অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের সহজ চলাফেরা বা হাত ও পায়ের কাঁপুনি কমানোর জন্য বিশেষ ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো অনুশীলন করলে রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং এগুলো রোগীর দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পারকিনসন্স ডিজিজের অপারেশন

রোগের উপসর্গ কমাতে শল্যচিকিৎসা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। যখন রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না তখন শল্যচিকিৎসা করা হয়।

মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করা হলে রোগীর কাঁপুনিজনিত অবস্থার ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রণে উন্নতি ঘটে। এরপরও ওষুধ খেতে হয়। তবে, শল্যচিকিৎসার আগের অবস্থা থেকে অনেক কম পরিমাণে ওষুধ খেতে হয়। ফলশ্রুতিতে ওষুধ সেবনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কমে আসে।

শল্যচিকিৎসার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। রোগীর দেহের অন্যান্য অংশে সমস্যা থাকলে, যেমন হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং কিডনিতে সমস্যা থাকলে মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয় না। শল্যচিকিৎসা রোগের উপসর্গ ও ব্যাপ্তির ওপর বিবেচনা করে কয়েক ধরনের হয়ে থাকে।

প্রধান চিকিৎসাগুলোর মধ্যে ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন (deep brain stimulation). প্যালিডোটমি (pallidotomy) এবং থ্যালামটমি (thalamotomy) উল্লেখযোগ্য।

ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশনের মাধ্যমে মস্তিষ্কের যে নির্দিষ্ট অংশের জন্য পারকিনসন্সের উপসর্গ দেখা দেয় সেই অঞ্চলে বিদ্যুতের ঝটকা দেওয়া হয়। যেসব রোগীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে চলে যায় তাদের এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর প্যালিডোটমি এবং থ্যালামটমি হলো মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র অংশ বিনাশ করে দেওয়া যা পিডি-র জন্য দায়ী।

পারকিনসন্স ডিজিজ প্রতিরোধ

পারকিনসন্স ডিজিজ প্রতিরোধের কোনো সুনির্দিষ্ট উপায় এখন পর্যন্ত জানা যায় নি। তবে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যাফেইন সেবনকারীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়া, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে এই রোগের ঝুঁকি কমে যায়। তবে, এসব তথ্যের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি।

পারকিনসন্স ডিজিজের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা

পিডি নিরাময় করার লক্ষ্যে বর্তমানে বিশ্বের অনেক গবেষক অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ গবেষক কিভাবে মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। গবেষণার ফলে যেসমস্ত পদ্ধতি এর উপসর্গগুলো উপশমে কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে সেগুলো হলো:

১. স্নায়ুকোষ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা

পিডি রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য মধ্য মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে ডোপামিন প্রস্তুত করতে সক্ষম ভ্রূণের স্নায়ুকোষ রোগীর মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করা হয়। তখন প্রতিস্থাপিত কোষ থেকে ডোপামিন উৎপন্ন হতে থাকে। এই চিকিৎসার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। প্রত্যেক প্রতিস্থাপনের জন্য ৪-১০টি ভ্রুণ প্রয়োজন, যা দুষ্প্রাপ্য ও নৈতিকতা বিরোধী। তাছাড়া এ-চিকিৎসার সাফল্যের হারও প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের মতো, যা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক নয়।

২. জিন থেরাপি

জিন থেরাপি নতুন একটি পদ্ধতি, যেক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট জিনকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে রোগ নিরাময় করা যায়। পিডি-র জন্য জিন থেরাপীর মাধ্যমে স্নায়ুকোষের মৃত্যু প্রতিরোধ করে নতুন কোষ তৈরি করা যেতে পারে।

৩. স্টেম সেল থেরাপি

স্টেম সেল হলো বিশেষ এক ধরনের কোষ যা শরীরের বিভিন্ন ধরনের কোষ, যেমন ত্বক, রক্ত, স্নায়ুকোষ ও হাড়ের কোষের পুনরুদ্ধার এবং বৃদ্ধি করতে পারে। স্টেম সেল যেসব কোষকে পুনরুদ্ধার করে তা অনেক বেশি স্থায়ী ও শরীরের ক্রিয়াকলাপে অনেক বেশি কার্যকর। এখন এই কোষ থেকে ডোপামিন প্রস্তুতকারী স্নায়ুকোষ তৈরির বিষয়ে গবেষণা চলছে, যা পিডি রোগীর মস্তিষ্কে কোষ স্থানান্তরের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করবে। এই গবেষণা সফল হলে এই রোগের প্রকৃত এবং স্থায়ী চিকিৎসা সম্ভব হবে।

উপসংহার

পারকিনসন্স ডিজিজ একটি অপ্রতিরোধ্য ও যন্ত্রণাদায়ক রোগ হিসেবে পরিচিত। আগামী বছরগুলোতে রোগটি আরো ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে। এখনই এর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি না করতে পারলে চরমভাবে মূল্য দিতে হতে পারে। এর জন্য চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং নিউরো গবেষক সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এছাড়াও, সম্পূর্ণভাবে পিডি নিরাময়ের জন্য গবেষণা প্রয়োজন।

লেখক
সরদার আব্দুল হাসিব, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড