বজ্রপাত কি?বজ্রপাত কেন হয়?

বজ্রপাত কি?বজ্রপাত কেন হয়?

“গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।” রবি ঠাকুরের এই কবিতার সাথে ছোটবেলায় সবার পরিচয় হয়েছে। বর্ষার সময় বৃষ্টি দেখতে সবার ভালো লাগতো কিন্তু গুড়ুমগুড়ুম শব্দে বজ্রপাত হলেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়েযেত দৌড়ে ঘরে ঢুকে যেতাম। বাবার সঙ্গে বসে থাকলে এই ভীতিকর শব্দ শোনা মাত্র বাবাকে সপাটে জরিয়ে ধরতাম।

বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতাম বিদ্যুৎ চমকায় কেন? তারা হেসে বলতো ঈশ্বর আমাদের ফটো তুলছে। মসজিদের মৌলানা বলতো মিকরাইল ফেরেস্তা শয়তান মারার জন্য বিজলি ছুড়ে দেয়। সঠিক ব্যাখ্যা দেয়ার মত অজপাড়াগায়ে তেমন কেউ ছিলনা। আজ আমার সাথে সাথে আপনারাও জানুন বজ্রপাত কি? বজ্রপাত কেন হয়?

আপনি আরো পড়তে পারেন….. বজ্রপাতে আহত রোগীকে বাঁচানোর উপয়

বজ্রপাত কি?

স্বাভাবিক নিয়মে বায়ুমন্ডলে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয় এই বিদ্যুৎ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ হিসেবে জমা থাকে। বিপরীত চার্জ বিশিষ্ট দুটো মেঘ কাছাকাছি এলেই পারস্পরিক আকর্ষণে চার্জ বিনিময় হয় একারনে বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘের নিচের অংশ ঋণাত্মক চার্জ বহন করে।
এদিকে ভূপৃষ্ঠে থাকে ধনাত্মক চার্জ। দুই চার্জ মিলিত হয়ে তৈরি করে একটি ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যু প্রবাহ রেখা, যা প্রচন্ড বেগে উপরের দিকে উঠে যায়। এসময় মেঘের ঋণাত্মক চার্জ তড়িৎ ক্ষরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে চলে আসে। একে বলে বজ্রপাত।

বজ্রপাত কি? বজ্রপাত কেন হয়?

বজ্রপাত কেন হয়?

বজ্রপাত কেন হয় তার কারণ কয়েকটি ধারাবাহিক ধাপের মাধ্যমে সহজ করে বর্ণনা করি….

মেঘে চার্জ সৃষ্টি হওয়া

সূর্যের তাপে পানি বাষ্প হয়ে যখন ক্রমশ আসমানের দিকে উঠতে থাকে তখন এই বাষ্প কণার সাথে মেঘের নিম্ন প্রান্তে ঘনীভূত তুষার কণার সংঘর্ষ হয়। যার ফলে ঊর্ধগামী কতক বাষ্প কণা ইলেকট্রন হারায় এবং পজিটিভ চার্জ ধারণ করে মেঘের উপরের তলে অবস্থান নেয়। মুক্তিপ্রাপ্ত ইলেকট্রন গুলো মেঘের নিম্নতলে জমা হয়।

বজ্রপাতের মেকানিজম,মেঘে কিভাবে চার্জ সৃষ্টি হয়? মেঘে বিদ্যুৎ তৈরি হয় কেন?

বজ্রপাতের মেকানিজম

মেঘে চার্জ সৃষ্টি হওয়ার কারণে মেঘগুলো একটি শক্তিশালী ধারক বা ক্যাপাসিটর হিসেবে কাজ করে।
মেঘের ঊর্ধ ও নিম্ন স্তরে ভিন্ন চার্জ জমার কারণে সেখানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়।
অনবরত এই ঘটনা চলতে থাকলে একসময় মেঘে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এতটা শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরী করে যে মেঘের নিম্ন প্রান্তের ইলেকট্রন বা নেগেটিভ চার্জের বিকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে থাকা ইলেকট্রন গুলো মাটির আরো গভীরে চলে যায়। এরফলে পৃথিবীর ঐ স্থানের মাটি শক্তিশালী পজিটিভ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এবার বুঝলেন তো উপরে নেগেটিভ বা মাইনাস চার্জ রেডি আর নিচে পজেটিভ বা প্লাস চার্জ ডাকছে মিলিত হওয়ার জন্য। এখন বজ্রপাতের ঘটতে যা প্রয়োজন তা হল বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সামান্য একটু বাহক বা কন্ডাক্টর।

মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুতক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দেয়।আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে বিভক্ত হয়ে যায়। এই আয়োনিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত।
বাতাস আয়োনিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরী করে দেয়।
হুম এবার মেঘের নেগেটিভ চার্জ এই রাস্তা দিয়ে পৃথিবীতে অবস্থিত তার প্রিয়তমা পজেটিভ চার্জের কাছে চলে আসে এবং গুড়ুম গুড়ুম শব্দে বজ্রপাত ঘটায়।

বজ্রপাত কিভাবে হয়? কখন বজ্রপাত হয়? বজ্রপাত কেন হয়?

বজ্রপাতের শক্তি কত?

ভূমি থেকে ৩ মাইল উপরের বজ্রপাত গড়ে এক বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন করে। একটি ১০০ ওয়াট বাল্ব ১ সেকেন্ড জ্বালাতে শক্তি খরচ হয় ১০০ জুল। সে হিসেবে, ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি দিয়ে ওই বাল্বকে ১১৬০ দিন বা প্রায় ৩৯ মাস অবিরাম জ্বালানো যাবে।
বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপক একক “কিলোওয়াট-আওয়ার” হিসেবে এ শক্তি ২৭,৮৪০ কিলোওয়াট-আওয়ার। বাংলাদেশে একটি পরিবার গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ১০০- ১৫০ ইউনিট (কিলোওয়াট-আওয়ার) বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে।
তার মানে একটি বজ্রপাতের বিদ্যুৎ শক্তি জমা করতে পারলে একটি পরিবার ১৮৫ মাস বা, প্রায় ১৫ বছর বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে।

শব্দ হয় কেন বজ্রপাতে?

বজ্রপাতের সময় করনীয়

মেঘের নেগেটিভ চার্য যখন বাতাসের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় তখন বাতাসের তাপমাত্রা সূর্যের তাপমাত্রার চাইতে বেশি প্রায় ২৭০০০ ডিগ্রি সেঃ এ উন্নীত হয়,ওফ কি গরম রে বাবা!!! বাতাসের চাপ পূর্বাপেক্ষা ১০ থেকে ১০০ গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাপমাত্রা ও চাপের এত ব্যাপক পরিবর্তন চারপাশের বায়ু মণ্ডলকে প্রচণ্ড গতিতে প্রায় বিষ্ফোরণের মত সম্প্রসারিত করে। এ সময় যে শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন হয় সেটাই আমরা শুনতে পাই গুড়ুম গুড়ুম…… কানে তুলা দেন…..গুড়ুম….

বজ্রপাতে শব্দ পরে শোনা যায় কেন?

বাজপরার স্থায়ীত্বকাল এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ।শব্দের গতি আলোর গতির থেকে কম হওয়ায় বাজপরার পরই শব্দ শোনা যায়। এই শব্দের ফ্রিকুয়েন্সি ১০০ হার্জ আর কম্পাংক ১২০ ডেসিবেল।

বজ্রপাতের সময় সবকিছু কেঁপে উঠে কেন?

বজ্রপাত কি?বজ্রপাত কেন হয়?

বাজপরার সময় প্রচন্ড শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ।বজ্রপাত ভূমিকম্পের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। মেঘের ইলেকট্রন যখন বাতাসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয় তখন বাতাসে বেশ বাধার সম্মুখীন হয় কারণ বাতাস বিদ্যুত সুপরিবাহী নয়।
এই বাধার কারণে বাতাস গরম হয়ে উঠে এবং পারমানবিক বোমার মত বিস্ফোরণ ঘটায়। এই বিস্ফোরণের শকওয়েভ বা ধাক্কা পৃথিবীতে এসে লাগে এর ফলে প্রচন্ড শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ।

ইদানিং বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ কি?

ইদানিং বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ কি

বজ্র পাত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্রামে বড় গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়াকে দায়ী করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
বজ্র নিরোধক এর জন্য শহরাঞ্চলে ঘরবাড়ি বেশি হওয়া সত্ত্বেও বজ্র পাতে মৃত্যু তেমন হয়না। কিন্তু গ্রামে এই নিরোধক হিসেবে কাজ করতো যে বড় বড় গাছ বিশেষ করে তালগাছ তার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে গ্রামাঞ্চলে বজ্রাঘাতে প্রাণহানি বেশি ঘটতে দেখা যায়।

What Is Lightning in bangla

What Is Lightning? What causes lightning and thunder bangla. bojjropat ki? bojropat keno hoy?

Please click on Just one Add to Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।