বিমানে প্যারাসুট থাকে না কেন?

বিমানে প্যারাসুট থাকে না কেন?

শুধু জাহাজ নয় ছোট্ট স্পিড বোটে উঠলেও আমরা জীবন বাঁচানোর উপকরণ লাইফ জ্যাকেট দেখতে পাই। নদী বা সমুদ্রের জলের ঢেউ সাঁতার জানা মানুষকেও কাবু করে ফেলে আর সাঁতার না জানা লোকের কথা নাই বললাম।পানিতে জলযান দুর্ঘটনায় পরলে জলের আয়তন ও গভিরতা কম থাকলে সাঁতার জানা মানুষ সাঁতরে জীবন বাঁচাতে পারে আর সাঁতার না জানা মানুষ লাইফ জ্যাকেট পরে জীবন বাঁচাতে পারে।

কিন্তু আকাশ পথে দুর্ঘটনা ঘটলে বাঁচার একমাত্র উপায় প্যারাসুট। আকাশ পথে জীবন বাঁচানোর এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বিমানের যাত্রীদের কেন সরবরাহ করা হয় না? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের মনে অনেক উঁকি দেয় কিন্তু উত্তর খুঁজে পাইনা। আজ আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন ধৈর্য ধরে পড়তে শুরু করুন সব উত্তর পেয়ে যাবেন। তাহলে শুরু করা যাক বিমানে প্যারাসুট থাকে না কেন।

বিমানে প্যারাসুট থাকে না কেন?
বিমানে প্যারাসুট থাকে না কেন?

আপনি আরো পড়তে পারেন…… প্যারাসুট কী? প্যারাসুট এর ইতিহাস,গঠন,কাজ# …….. মহাশূন্যে নামাজের সময়,কিবলা কিভাবে নির্ণয় করবেন?

যাত্রীবাহী বিমানে প্যারাসুট থাকে না কেন?

অনেক যুক্তিসংগত কারণ আছে বিমানে প্যারাসুট না থাকার। কারণগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা যাক।

যাত্রীরা প্যারাসুটের ব্যবহার জানে না

ভালোভাবে প্যারাসুট ব্যবহার করা শিখতে যাত্রীদের প্রত্যককে একজন ইন্সট্রাকটর এর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কমপক্ষে ৫ ঘন্টা করে ৩দিন প্রশিক্ষণ নিলে মোটামুটি প্যারাসুট চালনা শিখতে পারবেন। সবার জন্যে প্যারাসুট চালনা শেখার মত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই আবার সবার পক্ষে টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব নয়।

তাই বিমানে প্যারাসুট থাকলেও প্রয়োজনের সময় যাত্রীরা এটা ব্যবহার করতে পারবে না প্যারাসুট চালানো না শেখার কারণে। প্রতিটি যাত্রীকে প্যারাসুট চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া যে কোনো বিমান কোম্পানীর পক্ষে সম্ভব নয়।

প্যারাসুটের ওজন

প্রতিটা প্যারাসুট ওজনে কমপক্ষে ২২-৩০ কেজি। ধরুন একটা বিমানে যাত্রীর আসন সংখ্যা ১০০। প্রত্যেকের ওজন গড়ে ৬০ কেজি তাদের মালের ওজন গড়ে ২৫ কেজি। এই পরিমাণ ওজন নিয়ে বিমান খুব সহজে উড়তে পারবে এভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এখন সবার জন্য একটা করে প্যারাসুট নিলে মাথাপিছু ওজন গড়ে ২৫ কেজি বৃদ্ধি পাবে।

এই অতিরিক্ত ওজন বহণ করার জন্য বিমানের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে এবং এই বিশাল আকৃতির বিমানকে উড়ানো বেশ মুশকিল হবে। বেশি ওজন বহন করার জন্য বড় আকৃতির বিমানকে উড়াতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হবে এতে যাত্রিদের ভাড়া ৫০% বৃদ্ধি পাবে। একারণে যাত্রীবাহী বিমানে যাত্রিদের জন্য প্যারাসুট রাখা হয় না।

প্যারাসুটের উচ্চ মূল্য

একটি প্যারাসুটের দাম সর্বনিম্ন ৪০০০০ টাকা হলেও ১০০ যাত্রীর জন্য প্যারাসুটের ব্যবস্থা করতে বিমান কোম্পানির খরচ হবে প্রায় ১০০×৪০০০০ টাকা। এই বিশাল অঙ্কের টাকা বিমান কোম্পানি যাত্রীর ভাড়ার সাথে এড করবে ফলে ভাড়ার পরিমাণ দুগুণ হবে। এত ভাড়া দিয়ে বিমান ভ্রমন করা সবার পক্ষে সম্ভব হবে না।

প্যারাসুট না খোলার আশংকা

অধিকাংশ যাত্রীবাহী বিমান প্রায় ৩৫০০০ ফুট উচু দিয়ে উড়ে চলে।এই উচ্চতা প্যারাসুট দিয়ে স্কাইড্রাইভ করার উচ্চতার থেকে অনেক বেশি। এত উচ্চতায় বায়ুর চাপ অনেক কম থাকে। কম বায়ু চাপের কারণে বিমান থেকে লাফ দেয়ার পর প্যারাসুট খুলবে না। এটি না খুললে তো সব আয়োজন বৃথা।

প্রতিকূল পরিবেশ

উচ্চতায় অজ্ঞান হওয়া
উচ্চতায় অজ্ঞান হওয়া

৩৫০০০ ফুট উচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় আপনি যদি প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেন তাহলে প্যারাসুটের সুবিধা পেলেও কম বায়ুচাপ ও স্বল্প অক্সিজেনের কারণে আপনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবেন।এই উচ্চতায় আপনি যদি ফুসফুসে বাতাস ভরে রাখার জন্য দম বন্ধ করে থাকেন তাহলে আপনার ফুসফুস ফেটে যাবে।

আবার কম অক্সিজেন ঘনত্বের কারণে আপনি এত উচ্চতায় জ্ঞান হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবেন। এসব কারণে বিমানে প্যারাসুট থাকলেও তা ব্যবহার করার সুযোগ নেই। তাই বিমানে প্যারাসুট থাকে না।

অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়া

উচ্চতার সসাথে তাপমাত্রার হ্রাস
উচ্চতার সাথে তাপমাত্রার হ্রাস

যাত্রীবাহি বিমান মাটি থেকে সাধারণত ৩০০০-৪৫০০ ফিট উপর দিয়ে চলাচল করে। এই সময় যদি কেউ প্যারাসুট দিনলচয়ে মাটিতে নামবার চেষ্টা করে তাহলে সে ঠান্ডায় জমে যাবে কারণ মাটি থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই ঠান্ডা বাড়তে থেকে প্রায় -৪০থেকে -৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়ে থাকে।

সময় স্বল্পতা

ধরুন মাঝ আকাশে ২০০ যাত্রী নিয়ে বিমান অকেজো হয়ে গেলো এখন সবাইকে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পরতে হবে। ২০০ যাত্রীর লাফিয়ে পরার জন্য একটি বা দুটি লাইনে দাড়াতে হবে এরপর এক এক করো লাফিয়ে পরতে হবে। এই লাফিয়ে পরার সময় খুব সাবধানে একের পর একজন করে ৩০সেকেন্ড পরপর লাফ দিতে হবে। মানে ১ মিনিটে দুজন করে লাফ দিতে হবে। মিনিটে যদি দু’জন করেও লাফ দেন, তবে ২০০ জন যাত্রীর একটি বিমান থেকে সবাইকে লাফ দিতে হলে অন্তত ২ ঘন্টা সময় লাগবে।

বিমান দুর্ঘটনা
বিমান দুর্ঘটনা

দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার পর একটি বিমান ধ্বংস হতে সর্বোচ্চ ৩-১০ মিনিট সময় লাগে। এই অল্প সময়ের মধ্যে এত যাত্রীর প্যারাসুট ব্যবহার করে সফলভাবে মাটিতে অবতরণ করা সম্ভব নয়। আবার ২০০ জন যাত্রী যখন একসাথে লাফ দিবে তখন প্যারাশুট এর দড়ি পরস্পরের সাথে জড়িয়ে অথবা পরস্পরের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।এসব কারণে বিমানে প্যারাসুট থাকে না।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যত ধরণের বিমান দুর্ঘটনা হয় তার ৯৯% ই ৭০০-১০০০ ফুট উপরে যখন বিমান উপর থেকে নিচে নামে বা নিচ থেকে আকাশে উঠে। এই দুর্ঘটনা ১-২ মিনিটের কম সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়। এত কম উচ্চতা আর কম সময়ের মধ্যে প্যারাসুট খোলা সম্ভব নয়।

বিমানের প্রচণ্ড গতি

উচ্চতায় বিমান উড়ে যাওয়া
উচ্চতায় বিমান উড়ে যাওয়া

অধিকাংশ যাত্রীবাহী বিমান ঘন্টায় ৫০০ মাইল বেগে উড়ে চলে। এই গতিতে ছোটার সময় আপনি বিমান থেকে লাফ দিলে প্রায় ১৫০ মাইল বেগে পেছন দিকে ছিটকে যাবেন এই গতিতে আকাশে চলতে থাকলে তীব্র বায়ুর চাপ আপনার মৃত্যু ঘটাবে। এই বায়ুর চাপ থেকে বাঁচার জন্য প্যারা জাম্পার রা এক বিশেষ ধরণের পোশাক পরেন।

দুর্ঘটনায় কম মৃত্যুহার

দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান খুবই নগণ্য বিভিন্ন গবেষণার তথ্য মতে ১৯৮৩-২০১৯ সালের মধ্যে যত বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে তার ৯৬% ক্ষেত্রে সব যাত্রী বেঁচে ছিলেন। কোনও ব্যক্তি যদি প্রতিদিন বিমানে ভ্রমণ করেন তবে তার দুর্ঘটনার শিকার হতে গড়ে 55,000 বছর ধরে ভ্রমণ করতে হবে। আকাশপথে বিমানে যাতায়াত বর্তমানে বেশ সুরক্ষিত। একারণে বিমানে প্যারাসুট থাকে না।

বিমান দুর্ঘটনা সাল যাত্রী বেঁচে ছিলেন
Total ১৯৮৩-২০১৯ ৯৬%
সারমর্ম

যেহেতু বিমান দুর্ঘটনার হার অনেক কম এবং দুর্ঘটনায় পতিত হলেও প্যারাসুট ব্যবহার করার খুব একটা সুযোগ নেই তাই বিমানে প্যারাসুট থাকেনা।

বিমানে লাইফ জ্যাকেট থাকে কেন?

বিমান তো পানিতে চলে না, তারপরও বিমানে লাইফ জ্যাকেট থাকে কেন জাহাজের মত এই প্রশ্ন সবার মনেই একটা বিস্ময় সৃষ্টি করে। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর খোঁজা যাক। কিছু যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব।

বিমান আকাশে উড়ার সময় মাঝপথে দুর্ঘটনার শিকার হলে জরুরি অবতরণের জন্য মাটিতে সফলভাবে ল্যান্ডিং করতে বিমানবন্দর বা রানওয়ে দরকার। কিন্তু সবসময় রানওয়ে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না তখন পাইলট বিমান কে পানিতে সফলভাবে অবতরণ করাতে পারেন এবং অচেনা স্থলভাগে ল্যান্ডিং করার চাইতে পানিতে ল্যান্ডিং করাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

বিমানে লাইফ জ্যাকেট
বিমানে লাইফ জ্যাকেট

পানিতে অবতরণ করা একটি নিরাপদ ও পরীক্ষিত উপায়। পানিতে অবতরণ করার পর বিমান জাহাজের মত ভেসে থাকে এবং যাত্রীরা খুব সহজে বিমান থেকে বের হয়ে জীবন বাঁচাতে পারেন। পানির গভিরতা বা স্রোত বেশি হলে যাতে সাহায্য পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানিতে ভেসে থাকতে পারেন তার জন্য লাইফ জ্যাকেট দরকার। তাই বিমানে লাইফ জ্যাকেট থাকে।

প্যারাসুটের চেয়ে লাইফ জ্যাকেট ওজনে হালকা হওয়ায় অনেক বেশি লাইফ জ্যাকেট বহন করা সম্ভব। আবার বিমানে অক্সিজেন মাস্ক যাত্রীদের দেয়া হয় যাতে প্রায় যাত্রীপ্রতি সর্বাধিক ১৫ মিনিটের মতো অক্সিজেন থাকে। জলে ভেসে থাকার জন্য এই মাস্ক বেশ সহায়ক হয়।

বিমানে যাত্রীদের জন্য প্যারাসুট থাকে না কেন?

বিমান অনেক উচু দিয়ে চলাচল করে এই অবস্থায় প্যারাসুট থাকলেও ব্যবহার করা অসম্ভব তাই যাত্রীবাহী বিমানে প্যারাসুট থাকে না।

Why Commercial Airlines Don’t Have Parachutes for Passengers in Bangla

why Passengers plane have no parachute? why plane has life jacket in Bangla? Biman e parasute thake na keno?Biman e life jaket thake keno?

Info source: cntraveler,com

Tag: বিমানে প্যারাসুট থাকে না …. বিমানে প্যারাসুট থাকে না … বিমানে প্যারাসুট থাকে না … বিমানে প্যারাসুট থাকে না … বিমানে প্যারাসুট থাকে না … বিমানে প্যারাসুট থাকে না ….. প্লেন এ প্যারাসুট থাকে না কেন? উড়োজাহাজে প্যারাসুট থাকে না কেন? প্যাসেঞ্জার প্লেন এ যাত্রীদের জন্য প্যারাসুট থাকে না কেন? কমার্শিয়াল প্লেন এ যাত্রীদের জন্য প্যারাসুট থাকে না কেন?

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।