মানব ক্লোনিং কী? কিভাবে মানুষের ক্লোন করা হয়?

সূচীপত্র
  1. মানব ক্লোনিং কী? কিভাবে মানুষের ক্লোন করা হয়?
  2. মানব ক্লোনিং এর ইতিহাস
  3. মানব ক্লোনিংয়ের প্রকারভেদ
  4. কিভাবে মানুষের ক্লোন করা হয়?

মানব ক্লোনিং কী? কিভাবে মানুষের ক্লোন করা হয়?

ধরুন আপনি মার্কেটে গিয়েছেন কেনাকাটা করতে।আপনার পাশে একজন লোক সবসময় ঘুরছে, সবাই আপনাদের দুজন কে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে কেউ আবার নিচু গলায় ফিসফিস করছে। আপনি ভেবে পাচ্ছেন না বিষয় টা কি? কি এমন করেছেন যে সবার মনোযোগের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছেন আপনি! এবার ওয়াশরুমে গেলেন চোখে পানি দেয়ার জন্যে, মুখে পানি দেয়ার পর আয়নায় দেখলেন আপনার পাশে হুবহু একই রকম দেখতে একজন জলজ্যান্ত মানুষ দাড়িয়ে আছে। এবার তো হুশ হারানোর মত অবস্থা! হয়তো মনে করছেন আপনি আর জীবিত নেই পাশের লোকটি আপনার আত্মা।

মানুষ মারা না গেলে তো আত্মা দেখার কথা নয় তার মানে আপনি মৃত। যাইহোক একটু খোঁজ করলে বুঝতে পারবেন আপনার মত দেখতে মানুষটি আসলে কোন ভূত নয় আপনার ফটোকপি মানে আপনার ক্লোন। এবার আপনার চিন্তা কিভাবে ক্লোন করা হলো আপনার, কিভাবে ক্লোন মানুষ সৃষ্টি করা হয়? আজ আলোচনা করা যাক মানব ক্লোনিং সম্পর্কে।

মানব ক্লোনিং কী? কিভাবে মানুষের ক্লোন করা হয়?
মানব ক্লোনিং

আপনি আরো পড়তে পারেন….. তিন স্ত্রী পুরুষ মিলে এক সন্তান জন্ম দেয়!!! …..সারোগেসি কি? …. টেস্টটিউব বেবি কিভাবে হয়? …. ক্লোন প্রাণী কিভাবে সৃষ্টি করা হয়?

মানব ক্লোনিং কী?

কোন মানুষের দেহ কোষ থেকে নিউক্লিয়াস সংগ্রহ করে সেটা অনিষিক্ত ডিম্বাণুর ভেতর প্রতিস্থাপন করার পর স্ত্রীদেহের জরায়ুতে স্থাপন করলে যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তাকে মানব ক্লোন বলে। মানব ক্লোন করার প্রক্রিয়াকে মানব ক্লোনিং বা হিউম্যান ক্লোনিং বলে।

তথ্য সূত্র: উইকিপেডিয়া

ক্লোন শিশু কী?

মানব ক্লোনিংয়ের ফলে সৃষ্ট সন্তান বলে ক্লোন শিশু।

তথ্য সূত্র: মেরিয়াম ওয়েবস্টার

ক্লোন মানুষ বা ক্লোন মানব কী?

ক্লোনিংয়ের ফলে সৃষ্ট মানব প্রজাতিকে ক্লোন মানুষ বা ক্লোন মানব বা ক্লোন হিউম্যান বলে।

মানব ক্লোনিং এর ইতিহাস

১৮৮৫ সালে বিজ্ঞানী হ্যান্স এডওয়ার্ড ড্রিশ এর একটি পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ক্লোনিং সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পায়।এর অনেক বছর পর ১৯৩৮ সালে জার্মান বিজ্ঞানী হ্যান্স স্পেম্যান এর গবেষণা থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণির ক্লোন করার একটি উপায় খুঁজে পায়।তার গবেষণার উপর ভিত্তি করে প্রথমে খরগোশের ক্লোন করার চেষ্টা করা হয়।

1969. J. B. S. Haldane মানব ক্লোনিং সম্পর্কে ধারণা দেন।১৯৭১ সালে নোবেল পুরষ্কার জয়ী বিজ্ঞানী, ডিএনএ গঠন আবিষ্কারক James D. Watson ক্লোনিংয়ের সম্ভাবনা ও বিপদ সম্পর্কে মাসিক পত্রিকা ‘Atlantic Monthly’ তে “Moving Toward the Clonal Man” নামে একটি লেখা প্রকাশ করেন। তার লেখা বিজ্ঞান জগতে বেশ আলোরণ সৃষ্টি করে।

এরপর ১৯৯৭ সালে ইয়ান উইলমুট এবং কেইথ ক্যাম্পবেল প্রথম সফলভাবে একটি স্তন্যপায়ী প্রাণির ক্লোন সৃষ্টি করেন। প্রথম ক্লোন প্রাণিটি ছিলো ‘ডলি’ নামের একটি ভেড়া। এই সফল গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা উঠে পরে লাগেন মানুষের ক্লোন করার জন্য।

১৯৯৮ সালে সোমাটিক সেল নিউক্লিয়াস ট্রান্সফার প্রক্রিয়ায় প্রথম হাইব্রিড মানব ভ্রূণ সৃষ্টি করা হয়। একজন মানুষের পায়ের কোষ থেকে নিউক্লিয়াস সংগ্রহ করে তা একটি গরু নিউক্লিয়াস বিহীন ডিম্বাণুতে স্থাপন করে একটি মানব ভ্রূণ তৈরি করা হয়। ১২ দিন পর ভ্রূণ টি নষ্ট করা হয়।

২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকালে ক্লোনিড(Clonaid) বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান ১ম ক্লোন মানব শিশু সৃষ্টির ঘোষণা দেয়। তারা “ইভ” নামক প্রথম ক্লোন মানব শিশু পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে এমন প্রকাশ করে। এই খবর প্রকাশের পর শুধু বিজ্ঞানী মহলে নয় সারা পৃথিবীর মানুষ আশ্চর্যান্বিত হয়ে যায়। শুরু হয় তুমুল আলোচনা সমালোচনা।

ক্লোনিড প্রতিষ্ঠান
ক্লোনিড প্রতিষ্ঠান

Clonoid বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত “বাহামা” দেশে ১৯৯৭ সালে তৈরি করা হয়। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা Markus Pearson . প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা Brigitte Boisselier, Thomas Kaenzig. তারা গোপন গবেষণা পরিচালনার জন্য এমন স্থান বেছে নেয়।

মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেছিল বিজ্ঞানীরা এই ক্লোন শিশুর উপর বিভিন্ন অমানবিক পরীক্ষা করা হবে। মানে ল্যাবরেটরিতে ইদুরের উপর যেরকম পরীক্ষা চালানো হয় আরকি!কোর্টের মাধ্যমে Clonoid এর বিরুদ্ধে সমনজারি করা হয়। উকিল নোটিশে “ইভ” সৃষ্টির প্রমাণ হাজির করতে বলা হয়।
কিন্তু ইভের মা তার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। শেষপর্যন্ত Clonoid কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় তাদের আবিষ্কার অস্বীকৃত হয়। বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা তাদের এই দাবি অযৌক্তিক ঘোষণা করেন।

2004 এবং 2005 সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত ‘Seoul National University’ এর একজন প্রফেসর Hwang Woo-suk বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকায় দুটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। তিনি এই গবেষণা পত্রে দাবি করেন যে, তার অধিনে একদল গবেষক মানুষের ক্লোন ভ্রুণ সৃষ্টি করেছে এবং সেই ভ্রূণ থেকে স্টেম সেল আলাদা করা হয়েছে। সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ভ্রূণ সৃষ্টি করেছিলেন।২০০৬ সালে উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হলে Hwang Woo-suk এর দাবি নাকচ হয়। তবে তিনি একটি কুকুরের ক্লোন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ক্লোন কুকুর
ক্লোন কুকুর

২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে Stemagen বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের গবেষক Dr. Andrew French এবং Samuel Wood ঘোষণা করেন তারা সফলতার সাথে ৫টি পূর্ণ ক্লোন মানব ভ্রূণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। Samuel Wood ও তার সহকর্মীর দেহের চামড়ার কোষ থেকে এই ক্লোন মানব ভ্রূণ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু তারা ভ্রূণগুলিকে বৃদ্ধি না করে নষ্ট করে ফেলে।

2011 সালে New York Stem Cell Foundation এর বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন যে, তারা ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে ভ্রূণীয় স্টেম সেল তৈরি করেছে। কিন্তু তাদের স্টেম সেল ট্রিপলয়েড নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট্য ছিলো। এটি ব্যবহারের অযোগ্য।

২০১৩ সালে আমেরিকান বিজ্ঞনী Shoukhrat Mitalipov এর অধিনে কর্মরত একদল গবেষক মানব ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে পূর্ণ গঠন বিশিষ্ট স্টেম সেল উৎপাদনের ঘোষণা দেন। তারা একটি দেহ কোষের নিউক্লিয়াস একই মহিলার ডিম্বাশয় থেকে সংগ্রহ করা ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপন করেন। এতে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ এর বিশুদ্ধতা রক্ষা পায়। তারা সোমাটিক সেল নিউক্লিয়াস ট্রান্সফার কৌশল প্রয়োগ করে ক্লোনিং করেন।

মানব স্টেম সেল
মানব স্টেম সেল

২০১৭ সালে Institute of Neuroscience of the Chinese Academy of Sciences in Shanghai এর বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম প্রাইমেট স্তন্যপায়ী(উন্নত মস্তিষ্কের বুদ্ধিমান স্তন্যপায়ী যেমন-মানুষ, বানর, শিম্পাঞ্জি, গরিলা) প্রাণির সফল ক্লোন করতে সক্ষম হয়। তারা 27 November 2017 তারিখে Zhong Zhong নামের একটি ক্লোন মেয়ে বানর শিশু সৃষ্টি করে।5 December 2017 তারিখে Hua Hua নামের আরেকটি ক্লোন বানরের জন্ম হয়।

ক্লোন বানর Zhong Zhong and Hua Hua
ক্লোন বানর

চীনের বিজ্ঞানীরা যে প্রক্রিয়ায় ১৯৯৬ সালে ‘ডলি’ নামক ক্লোন ভেড়া সৃষ্টি হয়েছিল সেই পদ্ধতিতে ক্লোন বানর সৃষ্টি করেন।২০১৮ সালে এই খবর বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করে চীন।অদূর ভবিষ্যৎে চীন হয়তো প্রথম মানব ক্লোন সৃষ্টিকারী দেশ হবে বলে সবার ধারণা।যতদূর সম্ভব আর ১০ বছরের মধ্যে চীন ক্লোন মানব শিশুর জন্ম দেবে।

সাম্প্রতিক কালে আমেরিকান ডাক্তার পানাইওটিস জাভোস সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন,তিনি ১৪টি মানব ভ্রূণ ক্লোন করেছেন। এর মধ্যে ১১টি ভ্রূণ চারজন নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষাটি আপাত সফল হয়নি।কোন নারী ক্লোন শিশুর মা হতে পারেন নি। তবে তার বিশ্বাস তিনি দু-এক বছরের মধ্যেই বিশ্বের প্রথম ক্লোন শিশু জন্মগ্রহণ করাতে সক্ষম হবেন।

পানাইওটিস জাভোস
পানাইওটিস জাভোস

আমেরিকায় মানব ক্লোন করা বা এসম্পর্কিত গবেষণা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই আমেরিকান নাগরিক জাভোস আমেরিকার বাইরের কোন দেশে সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্র কোন দেশে তার গোপন ও নিষিদ্ধ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যে তিনজন মৃত মানুষের ভ্রূণের ক্লোনও করেছেন।কাডি নামের ১০ বছরের একটি শিশু আমেরিকায় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় তার রক্ত কোষ সংগ্রহ করে জাভোস কে পাঠালে সে এই কোষ থেকে ক্লোন করে।

বিশেষজ্ঞরা জাভোসের এসব দাবি মানতে নারাজ।কারণ ‘জাভোসের কাজের কোন প্রমাণ আপাতত নেই। মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে কোন সাইন্টিফিক জার্নাল তার গবেষণাপত্র প্রকাশ করে নি।

হিউম্যান ক্লোনিংয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সালঘটনা
১৯৯৮হাইব্রিড মানব ভ্রূণ সৃষ্টি করা হয়
২০০২১ম ক্লোন মানব শিশু সৃষ্টির ঘোষণা
২০০৬কুকুরের ক্লোন
২০০৮Stemagen বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের গবেষক ৫টি পূর্ণ ক্লোন মানব ভ্রূণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
2013পূর্ণ গঠন বিশিষ্ট স্টেম সেল উৎপাদনের ঘোষণা
2017চীনের বিজ্ঞানীরা ক্লোন বানর সৃষ্টি করেন

মানব ক্লোনিংয়ের প্রকারভেদ

হিউম্যান ক্লোনিংয়ের প্রকারভেদ

মানব ক্লোনিং সাধারনত দুই প্রকারের-

Therapeutic cloning

স্টেম সেল হলো এমন এক ধরণের কোষ যা ভ্রূণ অবস্থায় প্রাণির যেকোন অঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে। মানে শিশুর হাত,পা,ফুসফুস, কিডনি,হার্ট ইত্যাদি অঙ্গ সৃষ্টি হয় স্টেম সেল থেকে। যদি স্টেম সেল কে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে আবাদ করা যায় তাহলে এটি ল্যাবরেটরিতে এসব অঙ্গ তৈরি করতে পারবে। ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে ভ্রূণ সৃষ্টি করা হয় এরপর এই ভ্রূণ থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করে কৃত্রিম অঙ্গ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এধরণের ক্লোনিং কে থেরাপিউটিক ক্লোনিং বলে।

Reproductive cloning বা জীব ক্লোনিং

এই প্রক্রিয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ ক্লোন মানব শিশু সৃষ্টি করা হয়।যেমন ডলি ভেড়া সৃষ্টি করা হয়েছিল এই প্রক্রিয়ায়।

এছাড়াও আরেকটি মানব ক্লোনিং পদ্ধতি আছে এটা রিপ্লেসমেন্ট ক্লোনিং নামে পরিচিত।

রিপ্লেসমেন্ট ক্লোনিং

এর মাধ্যমে একটি রোগাক্রান্ত বা নষ্ট অঙ্গকে ক্লোনিং প্রকৃয়ায় তৈরী অন্য একটি অঙ্গ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

কিভাবে মানব ক্লোনিং করা হয়?

মানব ক্লোনিং একটি জটিল ও শ্রমসাধ্য কাজ। কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

কিভাবে ক্লোন শিশু তৈরি করা হয়?

কিভাবে মানুষের ক্লোন করা হয়?

হিউম্যান ক্লোনিং
হিউম্যান ক্লোনিং

সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার প্রক্রিয়ায় মানব ক্লোনিং করা হয়।

ক্লোন মানুষ তৈরি করা হয় কিভাবে?

মানুষের ক্লোন করার জন্য প্রধানত ৫ টি ধাপ ফলো করা হয়।

হিউম্যান ক্লোনিংয়ের ধাপ

ধাপ-১: অনিষিক্ত ডিম্বকোষ সংগ্রহ

অনিষিক্ত ডিম্বকোষ সংগ্রহ
অনিষিক্ত ডিম্বকোষ সংগ্রহ

পিরিয়ডের শুরুতে কোন মহিলার দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে FSH হরমোন পুশ করা হয় এতে মহিলার ডিম্বাশয়ে ফলিকল কোষ সৃষ্টি হয়। এই ফলিকল কোষ পরবর্তিতে ডিম্বকোষ সৃষ্টি করে। সূক্ষ্ম মাইক্রোইনজেকশনের মাধ্যমে ডিম্বকোষ সংগ্রহ করা হয়।

ধাপ-২: ডিম্বকোষের নিউক্লিয়াস অপসারণ

ডিম্বকোষের নিউক্লিয়াস অপসারণ
ডিম্বকোষের নিউক্লিয়াস অপসারণ

ডিম্বকোষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে মাইক্রোইনজেকশনের মাধ্যমে খুব সাবধানে এর ভেতর থেকে নিউক্লিয়াস অপসারণ করা হয়। সামান্য ভুল হলেই খেল খতম। ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াস অপসারণ না করলে ট্রিপলয়েড কোষ তৈরি হবে যা ব্যবহারের অযোগ্য। এধরণের ডিম্বাণু থেকে সৃষ্ট শিশু অদ্ভুত আকৃতির ও বিকলাঙ্গ হবে।

ধাপ-৩: দাতার কোষ থেকে নিউক্লিয়াস সংগ্রহ

দাতার কোষ থেকে নিউক্লিয়াস সংগ্রহ
দাতার কোষ থেকে নিউক্লিয়াস সংগ্রহ

যে মানুষের ক্লোন করা হবে তার দেহের যে অঙ্গ সজীব,রোগমুক্ত, দ্রুত বর্ধনশীল সেখান থেকে দেহকোষ সংগ্রহ করা হয়। এই কোষকে একটি কৃত্রিম আবাদ মাধ্যমে রাখা হয় যাতে মরে না যায়। এবার আবাদ মাধ্যমে খাদ্যের সরবরাহ বন্ধ করা হয়। খাদ্যের অভাবে দেহকোষ টি তার জন্মের শুরুর পর্যায়ে চলে যায় মানে স্টেম সেলের ধর্ম লাভ করে।এই ধরণের কোষ থেকে নিউক্লিয়াস সংগ্রহ করা হয়। নিউক্লিয়াস ছাড়া আর কিছুই যাতে না আসে সেটা নিশ্চিত করা হয়।

ধাপ-৪: নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন

নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন
নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন

পূর্বে প্রস্তুত করা নিউক্লিয়াস বিহীন ডিম্বাণু ও এই নিউক্লিয়াস কে একটি পাত্রে রেখে ইলেক্ট্রিক পালস বা শক প্রয়োগ করা হয়। ইলেক্ট্রিক পালস এর প্রভাবে নিউক্লিয়াস ডিম্বাণুর সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে।এবার ডিম্বাণু একটি নিষিক্ত জাইগোট এর ধর্ম লাভ করে। এটি বিভাজন শুরু করে।এই ইলেক্ট্রিক পালস প্রক্রিয়ায় ডিম্বাণুতে নিউক্লিয়াস প্রবেশ করানোর পদ্ধতি রস্নিল পদ্ধতি নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে ক্লোন ভেড়া “ডলি” সৃষ্টি করা হয়েছিলো। অন্য আরেক পদ্ধতিতে, মাইক্রোইনজেকশনের মাধ্যমে ডিম্বাণুতে নিউক্লিয়াস প্রবেশ করানো হয় একে হনুলুলু পদ্ধতি বলে।

ধাপ-৫: জরায়ুতে ভ্রূণ সংযুক্ত করা

জরায়ুতে ভ্রূণ সংযুক্ত করা
জরায়ুতে ভ্রূণ সংযুক্ত করা

নিউক্লিয়াস স্থানান্তর করা ডিম্বানুকে কৃত্রিম পুষ্টি মাধ্যমে রাখলে এটি বিভাজিত হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রূণ সৃষ্টি করে। এই ভ্রূণ কে প্রজননক্ষম স্ত্রীদেহের জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। জরায়ুতে ভ্রুণ স্থানান্তর করলে এটি জরায়ুর প্রাচীরে যুক্ত হয়। ভ্রূণ যুক্ত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে বলে ইমপ্লান্টেশন। সফলভাবে ইমপ্লান্টেশন সম্পন্ন হলে ভ্রূণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে ক্লোন শিশুর জন্ম হয়। যে মহিলার দেহে এই ক্লোন শিশু বেড়ে উঠে তাকে সারোগেট মাদার বলে।
এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অধিকাংশ মানব ক্লোনিং সম্পন্ন করা হয়।

মানব ক্লোনিংয়ের বৈধতা

১২ ই ডিসেম্বর ২০০১ সালে জাতিসংঘ প্রথম মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করে এর বিরুদ্ধে আইন পাশে করে।
২০০৬ সালের ডিসেম্বর এ অস্ট্রেলিয়ায় মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।তবে মানব কল্যাণে ব্যবহৃত থেরাপিউটিক ক্লোনিং কে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯৯৮, ২০০১, ২০০৪, এবং ২০০৭ সালে united states house of representative রা ভোট দিয়ে তাদের দেশে সকল প্রকার ক্লোনিং কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।

মানব ক্লোনিং নিয়ে বিতর্ক

মানব ক্লোনিং বিশ্বের প্রায় সব দেশে বিতর্কিত। মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন ক্লোন মানবের সাথে সাধারণ মানুষের মত আচরণ করা হবে না। তাদের ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুত করা জীবজন্তুর মত আচরণ করা হবে। একারণে বিশ্বের সকল মানবাধিকার কর্মী মানব ক্লোনিংয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্র নেতারা মনে করেন ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে তাই তারা মানব ক্লোনিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সকল ধর্মমতে ক্লোনিং একটি পাপ কাজ। তবে মানুষের চিকিৎসার জন্যে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে স্টেম সেল প্রস্তুত করার প্রচেষ্টা অনেক দেশে বৈধ।

শেষ কথা

ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে স্টেম সেল উৎপাদন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিপ্লব ঘটুক এই আশা আমরা করতেই পারি। কিন্তু ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে আরেকটি বর্বর হালাকু খানের জন্ম হোক সেটা কারো কাম্য নয়।

কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

ক্লোন মানুষের স্মৃতি কি আসল মানুষের মত হয়?

স্মৃতি জমা থাকে মস্তিষ্কের নিউরনে। মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই স্মৃতি স্থানান্তর করা সম্ভব। ক্লোন মানবের মস্তিষ্ক নতুনভাবে তৈরি হয় তাই এদের স্মৃতি নতুন হয়। যার কোষ থেকে ক্লোন করা হয়েছে তার স্মৃতি নতুন ক্লোন মানবের মধ্যে স্থানান্তরিত হবে না।

আইনস্টাইন এর ক্লোন কি তার মতই বুদ্ধিমান হবে?

না, কারণ আইনস্টাইনের মৃত্যুর সাথে তার মস্তিষ্কের স্মৃতি মরে গেছে। তার ক্লোন করা হলে সেই ক্লোন আইনস্টাইন এর মস্তিষ্ক নতুন নিউরন দিয়ে তৈরি হবে। এই নতুন মস্তিষ্কে পুরাতন কোন স্মৃতি থাকবে না। আইনস্টাইনের ক্লোন শুধু দেখতে তার মত হবে কিন্তু বুদ্ধিতে আলাদা হবে।

ক্লোন মানুষের আচরণ কি আসল মানুষের মত হবে?

একজন মানুষ দুই রকমের আচরণের অধিকারী হয়। একটি হলো সহজাত আচরণ অপরটি শিক্ষণ আচরণ। সহজাত আচরণ জীন নিয়ন্ত্রিত। এটি শিখতে হয় না। যেমন – খাদ্যগ্রহণ, ঘুমানো, প্রজনন, পরিবেশের সাথে অভিযোজন ইত্যাদি সহজাত আচরণ। এই সহজাত আচরণ ক্লোন মানব জীনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে।এই আচরণে কোন পরিবর্তন হবে না।
কিন্তু মানুষ বহু দিনের অভিজ্ঞতা থেকে এবং জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষণ আচরণ রপ্ত করে। মানুষ যে পরিবেশে বড় হয় সেই পরিবেশ থেকে আচরণ শেখে। ক্লোন মানব যে মানুষের কোষ থেকে তৈরিকরা হয়েছে তার পরিবেশে বড় না হলে আচরণ আলাদা হবে। মানে ধর্মপ্রচারকদের দেহ কোষ থেকে ক্লোন করা নতুন শিশু আধুনিক পরিবেশে বড় হলে সে ধর্ম প্রচারক হবে না এটা প্রায় ৮০ ভাগ নিশ্চিত।

Human cloning in Bangla

Human cloning ki? Manob cloning ki? History of human cloning in bangla, manob cloning er itihas, How to make a human clone baby in Bangla? manob clone kivave sristi hoy? kivabe clone sishu toiri kora hoy?

Tag:

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।