- শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি! কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার!
শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি! কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার!
জ্বরজনিত খিঁচুনি সাধারণত দেখা যায় অতিমাত্রায় জ্বরে ভুগছে এমন শিশুদের ক্ষেত্রে। যেসব শিশু কানের প্রদাহ, সংক্রমণ, ঠাণ্ডা, সর্দি, ইত্যাদিতে খুব বেশি মাত্রায় ভুগে থাকে, সেইসব শিশুরাই জ্বরজনিত খিঁচুনিতে বেশি আক্রান্ত হয়।
তবে, আরো কিছু মারাত্মক সংক্রমণও এই খিঁচুনির কারণ হতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, ইত্যাদি।
এই ধরনের খিঁচুনির ক্ষেত্রে আসল কারণগুলো শনাক্ত করে যদি চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়, তবে, কোনো রকম স্থায়ী ক্ষতি ছাড়াই শিশুকে সুস্থ করা যায়।
আপনি আরও পড়তে পারেন … কান পাকা রোগ! লক্ষণ ও প্রতিকার!
জ্বরজনিত খিঁচুনির কারণ
শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন যেকোনো অসুখই আসলে এই ধরনের খিঁচুনির জন্য দায়ী। এটি আসলে কোনো অসুখ নয়, অন্য কোনো অসুখের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কতগুলো রোগ আছে যেগুলো খিঁচুনির কারণ হিসেবে চিহ্নিত, যেমন:
- ১. কানের প্রদাহ এবং সংক্রমণ
- ২. সর্দি, কাশি এবং ঠাণ্ডা-লাগা
- ৩. ইনফ্লুয়েঞ্জা
- ৪. ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোনো অসুখ
- ৫. নিউমোনিয়া
- ৬. মেনিনজাইটিস
- ৭. কিডনির সংক্রমণ
জ্বরজনিত খিঁচুনি কাদের হয়?
সাধারণত ছয় বছর বয়সের আগে শতকরা ৩টি শিশু এই ধরনের খিঁচুনিতে ভুগে থাকে। তবে, খিঁচুনি বেশি হতে দেখা যায় ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে। সাধারণত ৬ মাস বয়সের নিচে এবং ৬ বছরের পরে জ্বরজনিত খিঁচুনি কম হতে দেখা যায়।
শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনির প্রকারভেদ
জ্বরজনিত খিঁচুনি ৩ ধরনের হতে পারে:
১. সাধারণ খিঁচুনি
২০ জন আক্রান্ত শিশুর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে এই ধরনের খিঁচুনিই সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। শিশুর শরীর এতে লালচে রঙ ধারণ করতে পারে, শরীর শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং শরীর আঁকাবাঁকা আকার ধারণ করতে পারে।
তবে, এই অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। শিশুরা কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে পারে। জ্বর কমে গেলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে শিশু সুস্থ বোধ করতে শুরু করে। এই ধরনের খিঁচুনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বারবার ফিরে আসে না।
২. অল্প জটিল ধরনের খিঁচুনি
২০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জনের ক্ষেত্রে এমন খিঁচুনি দেখা যায়।এটিও সাধারণ খিঁচুনির মতো। তবে, এতে আরো কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যেমন:
খিচুনির স্থায়িত্ব ১৫ মিনিট কিংবা তার চেয়েও বেশি হতে পারে
২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিকবার ঘটতে পারে সারা শরীরে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
আংশিক খিঁচুনিও হতে পারে, যেমন শুধু এক পা কিংবা এক হাত
৩. জটিল ধরনের খিঁচুনি
২০ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে এমন ঘটে।এক্ষেত্রে খিঁচুনির সময়সীমা বেড়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে।
শিশুর জ্বরজনিত খিচুনির প্রাথমিক চিকিৎসা
এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যা করা যেতে পারে তা হলো:
- কখন শুরু হলো তা খেয়াল করতে হবে।
- মাথার দিকটা নিচু রেখে শিশুকে শুইয়ে দিতে হবে।
- মুখে কোনো খাবার দেওয়া যাবে না।
- খিঁচুনির সময় শিশুকে ঝাঁকানো যাবে না এবং শিশুকে বাঁকা করা যাবে না।
- খিঁচুনির সময় শিশুর মাথায় পানি ঢেলে এবং নরম সুতি-কাপড় ভিজিয়ে গা মুছে দেওয়া উচিত এবং তাকে ঢিলেঢালা কাপড় পরানো উচিত।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর কী কী করণীয়
শিশুকে ভালোমত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে :
একবার খিঁচুনির পর শিশুর অবস্থার উন্নতি না হলে।
একবার খিঁচুনির পর যদি আবারও তা হতে থাকে।
শিশুর যদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনির চিকিৎসা
- খিঁচুনি যদি নিজে থেকেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভালো হয়ে যায়, তবে কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। তা না-হলে শিশুর গায়ের কাপড় আলগা করে দিতে হবে।
- ঘর গরম থাকলে শিশুর গায়ের সমস্ত কাপড় খুলে দেওয়া যেতে পারে।
- ” Paracetamol suppository দিতে হবে।
- ঠাণ্ডা পানীয় পান করাতে হবে – জ্বরের আসল কারণ বের করে মূল রোগের চিকিৎসা করতে হবে।
জ্বরজনিত খিঁচুনি কি বারবার ঘটতে পারে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একবারই ঘটে থাকে। তবে, প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে অন্তত ৩ জনের ক্ষেত্রে জ্বরের সময় আবারো এটি হতে পারে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জ্বরজনিত খিচুনি হয়েছিলো এমন ১০টি শিশুর ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে প্রচণ্ড জ্বরের সময় তাদের আবারো দুই থেকে তিনবার খিচুনি হয়েছিলো। এই খিঁচুনিতে পারিবারিক ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জ্বরজনিত খিচুনিতে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে কি?
সাধারণত এ রোগে কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয় না। রোগ-পরবর্তী কোনো ক্ষতি ছাড়া পুরোপুরি ভালো হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে যে অসুখের কারণে খিচুনি হচ্ছে তার মাধ্যমে ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য, যে কারণে জ্বর হচ্ছে তার চিকিৎসা করা জরুরি।
লেখক
ডাঃ রাবেয়া রহমান, আইসিডিডিআর,বি
Tag: শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি
Please Click On Just One Add To Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।