শিশু পানিতে ডুবে গেলে কি করবেন!পানিতে ডোবার প্রাথমিক চিকিৎসা!
পৃথিবীব্যাপী পানিতে ডুবে বহু লোকের প্রানহানি ঘটে, বিশেষ করে শিশুদের। বাংলাদেশেও পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি, বিশেষ করে ১-৪ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী পানিতে ডুবে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৭,০০০ শিশুর মৃত্যু ঘটে, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৬ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
ডুবে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে অপুষ্টি, নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েও অনেক শিশুর মৃত্যু হয় । প্রায় ৯৮% শিশু দিনের বেলায় পানিতে ডুবে মারা যায় এবং বর্ষাকালে শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে পানিতে ডুবে ৭৭% শিশুর মৃত্যু হয় বন্যা কবলিত এলাকায় ।
আপনি আর পড়তে পারেন …… জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা …… বিষ খাওয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা!কেউ বিষ খেলে কি করবেন?
শিশু পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কারণ
- পানির প্রতি শিশুদের স্বভাবজাত আকর্ষণ।
- মায়ের ব্যস্ততা বা অনুপস্থিতি।
- মায়ের সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব।
- মায়ের অবর্তমানে অন্যদের উদাসীনতা।
- বাড়ীর পাশের পুকুরে বেষ্টনী না-থাকা।
- শিশুদের বেষ্টনীবিহীন পুকুরের আশপাশে খেলাধুলা করা।
- সাঁতার না-জানা।
- অন্যান্য কারণ
- নৌযান ডুবে যাওয়া
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ—সাইক্লোন, বন্যা, ইত্যাদি।
- মানসিক সমস্যা খিঁচুনি বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
শিশু পানিতে ডুবে কীভাবে মারা যায়?
পানিতে ডুবলে বিভিন্ন অঙ্গের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়।যেমন-
ফুসফুসে পানি প্রবেশ
মুখ গহ্বরে পানি প্রবেশের কারণে বাকযন্ত্র এবং শ্বাসনালীতে বায়ু প্রবেশ করতে পারে না বলে মৃত্যু ঘটে—এক্ষেত্রে ফুসফুসে পানি প্রবেশ করে না
তাৎক্ষনিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে
স্নায়ু-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়।
শিশু পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা
- শিশুটিকে নাড়া দিয়ে দেখুন সে কোনোরকম সাড়া দেয় কি না।
- কোনো সাড়া না পেলে আশপাশে সাহায্যের জন্য ডাকুন, তাকে ছেড়ে যাবেন না।
- একা বা অন্যের সাহায্যে দ্রুত শিশুকে পানি থেকে তুলুন।
- দম বন্ধ হয়ে গেলে পানি থেকে ডাঙ্গায় তোলার আগেই নাক ও মুখ পরিষ্কার করে মুখের সাথে নিজের মুখ লাগিয়ে ফুঁ দিতে হবে।
রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দিতে হবে। তারপর পেট ধরে উচু করতে হবে যাতে মাথা বুক নিচের দিকে থাকে। আস্তে আস্তে চাপ দিতে হবে।এতে করে পাকস্থলী শ্বাসনালী ও ফুসফুসের পানি বের হয়ে আসবে।
- ভেজা কাপড় খুলে দিতে হবে। হাত পা ঠান্ডা হলে মেসেজ বা গরম সেঁক দিতে হবে।
- ডুবে যাওয়া শিশুকে পানি থেকে তোলার পর অবিলম্বে তাকে সিপিআর (Cardiopulmonary resuscitation) প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। তবে প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে যার জ্ঞান আছে কেবলমাত্র তারই এ কাজটি করা উচিত।
- সিপিআর দেওয়ার পর রোগী নিজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করলে তাকে অতিসত্ত্বর ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
পানিতে ডোবা শিশুকে কীভাবে সিপিআর দেবেন?
কয়েকটি ধাপে সিপিআর প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়।
সিপিআর ধাপ-১
শিশুটিকে চিত করে শুইয়ে দিন। যদি মনে হয় যে, শিশুটি মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছে তবে তাকে দু’জন মিলে অত্যন্ত সাবধানে নাড়াবেন যাতে তার মাথা ও ঘাড় মচকে না যায়।
সিপিআর ধাপ-২
এবার পাঁজরের উপর এক হাত রাখুন। খেয়াল রাখবেন যেন আপনার হাত পাঁজরের একেবারে নিচের দিকে না থাকে।আপনার অন্য হাতটি শিশুর কপালে দিয়ে তার মাথাটিকে পেছনে টেনে রাখুন।
সিপিআর ধাপ-৩
এবার শিশুর বুকে এমনভাবে চাপ দিন যেন প্রতি চাপে তার বুক ১/৩ ভাগ দেবে যায় এভাবে ৩০ বার চাপ দিন এবং প্রতিবার বুক সম্পূর্ণভাবে উঠে আসতে দিন। না থেমে খুব দ্রুত গুনে গুনে ৩০ বার চাপ দিন
সিপিআর ধাপ-৪
এরপরও শিশু শ্বাস না নিলে এক হাত দিয়ে তার চিবুক উপরের দিকে টেনে ধরুন এবং অন্য হাত দিয়ে কপাল নিচু করুন। শিশুর মুখ ও নাকের কাছে আপনার কান নিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন সে শ্বাস নেয় কি না এবং দেখুন তার বুক উঠা-নামা করে কি না।
সিপিআর ধাপ-৫
শিশু শ্বাস না নিলে আপনার মুখ দিয়ে ভালোভাবে তার মুখ ঢাকুন। তার নাক চেপে ধরুন। চিবুক উপরের দিকে তুলে মাথা নিচু করে রাখুন এই অবস্থায় এক সেকেণ্ড করে দু’বার শ্বাস দিয়ে শিশুর ফুসফুস ভরে বুক উঠাতে চেষ্টা করুন
এভাবে দুই মিনিট সিপিআর (৩০ বার বুকে চাপ দেওয়ার পর দু’বার করে শ্বাস দেওয়া) দিন।
সিপিআর ধাপ-৬
দুই মিনিট সিপিআর করার পর শিশু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে । কিন্তু দুই মিনিট সিপিআর দেওয়ার পরও শিশু শ্বাস না নিলে, না কাশলে বা নড়াচড়া না করলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
শিশু পানিতে ডুবে মরা প্রতিরোধ
- কারো খিঁচুনি বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে সে শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক, কোনো অবস্থাতেই তাকে একা পানিতে নামতে দেওয়া যাবে না।
- মা, বাবা, ভাই, বোন বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের উচিত শিশুর প্রতি খেয়াল রাখা।
- জনসাধারণকে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
- শিশুকে যত দ্রুত সম্ভব সাঁতার শেখানো।
- পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়াবহতা সম্বকে শিশুদেরকে শিক্ষা দান এবং তাঁদেরকে সচেতন করে তোলা।
- বাড়ির আশপাশে পুকুর, কুয়া বা জলাশয় থাকলে তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা।
- নৌকা, লঞ্চ বা স্টিমারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন থেকে বিরত থাকা।
- সব ধরনের নৌযানের আবহাওয়া-সংক্রান্ত সতর্কতা মেনে চলা।
- রেডিও, টেলিভিশন, কমিউনিটি মিটিং এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভা-সমিতি করে জনসচেতনতা গড়ে তোলা।
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু একটি বড় রকমের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অথচ আমাদের একটু সচেতনতাই পারে এধরনের দুর্ঘটনা রোধ করতে। আসুন আমরা সচেতন হই এবং সকলকে সচেতন করে তুলি ।
লেখক
ডাঃ তফসির আহমেদ চৌধুরী, আইসিডিডিআর,বি
Tag: শিশু পানিতে ডুবে গেলে শিশু পানিতে ডুবে গেলে শিশু পানিতে ডুবে গেলে শিশু পানিতে ডুবে গেলে শিশু পানিতে ডুবে গেলে শিশু পানিতে ডুবে গেলে শিশু পানিতে ডুবে গেলে
Please Click On Just One Add To Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।