একলাম্পসিয়া কী?একলাম্পসিয়ার কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!

একলাম্পসিয়া কী?একলাম্পসিয়ার কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!গর্ভকালীন খিঁচুনী!

গর্ভকালীন সময়ে খিচুনী একটি মারাত্মক সমস্যা।যে সব কারণে গর্ভাবস্থায় খিঁচুনী হতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একলাম্পসিয়া(Eclampsia)গর্ভাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যাতে মৃত্যুহার অনেক বেশী। এখানে একলাম্পসিয়া ও তার পূর্ববর্তী অবস্থা প্রি- একলাম্পসিয়া নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

একলাম্পসিয়া কী?একলাম্পসিয়ার কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা!গর্ভকালীন খিঁচুনী!

আপনি আরও পড়তে পারেন ……. শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনি! কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার! …. উচ্চমাত্রার জ্বর,খিঁচুনি, নাক দিয়ে রক্ত-পরার প্রাথমিক চিকিৎসা

প্রি-একলাম্পসিয়া কী?

প্রি-একলাম্পসিয়া এমন এক অবস্থা যাতে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বের হয়। সাধারনতঃ গর্ভবতী হবার ২০ সপ্তাহ পর এটা শুরু হয় ও বাচ্চা হবার ৬ সপ্তাহ পর অবস্থার উন্নতি হয়।

একলাম্পসিয়া কী?

যাদের প্রি একলাম্পসিয়া আছে তাদের খিচুনী বা অজ্ঞান হবার ঘটনা ঘটলে তাকে একলাম্পসিয়া বলে। এর ফলে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশী।

গর্ভকালীন খিঁচুনী কী?

গর্ভকালীন খিঁচুনী হল Eclampsia রোগের কারণে তৈরি হওয়া খিঁচুনী ।

একলাম্পসিয়ায় খিঁচুনীর ধাপসমূহ

Eclampsia র খিঁচুনী অনেকটা এপিলেপ্সির খিঁচুনীর মতোই ।

১. প্রিমনিটারি ধাপ

  • ১০-২০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়।
  • এ সময় চোখ উল্টে বা স্থির হয়ে যায়।
  • মুখ ও হাতের মাংশপেশীর খিঁচুনী হয়।
প্রি একলাম্পসিয়ার লক্ষণ
প্রি একলাম্পসিয়ার লক্ষণ

প্রি- একলাম্পসিয়ার লক্ষণ সমূহ

বিষয়মৃদু প্রি-Eclampsiaগুরুতর প্রি-Eclampsia
ডায়াস্টোলিক রক্তচাপগর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পর দুই বার ৯০-১১০ মিমি মার্কারী পাওয়া গেলেগর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পর দুই বার ১১০ মিমি মার্কারীর ওপর পাওয়া গেলে।
প্রস্রাবে প্রোটিন২+ পর্যন্ত৩+ বা তার বেশি
মাথা ব্যাথানেইথাকতে পারে
চোখে ঝাপসা দেখানেইথাকতে পারে
উপরের পেটে ব্যথানেইথাকতে পারে
কম প্রস্রাব (২৪ ঘন্টায় ৪০০ মিলির কম)নেই২৪ ঘন্টায় ৪০০ মিলির কম
হাইপার রিফ্লেক্সনেইথাকতে পারে
ফুসফুসে পানিনেইথাকতে পারে

২. টনিক ধাপ

  • ১০-২০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়।
  • এ সময় মুখ ও হাতের মাংশপেশীর খিঁচুনী হয়
  • মাংশপেশীর ভয়ংকর ভাবে খিঁচুনী হয়।
  • হাতের মুঠো শক্ত হয়ে বন্ধ থাকে এবং পা শক্ত হয়ে যায়।
  • ডায়াফ্রাম, যা নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করে তা শক্ত হয়ে যায়।ফলে শ্বাস- প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং চামড়া নীল হয়ে যায়।
  • পিঠ বেকে যেতে পারে।
  • দাঁত আটকে যায়।
  • চোখ বেরিয়ে আসতে চায়।

৩. ক্লোনিক ধাপ

  • ১-২ মিনিট স্থায়ী হয়।
  • এ সময় মাংশপেশীর ভয়ংকর শক্ত হয়ে খিঁচুনী হতে থাকে।
  • বেশী থুতু হবার কারণে মুখে ফেনা
  • উঠে যায় যা ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে।
  • গভীর, সশব্দ নিঃশ্বাস নেওয়া।
  • মুখের চামড়ায় রক্ত জমে ফুলে ওঠে।

৪. কোমা ধাপ

এটা মিনিট হতে ঘন্টা ব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। রোগী গভীর ভাবে অজ্ঞান থাকে ও জোরে জোরে শ্বাস নেয়। নীলচে ভাব কমে আসে কিন্তু মুখ ফোলা থাকে। এক বা দুই বার খিঁচুনী ঘটনার পরই মৃত্যুও হতে পারে।

একলাম্পসিয়ার লক্ষণ বা উপসর্গ

একলাম্পসিয়ার লক্ষণ বা উপসর্গ
Eclampsia র লক্ষণ বা উপসর্গ

কোন মহিলার একলাম্পসিয়ার ঝুঁকি বেশি

Eclampsiaর ঝুঁকি যাদের মধ্যে বেশী থাকে, তা হলো-

  • প্রথম মাতৃত্ব (বিশেষত কিশোরী মা ও ৩৫ বছরের বেশী বয়স্ক মা)।
  • অতিরিক্ত ওজন।
  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • বহু মাতৃত্ব।
  • একাধিক ভ্রূন

এবং যে সব মহিলাদের নীচে বর্ণিত সমস্যাগুলো আছে।যেমন –

  • ডায়াবেটিস (Diabetes)।
  • হাইডাটিডির্ফম মোল ( Hydatidiform mole)।
  • পলিহাইড্রামনিয়স (Poly hydramnios) |
  • হাইড্রোপস ফিটালিস (Hydrops fetalis)।

একলাম্পসিয়ার কারণসমূহ

Eclampsia র কারণ এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে জানা যায়নি।তবে গবেষকরা নিচের কারণসমূহ এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন:

  • রক্তনালী সমূহের সমস্যা।
  • স্নায়ুতন্ত্রের উপাদান সমূহের সমস্যা।
  • খাদ্য বা পথ্য বিশেষ।
  • জিনতাত্বিক সমস্যা।

একলাম্পসিয়ার চিকিৎসা

Eclampsia র চিকিৎসার ছয়টি ধাপ আছে

১. শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখা এবং শ্বাস প্রশ্বাস নিশ্চিত করা

এটা করতে হলে রোগীকে বাম দিকে কাত করে শোয়াতে হবে, যাতে বমি,রক্ত বা অন্য তরল ফুসফুসে না যায়।প্রতি খিঁচুনীর পর পাঁচ মিনিট বা তার বেশী অক্সিজেন দিতে হবে।প্রতি খিঁচুনীর পর মুখ ও গলা পরিষ্কার করতে হবে।

২. খিঁচুনী নিয়ন্ত্রন করা

খিঁচুনী নিয়ন্ত্রন করতে হলে এর জন্য নির্দেশিত ওষুধ দিতে হবে। ম্যাগনেশিয়াম সালফেট দিয়ে তা করা উচিত। যদি তা না পাওয়া যায় তবে ডায়াজিপাম দেয়া যেতে পারে, যদিও তাতে বাচ্চার ক্ষতির আশংকা থাকে। তবে একবার ব্যবহারে বাচ্চার খুব একটা সমস্যা হবার কথা নয়।

৩. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা

যদি ডায়াস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপ ১১০ এর বেশি থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রনে আনতে ওষুধ দিতে হবে। ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০-১১০ এর মধ্যে রাখতে হবে যাতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ না হয়। এই ক্ষেত্রে হাইড্রালজিন ব্যবহার করা ভাল ।

৪. নিবিড় পর্যবেক্ষন

যে কোন উত্তেজনা যেমন: জোরে শব্দ, জোরালো আলো এবং নড়াচড়া নুন্যতম পর্যায়ে রাখতে হবে। রোগীকে সিঙ্গেল কেবিনে, শান্ত পরিবেশে রাখতে হবে কিন্তু কখনোই একলা রাখা যাবে না।শুধু অবশ্য প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হবে। যার ভেতর
আছে –

  • প্রতি দুই ঘন্টা পরপর পাশ ফেরাতে হবে।
  • মুখের যত্ন (মুখে কোন তরল দেয়া যাবে না)।
  • ইউরিনারি ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব পরিমাপ।

৫. বাচ্চার ডেলিভারী করানো

রোগীর অবস্থার উন্নতি হবার সাথে সাথে বাচ্চার ডেলিভারী করাতে হবে, তার বয়স যত সপ্তাহই হোক। গুরুতর প্রি Eclampsia র লক্ষণ দেখা দেবার ২৪ ঘন্টা ও Eclampsia র খিঁচুনী দেখা দেবার ১২ ঘন্টার ভেতর ডেলিভারী করা উচিত।

৬. জটিলতাগুলো সনাক্তকরন ও তার চিকিৎসা

  • ডেলিভারীর পর কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে।
  • ডেলিভারীর পর অথবা শেষ খিঁচুনীর পর কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা খিঁচুনীর ওষুধ দিতে হবে।
  • ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ১১০ এর নীচে না আসা পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দিতে হবে।
  • সিঙ্গেল, নির্জন কেবিনে রোগীকে সার্বক্ষনিক সঙ্গীসহ রাখতে হবে।
  • প্রস্রাব খুব সর্তকতার সাথে মাপতে হবে। এসময় স্যালাইন খুব হিসাব করে দিতে হবে।
  • রোগী সুস্থ হলে বাড়ীতে পাঠাতে হবে ও ৬ সপ্তাহ পর আবার দেখতে হবে।

একলাম্পসিয়া থেকে মুক্তির উপায়

Eclampsia প্রতিরোধের জন্যে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, গর্ভকালীন নিয়মিত চেকআপ এবং সময়োপযোগী চিকিৎসা। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। Eclampsia হঠাৎ করে শুরু হয় না। প্রি-একলাম্পসিয়া থেকে Eclampsia হয়। কাজেই প্রি-একলাম্পসিয়া বা কিছুটা প্রাথমিক অবস্থা থেকে এর চিকিৎসা গ্রহণ করলে Eclampsia প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে একজন মাকে বুঝতে হবে যে সে কখন Eclampsia য় আক্রান্ত হচ্ছে এবং কখন তার চিকিৎসা প্রয়োজন। গর্ভকালীন মাকে নিয়মিত চেকআপ করানো। এই চেকআপ সন্তান গর্ভের আসার পর থেকে প্রতিমাসে একবার করে সাত মাস পর্যন্ত, এরপর প্রতি দুই সপ্তাহ পর পরবর্তী সময় থেকে একবার করে চেকআপ করতে হবে। এর মাধ্যমে মা-শিশুর মৃত্যুর হার অনেক কমে আসবে।

তথ্যসূত্র- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল

ট্যাগ – গর্ভকালীন খিঁচুনী গর্ভকালীন খিঁচুনী গর্ভকালীন খিঁচুনী গর্ভকালীন খিঁচুনী গর্ভকালীন খিঁচুনী গর্ভকালীন খিঁচুনী

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা।