ট্রুথ সিরাম(Truth Serum)।সত্য বলার ওষুধ!

ট্রুথ সিরাম(Truth Serum)।সত্য বলার ওষুধ!

ট্রুথ সিরাম(Truth Serum)। সত্য বলার ওষুধ…. ধরুন আপনার জন্মদিনের পার্টিতে অনেক অতিথি এসেছে পার্টি শেষ হওয়ার পর পরদিন সকালে দেখা গেল আপনার বাসা থেকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কোন ফাইল হারিয়ে গেছে এখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেননা।

চিন্তায় মাথার চুল ছিড়ছেন। চিন্তা নেই এরজন্য আছে Truth Serum.

সন্দেহভাজন লোকদের ধরে এনে কৌশলে একটু Truth Serum প্রয়োগ করলে দেখবেন চোর বাবাজি সব সত্য কথা হড়হড়িয়ে বলে দেবে। তাহলে আর দেরী কেন আসুন জানা যাক ট্রুথ সিরাম এর কেরামতি সম্পর্কে।

ট্রুথ সিরাম
ট্রুথ সিরাম

আপনি আরো পড়তে পারেন….. নাগ মনির রহস্য/সাপের মাথায় কি মণি হয়? ….. আঙ্গুল ফোটালে বা মটকালে শব্দ হয় কেন?

ট্রুথ সিরাম কি?

যে সকল রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে প্রয়োগ করলে মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায় এবং মানুষ মস্তিস্কে জমা থাকা পূর্বস্মৃতি হতে সকল সত্য তথ্য বিবেচনা না করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ফেলে তাকে ট্রুথ সিরাম বলে।

ট্রুথ সিরাম(Truth Serum)এর প্রকৃতি

Truth Serum এক ধরনের বারবিচুরেট জাতীয় পদার্থ বা ঔষধ।এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশের উপর প্রভাব ফেলে। এটি এক ধরনের কৃত্রিম হেলুসিলনেশন তৈরি করে।

ট্রুথ সিরাম বার্বিচুরেট
বার্বিচুরেট

ট্রুথ সিরাম আবিষ্কারের ইতিহাস

১৯১০ সালে ড.রবার্ট হোস সর্ব প্রথম লক্ষ্য করেন যে অবচেতণকারী ঔষধ স্কোপোলামিন রোগীর দেহে প্রবেশ করালে রুগি এমন এক মানসিক অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করে যে, রোগী এক ধরনের ঘোরের মধ্যে নিজ থেকে সকল সত্য তথ্য গল্পের মত বলতে শুরু করে।

অর্থাৎ কোন মানুষের ওপর স্কোপোলামিন প্রয়োগ করলে মানুষটি আপনাআপনি সকল সত্য তথ্য প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতে বলে দেয়।
ডক্টর রবার্ট হোস দাগি আসামিদের শারীরিক শাস্তির মাধ্যমে সত্য কথা আদায় করার যন্ত্রণা কমানোর জন্য বা গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে গোপন তথ্য উদঘাটন করতে এই কৌশল ব্যবহার করতে চাননি।

নিরাপরাধ মানুষ ষড়যন্ত্রের শিকার হলে তাকে যন্ত্রণাদায়ক জিজ্ঞাসাবাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গোপন তথ্য আদায় করার জন্য সেনাবাহিনীর ডাক্তারগণ শত্রুপক্ষের স্পাইদের ওপর ব্যাপক হারে প্রয়োগ করতে থাকেন এই ওষুধগুলো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই ঔষধগুলো “ট্রুথ সিরাম” নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বর্তমানে অনেক দেশে এই ড্রাগ আইন সঙ্গতভাবে প্রয়োগ করা হয়।

২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায় আটক হওয়া জঙ্গী আজমল কাসাব কে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় Truth Serum প্রয়োগ করা হয়।

১৯৫০-১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিআইএ project MKULTRA এবং Project MKDELTA পরিচালনার সময় Truth Serum ব্যবহার করে।
স্নায়ু যুদ্ধের সময় রাশিয়ার কেজিবি Truth Serum এর ব্যাপক ব্যবহার করত।

ট্রুথ সিরাম কিভাবে কাজ করে?

ট্রুথ সিরাম মানবদেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করানো হয় অথবা ট্যাবলেট হিসেবে মুখে বা পায়ুপথে ব্যবহার করা হয়।

Truth Serum রক্তে প্রবেশ করার পর প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে স্পাইনাল কর্ডে প্রবেশ করে। স্পাইনাল কর্ড থেকে ঔষধ মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সে প্রবেশ করে।

মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশগুলো Truth Serum এর প্রভাবে প্রভাবিত হয় এর ফলে একই সাথে একাধিক সংকেত মস্তিষ্কে প্রেরিত হলে Truth Serum এর প্রভাবে শুধু একটি সংকেত বিশ্লেষিত হয়। বাঁকি সংকেতগুলো উপেক্ষিত থাকে।Truth Serum এর প্রভাবে হেলুসিনেশন তৈরি হয়।

হেলুসিনেশন
হেলুসিনেশন

এই সময় মানুষ কোন কথা বলতে থাকলে স্মৃতি থেকে শুধু সত্য কথা বলতে থাকে চিন্তা করে মিথ্যা বলতে পারে না। আমরা সবাই জানি মিথ্যা কথা বলার সময় চিন্তা করে সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে হয়।

কিন্তু Truth Serum প্রয়োগ করলে মস্তিষ্কের একসাথে একাধিক চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায় তাই মানুষ মিথ্যা না বলে শুধু সত্য বলে।

ট্রুথ সিরাম কি সত্যি কাজ করে?

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় Truth Serum 45% ক্ষেত্রে বেশ ভালো কেরামতি দেখায়।
কিন্তু 25 থেকে 30 শতাংশ ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ করে না।
Truth Serum এর প্রভাবে অপরাধী যে জবানবন্দি দেয় তার সত্যতা অনেক দেশের আদালত কর্তৃক গৃহীত নয়।
আবার তথ্য অনুসন্ধানকারী যখন অপরাধীর কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে তখন সে বুঝতে পারে না যে সেই তথ্যটি সত্য না মিথ্যা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ১৯৬৩ সালে ঘোষনা করে যে Truth Serum Drug “unconstutionally coerced”.

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে যদি সত্যি কাজ করে তাহলে কেন সব সময় এই Truth Serum ব্যবহার করা হয় না?

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রভাবে যে হেলুসিনেশন তৈরি হয় তা অপরাধীর মস্তিষ্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অনেকে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
কেউ চিরদিনের মত পাগল হয়ে যায়। অনেকে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
একজন অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার আইন সঙ্গত নয়।
এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন এর পর্যায়ে পরে। তাই Truth Serum ব্যবহারের আগে অবশ্যই আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়।
আদালত অনুমতি দিলে তবেই Truth Serum প্রয়োগ করা যাবে।

ট্রুথ সিরাম হিসেবে ব্যবহৃত(সত্য বলার ওষুধ )ঔষধ

Truth Serum হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও বহুল ব্যবহৃত ঔষধ গুলো হলো সোডিয়াম পেন্টাথল,সোডিয়াম এমিটাল,GABA-A রিসেপ্টর, স্কোপোলামিন,এমোবারবিটাল ইত্যাদি।
এরমধ্যে সোডিয়াম পেন্টাথল বেশি ব্যবহৃত হয় তাই এর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

এমোবারবিটাল
এমোবারবিটাল

সোডিয়াম পেন্টাথল(Sodium Pentothal)

সোডিয়াম পেন্টাথল বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন সোডিয়াম থায়োপেন্টাল(Sodium thiopental),থাইয়োপেনটোন, ট্রাপানন।

সোডিয়াম পেন্টাথল
সোডিয়াম পেন্টাথল
সোডিয়াম পেন্টাথল আবিষ্কারের ইতিহাস

১৯৩০ সালে Ernest H. vowiler এবং Donalee L. Tabern অ্যাবোট ল্যাবরেটরীতে প্রথম আবিষ্কার করেন।

১৯৩৪ সালে Dr. Ralph M. waters মানবদেহে প্রথম এটি প্রয়োগ করেন।

বিষাক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় যে ইনজেকশন ব্যবহৃত হয় তার একটি উপাদান সোডিয়াম পেন্টাথল।

সোডিয়াম পেন্টাথল(Sodium Pentothal)এর ব্যবহার

সোডিয়াম পেন্টাথল স্বল্পমেয়াদী বারবিচুরেট জাতীয় ঔষধ। সাধারণ অবচেতনকারী ঔষধ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি WHO এর অত্যাবশ্যকীয় ঔষধের তালিকা ভুক্ত ঔষধ।

ট্রুথ সিরামের ব্যবহার

সাধারণ এনেসথেসিয়া (অপারেশনের আগে অজ্ঞান করা) দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ট্রুথ সিরাম।
মনোরোগের চিকিৎসা করতেও Truth Serum ব্যবহার করা হয়।
অপরাধীর কাছ থেকে সত্য তথ্য আদায় করতে ইন্টারোগেশন সেলে Truth Serum ব্যবহার করা হয়।

ট্রুথ সিরাম এর অপব্যবহার

বেশি মাত্রায় Truth Serum ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে।
চিরদিনের মত কথা বলার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
উচ্চমাত্রার নেশা হওয়ার কারণ এই Truth Serum।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাজি ডাক্তাররা Truth Serum অপব্যবহার করে বহু সৈন্যের মৃত্যু ঘটিয়েছিল।

ট্রুথ সিরাম এর দাম কত?

ট্রুথ সিরাম এর দাম

ট্রুথ সিরাম এর ১৫mg ইনজেকশন এর ভায়াল 10000 টাকায় বিক্রি হয়। ১mg ভায়ালের দাম 15 টাকা এটা শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

Truth test বা NARCO test কি?

নারকো টেস্ট হলো এক প্রকার বিশেষ পরীক্ষা, যার মাধ্যমে অপরাধীর কাছ থেকে সত্য তথ্য উদ্ধার করা হয়।
অপরাধীর শরীরে ট্রুথ সেরাম প্রয়োগ করা হলে অপরাধীর মস্তিষ্কে এক ধরনের হেলুসিনেশন তৈরি হয়।এই অবস্থায় অপরাধী বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে না কারণ truth serum এর প্রভাবে অপরাধীর মস্তিস্কে চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায়।
এর ফলে অপরাধীর মস্তিষ্কে জমাকৃত স্মৃতি হতে সত্য তথ্য বের হয়ে আসে।

সত্য বলার ওষুধ কি?

অপরাধীর কাছ থেকে সত্য তথ্য আদায় করতে ইন্টারোগেশন সেলে Truth Serum ব্যবহার করা হয়।

truth serum ki?

truth serum description in bangla, truth serum ki? price of truth serum in bangladesh, use of truth serum,Sodium thiopental,

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।

All photo credit Goes to sutterstock.com