রজচক্র বা মাসিক চক্র বা ঋতুচক্র কী?

রজচক্র বা মাসিক চক্র বা ঋতুচক্র কী?

স্ত্রীদেহের যৌন জীবনকালে (reproductive life) জরায়ু থেকে সাধারণত প্রতি ২৮ দিন (গড়ে; ২৪-৩২ দিন) অন্তর অন্তর ৪-৫ দিন ধরে চক্রাকারে যে পদ্ধতিতে রক্ত, মিউকাস, অনিষিক্ত ডিম্বাণু, এন্ডোমেট্রিয়াম ইত্যাদি নিষ্কাশিত হয়, তাকে রজচক্র বা মাসিক চক্র বা ঋতুচক্র (menstrual cycle or estrus cycle) বলে।

আপনি আরো পড়তে পারেন- পিরিয়ড বা মাসিক কী?মিনস্ কী?ঋতুস্রাব কেন হয়?

পিটুইটারি নিঃসৃত GTH (Gonadotrophic Hormone)-এর প্রভাবে ১০-১২ বছর বয়সে স্ত্রীলোকের প্রথম রজঃস্রাব শুরু হয়। রজঃচক্র বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে, গর্ভাবস্থায়, দুগ্ধক্ষরণকালে (lactation) এবং রজঃনিবৃত্তিকালে (menopose) বন্ধ থাকে। ৪০-৫০ বছর বয়সে পুরোপুরিভাবে এই চক্র বন্ধ হয়ে যায়। রজঃচক্রকে চারটি দশা বা পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যথা-

  1. নিরাময় পর্ব বা রেস্টিং ফেজ
  2. বৃদ্ধি পর্ব বা প্রোলিফারেটিভ ফেজ
  3. প্রাক-রজ:স্রাবীয় পর্ব বা প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ফেজ
  4. রজঃদশা বা মেনস্ট্রুয়াল ফেজ বা ব্লিডিং পর্ব
মাসিকচক্র

নিরাময় পর্ব বা রেস্টিং ফেজ বা রিপিয়ারিং ফেজ

বিগত রজঃচক্রের পরিসমাপ্তির সাথে সাথে পরবর্তী চক্রের প্রারম্ভে জরায়ুর প্রাচীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর্যায়কে নিরাময় পর্ব বলে।

এ ধাপে এন্ডোমেট্রিয়াম পুনর্গঠিত এবং স্বাভাবিক হয়। এন্ডোমেট্রিয়াম ১ মিমি. পুরু হয়। ডিম্বাশয়ের করপাস লিউটিয়াম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলে প্রোজেস্টেরনের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ডিম্বনালি বা গ্রাফিয়ান ফলিকল ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে।

এন্ডোমেট্রিয়ামের পুনর্গঠন ইস্ট্রোজেন হরমোন দ্বারা এবং ডিম্বথলির পরিণতি পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) ও লুটিনাইজিং হরমোন (LH) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই দশার স্থায়িত্বকাল রজঃস্রাব শুরুর তিন দিন পর থেকে ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত

বৃদ্ধি পর্ব বা প্রোলিফারেটিভ ফেজ

এ পর্বে জরায়ুর এন্ড্রোমিট্রিয়াম অপেক্ষাকৃত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং ডিম্বাশয় থেকে সেকেন্ডারি উওসাইট নিষেকের উদ্দেশ্যে বিচ্ছিন্ন হয় অর্থাৎ ডিম্বপাত হয়। জরায়ু গাত্রের মিউকাস স্তর পুরু হতে থাকে। ওই স্তরের রক্তবাহ স্ফীত হতে থাকে ও গ্রন্থিগুলো বড় এবং শাখা-প্রশাখা।বিশিষ্ট ও কুণ্ডলীকৃত হয়।

এই দশার স্থায়িত্বকাল ৭ম-১৪তম দিন পর্যন্ত। ফেলোপিয়ান টিউব পরিণত হয় এবং ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। এন্ডোমেট্রিয়াম প্রায় ৩-৪ মি.মি. পুরু হয়। চক্রের ১২তম দিনে LH ক্ষরণ বেড়ে যায়। এ সময় এস্ট্রোজেন ক্ষরণ কমে যায়।

১৪ দিন পর ওভ্যুলেশন হয় এবং করপাস লিউটিয়াম (corpus luteum) পুনর্গঠিত হয়। এই দশা এস্ট্রোজেন এবং FSH দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রাক-রজ:স্রাবীয় পর্ব বা প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ফেজ

রজঃচক্রের যে ফেজে ব্লাস্টোসিস্ট ধারণের জন্য জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম পুনর্গঠিত পর্যায়ে অপেক্ষমান থাকে, তাকে প্রাক-রজঃস্রাবীয় পর্ব বলে। এই দশা। APA ১৫-২৮ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ১৩-১৪ দিন স্থায়ী হয়। এই সময় মিউকাস স্তর আরও বৃদ্ধি পায়। রক্তজালকগুলো আরও স্ফীত হয়। রক্তেরর মত রঙ বিশিষ্ট তরল নিঃসৃত হয়ে জরায়ু গহ্বরে জমা হতে থাকে।

করপাস লিউটিয়াম সম্পূর্ণরূপে গঠিত এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পরিশেষে এন্ডোমেট্রিয়াম ৫-৬ মি.মি. পুরু হয়ে ব্লাস্টোসিস্টের ধারণ ও পোষণে সক্ষম হয়। প্রোজেস্টেরনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। ২৪ দিনের দিন করপাস লিউটিয়াল গ্রন্থি বিনষ্ট হয়ে যায়। প্রধানত প্রোজেস্টেরন এই দশা নিয়ন্ত্রণ করে।

রজঃদশা বা মেনস্ট্রুয়াল ফেজ বা ব্লিডিং পর্ব

প্রি-মেনস্ট্রুয়াল অতিক্রান্ত হলে অর্থাৎ ২৮ দিন পর এই দশা শুরু হয়। ডিম্বপাতের পর ডিম্বাণু ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত না হলে ফেজ কর্পাস লুটিয়াম বা পীতগ্রন্থি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। চক্রের এ পর্যায়ে এস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, FSH, LH এর ক্ষরণ নিম্নতম থাকে।

জরায়ুর মিউকাস স্তরে এন্ডোমেট্রিয়াম বিচ্ছিন্ন হয়ে অনিষিক্ত ডিম্বাণুসহ রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এই দশার স্থায়িত্বকাল ৪-৫ দিন। এ সময় রক্তের সাথে অনিষিক্ত ডিম্বাণু, রক্তবাহিকার ভগ্নাংশ ও এন্ডোমেট্রিয়াম রক্তের সাথে যোনিপথে নিষ্কাশিত হয়। এসব পদার্থকে রজঃস্রাব বলে। প্রোজেস্টেরনের অভাবে রজস্রাব শুরু হয়।

প্রত্যেক রজঃস্রাবের পরিমাণ ৩০-৪০ মিলিলিটার।
এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের নিঃসরণমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে গেলে সম্মুখ পিটুইটারি গ্রন্থির উপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায়, তখন আবার FSH ও LH ক্ষরণ বাড়ে। সে সাথে নতুন রজঃচক্র সৃষ্টির তৎপরতা শুরু হয়।

তথ্যসূত্র: উইকিপেডিয়া

ট্যাগ: রজচক্র বা মাসিক চক্র রজচক্র বা মাসিক চক্র রজচক্র বা মাসিক চক্র রজচক্র বা মাসিক চক্র

Please Click on Just one Add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা