লকডাউন অর্থ কি? কিভাবে উৎপত্তি হলো লকডাউন শব্দের?

লকডাউন অর্থ কি? কিভাবে উৎপত্তি হলো লকডাউন শব্দের?

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই জটিল সামাজিক পরিস্থিতিতে সবার কাছে একটি পরিচিত শব্দ lockdown।শিক্ষিত বা মূর্খ যাই বলুন সর্ব প্রকার জনসাধারণ এই শব্দ ব্যবহার করছে। বাংলা ভাষার শব্দ না হলেও এটি এখন বাংলার শব্দ ভাণ্ডারে যোগ হয়েছে।

শব্দটির সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ এখন পর্যন্ত চয়ন করা হয়নি। যুতসই অর্থ দার করাতে না পেরে এটি lockdown নামেই পরিচিতি পেয়েছে। আসুন আজ জানাযাক এই শব্দের আদ্যপ্রান্ত।

আপনি আরো পড়তে পারেন…. ব্লাক ফাঙ্গাস মারাত্মক রোগ থেকে বাঁচার উপায়

লকডাউন শব্দের উৎপত্তি

“lock” হ’ল একটি প্রাচীন জার্মান শব্দ luc শব্দ হতে উদ্ভূত। এটি ইংরেজি ভাষাতেও বহুল ব্যবহৃত শব্দ। পৃথিবীর প্রায় অনেক দেশেই lock শব্দ বেশ পরিচিত।
১৫-১৬ শতকে প্রথম lockdown শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে এটি একটি সুপরিচিত, বহুল ব্যবহৃত শব্দ। “stay in home” বা ” “stay in place” শব্দের পরিবর্তে বর্তমানে lock down শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

লকডাউন অর্থ কি?
লকডাউন অর্থ কি?

লকডাউন অর্থ কি?

noun হিসেবে lock এর অর্থ তালা,কুলুপ,জলকপাট,জাপটাজাপটি,গাঢ় আলিঙ্গন,তালাবদ্ধ করা,তালাবদ্ধ অবস্থা।verb হিসেবে lock এর অর্থ তালাবদ্ধ হত্তয়া,নিশ্চল অবস্থায় আসা,নিশ্চল অবস্থায় আনা,তালা দেত্তয়া,তালা লাগান,আবদ্ধ করা ইত্যাদি।
এই lock শব্দের সাথে down শব্দ যোগ করে একটি phrase গঠিত হয়েছে যার অর্থ কোন স্থানে আবদ্ধ করে ফেলা,তালাবদ্ধ করে ফেলা।

লকডাউন শব্দের সংজ্ঞা

lockdown হলো কোনও বিল্ডিং বা অন্য স্থানে লোককে যেতে বা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার জন্য জরুরি অবস্থার সময় নেওয়া একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা।
সূত্র-মেরিয়াম ওয়েবস্টার

লকডাউন হলো সরকারী কর্তৃপক্ষ দ্বারা আরোপিত একটি অস্থায়ী শর্ত যেখানে লোকেরা তাদের বাড়িতে থাকবে, পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য গণজমায়েত এরিয়ে চলবে, বাড়ির বাইরে থাকা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে।

ডিকশনারি ব্রিটানিকা

lockdown হ’ল জনগণ যেখানে থাকে সেখানে আবদ্ধ থাকার জন্য একটি বিধিনিষেধ যার ফলে পরস্পরের সাথে সরাসরি সাক্ষাত নিষিদ্ধ করা হয়।

উইকিপেডিয়া

লকডাউনের ইতিহাস

এই অবস্থার সাথে প্রথম পরিচিতি ঘটেছিল ১৯৭৩ সালে।কারাবন্দীদের বিদ্রোহের শাস্তি হিসেবে তাদের lockdown করার মাধ্যমে।

১১ ই সেপ্টেম্বরের, ২০০১ সালে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে আক্রমণ এর পরে, আমেরিকান বেসামরিক আকাশসীমা তিন দিনের জন্য lockdown করা হয়েছিলো।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ শে জানুয়ারী, ২০০৮ এ, একটি অজানা হুমকি দেওয়া হয়েছিল। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এই অঞ্চলটিতে ছয় ঘণ্টার জন্য lockdown অর্ডার জারি করে।

২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে কানাডার, টরন্টোতে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সন্দেহভাজন আগ্নেয়াস্ত্র হামলার হুমকির কারণে lockdown হয়েছিল।

১৯ এপ্রিল, ২০১৩, বোস্টন ম্যারাথন বোমা হামলার অপরাধী জোখর এবং তেমরলান জার্নাভকে ধরার জন্য গোটা শহরকে lockdown করা হয়েছিল। পুলিশের সোয়াট টিমের অপারেশন চলার সময় সন্ত্রাসীদের আটকে রাখতে পুরো বোস্টন শহরকে অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং সমস্ত গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সশস্ত্র পুলিশের সোয়াট দল ঘরে ঘরে অনুসন্ধান করেছিল।

নভেম্বর ২০১৫ সালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস কয়েক দিনের জন্য lockdown ছিল। তখন স্পেশালফোর্স প্যারিস হামলার সাথে জড়িত সন্দেহভাজনদের সন্ধান করেছিল।

আগস্ট 2019 সালে,জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরে ভারত সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মিডিয়া ব্ল্যাকআউট এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের উপর একটি lockdown চাপিয়েছিল, সরকার দাবি করে যে এই লকডাউনটি সন্ত্রাসবাদ রোধ করতে আরোপ করা হয়েছিল।

লকডাউনের প্রকারভেদ

সবকিছুর প্রকারভেদ আছে কিন্ত lockdown প্রকারভেদ নেই তাই ভাবছেন নাকি? তাইলে আপনি ভুল ভাবছেন মশাই। lockdown ও প্রকারভেদ আছে। lockdown ৩ প্রকার।

প্রতিরোধমূলক lockdown

প্রতিরোধমূলক lockdown হ’ল একটি প্রাকৃতিক কর্ম পরিকল্পনা যা
জনগণ, সংস্থা অথবা কোন সিস্টেমের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বা কোনও বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অথবা কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে প্রয়োগ করা হয়।

জরুরী lockdown

বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রণহানি রোধ করতে জরুরী lockdown প্রয়োগ করা হয়। যেমন- কোন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হলে বা হঠাৎ আইন শৃংখলার চরম অবনতি ঘটলে অথবা আকস্মিক যুদ্ধ শুরু হলে জনগনের জীবন রক্ষার জন্য ঘরের বাইরে বাহির হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

ক্লিনিক্যাল lockdown

কোন সংক্রামক রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটলে জনগণের জীবন রক্ষায় ক্লিনিক্যাল lockdown প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে করোনা মহামারির হাত থেকে বাঁচতে সরকার যে লকডাউন প্রয়োগ করেছে তা ক্লিনিক্যাল লকডাউন। রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে এই ধরণের lockdown বেশ কার্যকর।

লকডাউনের ব্যবহার

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য lockdown ব্যবহার করা হয়। যেমন-

স্কুল

কোন স্কুলে সন্ত্রাসী হামলা হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের জন্য স্কুল lockdown করে দেয়া হয়। এসময় সকল শ্রেণিকক্ষের দরজা ও জানালা বন্ধ করে দেয়া হয় যাতে হামলাকারী ভেতরে প্রবেশ না করতে পারে। হামলা স্থলের সকলকে নিজনিজ স্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিতে হয়।উদ্ধারকারী পুলিশ ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না আনা পর্যন্ত এই অবস্থা বিরাজমান থাকে।

১৯৯৯ সালে আমেরিকার কলম্বিয়া রাজ্যের একটি স্কুলে বন্দুক হামলার পর থেকে স্কুলগুলিতে লকডাউন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

কারাগার

কারাগারে, লকডাউন শব্দটি বন্দীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
কোন বন্দি কারাগারের নিয়ম ভেঙ্গে অন্যায় কাজ করলে তাকে শাস্তি হিসেবে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়। সংশোধনের সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে বাইরে বের হতে দেয়া হয়না।
আবার কারাগারে দাঙ্গা শুরু হলে সমস্ত কয়েদীকে তাদের কক্ষে আবদ্ধ করা হয়।পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত lockdown চলতে থাকে।

হাসপাতাল

কোন হাসপাতালে মারাত্মক সংক্রামক রোগ শনাক্ত হলে সংক্রমণ ও জীবাণুর বিস্তার রোধ করার জন্য ঐ হাসপাতালে একডাউন আরোপ করা হয়। হাসপাতালের লকডাউন সত্যিকারের কঠোর lockdown। আইন অমান্যকারীকে প্রয়োজনে হত্যা করা হয়।

বিপদগ্রস্ত এলাকা

ভয়ংকর বিদ্যুৎ ব্যর্থতা, ভূমিকম্প, বন্যা, আগুন, বোমার হুমকি, জিম্মি সংকট, বাহ্যিক দূষণ, নাগরিক অসন্তোষ,বিদ্রহ ইত্যাদি মোকাবেলা করার জন্য নির্দিষ্ট এলাকা lockdown করে দেয়া হয়।

পণ্য উৎপাদন

কোন ফ্যাক্টরি নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন করলে সেই ফ্যাক্টরি ও নির্দিষ্ট স্থান lockdown করে দেয়া হয় যাতে নিম্ন মানের পণ্য ঐ স্থানের বাইরে যেতে না পারে। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ মান উন্নয়ণ করে সরকারের সন্তুষ্টি অর্জন করলে তখন আবার lockdown তুলে নেয়া হয়।

লকডাউনের আওতামুক্ত বিষয়

লকডাউনে শিশুখাদ্য, ওষুধ ও সবজির দোকান খোলার অনুমতি আছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক এর আওতামুক্ত।এর বাইরে রেশন দোকান পেট্রোল পাম্প খোলা থাকে।

What is Meaning the “Lockdown” word In Bengali?

“Lockdown” Meaning In Bengali– “Lockdown” অর্থ কোন স্থানে আবদ্ধ করে ফেলা,তালাবদ্ধ করে ফেলা।

please click on just only one add to help us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।