সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা !

সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা !

মানব সভ্যতার ঊষাযুগ থেকেই সাপের সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠ পরিচয় – আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই নাগেরই মাধ্যায় নাচি। অধিকাংশ ধর্মে কোন না কোনভাবে সাপ ঢুকে পড়েছে। বিষ্ণু অনন্তনাগের উপর শয়ান, পৃথিবী কালনাগের মাথায় অবস্থিত, শ্রীকৃষ্ণের কালীয়দমন এক কীর্তি। সুরাসুরের ‘স্বপ্নে এবং সমুদ্রমন্থনে পুনরায় উপস্থিত হন অনন্তনাগ।

ওদিকে মিশরে সর্ণপূজা চলত, ফারাওয়ের মুকুটে সর্বপ্রতীক, যেমন আছে শিবের জটায়। ক্রিয়োপেট্রা আত্মহত্যা করেন সপচুম্বনে। এইসব পৌরাণিক আর ঐতিহাসিক উপাদান থেকে নানান কাহিনী লোকগাথায় অনুপ্রবেশ করেছে। যা থেকে মানুষের মনে সঞ্চিত হয়েছে মানান ভুল ধারণা। তার প্রধান কয়েকটি এখানে তালিকাকারে সাজিয়ে দেওয়া গেল। বিজ্ঞানশিক্ষিত মানুষের কর্তব্য সাধারণের এইসব প্রাপ্ত ধারণা দূরীকরণের চেষ্টা করা। আসুন আজ আলচনা করি সমাজে প্রচলিত সাপ নিয়ে মজার সব ভ্রান্ত ধারণাগুল নিয়ে…

সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা !

আপনি আর পড়তে পারেন…… নাগ মনির রহস্য কি? সাপের মাথায় কি মণি হয়? …… সাপের কি কান আছে?সাপ কিভাবে শোনে?

সাপ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা!

সাপ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় বিস্বের অনেক দেশেই বহুল প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা আছে নিচে এগুলো আলোচনা করছি।

১.সাপের মাথার মণি হয়

এই অবান্তর কথাটি লিখতে বাধ্য হচ্ছি বিশেষ কারণে। অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও গজমুক্তার লেখককে প্রশ্ন করেছেন- সাপের মাথায় কি সত্যিই মণি থাকে? এ-কথা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি বলেই পুনরুক্তি করছি। সাপের মাথায় মণি থাকতে পারে না।

নাগ মনির রহস্য কি?
সাপের-মাথায়-কি-মণি-হয়

২.সাপ সম্মহন করতে পারে

সাপ সম্মহন করতে পারে না। অনেকে বলে সাপের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাপ মানুষকে সম্মহন করে ফেলে। সাপের চোখের উপর পর্দা নেই, তার চোখে পলক পড়ে না। তাই ঐ আজগুবি কথাটার প্রচলন হয়েছে।

৩.সাপের প্রতিহিংসাপরায়ণতা থাকে

সাপের প্রতিহিংসাপরায়ণতা থাকে না। শত্রুকে চিনে রাখার ক্ষমতা কোনও সাপের নেই। প্রতিহিংসা নেবার বাসনা তাই ওদের জাগে না, জাগতে পারে না। মানুষকে এরা সচরাচর ঘাটিয়ে না। ভয় করে। এমনকি বিষধর রাজ্যের সম্রাট মহাপরাক্রমশালী শঙ্খচূড় পর্যন্ত মানুষকে এড়িয়ে চলে, অহেতুক তেরে এসে মানুষকে তেড়ে এসে কামড় দেয় না।

আমাদের সমাজে একটি জনশ্রুতি আছে যে এক জোড়া সাপএর নর বা নারীকে মারলে অপর টি এই হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য সুযোগ খোঁজে যখন সুজোগ পায় তখন হত্যাকারীকে কামড় দিয়ে প্রতিশোধ নেয়। এটা একটি আজগুবি কথা।

৪.সাপ শুনতে পায়না

অনেকে ভাবে সাপ শুন্তে পায় না।এটি প্রাপ্ত ধারণা। সাপ সম্বন্ধে অনেক বইতে তথ্যটি পরিবেশিত, তাই বিতর্কমূলক বিষয়টি সম্বন্ধে আধুনিক-বিজ্ঞানের কি বক্তব্য তা একটু বিস্তারিত জানাই।

“It was thought that snakes were totally deaf. since they have neither car drums nor ear-openings. Recent studies show that some air-borne sounds are picked up though the lungs. They also respond to surface vibrations; thus they “hear”, and are quick to escape from foot-steps; but the response to the snake-charmer’s flute is probably only visual. The snake reacts to the movements of the flute and prodding by the snake-charmer, not his sound [Encyclopedia of Indian Natural History, Centenary Publication (1863-1983) of the Bombay Natural History Society”

পূর্বযুগে ধারণা ছিল সাপ সম্পূর্ণ বধির। কারণ তাদের না আছে কানের ফুটো না কর্মেন্দ্রিয়। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে বায়ুবাহিত কিছু কিছু শব্দ ওরা গ্রহণ করতে পারে। আর সে কাজ করে এদের ফুসফুস। জীবজন্তু বা মানুষের পায়ের শব্দে যে সামান্য ভূকম্পন হয়। তাও ওরা অনুভব করতে পারে। সেই পদশব্দ ওরা শুনতে পায় আর লুকিয়ে পড়ে। কিন্তু সাপুড়ের বাঁশির তালে তালে সাপের নাচাটা খুব সম্ভব ভিন্ন হেতুতে। সেটা বাশির দোলানিতে আর লাঠির খোঁচায়।

এর পর রাস্তায় যখন সাপুড়ের খেলা দেখবেন তখন তার পায়ের দিকে নয়ত রাখবেন। দেখবেন সে মাটিতে পা দিয়ে তাল দেয়। এটাও সাপ “শুনতে পায় কানের মাধ্যমে। এ বিষয়ে গ্রামের তিনমাথা ওয়ালা বৃদ্ধদের পরামর্শ নেবেন। তারা জীববিজ্ঞানের রিসেন্ট স্টাডিজ-এর ধার ধারেন না; কিন্তু বাপ-পিতেমোর কাছ থেকে শিখেছেন কায়দাটা। রাতের বেলা তাঁরা একটি লাঠি হাতে পথে বের হন। সে আমলে হাতে ঝুলত পান, ইদানীং টিপবাতি। ঐ যাদের নাম রেতের বেলা করতে নেই তারা পথ ছেড়ে দেন আলো দেখে এবং লাঠির ঠুকঠুকানিতে।

সাপের কি কান আছে?
সাপের কি কান আছে?

আপনি আর পড়তে পারেন …… সাপ কি জিহ্বা দিয়ে শোনে?

৫.সব সাপ ডিম পাড়ে

সব সাপ ডিম পাড়ে ভুল ধারণা। অনেকে বাচ্চা পাড়ে। যেমন অ্যানাকোন্ডা সাপ ও কিছু অজগর সাপ বাচ্চা প্রসব করে।

৬.সাপ দুধ কলা খায়

এটা একটি মহা ভুল ধারনা।সাপ দুধ খেতে পারে না। দুধ খকলা খাইয়ে সাপকে পোষ মানানো এই প্রবাদ খুব প্রচলিতো হলেও আসলে না দুধ, না কলা, সাপ কোনটাই খায় না। সব সাপ মাংসাশী। কী নির্বিষ,কি বিষধর।তবে সাপ পোষ মানে।

৭.সাপ তাড়া করে এসে কামড়ায়

আগেই বলেছি সাপের সংগ্রাম- আত্মরক্ষামূলক। তাড়া করে গিয়ে সে ইদুর ব্যাঙ ধরতে পারে। মানুষকে কামড়ায় না। সহজ হেতুতে। মানুষ তার খাদ্য নয়, শত্রু নয়। গোক্ষুর, কেউটে, চন্দ্রবোড়া এমনকি নাগরাজ শঙ্খচূড় পর্যন্ত মানুষকে ভয় পায়, এড়িয়ে চলে। তবে ল্যাজে পা পড়লে অথবা ডিমের পাহারাদার সর্পজননী চকিতে ছোবল মারতে পারে। তেড়ে এসে কামড়ানোও তার পক্ষে অসম্ভব নয়। সাধারণভাবে আত্মরক্ষা করাই সাপের ধর্ম মানুষের সান্নিধ্যে সাপের গতি ঘণ্টায় তিন-চার কি.মি.-র বেশি হয় না, মানুষ প্রথম বিশ পঞ্চাশ মিটার অনেক জোড়ে দৌড়োতে পারে।

দুটি ব্যতিক্রম এই নিয়মের প্রথম আফ্রিকার বৃক্ষবাসী সাপ মাম্বা অহেতুক দংশন করে, ক্ষেপে গেলে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তাড়া করে এসে ছোবল মারে। এটা তার রাগী স্বভাবের জন্য। দ্বিতীয়ত দক্ষিণ আমেরিকার বিশালতম সাপ আনাকোন্ডা। একান্তে পেলে সে মানুষকে আক্রমণ করে। রাগের মাথায় নয়, ঠাণ্ডা মাথায়। কারণ মানুষ এর খাদ্য। পূর্ণদেহী একটা মানুষকে গিলে খাওয়ার ক্ষমতা তার আছে।

৮.সাপ গরুর বাঁট থেকে দুধ চুষে খায়

দুধ চুষে খাওয়ার জন্য অবিচ্ছিন্ন মোটা জিহ্বা দরকার যেমন মানুষের জিহ্বা। এটা সাপের নাই।সাপের জিহ্বা চেড়া।এই চেড়া জিহ্বা দিয়ে সাপ কখনই দুধ চুষে খেতে পারবে না।

৯.দুমুখো সাপ

টাইড্রোপিয়া বর্ণের একটি বিশেষ প্রজাতির বাংলা নাম: দুমুখো সাপ। অন্যান্য অঞ্চলেও তার একই পরিচয়। হিন্দিতে এর নাম ‘দো মুখ কা সাপ।গুড়িযায়, ‘দো-মুণ্ডিয়া গাণা।এর আকৃতি এমন যে, কোনটি মাথা আর কোনটি লে সহজে ঠাওর হয় না। তাছাড়া পিছু হটবার সময় এ সাপ পিছন ফেরে না, ব্যাক-গিয়ারে পিছিয়ে যায়।আসলে এই দু-মুখো সাপের একটিই মাথা।

তবে কিছু ক্ষেত্রে নিতান্ত প্রকৃতির খেয়ালে একই দেহপ্রান্তে কোন কোন সাপের দুটি মাথা গজিয়ে উঠতে দেখা যায়। শ্যাম দেশের যমজ ভাইয়ের মতো এ একটি ব্যতিক্রম। পলতা ওয়াটার ওয়ার্কসে প্রাপ্ত এমন একটি সাপ আমি নিজেই দেখেছি। সেটি অ্যানহাইড্রিল আনহাইডিস প্রজাতির। তাকে আবিষ্কার করে বিষদজনসভায় দাখিল করেছিলেন জুয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ডঃ এম. কে. তালুকদার।

১০.সাপের জোড়া লাগা কি মিলন

মিলনের সময় সাপ জোড়া লাগে ঠিক আছে কিন্তু সব সময় এটি ঠিক নয়। অনেক সময় দুটি পুরুষ সাপ একটি স্ত্রী সাপের সাথে মিলিত হওয়ার আগে লড়াই করে।

১১.শনি মঙ্গলবারে ঢোড়া বা নির্বিষ সাপের বিষ হয়

শনি মঙ্গলবারে ঢোড়া বা নির্বিষ সাপের বিষ হয় এই তথ্যটি একটি ভুল তথ্য। জীবজগতে গ্রীষ্ম, অমাবস্যা-পূর্ণিমা, সকাল-সন্ধ্যা, দিন-রাত সবই আছে—শনি মঙ্গলবার, ত্রাহাস্পর্শ বা অশ্লেষা মঘা নেই। এসব মানুষের কল্পনায় বানানো। স্বীকার্য, কোন কোন নির্বিষ সাপের মাথায় সামানা বিষ উৎপন্ন হয়—কিন্তু তার ভিন্ন প্রকারের জীববিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আছে। শনি-মঙ্গলবারের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই।

১২.সাপ পোষ মানে না মানে না

ঘোড়া, কুকুরের মতো সাপ অনুগত হয় না বটে, কেউ যদি দীর্ঘ দিন সাপের খাদ্য জোগায় তবে সাপ তার পোষ মানে। সাপুড়েরা বিষধর সাপকে রাখে ঝাঁপিতে; কিন্তু নিয়মিত বিষ গেলে ফেলে। বর্মা মালয়ে বড় জমিদারের অজগর পোষা একটা বিলাস। আসলে শস্যাগারের ক্ষতিকর ইঁদুরের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়াই মূল উদ্দেশ্য।

তথ্যসুত্রঃ “প্রাণিবিশ্বকোষ”-২য় খণ্ড
লেখক- নারায়ণ স্যান্নাল

Tag- সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা ! সাপ নিয়ে ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা !