হেপাটাইটিস-ই কী! হেপাটাইটিস-ই কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস-ই! কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

লিভার বা যকৃতের বিভিন্ন অসুখের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটির সাথে আমরা পরিচিত তাকে আমরা জন্ডিস বলে থাকি। জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়, এটি সাধারণত লিভার আক্রান্ত হওয়ার একটি লক্ষণ। তবে লিভারের সমস্যা ছাড়াও জন্ডিস হতে পারে। যেসব কারণে লিভারে জটিলতা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস অন্যতম।

হেপাটাইটিস-ই কী! হেপাটাইটিস-ই কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

আপনি আরো পড়তে পারেন…. হেপাটাইটিস-বি কী? হেপাটাইটিস-বি লক্ষণ ও প্রতিরোধ! …… হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!হেপাটাইটিস এ কী? হেপাটাইটিস এ লক্ষণ ও প্রতিরোধ! .

হেপাটাইটিস-ই যেভাবে ছরায়

হেপাটাইটিস ই কিভাবে ছড়ায়

হেপাটাইটিস ‘ই’ পানিবাহিত একটি ভাইরাস, যা দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। কখনো কখনো এটি মহামারি আকারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে জন্ডিসের অন্যতম প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস। তবে এই ভাইরাসে লিভারের প্রদাহ দীর্ঘমেয়াদী হয় না।

হেপাটাইটিস-ই কাদের বেশি হয়

হেপাটাইটিস ‘ই’ যেকোনো বয়সের মানুষেরই হতে পারে, তবে ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের মানুষ এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ ছাড়াও এ রোগ দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় এই ভাইরাস বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, কারণ এই ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুকেও সংক্রামিত করে এবং এর ফলে সৃষ্ট জটিলতায় গর্ভস্থ শিশু ও মা উভয়েরই মৃত্যু হতে পারে।

হেপাটাইটিস-ই কত দিন পর রোগ সৃষ্টি করে

হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের ছবি

‘ই’ ভাইরাস শরীরে ঢোকার সাথে সাথেই রোগ সৃষ্টি করে না। সাধারণত এক মাস পর রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।

হেপাটাইটিস-ই রোগের লক্ষণ

এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথম দিকে চোখ, শরীর ও জিহ্বার নিচের দিকে হলুদ হয়ে যেতে পারে, গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব হতে পারে এবং ভীষণ শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। এছারাও নিচের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

হেপাটাইটিস ই লক্ষণ

জন্ডিস

রক্তে বিলরুবিনের মাত্রা বেশি থাকার কারণে এটি ত্বক ও চোখে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ত্বক ও চোখের রঙ হলুদ হয়। হলুদ ত্বক সৃষ্টি হলে এই অবস্থাকে জন্ডিস বলে।
জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়, এটি সাধারণত লিভার আক্রান্ত হওয়ার একটি লক্ষণ।

খাবারে অরুচি

যকৃত বা লিভার হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের আক্রমণে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এর ফলে হজম ও বিপাক ক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ হয়। একারণে রোগীর পেটে অনেক ক্ষুধা থাকলেও অরুচির কারণে খেতে পারে না।

পেট ব্যথা

হজমে গোলযোগের কারণে এবং লিভার ফাংশন কমে যাওয়ার কারণে পেটে ব্যথা হয়। অনেকে ব্যথার কারণে চিৎকার করে।

বমি বমি ভাব কিংবা বমি

লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময় বমি বমি ভাব হয়।পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকলেও খেতে মন চায়না। অনেকের খাবার দেখলেই গা গুলিয়ে যায়। অনেকের বমি হয় খাবার পরে।

হালকা জ্বর

সপ্তাহে ৩-৪দিন শরীরে হালকা জ্বর হতে পারে। অনেকের কাপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর আসে। জ্বর মাসব্যাপি স্থায়ী হতে পারে।

আপনি আর পড়তে পারেন……… ভাইরাল হেপাটাইটিস কী? হেপাটাইটিস প্রকারভেদ ও প্রতিরোধের উপায়! … 
হেপাটাইটিস এ কী? হেপাটাইটিস এ লক্ষণ ও প্রতিরোধ!
হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস-ই পরীক্ষা

হেপাটাইটিস ‘ই’ সঠিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য রোগীর রক্তে এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়া লিভারের অবস্থা দেখার জন্য সিরাম বিলিরুবিন ও লিভার ফাংশন পরীক্ষা করাও জরুরি।

হেপাটাইটিস-ই এর চিকিৎসা

হেপাটাইটিস ‘ই’-এর জন্য কার্যকর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। প্রতিরোধের জন্য কোনো কার্যকর টিকাও নেই। তবে ওষুধ এবং টিকা আবিষ্কারের জন্য নিরন্তর গবেষণা চলছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ভালোভাবে বিশ্রাম নিলে এমনিতেই রোগ সেরে যায়।

তবে কোনো কোনো সময় এটি লিভার অকার্যকর হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবেও দেখা দেয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মা এবং আগে থেকে লিভারের রোগে আক্রান্ত কেউ যদি হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তাদের ক্ষেত্রে লিভার অকার্যকর হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।

এমনকি, আগে থেকে লিভারের রোগ নেই এমন ব্যক্তির বেলায়ও অবহেলার কারণে লিভার অকার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এর ফলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

হেপাটাইটিস-ই প্রতিরোধের উপায়

হেপাটাইটিস ই প্রতিরোধের উপায়

হেপাটাইটিস ‘ই’ থেকে বাঁচতে হলে এই রোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এটি একটি পানিবাহিত রোগ, তাই এ রোগ প্রতিরোধের জন্য সবসময় পানি ফুটিয়ে পান করা উচিত এবং ব্যবহারের পানিও ফুটিয়ে নেওয়া ভালো। এতে শুধু হেপাটাইটিস ‘ই’ নয়, বরং টাইফয়েড এবং ডায়রিয়ার মতো আরো অনেক পানিবাহিত রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

খাবার পানি ৩০-৪০ মিনিট ফুটালেই হেপাটাইটিস ‘ই’-এর জীবাণু মারা যায় খাওয়ার আগে এবং পায়খানা থেকে ফেরার পর হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। যেখানে সেখানে পথের খাবার না খাওয়াই ভালো। ব্যক্তিজীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন ব্যক্তি, সমাজ এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ঘর থেকে শুরু করে সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, একটু সচেতন হলেই এসব রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

লেখক

ডাঃ হারুন অর-রশিদ এবং ডাঃ ফজলুল কবির ভূঁইয়া, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সৌজন্যে-স্বাস্থ্য সংলাপ, আইসিডিডিআর,বি

Please Click On Just One Add To Help Us