হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

সূচিপত্র-Table Of Contents
  1. হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস এর কারনে লিভার কোষ (Liver cell) এ প্রদাহ হলে হেপাটাইটিস সি বলে। এই ভাইরাসের প্রধান আক্রমনের স্থান হলো লিভার। এই ভাইরাস খুব দ্রুত ইনফেকশন লিভারে ছড়িয়ে জীবনের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরুপ লিভার প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। বেশীর ভাব ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এই ভাইরাস সংক্রমনের মাধ্যমে খুবই ধীরে, অনেক সময় নিয়ে লিভার কে অকেজো করে দেয়।

হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

আপনি আরো পড়তে পারেন…. হেপাটাইটিস-বি কী? হেপাটাইটিস-বি লক্ষণ ও প্রতিরোধ! …… হেপাটাইটিস-ই কী! হেপাটাইটিস-ই কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ!হেপাটাইটিস এ কী? হেপাটাইটিস এ লক্ষণ ও প্রতিরোধ! .

লিভার এ প্রদাহ, লিভার সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া ফাইব্রোসিস (Fibrosis), ব্যাপক আকারে লিভার অকেজো করে দেওয়া সিরোসিস (Cirrhosis) এমনকি লিভার ক্যান্সার, হেপাটো সেলুলার কারসিনোমা (Hepatocellular carcinoma) এবং সবশেষে লিভার ফেইলার হতে পারে।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস কে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’ কারন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষনীয় লক্ষণ দেখা যায় না। কিছু সংখ্যক ব্যক্তি (২০%) এই ভাইরাস আক্রমনের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই তার সাথে লড়াই করে তাকে শরীর থেকে বিতারিত করে এবং ভাল থাকে।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ছবি

যখন কেউ প্রথম এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন একে বলা হয় স্বল্পমেয়াদী বা একিউট ইনফেকশন কিন্তু যদি এই ভাইরাস কার রক্তে ছয় (০৬) মাসের অধিক অবস্থান করে তখন একে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক (Chronic) ইনফেকশন। বিশেষজ্ঞদের মতে Hepatitis c ভাইরাস আক্রান্ত প্রতি ৫ জনে ৪ জন দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক ইনফেকশন এ রুপান্তরিত হবার আশংকা থাকে। Hepatitis c লিভার রোগের এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট (প্রতিস্থাপন) করার প্রধান কারন।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পরই রক্তে এর মাত্রা নাটকীয় ভাবে বাড়তে থাকে যতক্ষন না শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Body’s immune system – বডিস ইম্মিউন সিস্টেম), এন্টিবডি তৈরি করে। রক্তে Hepatitis c ভাইরাস অবস্থান কালেই কেবল

Hepatitis c প্রতিশেধোক এন্টিবডি তৈরি হয়। যদিও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (বডি’স ইম্মিউন সিস্টেম) Hepatitis c ভাইরাস এর সাথে লড়াই করে তারপরও ৭৫% ব্যক্তিই এই লড়াই এ পরাজিত হয় এবং তারা এ ভাইরাস শরীরে সারা জীবন বহন করে। একেই বলে দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক ইনফেকশন।

আপনি আর পড়তে পারেন……… ভাইরাল হেপাটাইটিস কী? হেপাটাইটিস প্রকারভেদ ও প্রতিরোধের উপায়! … 
হেপাটাইটিস-ই কী! হেপাটাইটিস-ই কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ!
হেপাটাইটিস এ কী? হেপাটাইটিস এ লক্ষণ ও প্রতিরোধ!

কত সংখ্যক মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাস এ আক্রান্ত ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি বছর ১৭ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদী Hepatitis c ভাইরাস ইনকেশন আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৩.৫ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করে। আমাদের দেশের প্রায় শতকরা ১-৩ ভাগ মানুষ Hepatitis c ভাইরাসের বাহক (সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি), তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী ইনকেশন এ নানাবিধ জটিল লিভার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে যে, Hepatitis c ভাইরাস, এইডস ভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশী সংক্রামক।

হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ

বেশীর ভাগ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই কোন লক্ষণ থাকে না এবং কোন ধারনাও থাকে যে, Hepatitis c ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত যতক্ষণ না পর্যন্ত চিকিৎসকেরা রক্ত পরীক্ষা করে Hepatitis c এর উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।যদি এর লক্ষণ সমূহ দেখা দেয়, যার ধরণ এবং ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হতে পারে।

হেপাটাইটিস সি এর সাধারন লক্ষণ :

হেপাটাইটিস সি এর সাধারন লক্ষণ :

জ্বর

সপ্তাহে বেশিরভাগ দিনে জ্বর হয়। অনেকের হালকা জ্বর সবসময় থাকে।জ্বরের কারণে শরীর সবসময় আরাম চায়। মাঝেমধ্যে তীব্র কাপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।

শারীরিক অবসাদ

কোন কাজ করলে দ্রুত শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্লান্তি সহজে দুর হতে চায় না। কাজ শুরু করতে মন চায় না। শুধু শুয়ে বসে থাকতে মন চায়। মাথা ঝিমঝিম করে। দুনিয়ার আলস্য দেহে ভর করে।

দুর্বলতা

শরীর প্রচণ্ড রকমের দুর্বল থাকে। সাধারণ শারীরিক পরিশ্রমেই শরীর ভীষণ ক্লান্ত হয়। একটানা পরিশ্রম করার সামর্থ্য হারিয়ে যায়।

মাংশপেশী ও হাড়ের জয়েন্ট এ ব্যথা

হাত-পায়ের পেশিতে ব্যথা হয়। পিঠের পেশি ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথায় টনটন করে। একটু পরিশ্রম করলেই পরের দিন শরীর খুব ব্যথা করে। হাটু,কব্জি,কনুই,কোমর,কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা হয়।

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময় বমি বমি ভাব হয়।পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকলেও খেতে মন চায়না। অনেকের খাবার দেখলেই গা গুলিয়ে যায়। অনেকের বমি হয় খাবার পরে।

মল-মূত্রের রঙ পরিবর্তন

ঘন বর্ণের মূত্র, স্বাভাবিক মলের রঙ হলুদ বা কালচে কিন্তু হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হলে অনেক সময় ছাই রঙের মল হয়। স্বাভাবিক মূত্রের রঙ খড় রঙের কিন্তু হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হলে অনেক সময় গাঢ় রঙের মূত্র সৃষ্টি হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর বিরল লক্ষণ

  • ব্যাপক বমি হবার ফলে পানি শূন্যতা।
  • জন্ডিস (শরীর, চোখ ও গাঢ় মূত্রে হলদেটে ভাব)।
  • বর্ধিত পেট বা পেট ফুলে থাকা সবমসময়। (এ্যসাইটিস- Ascites)।

হেপাটাইটিস সি কিভাবে সংক্রমিত হয়?

হেপাটাইটিস সি কিভাবে ছড়ায়

Hepatitis c ভাইরাস খুবই সংক্রমিত একটি ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরল (বডি ফ্লুইড), ভ্যাজাইন্যাল তরল পদার্থ রক্তের সংস্পর্শের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে Hepatitis c সংক্রমিত করে। যেমন :

  • সরাসরি রক্ত থেকে রক্তে (নিরীক্ষাবিহীন রক্ত এবং রক্তের উপাদান পরিসঞ্চালন দ্বারা)
  • সূচ এর মাধ্যমে (একই সূচ ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তির নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহনের সময়, নাঁক-কান ফুরানো বা টেটু করানো)
  • বিভিন্ন রকম চিকিৎসা (মেডিকেল ও ডেন্টাল) গ্রহন কালে দূষিত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যক্তিগত জিনিস একাধিক ব্যক্তির ব্যবহারের ফলে (যেমন: দাঁতের ব্রাশ, রেজার, ক্ষুর, ব্রেড)
  • অরক্ষিত যৌন ক্রিয়া

হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সামাজিক মেলামেশায় এই রোগ ছড়াতে পারে কি ?

সামাজিক মেলামেশায় (হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি) এই রোগ ছড়ায় না। এমনকি Hepatitis c আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য দ্রব্যাদি যেমন: গ্লাস, প্লেট, কাপ, চামচ, জামা-কাপড় ইত্যাদির মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায় না। শুধুমাত্র যে সমস্ত দ্রব্য রোগীর রক্তের সংস্পর্শে আসে (ক্ষুর, ব্রেড, রেজার, দাঁতের ব্রাশ, সূচ) সেগুলোর মাধ্যমেই এই রোগ ছড়াতে পারে।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের প্রকারভেদ

Hepatitis c ভাইরাসের প্রকার (type)। হেপাটাইটিস সি এর ৬ রকম জেনোটাইপ আছে (১,২,৩,৪,৫ এবং ৬)। এই সবগুলোই Hepatitis c ভাইরাস কিন্তু এদের মধ্যে কিছু গঠনগত সামান্য পার্থক্য আছে। Hepatitis c চিকিৎসা পরিকল্পনার জন্য জেনোটাইপ খুবই গুরুত্বপূর্ন।

হেপাটাইটিস সি ম্যানেজমেন্ট

রক্ত পরীক্ষায়, আপনার শরীরে Hepatitis c ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বা আছে জানতে পারাটা আপনার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক কিন্তু ভাল খবরটা হচ্ছে বেশীর ভাগ ক্রনিক হেপাটাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিই দীর্ঘ ও সুস্থ্য জীবন নিয়ে বেচে থাকতে পারে।

হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে আছেন যারা

  • Hepatitis c আক্রান্তের পরিবারের ঘনিষ্ঠ জনেরা এবং তার সঙ্গি বা সঙ্গিনী।
  • স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা, যারা রক্তের সংস্পর্শে প্রায়শই আসেন, যেমন: শল্য চিকিৎসক, ডায়ালাইসিস ইউনিট ও রক্ত সঞ্চালন বিভাগের কর্মীরা, দাঁতের ডাক্তার, সেবিকা ও ধাত্রীগণ
  • Hepatitis c আক্রান্ত মায়ের নবজাতক ।

হেপাটাইটিস সি সংক্রমন কি ভাবে প্রতিরোধ করতে পারি ?

দুঃখজনক হলো Hepatitis c ভাইরাস প্রতিরোধের কোন প্রতিশেধোক টিকা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরল বডি ফ্লুইড (Body fluid), ভ্যাজাইন্যাল তরল এর সংস্পর্শ পরিহার এর মাধ্যমে এই ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এছাড়াও রক্ত বা রক্তের উপাদান পরিসঞ্চালনার সময় অবশ্যই পরীক্ষিত স্ক্রিনিং (Screening) রক্ত ব্যবহার করা এবং সেলুনে, হাটে-বাজারে চুল কাটা বা সেভ করার সময় অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকে এই ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হেপাটাইটিস সি এর ল্যবরেটরী রক্ত পরীক্ষা সমূহ

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে Hepatitis cরোগ নির্নয় এবং এর সঠিক চিকিৎসা নির্ণয় করা হয়। সাধারণত ৬ মাস পর এই রক্ত পরীক্ষা গুলো আবার কারানো হয় বোঝার জন্য যে, আক্রান্ত ব্যক্তি কি এই ভাইরাস থেকে পরিত্রান পেয়েছে, না কি দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক ইনফেকশন এ আক্রান্ত হয়েছে।

Hepatitis c আক্রান্ত প্রত্যেকেরই উচিৎ, ল্যবরেটরী রিপোর্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নেওয়া। কিছু জরুরী শব্দ যেগুলো হেপাটাইটিস সি রোগ নির্নয় এর ল্যবরেটরী রিপোর্টে পাওয়া যায়:

হেপাটাইটিস সি এর এন্টিজেন পরীক্ষা

শরীরের কোন ফরেন সাবস্টেন্স যেমন Hepatitis c ভাইরাস এর প্রোটিন কে এন্টিজেন বলে।

হেপাটাইটিস সি এর এন্টিবডি পরীক্ষা

Hepatitis c এর এন্টিজেন কে প্রতিহতো করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (বডি’স ইম্মিউন সিস্টেম) যে প্রোটিন তৈরি করে তাকে এন্টিবডি বলে। এই এন্টিবডি প্রতিরোধক এন্টিবডি নয়। যদি কোন ব্যক্তির শরীরে হেপাটাইটিস সি এন্টিবডি পজেটিভ পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে তা তাৎক্ষনিক বা পূর্বের Hepatitis c ইনফেকশন।

হেপাটাইটিস সি এর এইচসিভি আরএনএ পরীক্ষা

হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের জেনেটিক ম্যটেরিয়াল। রক্তে এইচসিভি আরএনএ (HCV RNA) সনাক্ত হলে বুঝতে হবে তা তাৎক্ষনিক সি ইনফেকশন।

হেপাটাইটিস সি এর ভাইরাল লোড পরীক্ষা

রক্তে ভাইরাসের পরিমান। হেপাটাইটিস সি এর ক্ষেত্রে ভাইরাল লোড লিভার ড্যামেজ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত না। এটা হেপাটাইটিস সি চিকিৎসায় প্রভাব ফেলে । এই টেস্ট কে বলা হয় “কোয়ানটিটেটিভ টেস্ট (quantitative test)” ।

হেপাটাইটিস সি এর জেনোটাইপ (Genotype)

হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের প্রকার (type)। হেপাটাইটিস সি এর ৬ রকম জেনোটাইপ আছে (১,২,৩,৪,৫ এবং ৬)। এই সবগুলোই হেপাটাইটিস সি ভাইরাস কিন্তু এদের মধ্যে কিছু গঠনগত সামান্য পার্থক্য আছে। হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা পরিকল্পনার জন্য জেনোটাইপ খুবই গুরুত্বপূর্ন।

হেপাটাইটিস সি ম্যানেজমেন্ট

রক্ত পরীক্ষায়, আপনার শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বা আছে জানতে পারাটা আপনার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক কিন্তু ভাল খবরটা হচ্ছে বেশীর ভাগ ক্রনিক হেপাটাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিই দীর্ঘ ও সুস্থ্য জীবন নিয়ে বেচে থাকতে পারে।

সবসময় হেপাটাইটিস সি এর ম্যানেজমেন্ট ও চিকিৎসায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং প্রতি বছরই এই চিকিৎসা আরও আধুনিকতর হচ্ছে। একজন ভাল চিকিৎসক খুজে বের করা যিনি সব সময় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখছেন এবং তার সাথে স যোগাযোগ করা।

যদিও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আক্রান্ত হবার কারনে আপনার লিভার খানিকটা ড্যামেজ বা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটা খুবই জরুরী যে, বাড়তি লিভার ড্যমেজ এর ব্যপারে সতর্ক থাকা। বিভিন্ন বস্তুর কারনে লিভার ড্যামেজ হতে পারে।

স্বাস্থ্যকর লিভার এর জন্য এটা খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না কিন্তু ক্রনিক হেপাটাইটিস সি এর ক্ষেত্রে এর বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরী। মনে রাখবেন আপনার খাদ্য, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং চামড়ার মাধ্যমে শরীরে যে সব বস্তু প্রবেশ করে তার সবই লিভার হয়ে শরীরের অনান্য অংশে পৌঁছায়।

কিছু নিয়ম আক্রান্ত ব্যক্তিরা মেনে চললে এই বাড়তি লিভার ড্যামেজ হবার সম্ভবনা থেকে বাচতে পারেন যেমন:

  • মদ্যপান পরিহার করা।
  • হেপাটাইটিস ‘বি’ ও হেপাটাইটিস ‘এ’ পরীক্ষা করা ও প্রতিশেধোক টিকা নেওয়া।
  • শরীরের ওজন স্বাস্থ্যসম্মত রাখা।
  • স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহন- অধিক ফ্যাট লিভারের ক্ষতি করে।
  • শরীরের অনান্য অঙ্গ প্রতঙ্গ এর যত্ন নেওয়া ও নিয়মিত সেগুলোর পরীক্ষা করা এবং নিয়মিত ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
  • মনে রাখবেন লিভার ড্যামেজ ও লিভার ক্যান্সার প্রতিহত করতে প্রাথমিক পর্যায়েই তা নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরী।

হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা

ক্রমিক হেপাটাইটিস সি এর ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, লিভারে ক্ষতির পরিমান কমাতে ও লিভারে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে। আপনি যখনই ল্যবরেটরী পরীক্ষায় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা জানতে পারবেন তখনই আপনার উচিৎ লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ (হেপাটোলজীস্ট – Hepatologiest) বা পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজীস্ট Gastroenterologist) এর স্বরনাপন্য হওয়া।

তিনি তখন পরীক্ষা করবেন, আপনি এই ভাইরাসে কত দিন হলো আক্রান্ত হয়েছেন, ভাইরাসের কার্যক্রম (এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না) এবং আপনার লিভারে এই ভাইরাস কোন ক্ষতি সাধন করেছে কি না। এসব বিষয় জানার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন।

হেপাটাইটিস সি এর ইন্টারফেরন থেরাপী

যদি চিকিৎসকেরা হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার প্রয়োজনীতা অনুভব করেন তখন তারা প্রচলিত ইন্টারফেরন থেরাপী যেমন প্যগিলেটেড ইন্টারফেরন আলফা (Pegylated Interferon alpha) ও সাথে মুখে খাবার টেবলেট রিবাভিরিন ( Ribavirin) দিয়ে চিকিৎসা দেন।

Interferon alpha

ইন্টারফেরন আলফা হলো ইনজেকটেড ঔষধ যা সপ্তাহে তিন বার ইনেজেকশনের মাধ্যমে শরীরে দেওয়া হয়। এটা ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করতে শরীর কে সাহায্য করে। এই ঔষধ ব্যহার কালে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন ফ্লুর মত লক্ষন, অবসাদ এবং মাথাব্যথা।

Pegylated Interferon

পাগিলেটেড ইন্টারফেরন হলো ‘ইন্টারফেরন আলফা’ এর পরিবর্ধিত ইনজেকটেড ঔষধ। যা সপ্তাহে এক বার ইনেজেকশনের মাধ্যমে শরীরে দেওয়া হয়। এটা ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করতে শরীর কে সাহায্য করে। এই ঔষধ ব্যহার কালে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন ফ্লুর মত লক্ষন, অবসাদ এবং মাথাব্যথা।

হেপাটাইটিস সি এর ঔষধ

Ribavirin – রিবাভিরিন হলো মুখে খাবার এন্টি-ভাইরাল ঔষধ দিনে দুই বার খেতে হয়। এই ঔষধ একক ভাবে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস এর উপড় কোন প্রভাবই পেলতে পারে না কিন্তু এটা ব্যবহার করা হয় ইনটারফেরনের কার্যকারীতা বাড়ানোর জন্য।

গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস সি

হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েরা তার নবজাতকে এই ভাইরাস সংক্রন এর ভয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। কিন্তু জন্মের সময় মা থেকে নবজাতকে এই ভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। পরিসংখ্যানে দেখা যায় হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে নবজাতকে হেপাটাইটিস সি সংক্রমনের হার প্রায় ৫%।

সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো হেপাটাইটিস সি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ ভ্রুণ এর জন্য অতন্ত্য বিপদজনক। হেপাটাইটিস সি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ রিবাভিরিন, নবজাতকের বার্থ ডিফেক্ট বা জন্মগত ত্রুটির কারন হতে পারে সে কারনে যে সব মহিলা ও পুরুষ রিবাভিরিন ঔষধ ব্যবহার করেন তাদের অবশ্যই উচিৎ জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার করে গর্ভধারন রোধ করা।

তথ্যসূত্র

লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ
১৫০ (৩য় তলা), মীনরোড, পাস্থপথ, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ

Please Click On Just One Add To Help Us

মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।

এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।