উট সাপ খায় কেন?
ইউটিউবের পর্দায় এবং ফেসবুকের পাতায় একটি খবর বেশ প্রদর্শিত হচ্ছে যে উট বিষাক্ত সাপ জীবন্ত গিলে ফেলে। এই ধরণের খবরকে প্রমাণ করার জন্য একটি কোরআনের আয়াতকে উপস্থাপন করা হচ্ছে…
فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ
পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়।
[সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৫৫]
উট মাঝেমধ্যে বিষাক্ত সাপ জ্যান্ত চিবিয়ে খায় এটা একটা চূড়ান্ত রকমের মিথ্যা কথা। উট কখনো ইচ্ছে করে সাপ খায় না কারণ উট সম্পূর্ণরূপে তৃণভোজী প্রাণী। উট জীবন্ত বিষাক্ত সাপ ধরে খেতে গেলে সাপের কামড়ে মারা যাবে। প্রতিবছর ১০% উট মারা যায় সাপের কামড়ে। তাহলে আসুন জানাযাক আসল সত্য
আপনি আরও পড়তে পারেন…. উটের আশ্চর্যজনক অজানা তথ্য … এন্টিভেনম কি? সাপের বিষের প্রতিষেধক| … নাগ মনির রহস্য কি? সাপের মাথায় কি মণি হয়?
উট সাপ খায় কেন?
উট মাঝেমধ্যে বিষাক্ত সাপ জ্যান্ত চিবিয়ে খায় এটা একটা চূড়ান্ত রকমের মিথ্যা কথা। উট কখনো ইচ্ছে করে সাপ খায় না
উট সাপ খায় কেন? বিস্তারিত বিবরণ!
ভাইরাসের প্রোটিন আবরণকে বলে প্রিয়ন। প্রিয়ন নামক জীবাণুর আক্রমণে উটের হায়াম সিনড্রোম রোগ হয়। এই রোগের কারণ প্রিয়ন জীবাণু সনাক্ত করা বেশ কঠিন তাই হায়াম সিনড্রোমের সঠিক কারণ সহজে নির্ণয় করা যায়না। এই রোগ হলে উট একদম খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উট শুধু সুর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই রোগে ৫৫% উট মারা যায়।
এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য উটের মালিক বিষাক্ত সাপ ধরে আধমরা করে উটের গলায় ঢুকিয়ে দেয়। সাপ যখন পাকস্থলীতে যায় তখন তার বিষের প্রভাব শুরু হয়। এই বিষের তিব্রতায় উটের জ্বর আসে যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে।
অবলা প্রাণী কিছু বলতে না পারলেও অঝোরে চোখের জল ফেলে।চোখের পানিকে তিরয়াক বলা হয়।
অনেক গর্দভ এই চোখের জল কে চামড়ার থলিতে সংগ্রহ করে মহামূল্যবান ঔষধ হিসেবে। এটা নাকি যে কোন বিষের প্রতিষেধক।
ভাবাযায় মূর্খতার চূড়ান্ত রূপ আর কি হতে পারে? উটের চোখের পানি যদি বিষের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেত তাহলে তো পুরু পৃথিবীতে ইনজেকশন হিসেবে এটাই বিক্রি হতো রে বোকাচো… এন্টিভেনাম আবিষ্কারের দরকার কি ছিলো?
বিষের তাড়নায় উটের দেহে পানি ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশন হয় ফলে উট প্রচুর পানি পান করতে থাকে এটা দেখে মালিক ভাবে রোগ নিরাময় হচ্ছে। এই পপিপাসা প্রায় আট ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। জেনেবুঝে অবুঝ প্রাণিকে এরকম কষ্ট দেয়ার মত জঘন্য কাজ না করাই ভালো।
সাপ খেলে কি উটের রোগ ভালো হয়?
এই সাপ থেরাপিতে রোগের উপশম হয় কিছুটা। তার বৈজ্ঞানিক যুক্তি হলো সাপের বিষের বিরুদ্ধে উটের রক্তে এন্টিবডি তৈরি হয় যা বিষকে নষ্ট করে দেয়। এই এন্টিবডি তৈরি করার জন্য উট দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের উদ্দিপিত করে।
এই এক্সট্রিম লেভেলের প্রতিরোধ ব্যবস্থার চাপে পরে অন্যান্য রোগ সৃষ্টকারী জীবাণু স্রেফ খড়কুটোর মত ভ্যানিস হয়ে যায়।
উটের কষ্ট কমানোর জন্য অল্প পরিমানে সাপের বিষ তার দেহে প্রয়োগ করা যায় এতে উপকারও পাওয়া যাবে এবং কষ্ট কমানো যাবে।
সাপের কামড়ে উটের মৃত্যু হয় কি?
অল্প পরিমানে সাপের বিষ উটের দেহে ঢুকলে উটের রক্তে বিষের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয়। এই এন্টিবডি বিষকে ধ্বংস করে। কিন্তু একটি ভাইপেরিডি গোত্রের মরুভূমির সাপ যেমন- পিট ভাইপার,স্যান্ড ভাইপার,অ্যাডার ভাইপার,গ্যাবন ভাইপার,রেটল স্নেক, ব্লাক কোবরা ইত্যাদি যদি একটি উটকে পূর্ণ দংশন করে তবে উটের নিশ্চিত মৃত্যু হবে।
এই সাপদের বিষদাঁত বেশ বড় তাই কামড় দেয়ার সময় মাংসপেশির গভীরে প্রায় হাড়ের উপর পর্যন্ত কামড় বসিয়ে প্রচুর বিষ ঢেলে দেয়। এই বিশাল পরিমান হিমোটক্সিক ও মায়োটক্সিক বিষের বিরুদ্ধে খুব তারাতারি বেশি পরিমাণ এন্টিবডি তৈরি হয়না যা বিষকে নষ্ট করে দেবে, তাই বিষের প্রভাবে উটের মৃত্যু ঘটে।তবে অনেক সময় সাপ ভয় দেখানোর জন্য হালকা কামড় দেয় যাকে ফলস বাইট বলে এতে অল্প পরিমান বিষ উটের দেহে প্রবেশ করে বলে উটের তেমন কিছু হয় না। আপনি জানলে অবাক হবেন যে আরবদেশে প্রতিবছর ১০% উট মানে কয়েক হাজার উট সাপের দংশনে মারা যায়।
উটের রক্ত থেকে এন্টিভেনাম তৈরি হয়
বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে Dubai’s Central Veterinary Research Laboratory (CVRL) সংস্থা উটের রক্ত থেকে সাপের বিষের প্রতিষেধক প্রস্তুত করার প্রযুক্তি হাতে নিয়েছে এবং সফল হয়েছে
CVRL’s সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক পরিচারক Dr Ulrich Wernery বলেন আমরা উটের দেহে প্রতিসপ্তাহে ক্রমাগত ভাইপেরিডি গোত্রের সাপের বিষ স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগ করে এর রক্তে এন্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি এবং রক্তের প্লাজমা থেকে এন্টিভেনাম সংশ্লেষ করতে সফল হয়েছি এই এন্টিবডির নাম দেয়া হয়েছে camelid IgG.
এই এন্টিভেনাম ঘোড়ার দেহ থেকে প্রাপ্ত এন্টিবডির তুলনায় উন্নত। ঘোড়ার দেহ থেকে প্রাপ্ত এন্টিভেনাম নিম্নতাপমাত্রায় ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয় কিন্তু উটের দেহ থেকে প্রাপ্ত এন্টিভেনম রুম টেম্পেরেচার(২৫ডিগ্রি সে.) বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।
আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে রেফ্রিজারেটর এর অভাবে এন্টিভেনম সংরক্ষণ করা যায় না তাই অনেক রোগীর মৃত্যু ঘটে। এবার উটের এন্টিভেনাম দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
উট জীবিত সাপ খায় কি কারণে কি?
উট জীবিত সাপ নিজে নিজে গিলে খায়না। হায়াম রোগ হলে উটের মালিক উটকে জোড় করে বিষাক্ত জীবিত সাপ খাওয়ায়।
উটের হায়াম রোগ কী?
অজানা জীবাণুর আক্রমণে উটের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় উট কিছু খায়না সুধু সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে একে হয়াম রোগ বলে। এই রোগের এখন পর্যন্ত কোন ঔষধ আবিষ্কার হয়নি। প্রায় পঞ্চান্ন শতাংশ উট এই রোগে মারা যায়।
why camel eat snake in bangla
camel and snake. camel disease hayam in bangla.camel anti venom in bangla. utt sap khay keno? hayam disease ki? tirak ki? produce anti venom from camel.
Please Click on Just one Add to help us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।
tag: উট সাপ খায় কেন? উট সাপ খায় কেন? উট সাপ খায় কেন? উট সাপ খায় কেন?উট সাপ খায় কেন?উট সাপ খায় কেন?