কোকাকোলায় কি শুকরের চর্বি মেশানো হয়?
কোকাকোলা শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি করে কি ?….. মাঝে মধ্যে ফেসবুকের নিউজফিড গরম থাকে কিছু ধর্মীয় প্রচারণা নিয়ে।
কিছু বিখ্যাত ইসলামিস্ট ধর্মীয় অনুভূতিকে চাঙ্গা করতে এক ধরণের উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করেন।
আবার কিছু ইসলামিক বক্তা ওয়াজের সময় মাইক্রোফোন ফাটিয়ে ফেলেন অমুসলিমদের চক্রান্ত বর্ণনা দিতে দিতে।
এই সব চমকপ্রদ প্রচারের মধ্যে একটি বিখ্যাত বক্তব্য হলো ” কোকাকোলা শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি”।
Coca-Cola, পেপসিতে শুকরের চর্বি মেশানো হয় এই গপ্পো শুনে শুনেই আমাদের এই প্রজন্ম বড় হয়েছে।
মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করার জন্য অমুসলিম চক্রান্তকারীরা কোকাকোলার মধ্যে শুকরের চর্বি মিশিয়ে বিক্রি করছে।
Coca-Cola খেলে ঈমান থাকবে না।আমরা সবাই জানির শুকর খাওয়া হারাম।
তো আপনার কি মতামত কোকাকোলায় কি শুকরের চর্বি মেশানো হয়? তথ্যটি সঠিক না গুজব সেটা পরীক্ষা করার সুযোগ আমাদের মত সাধারণ মানুষদের কারোরই ছিলো না।
যাই হোক অনেক প্যাঁচাল হলো এবার জানাযাক ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে।
আপনি আরো পড়তে পারেন…… নাগ মনির রহস্য/সাপের মাথায় কি মণি হয়? …… এন্টিভেনম কি? সাপের বিষের প্রতিষেধক|
কোকাকোলার ইতিহাস
১৮৮৬ সালে আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কলম্বাস নামক শহরে অবস্থিত ইগল ড্রাগ এন্ড কেমিক্যাল কোম্পানিতে Coca-Cola’র ফর্মুলা সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন জন পেম্বারটন।
তিনি একজন ড্রাগিস্ট(ঔষধ প্রস্তুতকারী) ছিলেন। প্রথমে Coca-Cola কোকা ওয়াইন নামে পরিচিত ছিলো। অনেকে ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা নামেও চিনতো।জন পেম্বারটন Coca-Cola আবিষ্কার করেছিলেন একটি ওষুধ হিসেবে।
ব্যবসায়ী আসা গ্রিগস ক্যান্ডেলার Coca-Cola চমকপ্রদ কৌশলে মানুষের মাঝে পানীয় হিসেবে পরিচিত করেন।যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৪ সালের ২৭ মার্চ থেকে দ্য কোকা-কোলা কোম্পানি রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক।
কোকাকোলার ফর্মুলা
ন্যাচারাল ফ্লেভার নামক একটা উপাদান দিয়ে Coca-Cola বানানো হয়। এই ন্যাচারাল ফ্লেভারের উপাদান কি সেটা বিশ্বের কেউ জানেনা।শুধু কোকাকোলা কোম্পানির মালিক পক্ষই জানে।
বাংলাদেশের ফ্যাক্টরিরও কেউ জানেনা। ন্যাচারাল ফ্লেভারের এই ফর্মুলার সিক্রেট কে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বানিজ্যিক সিক্রেট।
এটা শত বছর ধরে সবার কাছে অজানা আছে। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত কোকাকোলার ফ্যাক্টরিতে কর্মরত কোন কর্মকর্তাও জানে না।
কোকাকোলা তৈরির উপাদান
কোক তৈরির উপাদান |
---|
১। কার্বোনেটেড ওয়াটার ২।চিনি (সুকরোজ বা হাই-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ দেশ বা এলাকার ওপর ভিত্তি করে) ৩।ক্যাফেইন ৪। ফসফরিক এসিড ৫। ক্যারামেল (ই১৫০ডি) ৬। প্রাকৃতিক ফ্লেভার বা স্বাদ। |
কোকাকোলার পুষ্টিমান
এক ক্যান কোক (১২ ফ্লুইড আউন্স/৩৫৫ মিলিলিটার)
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শর্করা (সম্পূর্ণটাই চিনি থেকে) | ৩৯ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৫০ মিলিগ্রাম |
চর্বি | ০ গ্রাম |
পটাশিয়াম | ০ গ্রাম |
ক্যালরি | ১৪০ |
কোকাকোলায় কি শুকরের চর্বি মেশানো হয়?
গুজবটা যদিও হাস্যকর তবুও বলি কোকা কোলার ফ্যাক্টরিতে কোন শুকরের রক্ত/মাংস/চর্বি প্রসেসিং করার মত কোন অংশ নেই।
সুতরাং শুকরের রক্ত/চর্বি যোগ করার কোন প্রশ্নই আসে না। প্রতিদিন কোকা কোলা ১.৮ বিলিয়নের বেশি কোকের বোতল বিক্রি করে। পৃথিবীতে মানুষ আছে ৭.৫ বিলিয়ন।
তারা যদি শূকরের রক্ত/চর্বি যোগ করতোই তাহলে সেটা পূরন করার জন্য প্রচুর শূকরের প্রয়োজন হতো। প্রতিদিন এত শুকর মারলে এটা গোপন রাখা খুবই কঠিন হবে।
কোকাকোলা কিভাবে বানানো হয়?
কোকাকোলা কিভাবে তৈরি হয়?
Coca-Cola বানানোর প্রসেস অনেকটা অন্যান্য বেভারেজ ফ্যাক্টরির মতই। তবে Coca-Cola কোয়ালিটি মেইন্টেইন করার ব্যাপারে কোন ছাড় দেয় না।ইন্টারন্যাশেনাল বেভারেজ লিমিটেড সম্পূর্ন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলে।এখানে শ্রমিক নেই বললেই চলে।
কোক ছাড়াও স্প্রাইট এবং ফান্টা একই ফ্যাক্টরিতে একই যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে বানানো হয়। Coca-Cola কোন উপাদান, কোন পদ্ধতি ব্যাবহার করে উৎপাদন করে সেটা তাদের ট্রেড সিক্রেট।এটা বাইরে প্রকাশ করা অন-ইথিকাল এবং আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। Coca-Cola উৎপাদন নিয়ে ন্যাশেনাল জিওগ্রাফির একটা ডকুমেন্টারি আছে, সেটা দেখলেই ধারনা পেয়ে যাবেন।
কোকাকোলার রং কালো হয় কেন?
Coca-Colaকালো রং আনার জন্য কোনো ধরনের কালার ব্যবহার করা হয়না।
চিনিকে (সুগার) হিট দিয়ে প্রসেসিং করার কারনে কালো রং আসে, যা সম্পূর্ন ন্যাচারাল।
কোকাকোলা বাংলাদেশে কত সালে আসে?
বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে Coca-Cola নিয়ে আসে। যা আজ অবধি বাংলার মানুষের তেষ্টা মিটিয়ে যাচ্ছে।
কোকাকোলা কোম্পানি বাংলাদেশ
বাংলাদেশে Coca-Cola প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ
বাংলাদেশের ৩টি প্রতিষ্ঠান Coca-Cola উৎপাদন করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের প্রথম সারির সনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো…
- ১. আব্দুল মোনেম লিমিটেড (AML)
- ২. প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড
- ৩. ইন্টারন্যাশেনাল বেভারেজ লিমিটেড (IBL)
বাংলাদেশে Coca-Cola’র নিজস্ব ফ্যাক্টরি হলো “ইন্টারন্যাশেনাল বেভারেজ লিমিটেড”।
Coca-Cola’র ফ্র্যাঞ্চাইজি ফ্যাক্টরি হলো আব্দুল মোনেম এবং প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড। Coca-Cola থেকে লাইসেন্স নিয়ে আব্দুল মোনেম ও প্রাণ বাংলাদেশে Coca-Cola বানায়। ঢাকা অঞ্চলে Coca-Cola সাপ্লাই করে IBL।
সিলেট, চট্টগ্রামে Coca-Cola সাপ্লাই করে আব্দুল মোনেম।
উত্তরবঙ্গে সাপ্লাই করে প্রাণ বেভারেজ কোম্পানি। আপনার অঞ্চলে কারা কোকাকোলা সাপ্লাই করে সেটা জানতে বোতলের গায়ে AML বা IBL লেখা দেখে বুঝে নিন।
বাংলাদেশে কোকাকোলা কিভাবে বানায়?
Coca-Cola’র নামে অনেক গুজব যে চলমান তা Coca-Cola কোম্পানিও জানে, তাই কোক উৎপাদনের সব কাচামাল বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় মুসলিম দেশ “মিশর” থেকে। তারপর সেটা দেশে প্রসেসিং করা হয় এবং কোক উৎপাদন করা হয়।
- Coca-Cola’র প্লাস্টিকের বোতল সাপ্লাই করে “প্রাণ”।
- বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি Coca-Cola উৎপাদনের জন্য বানানো হয়, IBL ১২টি ধাপে পানিকে বিশুদ্ধ করে। যা দেশের অন্য কোন ফ্যাক্টরিতে করে না।
- Coca-Cola’র বোতল উৎপাদনের জন্য ভার্জিন প্লাস্টিক (আগে কখনো ব্যবহার হয়নি এমন প্লাস্টিক) ব্যবহার করা হয়।
- AML, IBL ও প্রাণ কোম্পানি বাজারজাত করে।
Coca-Cola নিয়ে পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতামত
Coca-Colaফ্যাট জাতীয় খাবার, আপনার স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে কোমলপানীয় এড়িয়ে চলা উচিৎ।
যদি ন্যাচারাল ফ্লেভার নিয়ে খুতখুতে থাকেন, তাহলেও কোক এড়িয়ে চলতে পারেন।
তবে Coca-Cola সবচেয়ে বিশুদ্ধ উপায়ে কোক যাতে আপনাদের হাতে পৌছে দিতে পারে সেই চেষ্টা করে।
তাই নিশ্চিন্তে Coca-Cola খেতে পারেন।
Coca-Cola নিয়ে যুক্তি তর্ক
Coca-Cola যদি শুকরের চর্বি দিয়ে বানানো হতো তবে মধ্যপ্রাচ্য সহ অনেক কট্টরপন্থী মুসলিম দেশ যেমন পাকিস্তানে Coca-Cola চলতো না।
আবার একটা কোম্পানি প্রায় ১৫০ বছর সুনামের সাথে ব্যবসা করতে পারতো না।
Coca cola ki sukorer chorbi die banay
cocacola ki die banay ? cocacola in bangladesh?cocacola kivabe banay? cocacola ki die banay?cocacola formula.
Please Click On Just One Add To Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।