ফ্যাটি লিভার রোগ কী?ফ্যাটি লিভার রোগের কারণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!
এটি যকৃতের একটি অসুখ যা সাধারণত উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বে ক্রনিক লিভার ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদী যকৃতের রোগের কারণ হিসেবে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এবং অ্যালকোহলের পরেই এর অবস্থান। আমাদের দেশে অবশ্য যকৃতের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার জন্য অ্যালকোহলের চেয়ে এ রোগটি বেশি দায়ী।
আপনি আর পড়তে পারেন …… হেপাটাইটিস-বি কী? হেপাটাইটিস-বি লক্ষণ ও প্রতিরোধ! …… হেপাটাইটিস সি কী?হেপাটাইটিস সি লক্ষণ ও প্রতিরোধ! … হেপাটাইটিস-ই কী! হেপাটাইটিস-ই কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ! … হেপাটাইটিস এ কী? হেপাটাইটিস এ লক্ষণ ও প্রতিরোধ! .
ফ্যাটি লিভার রোগের প্রকারভেদ
ফ্যাটি লিভার রোগটি দুই রকমের হতে পারে।
১. সাধারণ ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার)
২. নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিস
ফ্যাটি লিভার রোগের পরিণতি
সাধারণ ফ্যাটি লিভার ডিজিজের পরিণতি সাধারণত খারাপ না হলেও ন্যাস লিভার ফাইব্রোসিস, এমনকি সিরোসিস সৃষ্টি করতে পারে।যারা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে ভোগেন তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে ইনসুলিন কাজ করে না, যদিও এদের সবার মধ্যে গ্লুকোজ অসহনীয়তা থাকে না।
ফ্যাটি লিভার রোগের কারণ
অনেকের মতে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ মেটাবলিক সিনড্রোম যথা হাইপার ট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা (বিএমআই ২৫-এর চেয়ে বেশি) প্রভৃতি যকৃতজনিত জটিলতা থেকে জন্ম নিতে পারে।
ফ্যাটি লিভার রোগের লক্ষণ
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে রক্তে যকৃতের এনজাইমগুলোর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বেশিরভাগ মানুষেরই কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অনেকের কিছু লক্ষণ দেখা যায়।যেমন-
- লিভার সিরোসিসের জটিলতা বৃদ্ধি পেয়ে রক্তবমি, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার মত লক্ষণ প্রকাশ পায়।
- বুকের উপর দিকে ও পিঠে ব্যথা হয়।ব্যথা হঠাৎ শুরু হয় কিন্তু সহজে বন্ধ হয় না।
- তৈলাক্ত খাবার খেলে ব্যথা বেড়ে যায়।
- বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে বুকে ও পিঠে ব্যথা হয়।
- খাবারে অরুচি দেখা যায়।
কিছু রোগী ফ্যাটি লিভার অথবা লিভার সিরোসিস নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন কিন্তু তারা ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে না জানার কারণে এই রোগকেই লিভার সিরোসিস মনে করেন। ফ্যাটি লিভারে জন্ডিসের লক্ষণ সাধারণত দেখা যায় না তবে, সিরোসিস হলে জন্ডিসও দেখা দিতে পারে।
ফ্যাটি লিভার এর চিকিৎসা ও ঔষধ
এখন পর্যন্ত এ রোগের যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেগুলোর প্রধান লক্ষ্য হলো ওজন হ্রাস করা এবং ইনসুলিন প্রতিরোধজনিত সমস্যা দূর করা। এসব ক্ষেত্রে যকৃতের কার্যক্ষমতার উন্নতির জন্য মেটফরমিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, যেসব ডায়াবেটিক
রোগীর নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ আছে তাদের জন্য মেটফরমিন ব্যবহার করা: যেতে পারে। মেটফরমিন ছাড়াও পায়োগ্লিটাজোন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওজন হ্রাসের ফলে যকৃতের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ-সংক্রান্ত অবস্থারও উন্নতি হয়। এক্ষেত্রে স্ট্যাটিনজাতীয় ওষুধগুলোর কোনো ভূমিকা নেই। তবে, হাইপারলিপিডেমিয়ার জন্য এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। ওজন কমান, সুস্থ থাকুন।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের উপায়
- প্রতিদিন সময়মত খাবার খাবেন, কোন অবস্থায় খাদ্য গ্রহণের সময় এলোমেলো করবেন না।
- পাতে লবণ খাবেন না।
- মিষ্টিজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খাবেন।
- তৈলাক্ত খাবার কম খাবেন,বাসায় রান্নার সময় যতটা সম্ভব কম তেল ব্যবহার করবেন।
- মদ পান করবেন না।যাদের মদ পানের অভ্যাস আছে তারা মাসে সর্বোচ্চ ২ বারের বেশি মদ পান করবেন না।
- ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
- প্রতিদিন ঘাম ঝরানোর মত ব্যায়াম করলে ফ্যাটি লিভার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৮০% দূর করা সম্ভব।
লেখক
ডাঃ শামসুল আরেফিন, আইসিডিডিআর,বি