- বাঁশের পরিচয়
- বাঁশের শ্রেণিবিন্যাস
- বাঁশের বৈজ্ঞানিক নাম কি?
- বাঁশ ফুল
- ১।ধারাবাহিক ফুল ধারণকারী বাঁশ
- ২। বিক্ষিপ্ত সময়ে ফুল ধারণকারী বাঁশ
- ৩। গণপুষ্প ধারণকারী বাঁশ
- বাঁশ ফুলের আশ্চর্য রহস্য
- ৩। বাঁশ ফল
- বাঁশ ফলের ঔষধি গুণ
- বাঁশ ফলের উপকারিতা
- প্রশ্ন এবং উত্তর
- বাঁশ ফল কি খাওয়া যায়?
- বাঁশ ফুল কখন ফোটে?
- বাঁশ ফল কোথায় পাওয়া যায়?
- Bash ful, Bash Fol
বাঁশ ফুল।বাঁশ ফল এর অসীম রহস্য।… কথায় কথায় আমরা অনেক বন্ধুকেই বাঁশ দেই, কিন্তু আপনি জানেন কি বাঁশের রয়েছে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য যা অন্যকোন উদ্ভিদের নেই। বাঁশের গুণের কথা জানলে আপনি আর কাওকে বিনামূল্যে বাঁশ দিতেন না।
অনেকে আবার বাঁশ খেয়ে লজ্জায় মাথা নত করে কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না সত্যিই বাঁশ রান্না করে খাওয়া হয়।
যাই হোক অনেক কথা হলো এবার শোনাযাক বাঁশ ফুলের আশ্চর্য তথ্য।
আপনি আরো পড়তে পারেন…. টক খাওয়া কি পুরুষের সেক্সের জন্যে খারাপ? ….. নাগ মনির রহস্য/সাপের মাথায় কি মণি হয়? জোনাকি পোকার লেজে আলো জ্বলে কেন?
বাঁশের পরিচয়
যদি বলি বাঁশ আসলে ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ মানে ধান বা গমের মত গাছ আরকি! তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? জি হ্যাঁ বাঁশ ঘাস পরিবারের বৃহত্তম সদস্য।
বাঁশ সাধারণত একসাথে অনেকগুলো একটি থোক আকারে জন্মায়। প্রত্যকটি থোকে ৮-৭০ টি বাঁশ একসাথে থাকে।বাঁশের এই থোক কে বাঁশ ঝাড় বলে। বাঁশের বয়স বৃদ্ধির সাথেসাথে কাণ্ডের মজ্জা নষ্ট হয়ে যায় তাই বাঁশের কাণ্ড ফাঁপা।
বাঁশের শ্রেণিবিন্যাস
জগৎ | Plantae |
শ্রেণী | Angiosperms |
উপশ্রেণী | Monocots |
বর্গ | Poales |
পরিবার | Poaceae |
উপপরিবার | Bambusoideae |
মহাগোত্র | Bambusodae |
গোত্র | Bambuseae |
বাঁশের বৈজ্ঞানিক নাম কি?
Melocanna baccifera(বাঁশ)
বাঁশ ফুল
বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশে বিভিন্ন সময়ে ফুল আসে। ফুল আসার উপর ভিত্তি করে বাঁশ তিনভাগে বিভক্ত।
বাঁশের প্রকারভেদ
১।ধারাবাহিক ফুল ধারণকারী বাঁশ
কিছু প্রজাতির বাঁশে প্রত্যক বছর ফুল ফোটে।আফ্রিকান অঞ্চলের বাঁশ গুলোতে প্রত্যক বছর ফুল আসে।
অন্যান্য বাঁশের মত এই বাঁশ ফুল দেয়ার পরে মারা যায় না।
২। বিক্ষিপ্ত সময়ে ফুল ধারণকারী বাঁশ
এই ধরণের বাঁশে ৫-১০বছর পরপর ফুল ধরে।প্রতিকূল আবহাওয়াজনিত কারণ যেমন- অতিরিক্ত খড়া,বৃষ্টিপাত হলে বাঁশ বাগানে এমন ফুল দেখা যায়।
এই ধরণের বাঁশের প্রজাতি পৃথিবীতে খুব কম আছে। Guadua angustifolia প্রজাতির বাঁশে এরকম ফুল দেখা যায়।
৩। গণপুষ্প ধারণকারী বাঁশ
এধরণের বাঁশে কোনোটিতে ৫০ বছর, কোনোটিতে বা একশো-সোয়াশো বছর পরেও ফুল ধরে।
একই বয়সী বাঁশ পৃথিবীর যেখানেই থাকুক সবার একসাথে ফুল ফোটে।
ফুল ফোটার পর বাঁশ মারা যায়। ভারতের মিজোরাম রাজ্য, বার্মার চিন রাজ্য আর বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে Melocanna baccifera নামে একপ্রকার মুলি বাঁশ জন্মে যাতে ৪৮ বছর পরে ফুল ধরে।
এদিকে জাপানী বাঁশ Phyllostachys bambusoids ১৩০ বৎসর পর পর্যন্ত ফুলবতী হতে পারে।
বাঁশ ফুলের আশ্চর্য রহস্য
অন্যান্য উদ্ভিদের মত বাঁশের ফুল সাধারণ নয়। বাঁশ ফুল নিয়ে আছে আশ্চর্য রহস্য।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগণ আজ পর্যন্ত বাঁশ ফুল এর রহস্যের কিনারা করতে পারেনি। আসুন যানাযাক বাঁশ ফুলের আশ্চর্য রহস্য সম্পর্কে….
১। বাঁশের গণপুষ্পায়ণ
একই প্রজাতির একই বয়সী বাঁশ পৃথিবীর যেখানেই যে পরিবেশেই থাকুকনা কেন সবার একসাথে ফুল ফোটে।এই ঘটনাকে বলে গণপুষ্পায়ণ। বাঁশে গণপুষ্পায়ণ দেখা যায়।
উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেই, ধরুন Melocanna baccifera প্রজাতির একটি বাঁশের অনেকগুলো বীজ বা কোঁড়ল/সাকার/রাইজোম এশিয়া, আফ্রিকা,ইউরোপ,উত্তর আমেরিকা,দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে রোপন করলেন ৫০ বছর পর দেখবেন সব মহাদেশে লাগানো বাঁশে একই দিনে ফুল ধরেছে।
আবার এই বাঁশের যে নতুন চাড়া গজাবে তাতেও ৫০ বছর পরেই ফুল ধরবে।পরিবেশ, আবহাওয়া কোনো কিছুই তাদের এই ৫০ বছর পর ফুলফোটার নিয়মকে ভাংতে পারবে না।
কেন এমন হয়, এর সঠিক কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো অনুসন্ধান করে চলেছেন।কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন একটি আদিম বাঁশ (মাদার প্লান্ট) হতে কোঁড়দগমের মাধ্যমে আজকের পৃথিবীর সব বাঁশের জন্ম হয়েছে।
অর্থাৎ মাদার প্লান্ট ধিরে ধিরে বিভাজিত হয়ে নতুন নতুন বাঁশের জন্ম দিয়েছে। প্রক্রিয়াটি ক্লোন করার মত। যেহেতু বাঁশের ফুল ফোটে দেরিতে তাই দেহের বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করাই সহজ উপায়।
বীজের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করলে জীন বিনিময় হয় ফলে দৈহিক বৈশিষ্টের মধ্যে নতুন নতুন বৈশিষ্টের মিশ্রণ ঘটে। এতে বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়। কিন্তু সরাসরি দেহ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন বংশ সৃষ্টি হলে বৈশিষ্টের বিশুদ্ধতা রক্ষা পায়।
একারণে একই প্রজাতির বাঁশ পৃথিবীর যেখানেই থাকুক সবার জীনেটিক বৈশিষ্ট্য একই। তাই পরিবেশের তোয়াক্কা না করে সব বাঁশে একসাথে ফুল ফোটে। সবার ফুল ফোটার জন্য দায়ী জীন একই।
ফুল ধরার জন্য দায়ী genetic alarm clock বেজে উঠলে সব বাঁশে ফুল ফোটে। হাজার বছর ধরে বাঁশের এই জেনেটিক কোড অপরিবর্তিত আছে।
আবার অনেক বিজ্ঞানী মতামত দিয়েছে যে, বাঁশ গাছের প্রতিটি উদ্ভিদকোষের ভেতরে ফুলফোটার গাণিতিক নিয়ম-নীতি নির্ধারিত থাকে। এই নিয়মে সঠিক সময় উপস্থিত হলে সব বাঁশে একসাথে ফুল ফোটে।
২। বাঁশের মরণ ফুল
গণপুষ্পায়ণ হয় যেসব বাঁশে তারা ফুল দেয়ার পর মারা যেতে শুরু করে।ফল ধরার পর বাঁশ পুরোপুরি মারা যায়। কেন এমন হয়? এর উত্তরে বিজ্ঞানীগণ দুটি মতবাদ দিয়েছেন।
প্রথমত, বাঁশগাছের ফুল ও বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়া বেশ জটিল। ফুল আর বীজ সৃষ্টি করতে বাঁশের যে পরিমাণ জীবনীশক্তি খরচ হয়, তাতেই বাঁশ মারা পড়ে।
দ্বিতীয় মতবাদ হচ্ছে, নতুন চারা বাঁশগাছকে জায়গা করে দিতেই মা বাঁশ গাছগুলো নিজেরা মরে যায়।
৩। বাঁশ ফল
বাঁশ ফুল ফোটার পর এই ফুল থেকে ফল হয়।বাঁশে ফল দেখতে সুপারি বা জলপাই আকৃতির, কতকটা আবার ছোট ডাবের মত দেখতে। বাঁশ ফল দেয়ার পর মরে যায়।বাঁশ ফল পড়ে গাছের তলায় বিছিয়ে থাকে।
বাঁশ ফলের ঔষধি গুণ
বাঁশ ফল এর প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। বাঁশ ফল অ্যাফ্রোডিসিয়াক ধরণের খাবার।গ্রিক ভালোবাসা ও কামের দেবী অ্যাফ্রোদিতির নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম দেওয়া এক বিশেষ ধরণের খাবারের নাম অ্যাফ্রোডিসিয়াক ফুড (Aphrodisiac Food)।
বাঁশ ফলের উপকারিতা
এই অ্যাফ্রোডিসিয়াক খাবার (Aphrodisiac Food) খেলেই আপনার মনে দারুণ প্রেম জাগবে বা আনন্দের বন্যা বইবে। মিলনের সেই বিশেষ মুহূর্ত হয়ে উঠবে আরও বেশি কামোদ্দীপক (libido)।
তাই গহিন জঙ্গলে বিপদ উপেক্ষা করে কবিরাজরা বাঁশ ফল সংগ্রহ করতে যায়।
৪। বাঁশ ফুল অমঙ্গলের প্রতীক
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লোকজন বাঁশফুল ফোটাকে অশুভ মনে করে। দীর্ঘ সময় পর বাঁশ বাগানে ফুল ফুটতে দেখলে তারা ভীত হয়ে যায়।দলবেধে ছুটে যায় বাঁশ ফুল কেটে ফেলতে। কারণ……
বাঁশ ফুল দুর্ভিক্ষের প্রতীক
বাঁশ ফুল থেকে প্রচুর বীজ হয়। সে বীজ খেতে দূরদূরান্ত থেকে বাঁশ বনে ছুটে আসে কালো ইঁদুরের ঝাঁক। প্রচুর খাবার পাওয়ায় দ্রুত বংশ বিস্তার করে কালো ইঁদুররা। এতে ইঁদুরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।
এই ইঁদুরের ঝাঁক সংখ্যায় কয়েক শ কোটি হতে পারে। এই বিশাল সংখ্যক ইঁদুর মেরে শেষ করা অসম্ভব কাজ। এ ঘটনাকে বলা হয় ‘ইঁদুর বন্যা’। বাঁশ ফল শেষ হলে এই ইঁদুরগুলো আশপাশের লোকালয়েও হানা দেয়।
ক্ষেতের ফসল, গুদামের ফসল, ঘরের ফসল-সবই খেয়ে সাফ করে। লোকালয়ে নেমে আসে মহা দুর্ভিক্ষ। অনাহারে বহু লোকের মৃত্যু ঘটে। দুর্ভিক্ষেরর পাশাপাশি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্লেগের মতো মারণঘাতী ইঁদুর-বাহিত রোগ।
খাবারের অভাবে না মরলেও মহামারিতে মারা যায় হাজার হাজার মানুষ। এক্কেবারে দ্বিমুখী আক্রমণ। ১৮৬২ আর ১৯১১ সালে পিরো মিজোরাম প্রদেশ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছিল। ১৯৫৮-১৯৫৯ এবং ২০০৬-২০০৮ সালেও যথানিয়মে পাহাড় ছেয়ে যায় কালো ইঁদুরে, দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় গোটা প্রদেশে।
১৯৫৮-১৯৫৯ এর সময় আসাম সরকার প্রতিটি ইঁদুর মারার বিনিময়ে সত্তর পয়সা করে দিত।অন্তত বিশ লক্ষ ইঁদুর মারা হয়েছিল মিজোরামে, তবু তাতে দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যায়নি।
২০০৬ সালে আবার মিজোরামের বাঁশগাছে ফুল দেখা দেয়। ২০ শতাংশ মানুষ ভয়ানক খাদ্য সংকটের মুখে পড়ে। বাংলাদেশের পাহাড়গুলোতেও অল্পবিস্তর খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীদের কাছে এই বাঁশ ফুল, ফল,আর ইঁদুর বন্যা এখনো বিপুল রহস্যের আধার।
৫। বাঁশ ফল ও মাওতাম
বাঁশ ফল খেতে বাঁশ বাগানে জড়ো হয় কালো ইঁদুরের দল। বাঁশ ফল শেষ হয়ে গেলে ইঁদুর ক্ষেতের ও গোলাঘরের ফসল খেয়ে সাবার করে। ইঁদুরের আক্রমণে পুরো মিজোরাম প্রদেশ মারাত্মক খাদ্যসংকটের মুখে পড়ে।
দেখা দেয় মহা দুর্ভিক্ষ এই দুর্ভিক্ষকেই মিজোরামের মানুষ মাওতাম বলে।মিজো ভাষায় মাও অর্থ বাশঁ এবং তাম অর্থ মৃত্যু।
প্রশ্ন এবং উত্তর
বাঁশ ফল কি খাওয়া যায়?
বাঁশ ফল খাওয়া যায়। বাঁশ ফলের অনেক ভেষজ গুণ আছে। বাঁশ ফল অনেক দূর্লভ। জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করতে বাঁশ ফল খাওয়া হয়।
বাঁশ ফুল কখন ফোটে?
কিছু প্রজাতির বাঁশে প্রত্যক বছর ফুল ফোটে।কিছু প্রজাতির বাঁশে ৫-১০বছর পরপর ফুল ধরে।কোনোটিতে ৫০ বছর, কোনোটিতে বা একশো-সোয়াশো বছর পরেও ফুল ধরে।
বাঁশ ফল কোথায় পাওয়া যায়?
বাংলাদেশের পাহাড়গুলোতে গহিন জঙ্গলে বাঁশ ফল পাওয়া যায়।
Bash ful, Bash Fol
Bamboo flower, Bamboo fruits, Bash foler upokarita, bash ful kokhon dhore?
Please Click On Just One Add To Help Us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।
All photo credit Goes to sutterstock.com