ব্যাকটেরিয়া কি?প্রকারভেদ, উপকারিতা,অপকারিতা,ব্যবহার!
ব্যাকটেরিয়া কি?
ব্যাকটেরিয়া হল মনেরা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত আদি নিউক্লিয়াস যুক্ত এককোষী ছোট আণুবীক্ষণিক অণুজীব।
আপনি আরো পড়তে পারেন…. মৃত্যু কী? মানুষ মলে কেন?
ব্যাকটেরিয়া শব্দের উৎপত্তি
গ্রিক শব্দ Bacterion অর্থাৎ little rod থেকে Bacteria শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ দন্ড।কারণ প্রথম আবিষ্কৃত Bacteria দন্ডাকার ছিল।
ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার
১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্বপ্রথম বৃষ্টির পানির মধ্যে নিজের তৈরি সরল অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে Bacteria পর্যবেক্ষণ করেন।
Bacteria- কোথায় থাকে?
Bacteria এমন একটি প্রাণী যাকে পাওয়া যায় না এমন জায়গা খুবই কম। Bacteria সর্বত্র বিদ্যমান। মানুষের অন্ত্রনালী থেকে শুরু করে সমুদ্রের গভীর এবং আকাশের বিশালতায় বিস্তৃত এর বিচরণ। এমনকি এরা প্রতিকূল পরিবেশ যেমন মরুভূমিতেও বিস্তৃত। এছাড়াও অক্সিজেন বিহীন পরিবেশেও এদেরকে পাওয়া যায়।
সচরাচর এক গ্রাম মাটিতে প্রায় ৪ কোটি (বা ৪০ মিলিয়ন) Bacteria এবং ১ মিলিলিটার মিঠা পানিতে দশ লাখ (বা এক মিলিয়ন) Bacteria থাকে। পৃথিবীতে আনুমানিক প্রায় ৫×১০৩০ টি Bacteria আছে।যেগুলো একটি জৈববস্তুপুঞ্জ (Biomass) নির্মাণ করে যা সমুদয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর জৈববস্তুপুঞ্জকেও অতিক্রম করে।
Bacteria-র বৈশিষ্ট্য
- Bacteria সাধারণত ০.২ – ৫ মাইক্রোমিটারের হয়ে থাকে, তাই এদেরকে আণুবীক্ষণিক বলা হয়। (microscopic)।
- এটি একটি প্রোক্যারিওটিক প্রাণি অর্থাৎ এর নিউক্লিয়ার মেমব্রেন নেই।
- মাইটোকন্ড্রিয়া এবং ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত।
- এদের রাইবোজোম 70স কারণ এটি আদিকেন্দ্রিক।
- এদের ক্রমোজোমের ডিএনএ দ্বিসূত্রক এবং বৃত্তাকার।যে স্থানে ক্রোমোসোম থাকে তাকে নিউক্লিয়য়েড বলে।
- এরা কলোনি গঠন করে বা দল বেধে চলে ।
- এর কোষপ্রাচীরের প্রধান উপাদানকে পেপটিডোগ্লাইক্যান বলে। এছাড়াও পলিস্যাকারাইড, মুরামিক অ্যাসিড এবং টিকোয়িক অ্যাসিডও কোষ প্রাচীর গঠনে সাহায্য করে ।
- এরা মূলত দ্বি-ভাজন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে।
- কোষ পর্দা কোনো স্থানে ভাজ হয়ে মেসোসোম তৈরি করে।
- এদের ক্রোমোজম দুই প্রকার। ব্যাকটেরিয়াল ক্রোমোজম এবং প্লাসমিড।
ব্যাকটেরিয়ার প্রকারভেদ
আকৃতির ভিত্তিতে Bacteria প্রধানত ৪ প্রকার
- গোলাকার
- দন্ডাকার
- সর্পিলাকার এবং
- কমা আকৃতি
ফ্লাজেলার ভিত্তিতে Bacteria ৫ প্রকার
- অ্যাট্রাইকাস(ফ্লাজেলা বিহীন)
- মনোট্রাইকাস( একটা ফ্লাজেলা আছে)
- লোফোট্রাইকাস( এক পাশে একগুচ্ছ ফ্লাজেলা)
- আম্ফিট্রাইকাস( উভয় পাশে ফ্লাজেলা থাকে)
- পেরিট্রাইকাস( পুরো শরীরে ফ্লাজেলা থাকে)
রঞ্জন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে Bacteria ২ প্রকার
- গ্রাম পজিটিভ (বাইরের আবরণ অনুপস্থিত এবং ভায়োলেট কালার ধারণ করে)
- গ্রাম নেগেটিভ ( বাইরের আবরণ উপস্থিত এবং পিংক রেড কালার ধারণ করে)।
- এছাড়াও কিছু বায়বীয় অর্থাৎ অক্সিজেন উপস্থিতিতে বাঁচে এবং কিছু অবায়বীয় অক্সিজেন উপস্থিতিতে বাঁচে না এমন ব্যাকটেBacteriaরিয়া আছে।
ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন
ব্যাকটেBacteriaরিয়া মূলত দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় বংশ বিস্তার করে। এছাড়াও বাডিং, ফ্রাগমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় অযৌনজনন সম্পন্ন করে। প্রতিকূল পরিবেশে এন্ডোস্পোর গঠন একটি বিশেষ প্রজনন প্রক্রিয়া।
গ্যামেট উৎপাদন হয়না বলে এদের যৌন জনন সম্পন্ন হয় না। তবে কনজুগেশন, ট্রান্সফরমেশন এবং ট্রান্সডাকশনের মাধ্যমে জিনের পুনঃসংযোগ ঘটায়।
ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার
- ওষুধ শিল্পে এন্টিবায়োটিক তৈরিতে।
- ভ্যাক্সিন তৈরিতে।
- গাছে নাইট্রোজেন সংবদ্ধ করণে রাইজোবিয়াম।
- ভিটামিন, রাসায়নিক পদার্থ তৈরিতে।
- পাট শিল্পে, চামড়া শিল্পে।
- চা, কফি প্রক্রিয়াজাতকরণে
- দুধ থেকে দই তৈরিতে।
- খাদ্যশিল্পে ফারমেন্টেশনে Bacteria গুরুত্বপূর্ণ
মানুষের দেহে যতগুলো কোষ আছে, তার থেকে এর সংখ্যা ১০-১০০ গুণ বেশি।
ব্যাকটেরিয়া জনিত কিছু রোগ
ব্যাকটেরিয়াজনিত সর্বাপেক্ষা মারত্মক ব্যাধি হলো শ্বাস নালীর সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট রোগসমূহ।এছাড়াও কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড,কুষ্ঠব্যাধি, গনোরিয়া , সিফিলিস, অ্যানথ্রাক্স, প্লেগ, যক্ষা ইত্যাদি।
উপকারী ব্যাকটেরিয়া
Escherichia coli( E. coli),স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ল্যাক্টোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস: খাদ্য পরিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আমাদের গৃহীত ক্ষতিকারক খাদ্য উপাদান থেকে অন্ত্রকে রক্ষা করে। ই.কোলাই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (বিশেষ করে সায়ানোকোবালামিন) ও ভিটামিন কে তৈরিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
রাইজোবিয়াম: নাইট্রোজেন সংবদ্ধ করতে এবং ভুমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
স্ট্রেপ্টোমাইসিস এর প্রজাতি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুত করা যায়। এছাড়াও আরো কিছু উপকারি Bacteria নাম…
Lactobacillus gasseri ।
Bacillus Coagulans
actobacillus Rhamnosus
Bifidobacterium
Bifidobacteriumইত্যাদি।
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া
- ক্লোসট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেন Bacteria, বটুলিসম, ক্যাম্পাইলোব্যাকটার Bacteria
- সালমোনেলা Bacteria
- ব্যাসিলাস কেরিয়াস Bacteria
- শিগেলা ব্যাকটেরিয়া,লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজিন Bacteria
- এছাড়াও কিছু ই.কোলাই Bacteria ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র : উইকিপেডিয়া
লেখক
মোছা: সাবরিন জাহান
পড়াশুনা করছেন
Veterinary science
Bangladesh Agricultural University.
এই লেখকের মত আপনিও লিখুন। বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার দুয়ার খুলে দিন।
Please Click on Just one Add to help us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।