মাম্পস রোগ কী?মাম্পস রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা!

মাম্পস রোগ কী?মাম্পস রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা!

রফিক ৫ম শ্রেণিতে পড়ে, সকালে স্কুল যাওয়ার পর তার বন্ধুরা তাকে গালফুলা রফিক বলে খেপাতে থাকে। রফিক গালে হাত দিয়ে দেখে সত্যি তার গাল ফুলে আছে।সে চিন্তায় পরে যায় কেন এমন হলো?ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বললো তার মাম্পস রোগ হয়েছে।প্রথম দর্শনে মাম্পস রোগীকে মনে হবে যেন মুখের ভেতর কোন কিছু দিয়ে গাল ফুলে রেখেছে।

মাম্পস রোগ কী?মাম্পস রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা!

আপনি আরও পড়তে পারেন …… চিকুনগুনিয়া রোগ কী?চিকুনগুনিয়া লক্ষণ ও প্রতিরোধ! …… নিপাহ ভাইরাস কী? নিপাহ ভাইরাস লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়! ….. হাম রোগ কী? হাম এর কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

মাম্পস রোগ কী?

মাম্পস ভাইরাসের আক্রমণে মুখের ভেতরে অবস্থিত প্যারোটিড গ্রন্থি ফুলে যায় এই অবস্থা কে মাম্পস বলে।

মাম্পস রোগের কারণ কী?

প্যারামিক্সো (paramyxo) গ্রুপের ভাইরাস এ-রোগ সৃষ্টি করে।ঘিঞ্জি পরিবেশে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

মাম্পস রোগের জীবাণুর নাম কী?

মাম্পস রোগের জীবাণুর নাম Mumps Virus, এর বৈজ্ঞানিক নাম Mumps orthorubulavirus। এটি একটি আরএনএ ভাইরাস।

কাদের মাম্পস বেশি হয়?

রোগটি সাধারণত ১৫ বছর বয়সের মধ্যে বেশি হয়।

কখন মাম্পস বেশি হয়?

বছরের যেকোনো সময় মাম্পস হতে পারে,তবে শীতের শেষে ও বসন্তকালে বেশি হয়।

মাম্পস কি ছোঁয়াচে রোগ?

হ্যাঁ, মাম্পস কি ছোঁয়াচে রোগ।

মাম্পস যেভাবে ছড়ায়

মাম্পস-আক্রান্ত রোগীর সরাসরি সংস্পর্শ, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অথবা লালা বা প্রস্রাবে দূষিত ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সাহায্যে ছড়ায়। রোগী অসুস্থ হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে অসুখ সেরে যাওয়ার কিছু দিন পর পর্যন্ত জীবাণু ছড়ায়। সাধারণভাবে মাম্পস ভাইরাসটি দেহে প্রবেশের পর শ্বাসতন্ত্রের টিস্যুতে সাময়িকভাবে বংশবৃদ্ধি ঘটায়। পরে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আক্রমণ করে। এই ভাইরাসের প্রধান টার্গেট পেরোটিড ও অন্যান্য লালাগ্রন্থি।

মাম্পস এর লক্ষণ ও উপসর্গ

মাম্পস এর লক্ষণ ও উপসর্গ

মাম্পস জীবাণু দেহে ঢোকার ১৪ থেকে ২৪ দিনের মাথায় অসুখের লক্ষণ দেখা যায়।

  • ১. প্রথমদিকে জ্বর, মাথাব্যথা ও সারা শরীরে বাধা থাকে। সাধারণত তারের মাত্রা তেমন বেশি হয় না
  • ২. এক থেকে তিন দিনের মধ্যে মূল লক্ষণ প্রকাশ পায়, অর্থৎ একদিক বা দুদিকের পেরোটিড লালাগ্রন্থি (যা কানের ঠিক সামনে থাকে) ফুলে যায় এবং খুব রাখা হয়। একই সঙ্গে দু’দিকের গ্রন্থি না-ও ফুলতে পারে। সাধারণত একটি ফুলে যাওয়ার দু-তিন দিনের মাথায় অন্যটি ফুলে থাকে।পাঁচ থেকে সাত দিন এই ফোলা ভাব থাকতে পারে।

মাম্পস-এর কারণে সৃষ্ট জটিলতা

কিভাবে বুঝবেন মাম্পস হয়েছে

সাধারণভাবে তেমন কোনো জটিলতা ছাড়াই বেশির ভাগ মাম্পস রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে, অনেক সময় কিছু মারাত্মক জটিলতাও দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • অণ্ডকোষের প্রদাহ
  • ডিম্বকোষের প্রদাহ
  • অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ
  • মস্তিষ্কের আবরণীর প্রদাহ
  • মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি প্রভৃতির প্রদাহ
  • বধিরতা শিশুদের মেনিনজাইটিস এবং এনকেফালাইটিসের অনেকগুলোই মাম্পস এর জীবাণুঘটিত, যেক্ষেত্রে প্রায়ই মাম্পসের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না। কানে না শোনার অন্যতম প্রধান কারণও হচ্ছে মাম্পস- পরবর্তী জটিলতা।

মাম্পস হলে করণীয়

  • নিজেকে সবার থেকে আলাদা রাখুন কারণ আপনার দ্বারা অন্যরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  • শক্ত খাবার না খাওয়া ভালো।
  • তরল খাবার বারবার অল্প করে খেতে হবে।
  • লবণ মেশানো গরম পানি দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে।
  • গলার ব্যথা বেশি হলে গরম কাপড় গলায় জরিয়ে রাখা যায়।
  • জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিতে হবে।
  • টক খাবার খাবেন না।
  • অণ্ডকোষের গার্ডার পরিধান করুন।

মাম্পস রোগের চিকিৎসা

এরোগের কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই, ব্যবস্থাপনাই আসল। মাম্পস হলে স্বাভাবিক এবার বজায় রাখা, খাবারের পুষ্টিগুণ অটুট রেখে রোগীকে খাওয়ানো, জ্বরের জন্য প্রয়োজনমতো প্যারাসিটামল দেওয়া, শরীরে পানির চাহিদা পুরণ করা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

মাম্পস রোগের ঔষধ

acetaminophen (Tylenol) nonsteroidal anti-inflammatory drug such as ibuprofen (Advil, Motrin IB,)ইত্যাদি

মাম্পস রোগের টিকা

এমএমআর টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হাম, রুবেলা ও মাম্পস রোগ প্রতিরোধ করা যায়। রুবেলা নিয়ে কোনো শিশু যাতে জন্ম না নেয় এবং হাম, রুবেলা ও মাম্পসে আক্রান্ত হয়ে যাতে কোনো শিশু আর মারা না যায় সেজন্য ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ থেকে সরকার বিনামূল্যে এমএমআর টিকা দিতে শুরু করেছে। এই তিনটি রোগ প্রতিরোধ করতে সকলেরই বয়স অনুযায়ী এই টিকা নেওয়া জরুরি।

লেখক
ডা. রীনা দাস
আইসিডিডিআর,বি